অবশেষে পর্ব-০১

0
2699

গল্প : অবশেষে | পর্ব : এক
মো. ইয়াছিন
#অবশেষে

টানা এক ঘন্টা বৃষ্টিতে ভিজেছে দিয়া। এটা তার শাস্তি। রোদ দূরে দাঁড়িয়ে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। দিয়া ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতে কয়েকবার হাঁচি দিয়েছে। সেদিকে রোদের খেয়াল নেই। সে একবার শাস্তির কথা মুখে উচ্চারণ করেছে মানে শাস্তি ভোগ করতেই হবে। এবার যা কিছু হয়ে যাক।

এক ঘন্টা পার হবার পর রোদের মুখে কথা ফোটে। সে ঘড়ি দেখে বলে, টাইম আপ। আর ভিজতে হবে না।

ততক্ষণে দিয়ার চোখদু’টো টকটকে লাল হয়ে গেছে। তার সমস্ত শরীর কাঁটা দিয়ে উঠছে বারবার। সে জড়োসড়ো হয়ে কাঁপতে কাঁপতে নিচে নামতে থাকে। তার পিছু পিছু সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসে রোদ। ঘরে এসেই তোয়ালে এগিয়ে দেয়। দিয়া রাগে, ক্ষোভে তোয়ালেটা মেঝেতে ছুড়ে ফেলে দেয়। রোদ দাঁত কটমট করে দিয়ার গলা চেপে ধরে। দিয়া পেছনে সরে যেতে যেতে একসময় দেয়ালে বাধা পায়। রোদ দিয়াকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে বলে, খুব রাগ, না? খুব মেজাজি হইছিস? আমার সাথে মেজাজ দেখাস?

দিয়া জবাব দেয় না। ঝাপসা চোখে রোদের দিকে চেয়ে থাকে। চোখের জলে গাল ভেসে যায়। ঠোঁট কাপঁতে থাকে। রোদ তাচ্ছিল্য করে বলে, আহারে, ইমুশন্যাল ফুল! ভুল করছিস, ভুলের মাশুল দিতে হবে না?
এরপর নিজ হাতে দিয়ার চোখের জল মুছে দিতে দিতে বলে, ভুল করছিস। ভুলের শাস্তিও পেয়েছিস। সমান সমান। এবার যা, তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছে নে। আর ভেজা কাপড়গুলো বদলে ফেল। না হলে ঠান্ডা লেগে যাবে।

দিয়া ঠোঁট ফুলিয়ে কাঁদোকাঁদো গলায় বলে, আমার ঠান্ডা লাগার কথা তুমি ভাবো তাহলে ভাইয়া?

রোদ কপাল কুঁচকে বলে, ভাবব না! শত হোক, দু’দিন পরে তুই আমার বউ হবি। ঠান্ডা লেগে মরে গেলে আমি বিধবা হয়ে যাব না? আমি আবার অল্প বয়সে বিধবা হতে চাই না। যা, কাপড় বদলা গিয়ে।

যাব না। বলে দাঁড়িয়ে থাকে দিয়া। তার চোখে মুখে অভিমান। দিয়ার ভেজা জবজবা কাপড় বেয়ে টপটপ করে ফোঁটা ফোঁটা জল ফ্লোর স্পর্শ করে। রোদ চোখ রাঙিয়ে বলে, যাবি না মানে!

দিয়া ভাঙা ভাঙা গলায় বলে, এখানে দাঁড়িয়ে কাপড় বদলাব।

এখানে মানে! আমার সামনে!

দিয়া কথা বলে না। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। রোদ ধমক দিয়ে বলে, মাইর খাবি। যা, ভাগ!

ধমক শুনে দিয়া তোয়ালে হাতে নিয়ে রোদের ঘরে চলে যায়। তোয়ালে গায়ে জড়িয়ে ভেজা কাপড় খুলে রেখে দেয়। কিন্তু সে কি তোয়ালে পরেই থাকবে? রোদটা যা অসভ্য। কখন না এক টানে…
দিয়া দরজায় উঁকি দিয়ে বলে, আমি কি তোয়ালে পরেই থাকব?

আলমারিতে দ্যাখ। কাপড় আছে। রোদের কণ্ঠে বিরক্তি।

দিয়া পুরো আলমারি খুঁজে সালোয়ার-কামিজ কিংবা শাড়ি জাতীয় কিছু পায় না। শেষমেশ রোদের ফুলহাতা শার্ট আর জিন্স পরে বেরিয়ে আসে। তখনও তার চোখে জল। তখনও সে জড়োসড়ো হয়ে কাঁপছে। রোদ কড়া গলায় বলে, এক দৌড়ে বাসায় যাবি। আর কখনো আমার এখানে আসবি না।

দিয়া চুপচাপ কথা মেনে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। বাইরে ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে। সঙ্গে ছাতা নেই। দিয়া ঝড় বৃষ্টি উপেক্ষা করে পা চালায়।

রোদ দিয়ার চাচাতো ভাই। ছোটোবেলা থেকেই ওঁদের বিয়ে ঠিক হয়ে আছে। দিয়ার পড়াশোনা শেষ হয়ে গেলেই পারিবারিকভাবে বিয়েটা হয়ে যাবে। কিন্তু দিয়ার মনে হয় বিয়েটা শেষমেশ হবে না। রোদ কোনো না কোনো বাহানা করে বিয়ে ভেঙে দেবে।
রোদের পড়াশোনা শেষ। আপাতত একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছে। তার বাবার বিশাল ফ্ল্যাটে সে একা থাকে। আর তার বাবা মা গ্রামে থাকেন। দিয়া প্রায় প্রতিদিনই রোদের ফ্ল্যাটে যায়। রোদ তাকে অপমান করে, নানা ছুতো ধরে শাস্তি দেয়, দূর দূর করে তাড়িয়ে দেয়। এমনকি গায়ে হাত তুলতেও দ্বিধাবোধ করে না। তবুও দিয়া বেহায়ার মতো রোদের ফ্ল্যাটে উঁকি দেয়। রোদের ভালোমন্দ খোঁজ নেয়। অপমান, লাঞ্ছনা এসব গায়ে মাখে না। শত হোক, রোদকে সে মনেপ্রাণে ভালোবাসে। কিন্তু রোদ কাকে ভালোবাসে, তা সে জানে না। তবে রোদ যদি অন্য কাউকে ভালোবাসে, তা হলে দিয়া বাঁচবে না। হয়তো হার্ট অ্যাটাক করে মারা যাবে। আর নাহয় আত্মহত্যা করবে।

আজ যখন দিয়া রোদের ফ্ল্যাটে গিয়েছিল, তখন রোদ নিজের ঘরে শরীরচর্চা করছিল। কাজের মেয়েটা দরজা খুলে দেওয়ার পরই দিয়া সরাসরি রোদের ঘরে চলে যায়। তখন রোদের পরনে শুধু নেভী-ব্লু জিন্স। গা খালি। দিয়াকে দেখে রোদ হুড়মুড় করে টি-শার্ট গায়ে দেয়। এবং তার পরই রাগে দাঁত কটমট করতে করতে বলে, হুট করে চলে এলি কেন? আসার আগে অনুমতি নিবি না?

দিয়া জবাব দিতে পারে না। নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থাকে। আর তখনই দিয়াকে অবাক করে দিয়ে রোদ বলে, তুই আমাকে কাপড় ছাড়া দেখেছিস। এবার আমি তোকে দেখব।

দিয়ার আপাদমস্তক কেঁপে উঠে। সহসা মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। এ-কেমন মানুষকে ভালোবেসেছে সে! এমন জঘন্য মানুষটাই ছিল তার কপালে! রোদ ধমক দিয়ে বলে, কথা কানে যায় না? আমি তোকে দেখব। কাপড় খোল।

কাজের মেয়েটা আড়ালে কান পেতে সব শুনছিল। হঠাৎ আড়াল থেকে বেরিয়ে আসে। জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে বলে, এইডা ঠিক না ভাইজান। এমুন কাম করলে পাপ হইব।

পাপ পুণ্য তুই আমাকে শেখাবি? বলে সঙ্গে সঙ্গে কাজের মেয়ের চাকরি নট করে দেয় রোদ। দিয়া কেঁদে কেঁদে বুক ভাসায়। সে জানে, রোদ এক কথার মানুষ। সে একবার যখন বলেছে তখন আর নিস্তার নেই। তবুও দিয়া কাঁদে আর মনে মনে প্রার্থনা করে, খোদা, রক্ষা করো!

রোদ হঠাৎ দিয়ার কান টেনে ধরে বলে, কী বলেছি কানে যায় না?

দিয়া কেঁদে কেঁদে বলে, ভাইয়া, আর এরকম ভুল হবে না।

রোদ লম্বা নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে, আমি তিন পর্যন্ত গুণব। এর মধ্যে যদি তুই আমার কথা না শুনিস, তা হলে কিন্তু খারাপ কিছু ঘটবে।
বলেই গুণতে শুরু করে রোদ। তিন পর্যন্ত গুণার সঙ্গে সঙ্গে…

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে