#অবশেষে
#Written_by_Sumaiya_Karim
||পর্ব_২||
আদ্র আয়রা কে দেওয়ালের সাথে চেপে। চোখে মুখে প্রচন্ড রাগের আক্রোশ ঝরে ঝরে পড়ছে যেনো। আর চোখ দুটি তে ফুটে উঠেছে ভয়ংকর রাগ।
বিকট শব্দের একটা বজ্রপাতে পুরো রুম, ঘর শুদ্ধ যেনো কেঁপে উঠলো। বজ্রপাতের কারণেই এই শব্দটি হয়েছে। আদ্রর বেলকনির দরজা খোলা থাকায় শব্দ টি আরো মুখরিত হতে সাহায্য করেছে। এই শব্দে আয়রা ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে আর আদ্র কলার ছেড়ে দিয়ে দু পা পিছিয়ে যেতেই আদ্র তাকে চেপে ধরে। দাঁতে দাঁত চেপে ধরে বলে,
–‘আমার কলার ধরার সাহস কি করে হয় তোমার?’
অন্যজন নিজেকে সামলে ফের অাগের রাগেই নিজেকে ধরে রেখে স্ট্রং হয়ে বললো,
–‘আর আপনার? আমার পরিবারের কাছে আমাকে খারাপ বানানোর সাহস আপনার কি করে হলো? হাউ ডেয়ার ইউ!’
এই কথার প্রতি উত্তরে ঐ মানুষ টি পুরো ঘর কাঁপিয়ে একটা রহস্যময় অট্রহাসি তে ফেটে পড়ে। আর অন্য জন তা শুধু চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া কিছু বুঝে উঠতে সক্ষম হলো না।
–‘আমার সাহস সম্পর্কে তোমার প্রথম ধারণা এটা। আমি যা করেছি ভুল করিনি। তুমি এটার ই যোগ্য বুঝেছো?’
–‘মানে? কেন করলেন আপনি আমার সাথে এমন?’
চিল্লিয়ে কথা টা বলে সে। আর সে বার বার জিঙ্গেস করতে থাকে কেন তার সাথে এমন করা হয়েছে। কিন্তু কোনো উত্তর মিললো না। কথার প্রাসঙ্গিক ঝগড়ায় আয়রা ক্ষুব্ধ হয়ে আরো কিছু বলতে যেতেই আদ্র এক পর্যায়ে আয়রার ঠোঁট নিজের দখলে নিয়ে নেয়।
ঘটনাক্রমে আয়রা বোরটের মতো হয়ে গেলো। বস্তুত এমন কিছুর জন্য সে মোটেও প্রস্তুত ছিলো না। না পারছে আদ্র কে সরাতে আর না তো নিজে সরে আসতে। হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে যায় সে।
কিছু টা সময় পর ই আদ্র তাকে ছেড়ে দেয় আর একটা ডেভিল স্মাইল দিয়ে বলে,
–‘এখন থেকে তোমার সাথে যাই হবে সেটা শুধুই আমার ইচ্ছায় বুঝেছো আরু পাখি? অনেক রাত হয়েছে ঘুমিয়ে পড়ো সকালে দেখা হচ্ছে!’
বলেই সে স্থান ত্যাগ করলো। আয়রা সেই এক ভাবেই দাঁড়িয়ে রইল। আর কিছুক্ষণ আগে তার সাথে হওয়া ঘটনার আকস্মিকতায় সে খুব অবাক। আদ্র অনাকাঙ্ক্ষিত এই কাজে ঘৃণায় গা গুলিতে আসলো তার। ওয়াশরুম দেখতে পেয়ে সে ছুটে সেখানে গেলো। আর গিয়েই কুলি করতে থাকে। যখন এতে ও মন শান্ত হলো না তখন সমস্ত মুখে পানির ছিটে মারতে থাকলো।
এতেও কিছু হলো না। শেষে না পারতে ঝর্ণা ছেড়ে দিয়ে নিচে বসে পড়ে সে। হঠাৎ করে জীবনের এই পরিবর্তনে সে খুশি হতে তো পারলো না। তবে জীবনের সব খুশি উল্টো হারালো। বাবা মা চাচা চাচির এতো আদরে বড় হয়েছে যে কখনো কষ্ট পেতে হয় নি। মনে আঘাত যায় নি। কিন্তু আজ এই ঘটনায় নিজে তো খুশি হয় নি বরং পরিবারের সকলে কষ্ট পেলো। তাও একটা মিথ্যা আর ভ্রান্ত ধারণা নিয়ে!
আয়রার বৃষ্টি খুব পছন্দ তাই সে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে বেলকনিতে চলে যায়। বৃষ্টি তে ভিজতে না পারে দেখতে তো পারবে? দুঃখে বৃষ্টির মতো সে ও যে আজ কাতর। আর বৃষ্টির মতোই অঝোরে চোখে পানি ঝড়াবে সেও। বেলকনিতে গিয়ে দেখলো এটি গ্লাস সিস্টেম। হাতের ছোঁয়ায় গ্লাস টা সরিয়ে দিতেই বিন্দু বিন্দু বৃষ্টির ফোঁটা চলে আসতে থাকলো এপারে। সে চাইলে হয়তো এখন এখান থেকে পালাতে পারতো কিন্তু পালিয়ে আর যাবেই বা কোথায় তার যাওয়ার জায়গায় তো প্রথমেই তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে!
আদ্র চলে যায় অন্য রুমে। আর নিজের করা অপ্রত্যাশিত কাজ টার জন্য নিজের উপর ই রাগ হতে থাকে। এই মেয়ে টাকে ছোঁয়া ও তার জন্য পাপ! সেখানে সে..? কিছু ভাবতে পারছে না আর। দরজা বন্ধ করে দিয়ে সিগারেটে আগুন ধরায়।
এই কয়েক মাসে আয়রার চ্যাপ্টার টা মাথায় ঘুরপাক খেলেই সে পাগলের মতো হয়ে যায়। ভাবতে পারে না কোনো কিছু আর। একটা অতিব দরদের হাহাকার বেড়ে উঠে নিজের মধ্যে। বুকে চিন চিন ব্যথা অনুভব করে। স্মৃতি ময় দিন গুলো চোখ বুঝলেই জ্বলজ্বল করে উঠে আর ভীষণ পিড়া দেয়!
এসব যেনো চাইলেও ভুলতে পারে না সে। এই একটা কষ্ট তাকে সিগারেট খাওয়া শিখিয়েছে। যখনি আয়রার কথা মনে উঠে তখনি তার বাজে রকমের একটা ঘৃণা কাজ করতে থাকে আর সে সিগারেট খায়। আর আজ সেই দিন গুলোর থেকে একটু আলাদা। আর একটার পর একটা সিগারেট শেষ করতে থাকে সে। এবং ধোঁয়ায় উড়িয়ে দিতে থাকে তার কষ্ট টা। এক হাতে সিগারেট আর অন্য হাত শক্ত করে মুষ্টি বন্ধ করে ধরলো। তার একটাই চোখের বিষ আর একটাই উদ্দেশ্য সে হলো ‘আয়রা!’
_______________★
সকালে খুব দ্রুত ঘুম ভাঙ্গে আদ্রর। কেননা রাতেই সে ভেবে রেখেছিলো যে ভোরে ঘুম থেকে উঠে সে ঐ রুমে যাবে। যেখানে আয়রা আছে। তার সাথে একি বিছানায় থাকা তার পক্ষে সম্ভব নয় বলেই সে চলে গিয়েছিলো। আবার নিজেই আসে। রুমের দরজা ঠিক যেমন সে রাতে বন্ধ করে গিয়েছিলো এখন ও ঠিক তেমন টাই আছে। সে রুমে ঢুকতেই চোখ গেলো বিছানায়। সেখানে কেউ ই নেই! আদ্র বেশ ঘাবড়ে যায়। তাড়াহুড়ো করে ওয়াশরুমে গিয়ে দেখলো সেখানেও নেই। এবার বেলকনিতে যায়। আর সে দেখে কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তি দোলনায় আধশোয়া হয়ে খুব সুন্দর করে ঘুমিয়ে আছে। স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো সে। কিন্তু এই সুন্দর ও আরামের ঘুম টা একদমি হজম হলো না তার।
তাই যেই না নিচে টান মেরে ফেলে দিতে নিবে ওমনি সে অনুভব করলো তার হাত প্রচন্ড গরমের তাপে মনে হচ্ছে পুড়ে যাচ্ছে। বুঝতে দেরি হলো না আসলে ব্যাপার টা কি। আয়রার কপালে হাত দিয়ে দেখলো খুব জ্বর। গা পুড়ে যাচ্ছে এই জ্বরের কারণে। আর পড়নের কাপড়চোপড় আধো ভেজা। তার এও বুঝতে দেরি হলো না যে এই মেয়েটা বৃষ্টি তে ভিজেছে। তার উপর গ্লাস টাও অপেন করা। ফলে বৃষ্টির ফোঁটা খুব সহজেই এখানে চলে এসেছিলো। ফ্লোরে এক কোণায় এখনো কিছু টা পানি ও জমে আছে।
–‘ধ্যাত! এই মেয়ে টা কে আমি মারার আগে এতো নিজেই মরে যাচ্ছে! না না তা কি করে হতে দেই। তোমাকে তো আমার কব্জায় থাকতে হবে আরু পাখি!’
মনে মনে কথা গুলো বলে হাসলো সে। আর কোলে তুলে নেয় আয়রা কে! বিছানায় শুইয়ে ও দিলো যত্ন করে। আর কি করা যায় ভাবতে থাকলো। অনেক ভেবে উপায় বের করা গেলো না। ফলে বাবা মা কে ডাকতে বাধ্য হলো।
আদ্র গিয়ে তার বাবা মা কে কথা টা জানালে তন্নি আর সুলতানা দুই জন ই ছুটে আসে কি হয়েছে দেখতে!
–‘জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে মা দেখো!’
–‘হ্যাঁ তাই তো কিভাবে হলো এটা আদ্র?’
–‘না ওই আসলে রাতে অনেক কেঁদেছিলো।’
–‘মানে?’
–‘রাতে ওর সেন্স আসার পর আমার কোনো কথা না শুনে বেলকনির দরজা বন্ধ করে দিয়ে সারারাত বৃষ্টি তে ভিজেছিলো। তাই এমন হয়েছে!’
আদ্রর বাবা সায়রের কাজ পড়ে যাওয়ায় একটু দেরি করে আসলেন। আর রুমে ঢুকেই বিছানায় জ্বরের ঘোরে কাতরাতে থাকা পরীর মতো মেয়েটির মুখ দেখেই তিনি আঁতকে উঠলেন। এখন যেটা তিনি লক্ষ্য করলেন সেটা রাতের কেন উনার চোখে পড়লো না তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যান। মুখ টা আরো ভালো ও স্পষ্ট ভাবে দেখে উনি ভীষণ রকমের ঘাবড়ে যান। আর উৎকন্ঠা চেপে রাখতে না পেরে বলেন,
–‘আরে এটা তো অরিন!’
অরিন! নাম টা শুনে উনার সামনে থাকা তিন জন-ই অবাক নয়নে উনার দিকে তাকাতে বাধ্য হলো!
চলবে?