#অপ্রিয় প্রেয়সীর ভালোবাসা –[৬]
#মুনিয়া_মিরাতুল_নিহা
_______________________
বিষন্নতার মেলা বসেছে আজ আয়মানের মনে শান্ত পরিবেশেও যেনো তার মনটা অশান্তিতে ভরে ওঠেছে কারনটা অযথাই। মনুষ্যের অবচেতন মন কখন ভালো খারাপ থাকে তা বোঝা বড়ই দায়। মনকে স্থিতিশীল করতে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়লো আয়মান। ভাগ্যও হয়ো তার এই যাত্রায় সহায় ছিলো না যার দরুন পথিমধ্যেই গাড়ি খারাপ হয়ে যায়। উপায়ন্তর না পেয়ে সেই গাড়ির সঙ্গেই হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে এক মনে ফোনে স্ক্রল করে যাচ্ছে! কর্নকুহুরে কোনো রমনীর হাসির শব্দ পৌঁছাতেই মা’থা তুলে তাকালো সেই সেয়েটির দিকে। মেয়েটির পরনে লাল রঙের থ্রিপিস মাথায় একটু খানি ঘোমটা দেওয়া। প্রকৃতির স্নিগ্ধ বাতাসে সেই ওড়নাটুকুও মা’থা থেকে গড়িয়ে পড়ে যাচ্ছে বারংবার। মেয়েটি নিজের হাত দিয়ে সযত্নে আবারো ওড়না টুকু মা’থায় টেনে দিয়ে বান্ধবীর সঙ্গে কথা বলতে বলতে আয়মানের পাশ দিয়ে চলে যায়। সেই মেয়েটির মুখের হাসি দেখে আয়মানের ব্যর্থিত মনেও যে কখন হাসির রেখা ফুটেছে তা সে নিজেই বুঝতে পারলো না!
মেয়েটি হাতে বই পত্র ছিলো পাশেই কলেজ, আয়মানের বুঝতে বাকি রইলো না মেয়েটি কলেজেই পড়ে। নিজের মনের মধ্যে থাকা মন খারাপ নিমিষেই ভ্যানিশ হয়ে গিয়ে দৃষ্টিতে সেই মেয়েটিকে স্থাপিত করে সোজা হাঁটা ধরলো ফুরফুরে মেজাজে!
তারপর থেকে প্রতিদিন সেই কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে সেই মেয়েটিকে দেখা যেনো নিত্যদিনের এক কাজের মধ্যে পড়ে গেছিলো আয়মানের। কিয়ৎক্ষন যাবত অপেক্ষা করার পর যখন সেই মেয়েটির চেহারা ভেসে ওঠতো সামনে তখন আয়মানের মুখেও হাসি ফুটতো। এমন করতে করতে প্রায় সপ্তাহ খানেক চলতে লাগলো। আয়মান দাঁড়িয়েও থাকতো এরকম জায়গায় সে মেয়েটিকে দেখবে কিন্তু মেয়েটির যেনো তাকে চোখে না পড়ে। সপ্তাহ খানেক পড় একদিন সেই মেয়েটি কলেজে এসেছিলো তার বান্ধবীকে ছাড়া। বাড়ি ফেরার পথে অঢেল বৃষ্টি শুরু হলো! তৎক্ষনাৎ গাড়ি থেকে একটি ছাতা নামিয়ে এনে মেয়েটির মা’থার উপর ধরে।
-‘ এই ছাতাটা নিন ম্যাডাম। বৃষ্টিতে তো ভিজে যাবেন। ‘
-‘ আমি আপনাকে চিনি না অথচ আপনার থেকে ছাতা কেনো নিতে যাবো বলুন?’
-‘ অপরিচিতো থেকেই চেনা হয়ে যাবেন যদি পরিচিতো হবার ইচ্ছে থাকে তো। এখন এই ছাতাটা নিবেন নাকি বৃষ্টিতে ভিজে চুপচুপে হবেন তারপর বাড়িতে যাবেন কি করে?’
সেই মেয়েটি কিছুক্ষণ ভাবলো। তখনও আয়মান মেয়েটির মা’থার নিচে ছাতা ধরে রেখেছে। এই কলেজ রাস্তায় এখন বহু স্টুডেন্ট আছে এখানে বৃষ্টিতে ভিজে একেবারে চুপচুপে হবার চেয়ে ছাতাটা নিয়ে নেওয়াই ঠিক মনে হলো সেই মেয়েটির কাছে।
মেয়েটি ছাতা নিয়ে চলে যাচ্ছে আয়মান দোকানের ছাঁয়ায় দাঁড়িয়ে আছে। মেয়েটি পিছন ফিরে আয়মানের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিলো।
-‘ এই ছাতার মালিককে কিভাবে খুঁজে পাবো ছাতা দিতে?’
-‘ সে তোমার চারপাশেই থাকবে তুমি কেবল খুঁজে নিও তোমার দু চোখ ঘুরিয়ে?’
মেয়েটি চলে গেলো সেই জায়গা থেকে। পরেরদিন আবার কলেজে আসার সময় সেই ছাতাটি নিয়ে আসে সঙ্গে সেই ছাতার মালিককেও দেখতে পায়। এভাবেই প্রতিদিন সেই ছাতার মালিকের সঙ্গে তার দেখা হতো। মেয়েটি বুঝতে পারতো আয়মান হয়তো তাকে পছন্দ করে। কিন্তু আয়মানের জায়গায় অন্য কোনো ছেলে হলে নির্ঘাত এতোদিনে ভালোবাসি বলতে বলতে কানের পোকা নড়িয়ে দিতো! কিন্তু আয়মান সেটা করেনি বিধায় হয়ত একটু একটু ভালো লাগা জন্ম নিয়েছে সেই মেয়েটির প্রতি!
সেই মেয়েটিই তানহা। তানহা তখন সবে সবে কলেজে ওঠেছিলো আর সেই কলেজের রোডেই আয়মানের প্রথম দেখা। এভাবেই প্রতিদিন আয়মান একটু খানি তাকিয়ে দেখতো তানহাকে। দু চোখের চোখাচোখি হতো, ঠোঁটের কোনে ফুটে ওঠতো মুচকি হাসি। এরকম করে আস্তে আস্তে একদিন আয়মানের সঙ্গে তানহার বন্ধুত্ব হয়ে ওঠে। মাঝে মাঝে একটু আধটু কথাও হতো আয়মান আর তানহার মধ্যিখানে। তানহার কাছে সেটা বন্ধুত্ব থাকলেও আয়মানের দিক থেকে সেটা বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিলো না। আয়মানের চাচাতো ভাইও সেম কলেজেই পড়াশোনা করতো। করতো বলে ভুল হবে বেচারা মাধ্যমিকে দু বার ফে’ল করে তবেই কলেজের মুখ দেখেছিলো। পড়ালেখায় টান ছিলো না তবুও বাবা মা চেয়েছিলেন উচ্চ মাধ্যমিক অব্দি পড়ুক। সে-ই চাচাতো ভাইয়ের সঙ্গেও কলেজে যেতো দরকারে সেই সূত্র ধরেই তানহার সঙ্গে আয়মানের বন্ধুত্বটা জমে ওঠে।
কলেজে প্রোগ্রাম ছিলো সেই পোগ্রামের উপলক্ষ্যে তানহা সেদিন শাড়ি আর হিজাব পড়ে কলেজে এসেছিলো। পুরো ছয় মাস তানহাকে আড়াল থেকে দেখে আয়মান সিদ্ধান্ত নেয় আজকেই মনের অব্যাক্ত অনুভুতি তানহার সামনে তুলে ধরবে। পরিবারেও বাবা মা বিয়ের জন্য চা’প দিচ্ছে। আয়মান কাজের অ’যুহাত দিয়ে এসেছে এতোদিন কিন্তু এখন আর অ’যুহাত নয় সে সত্যিই পেয়ে গেছে তার ভালোবাসা যার সঙ্গে সে সারাজীবন থাকতে চায়। আজকেই সবটা খুলে বলবে আয়মান তানহাকে। সেই মতনই নিজেকে প্রস্তুত করে আসে কলেজে আয়মান। নিচে অনেকক্ষন অপেক্ষা করে কিন্তু কোথাও দেখতে পায় না তানহাকে। আরো অপেক্ষা করতে থাকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তখুনি আয়মানের চাচাতো ভাই ফোন করে বলে উপরে ফাঁকা ক্লাস রুমটায় যেতে সে ওখানে আছে তার দরকার ভীষন। আয়মান যায় সেই ফাঁকা ক্লাস রুমে কিন্তু তার ভাইকে কোথাও দেখতে পায় না। সে রুমের ভেতরই অপেক্ষা করতে থাক। বসে না থেকে আরো একবার প্রস্তুতি নিয়ে ফেলার ঠিক কিভাবে বললে তানহা মানা করতে পারবে না!
ওদিকে বান্ধবীদের সঙ্গে প্রচুর হই হুল্লোর করে এক পর্যায়ে মুখে রং লাগাতে তানহার হিজাবটা প্রায়ই খুলে আসছিলো তখুনি সে হিজাব ঠিক করার জন্য ওয়াশরুমে যায় সেখানে কয়েকটা ছেলেকে দেখে তড়িঘড়ি করে ক্লাসে যাবার সময়ই পায়ে হোঁ’চট খায়! যার ফলে তানহার শাড়ির কুচিগুলো এলোমেলো হয়ে যায়। উপায়ন্তর না দেখে তানহা নিজের ক্লাসে যাবার আগে ফাঁকা ক্লাসরুম টায় ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলো। সেই রুমেই ছিলো আয়মান, তানহা জলদি করে দরজা বন্ধ করার ফলে আয়মানকে দেখতে পায়নি। দরজা বন্ধ করার শব্দে আয়মান ঘুরে তাকাতেই তানহাকে দেখতে পায়!
এলোমেলো শাড়ির কুচি আর হিজাব পড়া অবস্থায় তানহাকে দেখে বিমোহিতো দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে কতক্ষণ নিজের প্রেয়সীর দিকে! ওদিকে তানহা আয়মানকে দেখে বেশ ভড়কে যায়। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আসছে। মনের মধ্যে উঁকি দিচ্ছে যদি কিছু খা”রাপ হয়? সেইভাবনার প্রয়াস ঘটিয়ে তানহা দরজা খোলার সময়ই আয়মান তানহার হাত ধরে বসলো! এতে তানহার ভ’য় বেড়ে দ্বিগুন হলো।
-‘ ভ’য় পেয়ো না প্লিজ, আমার কথাটি শুনো একটি বার?
-‘ আমি কিছু শুনবো না, পরে শুনবো এখন যেতে হবে।’
-‘ তানহা অনেক হয়েছে লুকোচুরি আর নয়। তুমি নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছো এই ছয় মাস আমি এমনি এমনি তোমাদের কলেজের পাশে দাঁড়াতাম না? শুধু তোমাকে একটি পলক দেখার জন্যই আমি দাঁড়িয়ে থাকতাম। তোমাকে দেখে মনের কোনে হাসি ফুটতো। সকল মন খারাপ নিমিষেই দূর হতো। এতোদিন একটু একটু করে তোমার প্রতি জন্মানো অনূভুতির গুলোর নাম শুধু একটাই ভালোবাসি! হ্যাঁ আমি তোমাকে ভালোবাসি তানহা। তুমি আমার প্রেয়সী, সারাজীবনের সঙ্গী। কথা দিচ্ছি কখনো ছেড়ে যাবো না? তুমি কি আমাকে ভালোবাসো?’
-‘ আপনার উত্তর আমি পরে দিচ্ছি কিন্তু তার আগে আমাকে যেতে দিন হাতটা ছেড়ে দিন প্লিজ।’
আয়মান বুঝতে পারে তানহা ভ’য় পাচ্ছে। সে তানহাকে চলে যেতে বলে। হাত ছেড়ে দেয় তানহার। দরজা খুলতেই দেখে বাহির থেকে বন্ধ করা দরজা! তানহা ঘা’বড়ে যায় হঠাৎ করে কে বন্ধ করলো দরজা? এখন এই বদ্ধ রুমের ভেতর শুধু আয়মান আর তানহা। ভ’য় আরো বেড়ে যাচ্ছে ক্রমশ। তানহা চিৎকার করতে লাগলো দরজা খুলে দেবার জন্য।
ওদিকে এক টিচার খুঁজছে তানহাকে তার এক স্টুডেন্টকে নো’টস দেবার জন্য যেটা সে তানহাকে দিয়েছিলো সেই স্টুডেন্ট কে দেবার জন্য তানহা বলেছিলো আজকে দিয়ে দিবে কিন্তু না দেওয়ার কারনে সেই টিচার খুঁজছে তানহাকে। খুঁজতে খুঁজতে অনেকক্ষণ খুঁজে না পেয়ে তানহার ক্লাসমেটদের নিয়ে সেই ফাঁকা বদ্ধ রুমের কাছে যেতেই সবাই শুনতে পায় তানহার চিৎকার!
-‘ আমাকে সাহায্য করুন, কেউ আছো থাকলে দরজাটা খুলে দাও। আমি আটকা পড়েছি আমাকে সাহায্য করো আমার খুব ভ’য় করছে এখানে। ‘
আয়মান নিরব দর্শকের মতন চেয়ে আছে তানহার পানে! সে-ও বুঝে ওঠতে পারছে দরজাটা বন্ধ করলো কে? ইতিমধ্যে সবাই এসে পৌঁছেছে সেই রুমে তানহার চিৎকার শুনে। তামান্না এসে দরজা খুলতেই তানহা তামান্নাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়! উপস্থিত সবার তানহার এলোমেলো অবস্থা আর কান্না তারউপর বদ্ধ রুমের ভেতর আয়মানকে দেখে তাদের মনে ধারনা করে নেয় কি হয়েছে!
-‘ এই ছেলেটি কি তোমার সঙ্গে উল্টেপাল্টে কাজ করার চেষ্টা করেছিলো তানহা? তুমি এমন অগোছালো কেনো? কি হয়েছে আমাদের খুলে বলো? নিশ্চয়ই কিছু খারাপ করেছে না তোমার সঙ্গে এই ছেলেটা? এই ছেলে তুমি কেমন চ’রি’ত্রহীন ল’ম্প’ট ছেলে বদ্ধ রুমে একটা মেয়ের সুযোগ নিচ্ছো! পরিবারের কোনো শিক্ষা নেই তোমার?’
-‘ স্যার আপনারা ভুল বুঝছেন আমি তো শুধু তানহাক*
-‘ স্যার একে আমাদের হাতে ছেড়ে দিন। আমরা মজা বুঝিয়ে দিচ্ছি! ‘
কয়েকটা উ’শৃং’খ’ল ছেলেরা মিলে আয়মানকে মা’রধ’র করে। ভাগ্যবশত আময়ানের চাচাতো ভাই রাজীব অতি কষ্টে সেখান থেকে আয়মানকে ছাড়িয়ে আনে। এর ভিতর তানহা যখন সবাইকে বলছে আয়মানের কোনো দোষ নেই ওকে যেনো ছেড়ে দেয়। তখুনি সবাই তানহাকে নিয়ে কানাঘুষা করা শুরু করে দেয়!
-‘ এইতো তানহা বলছে ওর কোনো দোষ নেই। এইখানে কিসব গোলাপ ফুল পড়ে রয়েছে! যদি ছেলোটা সুযোগ নিতো তাহলে এসব নিশ্চয়ই আনতো না? এগুলো আগে থেকে সব সাজানো! নতুবা এসব কোত্থেকে আসল? ছেলেটার উপর সব দোষ চা’পিয়ে দিয়ে এখন তানহা ভালো মানুষ সাজছে। আবার ছেলেটাকে বাঁচিয়েও নিলো কি সুন্দর করে?’
তানহা আপ্রান বোঝানোর চেষ্টা করলো, সে এসব কিচ্ছু করেনি।
-‘ স্যার বিশ্বাস করুন এসব কিচ্ছু করিনি। আমি তো জাস্ট আমার হিজাব টা ঠিক করার জন্য রুমে ঢুকেছিলাম আর তখুনি উনাকে দেখতে পাই আর উনি আমাকে কিসব ভালোবাসি বলছিলো। আমি জানি না উনি কেনো এসেছেন এখানে।’
–‘ তোমার থেকে অন্ততো এটা আশা করিনি তানহা। ভালোবাসি বলছিলো, ফুল দিয়েছে আবার দরজা বন্ধ করে রেখে ছিলে ধরা খাবার পর এখন বলছো তুমি কেনো জানো না? কথাগুলো তো একটু সাজিয়ে বলো? তোমাকে ভালো ভাবতাম কিন্তু তুমি ছিহঃ তুমি ক’লং’ক এই কলেজের!’
শুধু টিচার নয় আরো অনেক স্টুডেন্ট সহ সেদিন তানহাকে অপ’মা’ন, কটু কথা সব বলতে থাকে! তানহা এসব কিছু সহ্য করতে না পেরে বাড়িতে এসে বাবা মা’কে কাঁদতে কাঁদতে সেদিনই সবকিছু বলে। তানহার বাবা মায়ের মেয়ের উপর পুরো আস্থা ছিলো তারা তানহাকে মান’সি’ক ভাবে বুঝায় আশেপাশের কারো কথায় কান না দিয়ে। কারন সন্তানের বলা কথা, চোখের পানি কোনটা সত্যি মিথ্যা সেটা সব বাবা মা’ই বুঝতে পারে। স্টুডেন্ট, সহ চারিপাশের মানুষের নানান কটু কথার ভিড়ে তানহাকে অন্যত্র পাঠিয়ে দেয় তানহার বাবা মা। আয়মান তামান্নার থেকে নম্বর নিয়ে রাত্রিবেলা ফোন করে তানহার ফোনে।
-‘ আমি জানি না কি করে দরজাটা বন্ধ হলো। এখন নিশ্চয়ই তুমিও সবার মতন করে বলবে আমিই সবটা করেছি কিন্তু বিশ্বাস করো আমি কিচ্ছু করিনি। তবুও যা-কিছু হয়েছে তার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী তোমার কাছে। আমি মা’র খেয়েছি তাতেও কোনো আপত্তি নেই যদি তুমি পাশে থাকো। আমি সত্যিই তোমাকে বেশি ভালোবাসি তানহা। ‘
পরিস্থিতি এমনিই ভালো ছিলো না তার উপর আয়মানের কথা শুনে তানহার রা’গ ওঠে যায়!
-‘ আপনার ভালোবাসা নিয়ে আপনি থাকুন! আপনার জন্য সবটা হয়েছে! আপনি বলছেন আপনি মা’র খেয়েছেন এটা কিছু না? এসব তো আপনার জন্যই হয়েছে! আপনার জন্য আমি চরিত্র’হী’ন অপবাদ শুনেছি। কে বলেছিলো আপনাকে কলেজে আসতে? আপনার জন্য আমাকে কতোটা অপ’মা’নিতো হতে হয়েছে সেটা আপনার ধারনাও নেই! আপনাকে আমি ভালোবাসবো তো দূর! আপনার জন্য শুধু ঘৃ’নাই অবশিষ্ট আছে বুঝলেন? ঘৃ’না করি আমি আপনাকে!”
শেষ কথা হয় আয়মানের সঙ্গে তানহার! নিজের প্রেয়সীর মুখ থেকে ভালোবাসি শোনার বদলে ঘৃ’না করি এই শব্দটা যে ঠিক কতোটা কষ্টের ছিলো সেটা আয়মান সেদিন বেশ ভালো করেই উপলব্ধি করেছে! তানহা বোঝেনি আয়মানের কষ্ট আর না আয়মান দেখেছিলো সেদিন তানহার অ’প’মান! দু’জনের দিক থেকেই অভিমানের এক পাহাড় তৈরী হয়। আয়মান তানহাকে ভোলার জন্য বিদেশে পাড়ি জমায়! রাসেল মানে আয়মানের চাচাতো ভাইকে সবটা আড়াল রাখতে বলে। বিদেশের শক্ত মাটিতে নিজেকে শক্ত করে গড়ে তুলে আয়মান! পরিবারের সঙ্গেও ভালো করে কথা বলতো না দু তিন মাস পর দু এক বার ফোন দিতো। আয়মানের বাবা মা ছেলেকে নিয়ে দু’শ্চিন্তার শেষ ছিলো না! হঠাৎ করে পরিবর্তন ছেলের ভিতর সেটা বাবা মা-ও মেনে নিতে পারেনি! কিন্তু কিছু করার ছিলো না আয়মান নিজেকে পুরো গুটিয়ে নিয়েছিলো!
সেদিনের পরই তানহার বাবা মা তানহাকে কয় মাসের জন্য বেড়াতে পাঠিয়ে দেয়। তারপর পুরো এক বছর পর তানহা আবারো নতুন কলেজে ভর্তি হয় নতুন উদ্যমে পড়াশোনা করার জন্য। সবটা ঠিকই ছিলো পড়াশোনার মাঝখানে নির্জনের সমন্ধ আসে তানহার জন্য যা তানহার পরিবার ফেরাতে পারেনি। বিয়েও ঠিক হয়েছিলো কিন্তু ভাগ্যের ফেরে বিয়েটা হলো না!
একমাত্র ছোটো ভাইয়ের বিয়েতে আসার করুন অনুরোধ আটকাতে পারেনি আয়মান। পরিবারের কথা ভেবে নির্জনের বিয়েতে এটেন্ড করার সিদ্ধান্ত নেয় কিন্তু কে জানতো সেই অতীত আবারো তার বর্তমানে এসে পড়বে?
অতীতের কথা ভেবে ভেতর থেকে এক তপ্ত দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসলো আয়মানের! মা’থা থেকে অতীতের চিন্তা বাদ দিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করলো। যতোই বাদ দিতে চেষ্টা করুক কিন্তু আদৌ কি কোনো ঘটনা একেবারে আমাদের জীবন থেকে বাদ দেওয়া যায়? হয়তো বা একেবারের জন্য না! অতীতের ছাঁপ ভবিষ্যতে ও পড়ে যেমনটা তাদের সম্পর্কটা এখনো সহজ হয়নি সেই তিক্ত অতীতের জন্য।
#চলবে?