অপ্রিয় সে পর্ব-১৬

0
1450

#অপ্রিয় সে
#সানজিদা সন্ধি
#পর্বঃ১৬

সকালে উঠে রিমুর ঘরের সামন দিয়ে যেতেই চক্ষু চড়কগাছ হয়ে গেলো রূপমের। রিমুর ঘরের দরজায় তালা লাগানো। রূপম বুঝলো রিমু ভোরেই বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছে। সে দৌঁড়ে গ্যারেজে গেলো। যা ভেবেছিলো তাই স্কুটি নিয়েই বেরিয়ে পড়েছে রিমু। রূপম রিমু রিমু করে দুই তিনবার ডেকে উঠলো এটা জানা সত্ত্বেও যে রিমু বাড়িতে নেই। মনের স্যাটিসফেকশনের জন্য। কিছু কিছু ক্ষেত্রে মনের স্যাটিসফেকশনের জন্য মানুষ অযৌক্তিক কিছু কাজ করে থাকে। যেমন কারো বলা কথা একবার শোনার পরেও আরেকবার জিজ্ঞেস করে মনের খোঁড়াক মেটানোর জন্য। রূপমের ডাকাডাকি শুনে সবাই একপ্রকার জড়ো হয়ে জিজ্ঞেস করলো, “কী হয়েছে?” রূপম বললো, ” রিমু বাড়ি থেকে চলে গিয়েছে।” সবাইকে কিছুটা আশাহত দেখা গেলো। যেখানে সবাই চাইছে এত বছরের অন্যায় গুলো মিটিয়ে রিমুকে আপন করে নিতে সেখানে রিমু দূরে দূরে চলে যাচ্ছে তাদের কাছ থেকে। সবার মুখে কালো মেঘ যেন নেমে এলো। রূপম তার ঘরে এসেই রিমুকে ফোন করলো। একবার, দুবার, তিনবারের বেলায় ফোন রিসিভ হলো। শুরুতেই রূপম ধমকে বলে উঠলো, ” আমি তোকে বাড়ি থেকে যেতে নিষেধ করেছিলাম আর তুই চলে গেলি? তাও আবার যাওয়ার আগে কাউকে জানালিও না? কার কাছে যাচ্ছিস, কোথায় থাকবি। যদি উল্টোপাল্টা কিছু হয়ে যায়? রিমু দায়সারাভাবে বললো, ” এতো কাহিনী করার কী আছে? মনে হচ্ছে আমি আহামরি কেউ। যার কিছু হওয়া না হওয়ায় কিছু যাবে আসবে? রূপম বিরক্ত হয়ে বললো, ” রিমু সবসময় ট্যারামি ভালো লাগে না। বিরক্ত লাগছে ভীষণ। যা জিজ্ঞেস করছি উত্তর দে সরাসরি। ” রিমু বললো আমার জানামতে আমি আপনাকে নিজে থেকে বিরক্ত করিনি। আপনি যেচে বিরক্ত হতে এসেছেন। আর যেসব কথা আপনার কাছে ট্যারামি মনে হচ্ছে সেসব আমার কাছে অতীব সাধারণ মনে হচ্ছে। আর ট্যারামির উদ্দেশ্যে আমি কিছু বলিনি। এগুলো আমার স্বাভাবিক কথা। যে যেভাবে নেবে আরকি! আর কী যেন বললেন? বিরক্ত লাগছে আপনার? বিরক্তি থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্যই তো এতোটা দূরে সরে এলাম। আপাতত আপনার সাথে কথা বলার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই আমার। আমি আমার এক বান্ধবীর কাছে আছি। আমার জীবন নিয়ে আপনাকে একটুও ভাবতে হবে না। ইভেন আপনাদের কাউকেই হবে না ভাবতে। আমাকে আমার মতো থাকতে দিন। আমি নিজেকে নিজের মতো গুছিয়ে নেওয়ার চেষ্টায় মত্ত আছি। রিমুর কথা কথাগুলো তীরের ন্যায় রূপমের হৃদয় ভেদ করে চলে গেলো। স্তব্ধ রূপম অসহায় হাসি হেসে বললো,” বাহ্ অনুপম ভক্ত। বেশ বললি! গুছিয়ে নে নিজের জীবন। শুভকামনা তোর জন্য। ” রিমু ফোন কাটতে উদ্যত হলো। গলার স্বর আস্তে করে বললো, ” এবার তবে রাখি?”
রূপমও হ্যাঁ সূচক উত্তর দিয়ে রেখে দিলো ফোনটা। এখন সবকিছু অনর্থক মনে হচ্ছে রূপমের কাছে। রূপমের অ্যাসিসটেন্ট তমাল বারবার ফোন করছে তাকে। রূপম ফোনটা সুইচ অফ করে অস্থির হয়ে গেলো। তার খারাপ থাকা আরো বেশি করে বাড়লো বোধহয়।

কালকের রাতের পরে বাড়িতে এসে দুদণ্ড শান্তি পায়নি সাদিয়া। রিমু যে তাকে ভুল বুঝেছে এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই তার। সে তো রিমুর ভালো ভেবেই গিয়েছিলো সেখানে।
কিন্তু এই ভালো ভাবা যে রিমুর অপছন্দও হতে পারে এটা কেন ভাবেনি সাদিয়া? রিমুর ফোনে বেশ কয়েকবার ট্রাই করেও লাভের লাভ কিছু হয়নি। সাদিয়া রূপমকে ফোন দিলো। কিন্তু রূপমের ফোনও সুইচ অফ। রেগে গিয়ে ফোন মেঝেতে আছাড় দিতে গিয়ে সাদিয়া ভাবলো ঋষিকে মেসেজ দিলে হয়তো কী হয়েছে জানতে পারবে। ঋষিকে মেসেজ দিয়েও সাদিয়া কিছু জানতে পারলো না। এখন তার প্রচন্ড অস্থির লাগছে। সবকিছু ভেঙে চুড়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে।

খানিক বাদে ফোন অন করে রূপম তমালকে ফোন ব্যাক করলো। তমাল জানালো কদিন পরে একটা শো এ জাজ হওয়ার জন্য ভীষণ অনুরোধ এসেছে। রূপম সরাসরি রিজেক্ট করে দিলো প্রস্তাব। তার যে মানসিক অবস্থা তাতে এ সময়ে কোনোকিছুতেই সে মনযোগ দিতে পারবে না । তমালের সাথে কথা শেষ করতে না করতেই ঋষির নম্বর ভেসে উঠলো স্ক্রিনে। রূপম ফোন ধরতেই ঋষি। উদ্বিগ্ন গলায় জানতে চাইলো ফোন কেন অফ ছিলো? আর রিমুর কী অবস্থা? রূপম আহত গলায় বললো, ” রিমু বাড়ি ছেড়েছে। ” ঋষি আশাহত হয়ে বললো, ” সবার কারণে বদলে গেলো মেয়েটা। তারই বা কী দোষ! তার সাথে যা ঘটেছে তা তো আর খুব সুখকর কিছু নয়। যে কারণেই হোক তার সুখ বিনষ্ট হয়েছে তোদের কারণে। এবার তোদের সুখহীনতায় ভোগার কারণ সে-ই হবে। মিলিয়ে নিস কথাটা।”

ঋষি সাদিয়ার কাছে ‘অপ্রিয়’ হওয়ার পরেও প্রয়োজনে ঋষিকেই টেক্সট করতে হচ্ছে সাদিয়াকে। কোনো ভাবে যদি সে রূপমের সাথে যোগাযোগ করে রিমুর খোঁজটা দিতো তাকে। ঋষির কথা ভাবতে ভাবতেই সে নক দিলো সাদিয়াকে। ঋষি বললো, ” রূপমের নম্বর খানিক আগে খোলা পাওয়ায় ঋষি ফোন করেছিলো তাকে। আর রিমু রূপমের অবাধ্য হয়েই বাড়ি ছেড়েছে। কথাটা শুনে আরো বেশি খারাপ লাগলো সাদিয়ার। ক্যাম্পাসের কাছেই তার বাসা। রিমু কী একবারও পারতো না সাদিয়ার কাছে চলে আসতে? আর এতো বড় সিদ্ধান্ত সে সাদিয়াকে ছাড়া নিলো কীভাবে? সাদিয়া তাদের চেনা জানা বন্ধু বান্ধবের সাথে যোগাযোগ করে জানতে পারলো আহানার বাড়িতে আছে রিমু। আহানা কাল রাতের বিষয়ে সম্পৃক্ত না হওয়াতেই রিমু তার কাছে গেছে। আহানার বাড়ির উদ্দেশ্যে তৈরি হয়ে নিলো সাদিয়া।

কালকের রাতের পর থেকেই কিছু ভালো লাগছে না রিমুর। রূপম তাকে প্রপোজ করবে এটা চিন্তা করা অসম্ভব তার কাছে। তবে কাল রিমুর সমস্ত ভাবনাকে ওলোট পালোট করে দিয়ে রূপম তাকে প্রপোজ করে বসলো। এটা কী সত্যি না কি মিথ্যা এটাই এখনো বুঝতে পারছে না রিমু। সবটা তার কাছে গোলক ধাঁধার মতো মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে সে বোধহয় কোনো সংশয়ের চোরাবালিতে আটকে গেছে।এখান থেকে উদ্ধার হওয়া ভীষণ জরুরি। তবে রূপম তাকে ভালো বাসুক বা না-ই বাসুক তাতে তার কিচ্ছু যায় আসে না। এসবে সে কখনো ফিরেও চাইবেনা। আহানার বাসার কলিংবেল বেজে উঠতেই আহানা ওয়াশরুম থেকে চেঁচিয়ে বললো, ” রিমু একটু গিয়ে দেখ কে এসেছে! ” আহানা একটা বাসায় নিয়ে একা থাকে। রুম মেটের ঝামেলা নেই বলে রিমুকে সে নির্দ্বিধায় ডাকতে পেরেছে। রিমু তার ভীষণ প্রিয় একটা মেয়ে। এই মেয়েটার জন্য আহানা সবকিছু করতে পারে। রিমু দরজা খুলে দেখলো সাদিয়া এসেছে। সাদিয়া ভেতরে ঢুকেই রিমুকে জড়িয়ে ধরলো। তারপর এক হাতে রিমুকে আগলে অন্য হাতে কান ধরে সরি বলতে লাগলো। অভিমানো মুখ ঘুরিয়ে নিলো রিমু। সে কখনোই ভাবেনি তারই বন্ধু বান্ধব তার অজান্তেই রূপমের সাপোর্টে যাবে। রিমু সাদিয়ার মুখোমুখি হয়ে সরাসরি বললো আমি কখনো ভাবিনি সাদিয়া তোরা রূপম ভাইয়ার পক্ষে যেতে পারিস। সব কিছু জানার পরেও তোরা কী করে পারলি? সাদিয়া বললো, ” রূপম ভাই তোকে ভীষণ ভালোবাসে রিমু। তুই যে সত্যিকারের ভালোবাসা পাস সে কারণেই। রিমু কপালে ভাজ ফেলে বললো আমার ভালোবাসার দরকার নেই। এতদিন অবহেলা পেয়ে পেয়ে ভালোবাসা সহ্য হবে না আর। সাদিয়া রিমুকে বললো এখনও অনেক কিছুই তুই জানিসনা রিমু। অনেক কথা অজানা আছে তোর। যেদিন জানবি সেদিন হয়তো অবাক হবি। ততদিন অবধি যেন ঠিক থাকে সবকিছু এই দোয়া করি। আর আমার এতদিনের ভালোবাসা বুঝি একদিনের ভুলের জন্য শেষ হয়ে যাবে? মাফ করে দে না রে রিমু। রিমু কিছু না বলে জড়িয়ে ধরলো সাদিয়াকে। ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসে দুই বান্ধবীকে একে অপরকে আলিঙ্গন করতে দেখে আহানা অভিমানী সুরে বললো, “বাহ্ আমাকে ছাড়াই? কে আমি?” সাদিয়া আর রিমু তাকেও জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে।

চলবে,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে