অপ্রিয় সে পর্ব-১৫

0
1642

#অপ্রিয় সে
#পর্বঃ১৫
#সানজিদা সন্ধি

রূপমের মুখ থেকে “ভালোবাসি” কথাটা শুনে বুকটা ভীষণ মুচড়ে উঠলো রিমুর। ভালোবাসি শব্দটা রিমু আগেও অনেক শুনেছে। অনেকে তাকে উদ্দেশ্য করে বলেছে। কিন্তু রিমু কখনোই কিছু অনুভব করেনি। রূপমের কথায় ঘোর কাটলো রিমুর। সে বললো, ” কী ব্যাপার? কিছু বলছিসনা যে?”

রিমু তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বললো, ” আজকেই আমার বিয়ে ভাঙলো আর আজকেই আমাকে নিয়ে মজা করা শুরু করলেন? আর কতো রূপম ভাই? এবার তো মুক্তি দিন আমাকে। আমি আর ছাঁয়াও দেখতে চাইনা আপনার। আর হ্যাঁ সাদিয়া, সাজ্জাদ তোরা কী করছিস এখানে? শেষ অবধি তোরাও মজা নিতে চলে এলি? বাহ্! সুন্দর তো বিষয়টা। ঋষি ভাইয়া, রিংকি আপু তোমরাও? কেন একটা মেয়েকে সম্পূর্ণ শেষ করে দেওয়া পর্যন্ত কী শান্তি নেই তোমাদের?

রিমুর কথা শুনে সবাই প্রায় সমস্বরেই বললো, ” রিমু ভুল বুঝিওনা। রূপম সত্যিই তোমাকে ভালোবাসে।”

রিমু ঠান্ডা গলায় বললো, ” আপনারা দুদিনেই বোধহয় রূপম ভাইকে খুব বেশি চিনে ফেলেছেন। আমি তার সাথে এত বছর ধরে আছি আর আমি জানবোনা সে আমাকে ভালোবাসে না কি অপছন্দ করে? শোনেন এসব আজগুবি বিষয় নিয়ে মাথা ঘামানো বন্ধ করুন। আর রূপম ভাই দোহাই লাগে মুক্তি দিন আমাকে। ”

মুক্তি শব্দটা আনন্দের প্রতিক। তবে এই শব্দটাই আজ ভীষণ ভারী লাগছে রূপমের কাছে। সে মিনমিনিয়ে বললো, ” এতো কঠিন কাজ তুই আমাকে কীভাবে দিলি রিমু? আমি কী অত শক্তিশালী না কি যে নিজের মনের বিরুদ্ধে গিয়ে তোকে মুক্তির স্বাদ, আনন্দ দিতে পারবো? তুই বড় পাষাণ রিমু। ভীষণ পাষাণ। এতো কঠিন কাজ কেউ কাউকে দেয়? এতো ভয়ানক আবদার কেউ করে কারো কাছে?”

রূপমের কথাগুলো কারো কান অবধিই পৌঁছালো না। তৃপ্তি রিমুকে বললো, ” দ্যাখো রিমু। রূপম সত্যি ভালোবাসে তোমাকে। আমি ওর বেস্টফ্রেন্ড আর আমি জানবোনা বলো?”

রিমুর কন্ঠস্বর কঠিন হয়ে এলো। চোখমুখ শক্ত করে সে বললো, ” তৃপ্তি আপু একটা কথা বলি। মিস্টার রূপম খান আমাকে ভালোবাসে এ কথাটা আমার কাছে পুরো হাস্যকর লাগলো। সে আমাকে কখনো ভালোবাসেনি। ভালোবাসতে পারে না। আর যদি ধরেও নেই সে আমাকে ভালোবাসে তাতে আমি কী করতে পারি? আপনার কী মনে হয় আমার জীবন থাকতে আমি কখনো তাকে গ্রহণ করবো? আপনি আমার স্থানে হলে কখনো গ্রহণ করতেন তাকে? একটা মানুষ দিনের পরে দিন আমাকে কষ্ট দিয়ে এসেছে আর আজ একটা প্রপোজেই সব কিছু মাফ? জীবন এতো সহজ না কি? গায়ে হলুদের দিন সে আমার কাছে চিরকুট পাঠিয়েছিলো বিয়ে করবেনা বলে। সেই কথাটা যখন সবাইকে জানালাম সে অস্বীকার করলো চিরকুট দেওয়ার কথা। আপনি ভাবতে পারছেন আমার মানসম্মান কতটা বিঘ্নিত হয়েছে? ”

রিমুর কথা শুনে রূপমের গলা ধরে আসছে। মনে হচ্ছে সে এক্ষুনি কেঁদে দিবে সবার সামনে। কিন্তু রূপম একটা ঢোক গিলে কান্না চাপালো। সে বললো, ” রিমু তোকে সাজরত অবস্থায় দেখতে আমার ভীষণ ইচ্ছে হয়েছিলো। কিন্তু তুই সাজলি না হলুদে। বিষয়টা আমার খারাপ লাগায় আমি ওই চিরকুট তোকে দেই টেনশনে ফেলার জন্য। পরে তুই যখন আমার কাছে এসে কলার চেপে ধরেছিলি তখন আমার রাগ হয়েছিলো বলে অস্বীকার করেছিলাম সব। রেগে গেলে মানুষ হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে যায়। বড় বড় মাপের মানুষ ভুল করে ফেলে। কতো কাহিনী হয়ে যায়। আর আমি তো একজন সাধারণ মানুষ। রাগ সামলানো আমার পক্ষে কষ্টকর ছিলো। ”

রূপমের কথা শেষ হতে না হতেই রিমু বললো, ” সামান্য টেনশনে ফেলার জন্য আপনি এত বড় কথা বলেছিলেন আমায়? এগুলো কোনো স্বাভাবিক মানুষ করতে পারে? আপনার যথেষ্ট বয়স হয়েছে। পাবলিক ফিগার আপনি অথচ আপনার এমন ব্যাবহার। শোনেন এরপর থেকে কোনো কাজ করতে গেলে হাজার বার ভাববেন। কোনো কথা মুখ থেকে বের করার আগে একটু ভেবে চিন্তে নেবেন। বলে না? ভাবিয়া করিও কাজ করিয়া ভাবিও না! বিষয়টা ঠিক সেরকমই। নয়তো কোনো ভুল কাজ হয়ে গেলে অনেক বেশি পস্তাবেন আপনি। ”

রূপম জবাব দেওয়ার কোনো ভাষা খুঁজে পেলো না। তার নিজেকে মেরে ফেলতে ইচ্ছে করছে। কেন এই অঘটনটা ঘটালো সে? এখন তার চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। আল্লাহ কী তবে তাদের জোড়া ঠিক করে রাখেনি? নয়তো একটা ভুলের কারণে রিমু তার থেকে আরো বেশি দূরে সরে যাচ্ছে।

রূপমের চোখে চোখ পড়লো রিমুর। সাথে সাথেই চোখ সরিয়ে নিলো রিমু। কিছুক্ষণের জন্য মনে হলো রূপমের চোখটা বুঝি লাল হয়ে আসছে। কিন্তু কেন হলো এমনটা?

রিমু আর কথা না বাড়িয়ে নিচে যেতে নিলেই রূপম হেঁচকা টানে রিমুকে সামনে দাঁড় করালো। রিমুর হাতটা শক্ত করে ধরেছে সে। যেন কিছুতেই ছাড়বেনা। কিন্তু তার চোখ ভীষণ অসহায়। রিমু জোর গলায় বললো, ” হাত ছাড়ুন রূপম ভাই। আপনাকে তো একদিন বলেইছিলাম আমার এসব একদম পছন্দ নয়। তবে কোন সাহসে আর কোন অধিকারে হাত ধরলেন৷ ”

রূপম আস্তে করে বললো, ” ভালোবাসি রে। ভালোবাসার অধিকারে হাতটা ধরেছি। আজীবন তোর শাস্তি মাথা পেতে নিবো। প্লিজ দূরে সরিয়ে দিসনা আমায়। মরে যাবো রে। এই রিমু প্লিজ।”

রিমু অসহায় বোধ করতে লাগলো এমন পরিস্থিতিতে। কে জানতো কোনোদিন এমন কিছুর মুখোমুখি হতে হবে তাকে৷ জীবন কাকে কখন কোন পরিস্থিতিতে দাঁড় করাবে কেউ জানে না। রিমু হাতটা ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলো। রূপমের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে সে কেঁদে দিবে। রিমু জোরগলায় কিছু বলতে পারলোনা। হাজার হোক মেয়ে মানুষের মন। মায়া, ভালোবাসা, দূর্বলতা দিয়ে ভরা।

রূপম রিমুর চোখে চোখ রাখলো। এদিকে রিমু চোখ সরিয়ে অন্য পাশে চেয়ে আছে। নিচ থেকে সবার ডাক আসলো। রূপম একটু অন্য মনস্ক হতেই রিমু হাত ছাড়িয়ে হনহনিয়ে চলে গেলো।

রূপম ধপ করে ছাঁদে বসে পড়লো। বুকের পা পাশে তার চিনচিনে অনুভূতি হচ্ছে। মরে যেতে পারলে বোধহয় শান্তি পেতো সে।

সবাই নির্বাক। কারো মুখে কোনো কথা আসছে না। তৃপ্তি রূপমের কাছে এগিয়ে এসে
বললো, ” রূপম সঠিক সময়ে সঠিক কাজ করতে শেখ। আর ভালোবাসা প্রকাশ করতে হয় ঠিক সময়ে। অসময়ে কিছু করে লাভ নেই। এখন চোখের জল ফেলা ছাড়া তোর কিছু করার নেই। ধৈর্য ধরে থাক৷ মেয়েকে যতো কষ্ট দিছিস তার হাজার গুন ভালোবেসে আপন করে নেওয়ার চেষ্টা কর৷ আল্লাহ তোর সহায় হোক৷

তৃপ্তি আর সাজ্জাদ ছাঁদ থেকে নেমে গেলো। ঋষি রূপমের পিঠে আলতো করে চাপড় দিলো৷ রূপম ঋষির হাত চেপে বাচ্চা ছেলেদের মতো কাঁদতে থাকলো। ছেলেরা সহজে কাঁদেনা। তাদের কান্না সহ্য করা অনেক বেশি কষ্টকর।

ডাইনিং টেবিলে বসে আছে সবাই। রিমু সবার মধ্যে বলে উঠলো আমি হোস্টেলে উঠবো আগামী কালকে। জানানো উচিত বলে মনে হলো। তাই জানালাম। রূপমের বুক পূনরায় মোচড় দিয়ে উঠলো৷ এটা কী বললো রিমু? সে বাড়িতে থাকবেনা কেন?

রূপম বললো, ” তোর কোথাও যাওয়া হবে না। এটা নিয়ে দ্বিতীয়বার যেন কথা না শুনি কোন। এটাই প্রথমবার বলার সাহস দেখালি আর এটাই যেন শেষবার হয়। ”

রিমু রূপমের কথার জবাব দিলোনা৷ চুপচাপ নিজের খাবার খেতে লাগলো। রূপম বললো বড় অবাধ্য হচ্ছিস ফল কিন্তু ভালো হবে না।

আরিয়ান সারা ঘরে ভাঙচুর করছে। আর চিৎকার করে বলছে তোর ফল ভালো হবে না রূপম খান।

চলবে,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে