অপ্রিয় জনাব পর্ব-০৭

0
512

#অপ্রিয়_জনাব
#Mehek_Enayya(লেখিকা)
#পর্ব_০৭

পড়ন্ত বিকেলে পুকুরপাড়ের ঘাটে পানিতে পা ডুবিয়ে বসে আছে উপমা। শুধু বসে আছে বললে ভুল হবে মাটিতে কিছু একটা আঁকিবুকি করছে। যেখানে সবাই বৈঠকখানায় বসে আলাপ করছে সেখানে উপমা এখানে এসে বসে আছে। তার বিরক্ত, অস্বস্থি লাগে সকলের সাথে। কিছুক্ষন আগেই তার সোহরাবের সাথে দেখা হয়েছিল। সন্দীহ নজরে তাকিয়ে সোহরাব তাকে প্রশ্ন করে,
-মেয়ে কে আপনি? কোন উদ্দেশ্যে জমিদার গৃহে পা রেখেছেন?
বক্ষপিঞ্জরা কেঁপে উঠে অজানা ভয়ে। মিনমিনে স্বরে উপমা জবাব দেয়,
-আমি উপমা। আর কোনো পরিচয় নেই আমার।
-গ্রামের কোনো সাধারণ মেয়ে পুরুষদের সাথে পাল্লা দিয়ে মারপিট করতে পারে না আমার জানা মতে!
-এটা আপনার ভুল ধারণা। মেয়েরা শুধু মার খাওয়ার জন্য জন্ম হয়নি দেওয়ার জন্যেও হয়েছে।
-তা এতো তেজি, আত্মনির্ভরশীল মেয়ে নিজের আত্মরক্ষার কথা ভেবে একজন বিবাহিত পুরুষকে বিবাহ করতে রাজি হয়ে গেলো! বিষয়টা কেমন জটিল হয়ে গেলো না!

বুকে হাত গুঁজে টানটান হয়ে দাঁড়িয়ে কথাটা বলল সোহরাব। মুখে রসিকতা ভাব যেনো। উপমা চোরা চোখে তাকিয়ে বলে,
-আপনার কোনোভাবে আমার ওপর সন্দেহ হচ্ছে সেটা বললেই তো পারেন।
-সন্দেহ হতে পারে না কী? আমাদের তো শত্রুর অভাব নেই। হতেও পারে আপনি তাঁদের মধ্যে কারো গুপ্তচর!
-আমি আশ্চর্য না হয়ে পারলাম না!
কিঞ্চিৎ বিস্ময় চোখে তাকালো উপমা। সোহরাব আর কিছু বলল না। পাশ কাটিয়ে চলে গেলো। ধপ করে নিঃশাস নিলো উপমা। এই মানুষটাকে ভীষণ ভয় করে তার। মুখে কেমন যেনো গম্ভীর্যতা! যখনই সামনে থাকে তখনই উপমার মনে হয় এই বুঝি ধরা পরে গেলো।

গৃহের ভিতর থেকে চিৎকার চেঁচামেচির আওয়াজ শুনে উঠে দাঁড়ায় উপমা। শাড়ী ঠিক করে মাথায় বড় একটি ঘোমটা দিয়ে গৃহের উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়।

-আপনাকে আমি আমার জন্য ভাবা অথবা আমার জীবনের কোনো বিষয়ে নাক গলানোর অধিকার দেইনি মনে রাখবেন।
গৃহের ভিতরে পা রাখতেই তাহসিয়ার মুখে উক্ত বাক্যটি শুনতে পায় উপমা। বৈঠকখানায় উপস্থিত আলাউদ্দিন, তুলসী, মিনা, তরনা, তাহেরা, তুলিকা। উপমা দু পা এগিয়ে যায়। তাহসিয়া রাগে বসা থেকে দাঁড়িয়ে পরেছে। আলাউদ্দিন তার কথার পাল্টা জবাবে বলেন,
-মুখ বন্ধ করো তাহসিয়া। তুমি ভুলে যেয়েও না আমি তোমার পিতা।
-আপনাকে আমি কখনই পিতা রূপে দেখি না। আপনি কারো পিতা হওয়ার যোগ্যতা রাখেন না।
ক্ষিপ্ত কণ্ঠে বলে তাহসিয়া। তাচ্ছিল্য ভরা দৃষ্টি সরিয়ে নেয়। আলাউদ্দিন ক্রোধে উঁচু স্বরে বলল,
-দিন দিন বেয়াদপ হয়ে যাচ্ছ তুমি। এই একটা কারণেই আমি তোমাকে শহরে পাঠাতে চাইনি। ছোট বোনের বয়স হয়ে যাচ্ছে তারও তো বিবাহ দিতে হবে। কেনো বিবাহের জন্য রাজি হচ্ছ না তুমি?
-কী চাচ্ছেন আপনি? আপনার মতো আমরাও দুইটা তিনটা বিবাহ করে আপনার মুখ উজ্জ্বল করি?
তুলসী মৃদু কেঁপে উঠলো মেয়ের কথা শুনে। সে জানতো তাহসিয়াকে বিবাহের কথা বললে সে এটাই বলবে। আলাউদ্দিন ফোঁস করে নিঃশাস নেয়। কিছু বলতে যাবে সেইসময় সিঁড়ি বেয়ে আসতে সোহরাবকে দেখতে পায়। সোহরাব শান্ত স্বরে সবটা পরোক্ষ করে বলল,
-তাহসিয়া যেহেতু বিবাহের প্রতি ইচ্ছুক না তাই তাকে জোর করবেন না। জোর করে সবকিছু হয় না আব্বাজান।

তাহসিয়া স্থান ত্যাগ করলো সেই মুহূর্তে। আলাউদ্দিনও সদর দ্বার দিয়ে বাহিরে চলে গেলো। সোহরাব বোনের পিছু পিছু চলে যায়। উপমা সবটা দেখে নিজ কক্ষে যেতে নিবে সেইসময় তাহেরা বলল,
-ছোট ভাবিজান বড় ভাবিজান আপনাকে ডেকেছিল।
-ঠিক আছে।
উপমা নরম পায়ে হেঁটে ছায়ার কক্ষের স্মুখীন এসে দাঁড়ায়। ভিতরে প্রবেশ করার আগেই ছায়া অস্থির হয়ে জিগ্যেস করে উঠলো,
-এইরকম চিৎকার চেঁচামেচির আওয়াজ শোনা যাচ্ছিলো কেনো উপমা?
উপমা এগিয়ে এসে বিছানায় বসে। শান্ত ভনিতায় বলল,
-তাহসিয়া আপা আর আব্বাজানের মধ্যে একটু কথা কাটাকাটি হয়েছিলো।
-ওহ! এটা আর নতুন নয়।
-আচ্ছা আপা তাহসিয়া আপা এইরকম কেনো? তার কী পূর্বে বিবাহ হয়েছিলো?

ছায়া এদিকসেদিক তাকিয়ে স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বসে। উপমার প্রশ্নের উত্তর স্বরূপ বলল,
-হ্যাঁ, ওর আগে বিবাহ হয়েছিলো। আমি আর তাহসিয়া সই ছিলাম ছোটকাল থেকে। তাহসিয়া ভীষণ পড়ুয়া ছিল। বয়স যখন সতেরো তখন জোর খাঁটিয়ে বিবাহের পিঁড়িতে বসানো হয় তাকে। ওর স্বামী ভালো ছিল না। লোভে পরে বিবাহ করে তাহসিয়াকে। তারপর দিনের পর দিন তার ওপর অত্যাচার করে, জুলুম করে। জেদের কারণে এই বাসায়ও আসতো না। একদিন তাহসিয়া ফাঁ’সি দেওয়ার প্রয়াস করে কিন্তু পারে না তার শশুর দেখে আটকে ফেলে। সেইদিনের পর থেকে ভীষণ অসুস্থ হয়ে পরে সে। উনি যখন গ্রামে আসেন সবটা জানতে পেরে তাহসিয়াকে নিয়ে আসেন। আব্বাজান তাহসিয়াকে অনেক বকাঝকা করেন স্বামীর বাসা থেকে চলে আসার জন্য। সোহরাব রাগে সেইসময় বোনকে নিজের সাথে করে শহরে নিয়ে যান। আর তার বাকি পড়াশোনা শেষ করতে সাহায্য করেন।

সবটা শুনে স্তব উপমা। বাবারা এমনও হয়! কই তার বাবা তো আপন বাবা ছিল না তবুও তাকে কত ভালোবাসা দিয়েছিলো! উপমার মুখ ভঙ্গি দেখে ছায়া গম্ভীর স্বরে বলল,
-জমিদাররা তাঁদের প্রজাদের জন্য যত ভালো বাহ্যিক রূপে সাজেন তাঁদের ভিতরের রূপ ঠিক ততই কুৎসিত থাকে। তাঁদের কথায় গলে যাওয়া মানে নিজের সর্বনাশ নিজেই করা।
উপমা কিছু বলল না। ডাগর ডাগর চোখে তাকিয়ে রইলো। ছায়া কথায় ফোড়ন কেটে স্মিত হেসে বলল,
-যাক গে তুমি এত কিছু মস্তিকে নিও না। নিজেকে নিয়ে ভালো থাকার চেষ্টা করো।
-জি আপা।
উপমা উঠে চলে যেতে উদ্যত হতেই ছায়া পুনরায় চোরা চোখে তাকিয়ে বলল,
-উনি তোমাকে সন্দেহ করছে উপমা! তালাক দেওয়ার কথাও বলেছিলো।
উপমা পিছনে ফিরে হাসলো। হাসিটা ছিল কিছুটা রহস্যময় এবং তীক্ষ্ণ।
-সেটা আমিও বুঝতে পেরেছি আপা। আপনার উনিটা দেখতে বোকাসোজা মনে হলেও উনি ভীষণ চতুর।
-সাবধানে থেকো।
_________________________
চেয়ারের ওপর মোম বাতি জ্বালিয়ে বিছানায় আধশোয়া অবস্থায় বসে বই পড়ছিলো ছায়া। সারাদিন শুয়ে থাকার ফলস্বরূপ রাত্রি তার ঘুমের নামমাত্র নেই। রাতে মোম জ্বালিয়ে বই পড়া তার অন্যতম প্রিয় এক অভ্যাস। সহসা লাগানো আধখোলা দরজা সম্পূর্ণ খুলে যাওয়াতে বিস্মিত দৃষ্টি সেদিকে নিবন্ধ করে। ছায়াকে অবাক করে দিয়ে কক্ষে প্রবেশ করে সোহরাব। মোমের ক্ষীণ আলোয় ছায়া গোলগোল আঁখিজোড়া দিয়ে সোহরাবের নত মুখশ্রী দেখতে থাকে। মনে মনে বলে উঠলো,
-এতো মায়া কেনো ঐ শ্যামবর্ণ পুরুষের মুখে!

সোহরাব ভিতরে প্রবেশ করে পাঞ্জাবীর বুকপকেট থেকে একটা কাগজ বের করে এগিয়ে দেয় ছায়ার নিকট। ছায়া প্রশ্নবোধক দৃষ্টি একবার সোহরাব তো একবার কাগজটার দিকে যাচ্ছে। সোহরাব বিষয়টা লক্ষ্য করে বলল,
-নিন এটা।
-কিসের কাগজ?
-উপমা নামক বহুরূপী নারীর বাসা থেকে এই কাগজটা আমি পেয়েছিলাম।
ছায়া কিছু না বলে কাগজটা এক প্রকার কেড়ে নেয়। খুলতে যাবে তার পূর্বেই সোহরাব রুক্ষ হেসে বলল,
-উনি নিজেকে চালাক ভাবেন। জমিদার গৃহে পর মানুষদের প্রবেশ করা নিষিদ্ধ বলে একবারে নিজের পরিচয় লুকিয়ে জমিদারের পুত্রের স্ত্রী রূপে প্রবেশ করলেন! বেশ বেপারটা!

ছায়া কিছু বলা প্রয়োজন বলে মনে করলো না। কাগজটা খুলে মোমের আলোর স্মুখীন ধরলেন। স্পষ্ট দেখতে পেলেন গোল গোল আকৃতি করে জমিদার বাড়ির সকল সদস্যের নাম লেখা। মধ্যে সোহরাবের নাম বড় করে চিহ্নিত করা। কয়েকজনের নামের ওপর আবার লাল কালি দিয়ে বৃত্ত ভরাট করা।
ছায়া শুকনো ঢোক গিললো। সোহরাবের গম্ভীর চাহনি ছায়ার ওপর নিবদ্ধ। মেয়েটাকে কখনই এতো কাছে থেকে দেখা হয়নি তার। হাসপাতালে কিছুদিন একসাথে থাকায় কেমন যেন অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। বিয়ের পর কখনই সে গ্রামে তিনদিন কী চারদিনের বেশি থাকেনি। ছায়ার সাথে সময় কাটানোও হয়ে উঠেনি। তবে কী অনেকদিন একজনের সাথে থাকলে তার মায়ায় পরে যেতে হয়! তাহলে কেনো এই বিবাহের এতো বছরে একবারও প্রয়াস করলো না সম্পর্কটা ঠিক করার? সে পুরুষ সে তো সব কিছুই জোর করে করতে পারে। তবে জোর করে কী ছায়ার মন পেতো!ছায়া যে তাকে দু’চোখে দেখতে পারে না! কথাগুলো ভাবলো সোহরাব!

বিবাহের পর থেকেই সোহরাব উপমার ওপর নজরদারি করছেন। কোনো একটা বিশেষ কারণে মেয়েটা তার মস্তিকে চেপে বসেছিল। তার উপমাকে সন্দেহ হয় তাইতো বিশেষভাবে খেয়ালে রাখেন তাকে।

ছায়া কেমন ভীত নজরে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। সোহরাব আরেকটু এগিয়ে আসলো। ছায়ার থুতনি ধরে মাথা ওপরে তুললো। অসুস্থ থাকায় কিছুটা মলিন মুখশ্রী। সোহরাবকে দেখে আঁতকে উঠলো ছায়া। কেমন শব্দহীন ভয়ংকর হাসি! সোহরাব ছায়ার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,
-নিজেকে এতোটাও ভালো প্রকাশ করিয়েন না। শত্রুরা ভালো রূপ দেখিয়ে চুর্ণবিচুর্ণ করে যাবে তখন সহ্য করা কঠিন হয়ে পরবে। আমাকে ঘৃণা করুন ঘৃণার জায়গায়, তবে নিজের স্বামীকে অন্য কাউর হাতে তুলে দেওয়ার মতো মহৎ কাজ করতে যাবেন না।
-তাহলে আপনি কিভাবে স্ত্রী রেখে মায়ের কথায় অন্য এক মেয়েকে বিবাহ করলেন? সেইসময় কী আপনার মনে ছিল না আমি আপনার স্ত্রী এখনও বেঁচে আছি? মায়ের মনরক্ষার্থে স্ত্রীর চিত্তে আঘাত করেছেন আপনি। আম্মাকে ভালোবাসা তার কথা মেনে চলা মন্দ কাজ নয়। তবে মায়ের কথায় নিজ ইচ্ছার বিরুদ্ধে স্ত্রী বেঁচে থাকার সত্ত্বেও দ্বিতীয় বিবাহ করা আমার মতে পুরুষ নয় কাপুরুষের কাজ!

এক স্বরে সবটা বলে দম নিলো ছায়া। মনের যত ক্ষোপ ছিল সব বের করে ফেললো। ভারী মনটাও একটু হালকা হলো বোধয়। সোহরাব একই ভঙ্গিতে তাকিয়ে রইলো ছায়ার দিকে ঝুঁকে। তাঁদের বিবাহের পর এই প্রথম ছায়া তার মনের কথা, মনের ক্ষোপ তার সাথে খুলে বলেছে। হোক সেটা রাগে বা অভিমানে। ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসে সোহরাব। অতি ক্ষীণ সময়ের হাসি। কঠিন্য স্বরে বলল,
-ধরে নিলাম আমি কাপুরুষ, আমি পুরুষের কাতারে পরি না। তবে আমাকে আপনি নিজের সহধর্মি হিসেবে মানেন? মানতে পেরেছেন আমি আপনার স্বামী?
সোহরাবের প্রশ্ন শুনে শীতল হাওয়ায় ছায়ার সর্বাঙ্গ কেঁপে উঠলো। অবস হয়ে গেলো শরীরে প্রত্যেকটি অঙ্গ। মন বলছে ছায়া আজ মনের সকল কথা সোহরাবকে বলে দে। কিন্তু মুখ ফুটে কিছুই বলতে পারলো না সে। সোহরাব ছায়ার মুখ আরেটু উঁচু করে। সোহরাবের গরম নিঃশাস ছায়ার চোখ মুখে উপচে পরছে। প্রিয় পুরুষকে এতো কাছে ছায়ার স্বপ্নের মতো লাগছে। অস্থির হয়ে আঁখিজোড়া বন্ধ করে ফেলে। সোহরাব ছায়ার অবস্থা দেখে দৃঢ় কণ্ঠে বলে,
-একজন আদর্শ স্বামীর বেশিকিছু চাওয়া পাওয়া নেই তার স্ত্রীর কাছ থেকে। রাতে কাজ থেকে আসার পর স্ত্রীর হাসি হাসি মুখটি দেখবে। সযত্নে খাবার বেড়ে নিজ উদ্যেগে খাইয়ে দিবে। সকালে ঘুম ভাঙবে স্ত্রীর ডাকে। সে নিজে শার্টয়ের বোতাম লাগিয়ে দিবে। নাস্তা করিয়ে সদর দ্বার পর্যন্ত এগিয়ে দেবে। একটু আরেকটু টেলিফোন করবে। বাসায় দেরি করে আসলে অস্থির হয়ে যাবে। অভিমান করে মুখ ফুলিয়ে রাখবে। সেই অভিমান ভাঙবে স্বামীর ভালোবাসাময় ছোঁয়ায়। আমারও কিন্তু এর বেশি কিছু চাওয়ার ছিল না। বিবাহের প্রথম রাতে আমি সেটা বলেছিলাম কারণ সেইসময় আমি আম্মাজানের ওপর ক্রোধিত ছিলাম। একদিন না একদিন আমি আপনাকে স্ত্রী রূপে ঠিকই মেনে নিতাম। কিন্তু আপনিই নিজেকে দূরে সরিয়ে নিলেন আমার কাছ থেকে। এখন বলুন যে ব্যক্তি আমার নৈকট সহ্য করতে পারে না, আমাকে সহ্য করতে পারে না আমি কিভাবে তার সাথে স্বাভাবিক সম্পর্ক তৈরি করবো?

বড় বড় শ্বাস নেয় সোহরাব। ছায়াকে ছেড়ে সোজা হয়ে দাঁড়ায় সে। পাঞ্জাবী ঠিক করে বলল,
-এখন উপমা আমার জীবনে আসার পর থেকে আমি যেভাবে আপনার পরিবর্তন দেখছি এটা যদি আমাদের বিবাহের পূর্বে দেখতাম তাহলে আমাদের মাঝে দেয়াল তৈরি হতো না ছায়া। আর শুধু আপনার কাছে না, নিজের কর্মের জন্য আজ আমি নিজের নজরেও কাপুরুষ।

চলে যায় সোহরাব। একবার যদি পিছনে ফিরে ছায়ার কান্নারত্ব মুখের পানে তাকাতো তাহলে হয়তো তার মনে সকল ভাবনাই ধ্বংস হয়ে যেত। বুঝে যেত এই নারী কত কষ্টে তাকে উপেক্ষা করে আসছে গত তিনবছর ধরে। কত বেদনা তার অন্তরে।
_________________________

রাত্রের মধ্যভাগ। এলোমেলো অবস্থায় ঘুমিয়ে আছে উপমা। আচমকা বিদ্যুৎ চলে যায়। ওপরের চলন্ত পাখা বন্ধ হয়ে যায়। প্রচন্ড গরমে তন্দ্রা ভেঙে যায় তার। ঘামে চুবচুব অবস্থা। আঁখিজোড়া মেলে আশেপাশে তাকায়। অন্ধকারে কিছুই ঠাওর করতে পারলো না। পাশে হাতিয়ে দেখলো তাহেরা আছে কী না। স্থান ফাঁকা দেখে উপমা বুঝলো রাতে তাহেরা তার সাথে ঘুমাতে আসেনি। অন্যপাশ ফিরে ঘুমানোর উদ্দেশ্যে চোখ বন্ধ করে উপমা। ঘুম না আসায় পুনরায় সোজা হয়ে শুয়ে পরে। আচমকা একজোড়া বলিষ্ঠ হাত উপমার গলা চেপে ধরে। চোখ খুলে ফেলে উপমা। অন্ধকারে হাত দুটি ছাড়ানোর চেষ্টা করে নিজ গলা থেকে। কিন্তু ব্যর্থ হয়। নিঃশাস বন্ধ হয়ে আসছে তার। এক সময় আঁখিজোড়া উল্টে আসে উপমার। ঠিক সেই ক্ষণেই বিদ্যুৎ চলে আসে। ঘুমানোর আগে উপমা বাতি নিভায়নি যার দরুণ কক্ষ আলোকিত করে জ্বলে উঠে বৈদ্যুতিক বাতি। শ্বাসরুদ্ধ অবস্থায় কোনোরকম তাকায় উপমা। সামনের জনকে দেখে বিস্ময়বিমূঢ় হয়ে যায় সে। চমকিত নয়নে তাকিয়ে জোরে জোরে নিঃশাস নিতে থাকে।

>>>চলবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে