◆অবশেষে তুমি আমি,
◆পর্ব~৩
◆Chhamina Begam
বাড়ি ফিরেই রোজা সেই যে শুয়েছে সন্ধ্যা হয়ে গেল এখনও ওঠার নাম গন্ধ নেই । কিছু ভালো লাগছে না আজ ওর । শাওনের আব্বুকে ফোন করার আধ ঘণ্টার মধ্যেই শাওন বাড়ির পথে রওনা দেয়। ভয়ে বেচারার মুখ চোখ আরও শুকিয়ে গেছে । নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে রোজার । ওকে গাড়ীতে তুলে দিয়েই রোজা বাড়ি ফিরে আসে । বাড়ি পৌছে ফোন করতে বলেছিল রোজা শাওনকে । কিন্তু এখনো অবধি কোনো কল বা মেসেজ কিছু আসে নি । রোজা বার বার ফোনটা চেক করে করছে । আর প্রতি বার ওকে হতাশ হতে হচ্ছে । হঠাৎ করে ফোনের রিংটোনের শব্দে চমকে ওঠে রোজা। শাওনের কল ভেবে দ্রুত ফোন হাতে নিয়ে দেখে দুপুরের সেই নম্বর থেকে আবার ফোন এসেছে । বিরক্ত হয়ে রোজা কল কেটে দেয় । ওর আম্মু রুবিনা কয়েকবার এসে ডেকে গেছে ওকে। কিন্তু রোজা তবুও দরজা খুলেনি। মাথাটা প্রচন্ড ধরে আছে রোজার । সময় যত গড়াচ্ছে ততোই রোজার আত্মা শুকিয়ে যাচ্ছে। গতরাতে আব্বু-আম্মুর সঙ্গে একচোট ঝামেলা হয়ে গেছে। বাড়ির পরিবেশটা অসহ্য লাগছে এখন । কোথাও পালিয়ে যেতে পারলে বেশ হত। বিছানায় চিত হয়ে শুয়ে সিলিঙের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে এসবই ভাবছে রোজা। এমন সময় দরজার কড়া নাড়ার শব্দে রোজা কান খাড়া করে শোনে আম্মু ডাকছে,
-“রোজা , বাইরে বেরিয়ে আয় । তোর আব্বু ডাকছে ”
-” আসছি “.. বললেও রোজা এখনো উদাস দৃষ্টিতে সিলিঙের দিকে তাকিয়ে আছে । সারাদিন ঠিক মত খাওয়া হয়নি । শরীরে শক্তি বলতে কিছু অবশিষ্ট আছে কিনা সন্দেহ আছে । তবুও কোনরকমে শরীরটাকে টেনে উঠিয়ে রোজা বাইরে বেরিয়ে আসে। দেখে ওর আব্বু সামসুল সাহেব ড্রয়িং রুমে বসে টিভি দেখছেন ।
রোজা সামনে গিয়ে দাড়ায় ,
-” আব্বু ডেকেছিলে আমায় ?”
-“হুম, বসো এখানে ”
রোজা ওর আব্বুর পাশে একটু দূরত্ব রেখে বসে ।
-“আজ মিরাজ নাকি তোমায় ফোন করেছিল ? তুমি ওর সাথে খারাপ ব্যবহার করেছ কেন ? ”
-“আমি ওনার সাথে খারাপ ব্যবহার করিনি আব্বু । তখন আমার ক্লাসের সময় হয়ে গিয়েছিল তাই কল কেটে দিয়েছি ।”
” সে নাকি একটু আগে তোমাকে ফোন করেছে । ফোন তোলোনি কেন ? ”
রোজা অবাক হয়ে তাকায় ওর আব্বুর দিকে । মাত্র আধ ঘন্টাও হয়নি ফোন করেছিল ওকে মিরাজ। এর মধ্যেই সেই কথাও আব্বুর কানে দিয়ে দিয়েছে বেয়াদব লোকটা । মিরাজের প্রতি বিরক্তিবোধটা আরো বেড়ে যায় । রোজা কিছু না বলে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে আব্বুর দিকে ।
-“কি হলো চুপ করে আছ কেন ? ”
– “আমি পছন্দ করি না ওই লোকটাকে ”
-“বারবার একি কথা কেন বলছ ? কি খারাপ আছে মিরাজের মধ্যে ? এত ভালো চাকরি করে । ওয়েল কালচার্ড ফ্যামিলি , ছেলেটার নিজের বাড়ি আছে । তবুও তোমার এত আপত্তি কেন ? পছন্দ না করার কারন টা কি এবার বলবে ? ”
-“কারন আমি একজনকে পছন্দ করি “…সাহস করে বলেই ফেলে রোজা ।
সামসুল সাহেব চোখ গরম করে তাকিয়ে আছেন । চোখ বন্ধ করে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেন । তারপর বলেন,”কে সে ? কি করে ?”
-“ওর নাম শাওন । আমরা একসঙ্গেই পড়ি ।”
-“ওহ, তাহলে সমবয়সী । ”
-“নাহ, ও আমার থেকে সাড়ে তিন মাসের বড়ো ” বলেই রোজা দৃষ্টি নত করে ।
সামসুল সাহেব জলন্ত চোখে তাকিয়ে আছেন রোজার দিকে । ছেলেমেয়ের গায়ে হাত তোলার অভ্যাস ওনার নেই । নাহলে এতক্ষণে রোজার গাল লাল হতে সময় লাগত না । কটমট দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন তিনি । মনে হচ্ছে চোখ দিয়েই অগ্নি বর্ষণ করে ভস্ম করে দেবেন আজ রোজাকে । রোজা একবার মাথা তুলে আব্বুর দিকে তাকিয়ে সাথে সাথেই মাথা নিচু করে । এই মুহূর্তে রোজার মনে হচ্ছে ওর পিপাসা পাচ্ছে । গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে । কিন্তু সেন্টার টেবিলে রাখা জগ থেকে জল ঢেলে খাওয়ার সাহস অবধি পাচ্ছে না । তখনি সামসুল সাহেব হুংকার দিয়ে ওঠেন । তার সেই গুরুগম্ভীর স্বরে রোজার সাথে সাথে রুবিনাও কেঁপে ওঠে । এতক্ষণ তিনি রান্নাঘরের দরজায় দাড়িয়ে বাপ-মেয়ের কথোপকথন শুনছিলেন ।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
-“কত বড়ো বেয়াদব মেয়ে ? বাপের সামনে দাড়িয়ে বলছে সে একজন কে পছন্দ করে । দিনদিন ম্যানারলেস হয়ে যাচ্ছ। কিছু বলি না জন্য খুব বাড় বেড়ে গেছে তোমার । এই মুহূর্তে আমার সামনে থেকে দূর হয় । যাও …”
আব্বুর ধমকে কেদেঁ ফেলে রোজা । চোখ দিয়ে শ্রাবণের ঢল নেমেছে । দৌড়ে নিজের ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে ঢুকরে কেদেঁ ওঠে ।
শাওনের বাড়ি পৌঁছতে পৌঁছতে সাড়ে ছয়টা বেজে যায় । বাড়ি ঢোকার আগে রোজাকে কল করার কথা মনে পড়তেই পকেট থেকে নিজের ফোন টা বের করে । দেখে ফোন পাওয়ার ওফ হয়ে আছে । চার্জ শেষ হয়ে গেছে । শাওন বাড়ি ঢুকেই দেখে ড্রয়িং রুমে আব্বু , দুই চাচা আর দাদু মিলে গল্প করছে । শাওনদের বাড়িটা অনেক বড়ো । এখনো ওরা সবাই জয়েন ফ্যামিলিতে থাকে । আব্বু ,মেজচাচা নিজের নিজের ব্যবসা চালায় আর ছোট চাচা একজন স্কুল শিক্ষক । সেই সাথে শাওনের আব্বু ওদের গ্রামের প্রধান । রাজনৈতিক কাজের সঙ্গে যুক্ত তিনি । যার জন্য এলাকার সম্মানিত ব্যক্তিদের মধ্যে তিনি একজন । শাওনকে দেখে বাড়ির কচিকাঁচারা “দাদা -দাদা” বলে ছুটে আসে । বাচ্চাদের চিৎকার শুনে মেহেতাব সাহেব সহ সবাই ঘুরে তাকায় শাওনের দিকে।
ফ্রেশ হলে শাওনের ডাক পড়ে ড্রয়িং রুমে । শাওনের আম্মু ছেলেকে ডাকতে এসে দেখেন ছেলে তার করুন চোখে তাকিয়ে আছে ।
– “কিরে , এভাবে পিলারের মতো দাড়িয়ে আছিস কেন ? চল ”
-“আম্মু, আজ আবার আব্বু আমাকে মারবে না তো ? বাড়ির ছোটদের সামনে মারলে সম্মান বলে কিছু আর অবশিষ্ট থাকবে না !প্লিজ আম্মু ,কিছু একটা করো না ”
-” সেটা তোর আগে ভাবা উচিত ছিল শাওন । তোর আব্বু তিলতিল করে জুড়ে নিজে আজ এই পর্যন্ত এসেছেন । সমাজের প্রত্যেকটি লোক তাকে সম্মান দিয়ে চলে । ছেলের জন্য যদি তার সেই সম্মানে আচঁ আসে তাহলে সেটা কিভাবে বরদাস্ত করবে বল ? যাই হোক , ডাকছে তোকে । যা তাড়াতাড়ি । ”
-” তুমিও এভাবে বলছ কেন আম্মু ? সত্যি কি আমি খুব বড়ো ভুল করে ফেলেছি ? ”
-” হয়তো ভুল নয় । কিন্তু এই বাড়ির সম্মান তোর সঙ্গে জুড়ে আছে শাওন । তুই বাড়ির বড়ো ছেলে । তোকে নিয়ে সবার অনেক স্বপ্ন আছে । তুই যদি এভাবে নিজের জীবন নষ্ট করতে উঠে পড়ে লেগে যাস তাহলে বাকিরা কি শিখবে ? ”
-” আমি মোটেও জীবন নষ্ট করছি না আম্মু । আজ আড়াই বৎসর হল আমরা একে অপরকে পছন্দ করি । কিন্তু এর প্রভাব কখনোই আমাদের পড়াশোনায় পড়েনি । বরং আমরা দুজনেই আগের থেকে ভালো রেজাল্ট করেছি। ”
শাওনের আম্মু কিছু একটা ভাবে । তারপর মৃদু হেসে শাওনের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে , ” আচ্ছা ঠিক আছে । আগে আব্বুর সাথে দেখা করে আয় । কি বলে শোন ? ”
-” তুমিও চলো না আম্মু ”
-” হুম যাচ্ছি , চল ”
শাওন ড্রয়িং রুমে এসেছে দাড়ায় । সামনের সোফায় গোল হয়ে মেহেতাব সাহেব , তার দুই ভাই আর ওনার বাবা বসে আছেন । ওর আম্মু , মেজ চাচি আর ছোট চাচিও এক পাশে দাড়িয়ে আছে । বাচ্চাদের ঘরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে । শাওন দুরুদুরু বুকে সবার সামনে গিয়ে দাড়ায় । সবাই ওর মুখের দিকেই তাকিয়ে আছে । টেনশনে ঘামতে শুরু করেছে বেচারা। ওর শান্ত চোখের দৃষ্টিতে আজ আতঙ্ক ভর করেছে । কি হবে কে জানে ? শাওন মনে মনে আল্লাহকে ডাকতে থাকে ।
To be continue…