#অবশেষে তুমি আমি,
#পর্ব ~২,
#Chhamina Begam
….শাওন নিজের রুমালটা বের করে রোজার হাতে দেয় ,”নাও এটা দিয়ে মুছে ফেলো”
রোজা চোখ মুখ মুছে আবার পুকুরের জলের দিকে তাকিয়ে থাকে।
-“রোজ ”
– “উম ”
-“তুমি আমার সঙ্গে তুইতোকারি করছিলে কেন ?”
-“জানিনা, আপনা আপনি বেরিয়ে গেছে মুখ দিয়ে ”
শাওন মৃদু হাসে । রোজার সম্পর্কে খুব ভালোভাবে ওয়াকিবহাল ও। রেগে গেলে ওর মাথার ঠিক থাকে না। তখন কি বলে না বলে বুঝতে পারে না রোজা। বাবা-মা ,ভাইয়ের পর এই একটি মেয়ে যে ওর মনের খবর রাখে , বোঝে ওকে । রোজা ঝোড়ো হাওয়ার মতো এসে ওর অনুভূতির দেয়ালে তীব্র ভাবে আছড়ে পড়েছিল । তারপর থেকেই এই মেয়েটা ওর অভ্যাসে পরিনত হয়েছে। বাবা মাকে ছেড়ে যখন প্রথম শহরে এসেছিল পড়াশোনার জন্য প্রথম দুটো মাসের পর সে ছেড়ে আসার কষ্টটা আর বেশি অনুভব করেনি শাওন । রোজা ওর এতটাই খেয়াল রেখেছে যে সবাইকে ছেড়ে আসার কষ্ট টা আস্তে আস্তে কমে গিয়েছিল । কলেজে ভর্তির পর কঠিন সময় গুলোতে শক্ত করে ওর হাত ধরে রেখেছিল রোজা। শাওন যখন অসুস্থ হয়ে পড়ত তখন ভালোবেসে আগলে রেখেছিল রোজা ওকে। মেয়েটা পাগলের মতো ভালোবাসে ওকে। কি করে থাকবে শাওন ওকে ছাড়া ? ভাবনা গুলো বারবার এসে প্রচণ্ড আঘাত করে মন-মস্তিষ্কে। হাজার প্রশ্ন এসে ভিড় করে চোখের সামনে অথচ উত্তর একটার ও খুঁজে পায়না।
-” বাড়ি থেকে কি বলছে ?”
-“সামনের শুক্রবার ঠিক করেছে ” বলতে বলতেই রোজার গলা ধরে আসে । শাওন প্রানপনে চেষ্টা করছে নিজেকে শান্ত রাখার ।
-” শাওন চলো না আমরা কোথাও পালিয়ে যাই । আমার এসব আর ভালো লাগছে না । কেউ আমার কোনো কথাই শুনতে চাইছে না । ”
-“এটা ঠিক হবে না রোজ। এই মুহূর্তে যদি তুমি চলে যাও তোমার বাবা মায়ের সম্মান নষ্ট হবে। লোকের মুখে কটু কথা শুনতে শুনতে হয়তো তোমার বাবা-মা অসুস্থ হয়ে যেতে পারে । ”
-“ওরা আমাদের দিকটা কেন বুঝে না শাওন ? কেন ওদের সবসময় মনে হয় ওরা যা করে ঠিক করে ”
কি বলবে শাওন ওকে । ওর নিজেরই যে উত্তর জানা নেই । শাওন নীরব থাকে । ফোনের রিংটোনের আওয়াজে চমকে ওঠে দুজনেই । রোজা ব্যাগ থেকে ফোন বের করে দেখে অচেনা নাম্বার থেকে ফোন এসেছে। রোজা ফোনটা না তুলে পাশে রেখে দেয়। আবার বেজে ওঠে রিংটোন । অতিষ্ট হয়ে রোজা কল রিসিভ করে ,” হ্যালো কে বলছেন ? ”
-” হ্যালো রোজা , আমি মিরাজ বলছি । চিনতে পেরেছ? ”
এক মুহুর্ত ভাবে রোজা । চোখ মুখ শক্ত করে জবাব দেয় ,” হ্যাঁ বলুন , কি বলবেন? কোন দরকার আছে? ”
-” না সেরকম ইমপরট্যান্ট কিছু নয় । বলছিলাম , তুমি কি ফ্রি আছো ? তাহলে আমরা একটু কথা বলতে পারতাম ”
-“দেখুন ,আমি এখন ক্লাসে আছি। স্যার আসছে । বাই । ” বলে রোজা খট করে কলটা কেটে দিয়ে মোবাইল সাইলেন্ট করে রাখে । মেজাজ প্রচন্ড খারাপ হয়ে আছে রোজার। এর মধ্যে এই লোকটা ওর ফোন নাম্বার অবধি জোগাড় করে ফেলেছে ! নিশ্চয়ই এটা বাড়ির কারো কাজ । না হলে ও তো নাম্বার দেয়নি !
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
-“তুমি উনাকে মিথ্যে বললে কেন ? ”
-“তো কি বলতাম আমি ? বলতাম ওনাকে যে আমি আমার বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে দেখা করতে এসেছি ? ”
-“রেগে যাচ্ছ কেন রোজ ? শান্ত হও। ওনার তো আর কোনো দোষ নেই । ”
-“এই , তুমি একদম আমার সাথে ওনার হয়ে কথা বলবে না বলে দিলাম । উনি ভাল হোক আর খারাপ হোক তাতে আমার কিচ্ছু যায় আসে না । আর কি বললে তুমি , রাগ করবো না ! কেন করবো না হ্যাঁ ? আমার তো ইচ্ছে করছে ওই লোকের সব চুল টেনে ছিড়তে। ফালতু লোক একটা । ”
-” রোজ তুমি মিছি মিছি ওই ভদ্রলোককে দোষ দিচ্ছ। ওনার তো কোন দোষ নেই । উনি তো আর জানেন না আমাদের রিলেশনের কথা । ”
-“তুমি না আমাকে একদম লেকচার শোনাবে না । আমি এই মুহূর্তে শোনার মুডে নেই । আর তুমি আমাকে শান্ত হয়ে থাকতে বলছো কেন ? আর মাত্র 4 দিন পর আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে আর তুমি আমাকে শান্ত থাকতে বলছ ? মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে আমার । ”
রোজা দুই হাতে নিজের চুল টেনে ধরে । যখন ও খুব টেনশনে থাকে তখন এইভাবে কপালের ওপরের চুল টেনে ধরে ও নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করে । চোখ বন্ধ করে কিছু একটা ভাবে রোজা । যা করার আজকেই করতে হবে । কাল থেকে আব্বু আত্মীয়দের দাওয়াত করা শুরু করবেন। দেরি হয়ে গেলে হয়তো কিছুই করার থাকবে না । আর এই ছেলেকে খুব ভালো করে চেনে রোজা । বুক ফাটে তবু মুখ ফুটে না। নিজে কষ্ট পাবে তবু মুখ দিয়ে একটা শব্দ উচ্চারণ করবে না । ছেলে মানুষ এত শান্ত হয় কিভাবে ? এসব ভেবে রোজা নিজের মনেই হাসে – এত শান্ত না হলে ওর মতো রাগি , বাচাল মেয়েকে সামলাতো কিভাবে ?
-” তোমার ফোনটা দাও তো ” শাওন নিজের ফোনটা রোজার দিকে এগিয়ে দেয়। রোজা কন্টাক্ট লিস্ট চেক করতে করতে শাওনকে জিজ্ঞেস করে,” তুমি তোমার আব্বুকে কি বলে ডাকো ?”
-” আব্বু বলেই তো ডাকি । কেন জিজ্ঞেস করছ ?”
-“এমনি..”
-” এই, তুমি আব্বুকে কল করছ কেন ? ”
-” আমার ওনার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে ”
-“রোজ ,তুমি কি পাগল হয়ে গেছ ? , জিজ্ঞেস করলে কি বলবে ‘ কে তুমি ‘ ? ”
–“না ,আপাতত সুস্থ আছি ..তবে এর মধ্যেই যদি কিছু না করি তাহলে নিশ্চিত পাগল হয়ে যাব .. আর কি বলব সেটা নিয়ে টেনশন করো না। তুমি শুধু আমার সাথে থাকবে , বুঝলে ” এরপর রোজা ডান হাতের তর্জনী ঠোঁটে ঠেকিয়ে ” সু ” জাতীয় শব্দ করে । শাওন চুপ হয়ে যায়। রোজা ফোন লাউড স্পিকারে দিয়ে শাওনের দিকে তাকায় । এই মুহূর্তে রোজার ঠোটের কোনো দুষ্টু হাসি খেলা করছে । শাওন ঢোক গিলে জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভেজানোর চেষ্টা করে। টেনশনে ঘামতে শুরু করেছে ও । আব্বু যা রাগি লোক । কি হবে কে জানে ?
ছেলের ফোন পেয়ে মেহেতাব সাহেবের ঠোঁটে হাসি ফুটে ওঠে …
-“হ্যালো ,কেমন আছ শাওন ? ”
-“আস-সালামু আলাইকুম ,আব্বু ”
ছেলের ফোনে মেয়ে মানুষের কন্ঠ শুনে মেহেতাব সাহেব হতচকিয়ে যান । স্ক্রিনের উপর ভেসে ওঠা নাম্বারটার দিকে আর একবার চোখ বুলান।না, নম্বর তো ঠিকই আছে। তবে দুই ছেলের বাবা মেহেতাব সাহেব কোনো মেয়ের গলায় ‘ আব্বু ‘ ডাক শুনে কিছুটা বিগলিত হয়ে যান । তারপর নিজেকে সামলে সালামের জবাব দিয়ে জিজ্ঞেস করেন..
-“কে তুমি আম্মু ?”
-“আব্বু , আমি রোজা বলছি ”
-“রোজা , কিন্তু আমি তো তোমাকে চিনতে পারছি না ”
-“আব্বু আমি আর শাওন একসঙ্গে পড়ি , একই কলেজে ”
-“ওহ আচ্ছা, কিন্তু তুমি আমাকে আব্বু বলে ডাকছ কেন ?”
-“আসলে আব্বু ..”রোজা ইতস্তত করে। শাওনের দিকে তাকিয়ে দেখে ওর মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেছে । নিজের যে ভয় হচ্ছে না এমন নয় । রোজা শাওনের ডান হাতটা চিপে ধরে ।
-” কি হল? বলো .. ”
-“আসলে আব্বু , আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে গত কাল । কিন্তু আমি আপনার ছেলেকে বিয়ে করতে চাই । প্লিজ আব্বু রাগ করবেন না । শাওন আমাকে বলেছে আপনি নাকি ওকে খুব আদর করেন । প্লিজ আব্বু কিছু একটা করুন। এখন আপনি আমাদের একমাত্র ভরসা । না করবেন না আব্বু । প্লিজ ।নাহলে আমরা কেউ ভালো থাকব না “..
এক নিশ্বাসে কথাগুলো বলে রোজা শাওনের দিকে তাকায় । শাওন ওর দিকেই চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে । রোজা নিজেও ভয়ে কাঁপছে। কি জানি শাওনের আব্বু ব্যাপারটা কিভাবে নিবে? শাওনের হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসছে । রোজা বাচাল ,পাগলি টাইপের মেয়ে । তাই বলে এভাবে সরাসরি ওর আব্বুর সাথে কথা বলবে , এটা একদমই ভাবতে পারেনি ও।
এদিকে মেহেতাব সাহেব বিস্ময়ে হতবাক হয়ে আছেন। কিছুক্ষণের জন্য তিনি কথা বলতে ভুলে যান । কোনো অপরিচিত মেয়ে যে এভাবে হঠাৎ করে তার ছেলেকে বিয়ে করার কথা বলতে পারে এটা ওনার ভাবনারও অতিত । তবে মেয়েটার গলার আওয়াজটা ওনার বড়ো মিষ্টি মনে হয়। বিশেষ করে যখন ওনাকে ‘আব্বু ‘বলে ডেকেছিল তখন একমুহূর্তের জন্য উনি বাস্তবতা ভুলে গিয়েছিলেন। কিন্তু তবুও এমন একটা অপ্রত্যাশিত প্রস্তাবে উনার কপালের রগ ফুলে ওঠে । মেয়েটা মজা করছে না তো ? গম্ভীর স্বরে জিজ্ঞেস করেন ,
-” শাওন কোথায় ? ওকে ফোনটা দাও ? ”
মেহেতাব সাহেবের গুরুগম্ভীর কন্ঠস্বরে শাওন-রোজা দুজনেই কেঁপে ওঠে ।
-” হ্যালো আব্বু ..”
– কি হচ্ছে এসব ? মেয়েটা কে? ”
-“আ-আমার ফ্রেন্ড আব্বু ”
-“শুধু ফ্রেন্ড হলে এসব কেন বলছে? ”
– আ-আসলে আ-ব্বু … ”
-“তোতলাচ্ছ কেন ? যা বলার পরিষ্কার করে বলো? ”
-” স্যরি ..আব্বু ,”
-” ফাজলামি হচ্ছে নাকি ? আমি তোমাকে শহরে কেন পাঠিয়েছি ?পড়াশোনা বাদ দিয়ে কি করে বেরাচ্ছ এসব ? আজ সন্ধ্যার মধ্যে আমি যেন তোমাকে বাড়িতে দেখি । ”
মেহেতাব সাহেব নিজের কথা শেষ করে খট করে কল কেটে দেন। শাওনের কাছ থেকে আর জবাবের অপেক্ষা করেন না। ফোন হাতে নিয়ে শাওন হতবিহ্বল দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে রোজার দিকে । রোজা নিজেও এখন কাঁদো কাঁদো হয়ে গেছে । চোখের জল টলটল করছে । নিজের কৃত কাজের জন্য আফসোস হচ্ছে । এ ছাড়া আর কি বা করতে পারতো ও । চুপচাপ বসে থাকার থেকে এটাই ওর ঠিক মনে হয়েছে। শতভাগ না হলেও একটু আশার আলো তো দেখা যায় এতে ।
-” আব্বু কি খুব বেশি রাগ করেছেন ?”,রোজা থমথমে গলায় জিজ্ঞেস করে ।
-“তুমি মৌচাকে ঢিল দিয়েছ রোজ । দংশন না খেয়ে তো আর এমনি এমনি পার পাওয়া যাবে না ”
-“এভাবে বলছ কেন?আব্বু কি তোমাকে মারবে ? আর গালে হাত দিয়ে আছ কেন ?”
-” ভয়ে । জানো তো ,আব্বু সহজে রেগে যায় না।কিন্তু একবার রাগলে তুলকালাম কাণ্ড বাঁধিয়ে ছাড়েন। ছোটবেলায় ,তখন মনে হয় আমি ক্লাস সেভেনে পড়ি । কি যেন দোষ করেছিলাম । আব্বু এমন থাপ্পর মেরেছে যে আমি প্রায় এক সপ্তাহ কথা বলতে পারিনি ”
-“কেন? ”
-“কারন আমি প্রায় এক সপ্তাহ গাল নড়াতেই পারিনি ব্যাথার জন্য ….”
রোজা ছলছল চোখে তাকিয়ে থাকে শাওনের দিকে ।
To be continue….