মেহের আপুকে সুন্দর করে সাজিয়ে পাত্রপক্ষের সামনে নিয়ে যেতেই আমি আমার এক্স-বিএফ জায়ানকে দেখে একদম অবাক হয়ে গেলাম। অবশ্য শুধু আমিই অবাক হইনি আমাকে দেখে সেও খুব অবাক হয়েছে।
আসলে দুজন দুজনকে এভাবে দেখবো ভাবতে পারিনি। আমার এক্স বিএফ আমার বড় আপুকে দেখতে এসেছে এটা ভাবতেই আমার কেমন গা গুলিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এখানে আমি কিছু করা তো দূর কিছু বলতেও পারবো না।
পাত্রের মা এসে আপুকে নিয়ে নিজের সাথে বসিয়ে এটা সেটা প্রশ্ন করছে, বাকি সবাই আপুর দিকে তাকিয়ে আছে।
আপুর দিকে আমার এতো ভ্রুক্ষেপ নেই। আমি শুধু দেখছি জায়ানকে। জায়ান নিচের দিকে তাকিয়ে চুপচাপ সোফায় বসে আছে।
ব্রেকআপের একবছর পর জায়ানের অনেক পরিবর্তন দেখছি। আমরা যখন রিলেশনে ছিলাম তখন জায়ান বড্ড সেকেলে ছিলো। আজকালকার ছেলেদের মতো একদম স্মার্ট ছিলো না। নিজের প্রিয় লেখক হুমায়ুন আহমেদের লেখা চরিত্র হিমুর মতো নিজেকে সাজাতে পছন্দ করতো। তাই সে প্রায় হলুদ রংয়ের পাঞ্জাবি পড়তো। আমাকেও বলতো আমি যেন নীল শাড়ি পড়ে তার সামনে আসি।আমার এসব একদম ভালো লাগতো না। কিভাবে যে ওর সাথে আমি রিলেশনে এসেছিলাম তা এখনো আমি ভেবে পায় না। কিন্তু এখন একদম আগের মতো নেই জায়ান। পড়নে সাদা শার্ট, প্যান্ট। শার্টের ওপর কোর্ট, চুল গুলো স্পাইক করা। সব মিলিয়ে ভালোই দেখা যাচ্ছে তাকে। কেউ দেখে বলবেই না যে এই সেই জায়ান যে পাঞ্জাবি আর হাতে একটা ডায়রি নিয়ে ভার্সিটি যেতো, যাকে দেখলে মেয়েরাও দূরে দূরে থাকতো, যে ভার্সিটির কদম ফুল গাছের নিচে একা একা বসে কবিতা লিখতো। কিছুই আর এখন মিলছে না জায়ানের সাথে।
হঠাৎ আম্মুর ডাকে নিজের কল্পনা থেকে বের হই।
-কিরে মেহুল? কতবার ডেকেছি তোকে? কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলি?
– নাহ! কোথাও না আম্মু। কি হয়েছে বলো?
– মেহের আর জায়ানের আলাদাভাবে কথা বলা দরকার। তুই একটু তাদের ছাদে দিয়ে আয়।
আম্মুর কথাটা আমার একদম ভালো লাগেনি। একটু বিরক্তি নিয়ে বললাম
– এখানে আবার আলাদা একা একা কথা বলার কি আছে?
– আহ! এতো কথা কেন বলিস? তোকে যা বলেছি তাই কর, যা।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
আম্মুর কথা মানতেই হবে, তাই আর কিছু না বলে আপুর কাছে যাই। জায়ানকে ছাদে যাওয়ার কথা কিভাবে বলবো তা ভেবে পাচ্ছি না। হঠাৎ আম্মু পিছন থেকে এসে জায়ানকে বলে,
-যাও বাবা, তুমি আর মেহের ছাদে গিয়ে আলাদাভাবে কথা বলে এসো।
যাক বাবা, আম্মু জায়ানকে কথাটা বলাতে আমি বেঁচে গেছি। একবছর পর জায়ানের সাথে কথা বলার কোন ইচ্ছেই আমার নেই।
আপু আর জায়ানকে ছাদে দিয়ে আসি। ছাদ থেকে আসার সময় মনে মনে একটাই দোয়া করছি এ বিয়েটা যেন কিছুতেই না হয়। আপুকে যেন তাদের পছন্দ না হয়।
নিচে এসে পাত্রপক্ষের সবার মুখেই হাসি দেখছি। আম্মু আব্বুকেও খুশি দেখছি।
-উফ এ সমন্ধ যেন কিছুতেই না হয়। জায়ান যেন এ বিয়েতে না বলে দেয়। জায়ান কিছুতেই আমার দুলাভাই হতে পারবে না।
আমারই বা কেন এতো রাগ ওঠছে। অবশ্য রাগ ওঠবেই বা না কেন? কোন মেয়েই বা চাইবে যে তার এক্স বিএফ তার বড় বোনের জামাই হোক।
-কিরে একা একা কি বিড়বিড় করে কথা বলছিস?
-কিছু না আম্মু, এমনি।
– হুম, এই নাস্তাগুলো নিয়ে মেহমানদের দিয়ে আয়।
আমি নাস্তা ট্রেটা নিয়ে মেহমানের দিকে এগুচ্ছি। কিন্তু মাথায় আমার ওই চিন্তায় ঘুরপাক খাচ্ছে।
কিছুক্ষণপর আপু আর জায়ান ছাদ থেকে নিচে নেমে আসে। আপুর মুখে মুচকি মুচকি হাসি। দেখে বুঝাই যাচ্ছে আপু যেন লজ্জায় আর এখানে দাড়াতে পারছে না। জায়ানও চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।
-কি এমন কথা হয়েছে তাদের যে আপু এতো লজ্জা পাচ্ছে। তাহলে কি আপু জায়ানকে পছন্দ করে ফেলেছে। নিজের আপু থেকেও এখন জায়ানের কাছে আমার এক্সপেক্টটেশনটা বেশি।
মনে মনে একটাই দোয়া করছি এ বিয়েটা যেন না হয়।
অন্যরকম ভালোবাসা
পর্বঃ১