অন্যরকম তুমি পর্ব-১৩+১৪+১৫

0
1780

#অন্যরকম তুমি
#পর্বঃ১৩ (বোনাস পর্ব)
#তানিশা সুলতানা

তনুর রুমে ঘুমতে এসেছে ছোঁয়া। তনু এতে একটুও অবাক হয় নি। কারণ এই টুকু একটা মেয়ের সাথে সাদি কখনোই মানিয়ে নিতে পারবে না। চেষ্টাও করবে না মানিয়ে নেওয়ার।

ছোঁয়া এখনো সিমির কথা ভেবে যাচ্ছে। দুম করে কেনো বিয়ের জন্য রাজী হলো? আর এতোদিনই বা কেনো রাজি হলো না?
কি এমন ঘটে গেলো?
খুব করে ইচ্ছে করছে বাড়ি চলে যেতে। কিন্তু পারছে না। ভীষণ কান্না পাচ্ছে ছোঁয়ার।

“আমাকে নিয়ে যাবে তোমাদের সাথে?

বিছানায় গোল হয়ে বসে গালে হাত দিয়ে বলে ছোঁয়া। তনু অসহায় চোখে তাকায় ছোঁয়ার মুখের দিকে।

” সরি সোনা। নিতে পারবো না।
এখানেই থাকতে হবে তোমায়।

ছোঁয়ার মনটা আরও খারাপ হয়ে যায়।

“তুমি কি চাও না তোমাদের সম্পর্কটা ভালো হোক?

তনু প্রশ্ন করে ছোঁয়াকে। ছোঁয়া সোজা হয়ে শুয়ে পড়ে।

” আমি ভালো থাকতে চাই। টেনশন ফ্রী থাকতে চাই।সব সময় হাসিখুশি থাকতে চাই। মানিয়ে নেওয়া মেনে নেওয়া এসব চাইনা।
নিজের মতো বাঁচতে চাই।

আপন মনে বলে ছোঁয়া।
তনু দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। এরা কি করে এক হবে? কেউ কাউকে চাই না।

“ছোঁয়া সম্পর্কের মূল্যটা বোঝো। মানিয়ে নিতে হবে তোমায়। বাধ্য করতে হবে ভাইয়াকে ভালোবাসতে।

” আমিই কেনো করবো? তোমার ভাইয়াও তো মানিয়ে নিতে পারে। আমাকে ভালোবাসতে বাধ্য করতে পারে।

ছোঁয়া কপাল কুচকে বলে। তনু কপালে চাপকে।

“ঘুমাও তুমি।

তনুও ছোঁয়ার পাশে শুয়ে পড়ে। আর তখনই মায়ের কল আসে তনুর ফোনে। লাফিয়ে ওঠে তনু

” এই ছোঁয়া আমার রুম থেকে বের হও। জলদি বের হও।

ছোঁয়াকে টেনে তুলে বলে। ছোঁয়া ভ্রু কুচকে তাকায় তনুর দিকে।

“তোমার শাশুড়ী কল দিছে। এখনি চলে যাও। নাহলে আমাকে সহ করলার জুস খাওয়াবে।

শাশুড়ীর কথা শুনে ছোঁয়াও ভয় পেয়ে যায়।

” আসছি

কাঁদো কাঁদো ফেস করে চলে যায়।

সাদি ল্যাপটপ নিয়ে কাজ করছে। মাঝেমধ্যে কিছু একটা বিরবির করছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে খুব মনোযোগ দিয়ে কাজ করছে।
ছোঁয়া দরজার কাছে দাঁড়িয়ে কিছুখন সাদিকে পর্যবেক্ষণ করে।
হাইট নেইমারের মতোই। ওয়েট নেইমারের মতোই। গায়ের রং নেইমারের থেকে বেশি উজ্জ্বল। দাঁতগুলো প্রায় নেইমারের দাঁতের মতোই। বাম পাশে কানের ঠিক দুই ইঞ্চি নেইমারের স্টাইল করে একটা দাগ টানা আছে। কিন্তু সাদির কেটে যাওয়ার দাগ আছে।
হাতের পেশি দুটো নেইমারের মতোই ফোলা ফোলা।

বেশ মনে ধরে যায় ছোঁয়ার। একে মনের কিছুটা অংশ দেওয়াই যায়।

শাশুড়ী মেসেজ আসে। ছোঁয়া দরজার কাছে দাঁড়িয়েই মেসেজ অপেন করে।

“এই মেয়ে লাগেজ খুলে ডান পাশের চান নম্বর শাড়িটা পড়বে। আর আমার ছেলের গা ঘেসে ঘুমবে।

মেসেজ দেখে ছোঁয়া হেসে ফেলে। এটা শাশুড়ী না অন্য কিছু?
রাত বারোটার সময় চেঞ্জ করার কোনো মানেই হয় না।
গুটিশুটি মেরে সাদির পাশে শুয়ে পড়ে ছোঁয়া। সাদি একবার আড়চোখে তাকায় ছোঁয়ার দিকে। সাদি তাকাতেই ছোঁয়া দাঁত কেলায়।

“আপনাকে পাক্কা দশ মিনিট খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে একটা জিনিস নোটিশ করলাম।

হাতের ওপর মাথা রেখে আধশোয়া হয়ে বলে ছোঁয়া।

সাদি কিছুই বলে না। একমনে কাজ করতে থাকে। ছোঁয়া কিছু বলেছে যেনো সে শোনেই নি।

” নোটিশ করলাম আপনি ৮০% আমার নেইমারের মতোই দেখতে।
তো মনের কিছুটা অংশ আপনাকে দেওয়াই যায়।

সাদি ভ্রু কুচকে তাকায় ছোঁয়ার দিকে।

“নেইমার কে?

কপালে তিনটে ভাজ ফেলে বলে সাদি।

” ও মা চিনেন না?

ছোঁয়া এক লাফে উঠে বসে। সাদি এক ইঞ্চি পিছিয়ে যায়।

“ওই যে

” থাক বলতে হবে না। চিনি আমি। কিন্তু আমি একদম ওনার মতো না। আমি আমার মতো।

“হ্যাঁ আপনার কথাবার্তা আপনার স্টাইলে। আইমিন করলা টাইপের। আর ওনার মুখ থেকে মধু ঝড়ে।

” তো তুমি খেয়ে নিও।

“পাবো কই?
মন খারাপ করে বলে ছোঁয়া।
” এই শুনুন না চলুন আমরা হানিমুনে ব্রাজিলে যাই। দারুণ হবে ব্যাপারটা।

খুশিতে গদগদ হয়ে বলে ছোঁয়া।

“বাঁদরামি করো না। আমাকে কাজ করতে দাও। নাহলে গালে যে কয়টা চর পড়বে সেটা আমি নিজেও জানি না।

কানে হেডফোন গুঁজে দিয়ে বলে সাদি।
ছোঁয়া দাঁত কটমট করে।

এই লোকটার সাথে বেড শেয়ার করা জাস্ট ইম্পসিবল। পারলাম না শাশুড়ীর ছেলেকে মানিয়ে নিতে। মানিয়ে দেওয়া তো দুর সুযোগ পেলে একে আমি খুন করবো।
করলা একটা।

ছোঁয়া দাঁত কটমট করতপ করতে বেলকনিতে চলে যায়।
রাগ যেনো কমছেই না। ছোঁয়াকে অপমান করা?

” শালা হনুমান জীবনে বউ পাবি না অভিশাপ দিলাম। কোনো মেয়ে তোর দিকে ফিরেও তাকাবেও না। আমাকে অপমান করা।

রাগ যেনো কমছেই না।

“এই স্টুপিট ওখানে কি করছো?

সাদি ডাকে ছোঁয়াকে। ছোঁয়া পাত্তা দেয় না।

” তোমার ফোন বাজছে। আমার ডিস্টার্ব হচ্ছে।

সাদি চোখ মুখ কুঁচকে বলে। ছোঁয়া তবুও পাত্তা দেয় না।
সাদি ছোঁয়ার ফোনটা বন্ধ করে দেয়।

🥀
নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে সিফাত। কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। সিমির বিয়ে হয়ে যাবে? অন্য কারে হয়ে যাবে?
আর বাচ্চা পরিটা সারাজীবন মা হীন থাকবে।

এটা কি করে মেনে নেবে সিফাত। আর সিমিকে অন্যকারো পাশেই বা কি করে সয্য করবে?

কোনো কি উপায় নেই সবটা ঠিক করার?
আচ্ছা ছোঁয়াকে বলে দেবো সব? ছোঁয়া কেমন রিয়েক্ট করবে? সবটা জানার পর তো ছোঁয়াও ঘৃণা করবে সিফাতকে। তখন যদি পরিকে ছোঁয়া ভালো না বাসে? দুরে ঠেলে দেয়।না না ছোঁয়া কে বলা যাবে না।
সিমির সাথে দেখা করতে হবে।
যা হওয়ার হবে।

সিফাত ঘুমন্ত পরির মুখের দিকে তাকায়। নিমিষেই সমস্ত টেনশন চলে যায়।
পরির কপালে চুমু খায়।

“মা ফিরবে সোনা। তোমার কথা ভেবে হলেও ফিরতে। আমি ফিরিয়ে আনবো। আর যদি না পারি তাহলে তোমাকে মায়ের কাছে দিয়ে আসবো। আর এতিমের মতো থাকতে হবে না তোমায়।

দু ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে সিফাতের চোখ থেকে।

চলবে

#অন্যরকম তুমি
#পর্বঃ১৪
#তানিশা সুলতানা

“এই টুকু একটা পিচ্চি মেয়ের কি এটিটিউট। ভাবা যায়? এই বয়সে আমি সুঁজি খাইতাম আর এই মেয়ে কি না সংসার করবে।

সাদি মুখ বাঁকিয়ে বলে। নেহা চুপ করে শুনছে সাদির কথা।

“তো তুই ওকে সুঁজি খাইয়ে বড় করে নে।

মুখ চেপে হাসি আটকে বলে নেহা।

সাদি কোলের ওপর বালিশ নিয়ে ফোনটা বা হাতে নেয়।

” সাজেশন দে আমায়। কি করবো?
এই পিচ্চি কি চাই সেটাও বুঝতে পারছি। ওর ক্যারিয়ারের হ্মতি হচ্ছে। এভাবে হয় না।

“সাজেশন দিলাম তো?

” কি সাজেশন?

“সুঁজি
শব্দ করে হেসে ওঠে নেহা।

” মজা নিবি না একদম।
কর্কশ গলায় বলে সাদি।

“ওকে মজা নিলাম না। আমি কি সাজেশন দেবো বুঝতে পারছি না।
মেয়েটা কিন্তু খুব মিষ্টি।
মেয়েটা পানির মতো সরল। তুই ওকে যেমন করে গড়ে তুলবি ও ঠিক তেমনটাই হবে।

” হ্যাঁ খুব মিষ্টি। শয়তানের হাড্ডি।
বিরবির করে বলে সাদি।

“ওকে বেলকনি থেকে রুমে নিয়ে আয়। যেভাবে চলছে চলুক। আস্তে আস্তে ভালোবেসে ফেলবি। এক সাথে থাকতে তো কোনো পবলেম হবে না এমনিতেও।
তুই যে রকম অন রোমান্টিক। রোমান্টিক হলে না হয় বলতাম দুরে দুরে থাকবি।
বুঝলি মেয়েটা ছোট হয়েই ভালো হয়েছে। অবুঝ। তেমন কিছু বোঝে না।
অন্য মেয়ে হলে তোর পবলেম আছে বলে কেটে পড়তো।

শব্দ করে হেসে ওঠে নেহা। সদি বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে।

” স্টপ নেহা। কি ফাজলামো শুরু করলি তুই? ডিসগ্রাসটিং লাগছে।

“ওকে চুপ করলাম। তোর পবলেম কি বল? স্বাভাবিক হতে পারছিস না কেনো?

সিরিয়াস হয়ে বলে নেহা।

” আমার পবলেম হচ্ছে জানি না।
ঠিক বুঝতে পারছি না। একটু সময় প্রয়োজন ছিলো আমার। কিন্তু
আচ্ছা বাদ দে।

“কি বাদ দিবো? প্রেমে পড়ে গেছিস না কি?

সাদি খট করে কল কেটে দেয়। এসব ফালতু কথা শোনার ইচ্ছে বা সময় কোনোটাই নেই।
নেহা ওর বেস্টফ্রেন্ড। সেই ছোট্ট বেলা থেকে এক সাথে বড় হয়েছে।
তাই নেহার থেকে সাজেশন চাইছিলো।

সাদি ফোঁস করে শ্বাস নেয়। রাত একটা বেজে গেছে। এখন একটু ঘুম দরকার। আবার সকাল সকাল অফিসে ছুটতে হবে।
ছোঁয়াকে ডাকতে ইচ্ছে করছে না। ডাকলে ও ঘুমবে কোথায়? থাকুক ওই খানে।
যা খুশি করুক। ও ওর মতো থাকুক আমি আমার মতো।

ল্যাপটপ এক পাশে রেখে শুয়ে পড়ে সাদি।

ছোঁয়া ফ্লোরে বসে পাশের বাসার ফুল গুলো দেখছে। আধ হাত দুরে হবে পাশের বেলকানিটা। বেলকানি বললে ভুল হবে মনে হচ্ছে কোনে একটা ফুলের বাগান।
নানা রকমের ফুল গাছ দিয়ে ভরপুর। ঠিক মাঝখানে একটা দোলনা। দারুণ লাগছে৷ ইচ্ছে করছে এক ছুটে ওই বাড়িতে যেতে। দোলনায় বসে দোল খেতে আর ফুলের ঘ্রাণ নিতে।

” ওই বাড়ির মালিকের সাথে ভাব জমাতে হবে। তারপর ওইখান থেকে ফুলের ডাল চেয়ে নেবো। কি দারুণ বুদ্ধি আমার।

একা একা বিরবির করে বলে ছোঁয়া।
এসব ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে পড়ে ছোঁয়া।

মনটা অশান্ত হয়ে আছে সিমির। এতদিন দমিয়ে রাখা ঝড়টা এখন বয়ে যাচ্ছে। নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছে না। কান্না গুলো দলা পাকিয়ে যাচ্ছে। একবারও সিফাতের প্রতি ভালোবাসাটা মনের মধ্যে উঁকি দিচ্ছে না। ঘৃণারা জমা হয়েছে৷ আর বুকটা পুরে যাচ্ছে নিজের সন্তানের জন্য। যাকে পৃথিবীর আলো দেখাতে পারে নি।

সিজারের পাঁচ ঘন্টা পরে নার্স এসে সিমিকে জানিয়েছিলো তার মৃত সন্তান হয়েছে। দুনিয়া থেমে গেছিলো সিমির।

গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে সিমির। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের প্রতিচ্ছবি দেখতে থাকে।
দুই চোখ বেয়ে টপটপ করে পানি গড়িয়ে পড়ে।

“ছাড়বো না তোমায় আমি। মৃত্যু যন্ত্রণা উপভোগ করাবো তোমায়।
নরক বানিয়ে দেবে তোমার জীবন।

হাত মুষ্টিবদ্ধ করে বিরবির করে সিমি।

পাখির কিচির মিচির শব্দে ঘুম ভেঙে যায় ছোঁয়ার। চোখ খুলেই পাশের বেলকনির সেই ফুল গাছ দেখতে পায়। মুচকি হাসে ছোঁয়া। আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসে। লম্বা হামি দেয়। ঘাড় ব্যাথা হয়ে গেছে।

চোখ বন্ধ করে কয়েক মিনিট বসে থেকে আস্তে আস্তে হেঁটে রুমে যায়। এখনো ঘুমের রেস কাটে নি। চোখ বন্ধ করে হেঁটে বিছানা ওবদি যায়। আশেপাশে না তাকিয়ে ধপ করে শুয়ে পড়ে।
সাদি অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে। এক পলক তাকায় ছোঁয়ার দিকে।

ঘুম ঘুম ভাব আসতেই ছোঁয়ার ফোন বেজে ওঠে। বিরক্ততে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে ছোঁয়া। চোখ বন্ধ করেই হাত দিয়ে ফোন খুঁজে। বালিশের তলায় পেয়ে যায়।
রিসিভ করে কানে নেয়।

” হ্যালো

“এই মেয়ে তুমি এখনো ঘুম থেকে উঠে নি।

শাশুড়ীর কর্কশ গলায় শব্দ এক লাফে উঠে বসে ছোঁয়া। বুকটা ধুপ বুক করছে।

” আমার ছেলে অফিসে যাবে জানো না?

“কোন শাড়িটা পড়বো শাশুড়ী? বলছিলাম শাড়ি না দিয়ে শুধু পেডি কোড আর ব্লাউজ দিলে হতো না?

ছোঁয়া এক গাল হেসে বলে। সাবিনা বেগম খুক খুক করে কেশে ওঠে। সাদি বড়বড় চোখ করে তাকায় ছোঁয়ার দিকে।

” আপনার ছেলে নিরামিষ। নিরামিষ বোঝেন? না বুঝলে ইউটিউবে সার্চ দিয়েন।
আপনার নিরামিষ ছেলেকে ইমপ্রেস করা আমার পহ্মে সম্ভব না।
ভুলটা আপনার। জন্মের সময় মধুর বদলে করলার রস দিয়েছিলেন। এখন আমি কি করবে?

আপনার দরকার তো নাতিনাতনির? এনে দিবো। এখন দয়া করে আমার মিনিটে মিনিটে শাড়ি পাল্টাতে বলবে না প্লিজ।

খট করে ফোন কেটে দেয় ছোঁয়া। ভীষণ বিরক্ত লাগছে। সাদি চোখ ফিরিয়ে নেয় ছোঁয়া থেকে৷ যেমন মা তেমন বউ।

ছোঁয়া আবার শুতে যায় তখন আবার কল বেজে ওঠে। ভেবেছিলো আবারও শাশুড়ী কিন্তু নাহহ এবার সিমি। কে জানে এখন আবার কি চমক দেবে।

“এই ছোঁয়া জলদি তোর বাসার এড্রেস বল। আমি চলে এসেছি।

দুই ঠোঁটের মাঝে আপনাআপনি কিঞ্চিত ফাঁকা হয়ে যায় ছোঁয়া। যা ভেবেছিলো তাই।
আবারও চমক।

” বলবি তুই? রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছি আমি।

সিমি চিল্লিয়ে বলে।

“কোথায় আছো আমাকে বলো। আমি সিফাত ভাইয়াকে পাঠিয়ে দিচ্ছি।

সিমি বাঁকা হাসে। যেনো এটাই চাইছিলে। কোথায় আছে সেটা বলে দেয়।
তারপর সিফাতকে টেক্সট করে দিয়ে এরোপ্লেন মুড দিয়ে দেয়।
তারপর
” আজ আবেগ দিয়া নেশার নৌকায় পাঙ্খা লাগাইছি
মাতাল হইয়া প্রিয়ার খোঁজে পাড়ি জমাইছি।

ফুল স্পিডে গানটা প্লে করে আবার শুয়ে পড়ে। এবার আর কেউ ডিস্টার্ব করবে না।

সাদি হরলিক্স দিয়ে এক গাল দুধ গুলে ছোঁয়ার পাশে রেখে গানটা বন্ধ করে ছোঁয়ার গায়ে চাদর টেনে দিয়ে এসির পাওয়ার কমিয়ে দেয়।

“ইডিয়েট একটা

চলবে

#অন্যরকম তুমি
#পর্বঃ১৫
#তানিশা সুলতানা

চার বছর সিমিকে দেখলো সিফাত। হার্ট বিট লাফাচ্ছে রীতিমতো। হাত পা কাঁপছে। নীল রংয়ের গাউনে একদম সিদ্ধ লাগছে মেয়েটাকে।
কে বলবে এই মেয়ে একটা বাচ্চার মা?

রাস্তার এক পাশে সিফাত দাঁড়িয়ে আছে অন্য পাশে সিমি। সিফাতের দৃষ্টি সিমির দিকে। আর সিমির দৃষ্টি এদিক সেদিক ছোটাছুটি করছে। ঠোঁটে কোণে এক চিলতে হাস। এক হাতে জড়িয়ে আছে সুদর্শন একটা ছেলের হাত। ছেলেটার চোখে মুখেও পরম তৃপ্তি।
ছেলেটাও মায়া ভরা চোখে তাকিয়ে আছে সিমির দিকে। কিন্তু সিমির সেদিকে খেয়াল নেই। সে তার মতো কথা বলেই যাচ্ছে।

সিফাতের বুকের বা পাশটায় চিনচিন করছে। মারাক্তক ব্যাথা করছে। খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে এই ছেলেটাই সেই যার সাথে সিটির বিয়ে হয়েছে।
চোখে বড্ড জ্বালা করছে। এই দৃশ্যটা সয্য করার মতো না। বুক ফেটে যাচ্ছে।

দীর্ঘ শ্বাস ফেলে দৃষ্টি সরিয়ে নেয় সিফাত। ডানে বামে তাকিয়ে গাড়ির অবস্থান বুঝে সাবধানে রাস্তা পার হয়ে সিমির সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।
সিমিও এক পলক তাকায়। ধক করে ওঠে সিফাতের বুকের ভেতর টা।
ভেবেছিলো সিমি কান্না করে ফেলবে। লাল হয়ে যাবে সিমির ওই কাজল কালো ডাগর ডাগর আঁখি দুটো। জাপ্টে জড়িয়ে ধরবে সিফাতকে।
শেষবার দেখা হওয়ার মতো করে বলবে
“প্লিজ সিফাত আমাকে ছেড়ে দিও না। আমি বাঁচতে পারবো না।

কিন্তু তার কিছুই হলো না। সিমিকে দেখে মনে হচ্ছে ও চিনেই না সিফাতকে।

” কি ভাই? কিছু বলবেন?

সিমির পাশে থাকা ছেলেটা সিফাতকে উদ্দেশ্য করে জিজ্ঞেস করে।
সিফাত মাথা নিচু করে ফেলে।

“ছোঁয়া পাঠিয়েছে আমায়।

আমতা আমতা করে বলে সিফাত।

” ওহহ আচ্ছা।
সিমি ওনার সাথে যাও। পৌঁছে ফোন দিবা আমায়। একদম একা একা শপিং করতে বের হবা না। আমাকে কল করবে। ওকে?

শাসনের সুরে বলে হিমু নামের ছেলেটা।
সিমি আলতো হেসে ছেলেটার পরিপাটি করে রাখা চুল গুলো এলোমেলো করে দিয়ে “আচ্ছা ” বলে।
হিমু কপাট রাগ দেখায় সিমি ফিক করে হেসে ফেলে। সাথে সাথে হিমুও হেসে ফেলে।

“পাগলীটা
সিমির নাক টেনে বলে হিমু।

” আসছি

বলেই সিমি আগে আগে হাঁটা শুরু করে। সিফাত এক পলক হিমুর দিকে তাকিয়ে সিমির পিছনে হাঁটতে থাকে।
নিসন্দেহে হিমু সিফাতের থেকে অনেক গুন বেশি হ্যান্ডসাম। সিমিকে ওর সাথে মানায়ও ভালো। ভুলে যাওয়াটা সহজই।

“এই যে মিস্টার এতো স্লো কেনো আপনি? তাড়াতাড়ি হাঁটুন। কোন দিকে যাবো বলুন?

সিমি পেছনে ঘুরে কোমরে হাত দিয়ে বলে। সিফাত মাথা চুলাতে তারাতাড়ি হেঁটে সিমির পাশাপাশি দাঁড়ায়।

” ররিক্সা নেবো?

সিফাত রিনরিনিয়ে বলে।

“তো কি হেঁটে যাবো?

বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে বলে সিমি।

সিফাত রিক্সা ডাকে। সিমি আগে আগেই উঠে পড়ে। সিফাতও বসে সিমির পাশে।
রিক্সা চলতে শুরু করে। সিফাত তাকিয়ে থাকে সিমির দিকে।

” ভুলে গেছো?

সিফাত প্রশ্ন করে। সিমি আলতো হাসে। মুখের ওপর পরে থাকা চুল গুলো কানের পেছনে গুঁজে নেয়।

“নাহহহ
দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে সিমি।
” এখনো আমার সন্তানকে আমি ভুলতে পারি নি।
সিফাত আবারও মাথা নিচু করে।

“আমি কি করতাম আমি তো

সিফাত বলতে যায়।

” আপনাকে ভুলে গেছি। মনে করতেও চাই না।
সিফাতের মুখের কথা মুখেই থেকে যায়। করুন চোখে তাকিয়ে থাকে সিমির মুখের দিকে।

🥀🥀
সাদি ইমপটেন্ট ফাইলটাই ফেলে গেছে বাসায়। গাড়িতে নিয়ে মনে হয়েছে ফাইল নেই। ভীষণ বিরক্ত লাগছে। এখন আবার বাসায় যেতে হবে।

পরির ডাকে ঘুম ভেঙে যায় ছোঁয়ার। বাচ্চাটা সকাল থেকে কিছুই খায় নি। কে খাওয়াবে? সিফাত তো চলে গেছে সিমিকে আনতে। ছোঁয়ার এবার নিজের ওপর চরম বিরক্ত লাগছে। একটু তো ভাবা উচিৎ ছিলো পরির কথা।

পরি কেঁদেই যাচ্ছে। ছোঁয়া তারাহুরো করে ফ্রেশ হয়ে আসে। এসে দেখে টেবিলের ওপরে থাকা দুধের গ্লাস থেকে দুধ খাচ্ছে পরি। মুচকি হাসে ছোঁয়া।
যে বয়সে বাচ্চারা খাওয়া নিয়ে বায়না করে। সেই বয়সেই মেয়েটা নিজে নিজে খেতে শিখে গেছে। এটাকেই হয়ত পরিস্থিতি বলে।
ছোঁয়া এবার পরিকে কোলে করে বেলকনিতে যায়। খিধে নেই। রান্না তো আর করে নি। সাদি নিশ্চয় আর ওর জন্য রান্না করে রেখে যাবে না?

বেলকনিতে গিয়েই মন ভালো হয়ে যায় ছোঁয়া। পাশের বেলকনিতে নানা রকমের ফুল ফুটে আছে। ইচ্ছে করছে সব গুলো ফুল ছিঁড়ে নিতে।
কিন্তু ধরা পড়লে তো মারা পড়তে হবে।

কিন্তু তারপর যেটা দেখলো সেটা দেখে ছোঁয়ার নিজেকে সামনে রাখা দায় হয়ে গেছে।

বড় প্লেটে করে গোটা কয়েক আমের মোরব্বা। রোদে শুকতে দিছে। বেলকনির রেলিং এর ওপর।
দেখেই জিভে পানি চলে আসে ছোঁয়ার। পরিও বায়না ধরে খাবে।
ছোঁয়া পরিকেন নামিয়ে আগে গুনে নেয় কয়টা আছে।
মোট বারো টুকরো।এর মধ্যে থেকে দুই চার টুকরো সরালে কেউ বুঝবে না।
এক দৌড়ে কিচেন থেকে বাটি এনে টপাটপ চার পিছ নিয়ে নেয়। তার আস্ত একটা গোলাপের টিপ নিয়ে রুমে চলে আসে। আর বেলকনির দরজাটা বন্ধ করে পর্দা টেনে দেয়। যাতে সন্দেহ না করে।
গোলাপের টপটা খাটের তলায় লুকিয়ে রাখে। আজকে দোকান থেকে কালো রং কিনে এনে টপটাকে কালো রংয়ে রাঙিয়ে দেবে তারপর আর কেউ চিনতে পারবে না।

পরিকে কুটি কুটি করে হেসে যাচ্ছে। ছোঁয়াও হাসছে। পরিকে সাথে নিয়ে এই প্রথম চুরি।

“কি বাঁদরামি করেছো?

সাদি দরজার কাছে দাঁড়িয়ে ভ্রু কুচকে বলে। ছোঁয়া চমকে ওঠে। কিন্তু এখন ভরকালে চলবে না। ম্যানেজ করতে হবে। দেখে ফেললে আর খাওয়া হবে না। ফেতর দিয়ে দেবে।

” বাহহহ আমার বরটাকে তো একদম রসগোল্লার মতো লাগছে।

সাদির দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলে ছোঁয়া।
সাদি কপালে তিনটে ভাজ ফেলে। হলোটা কি এর?

“ভেবেছিলাম নেইমার ছাড়া আর কাউকে মনের ভাগ দেবো না। কিন্তু আপনি যেভাবে হট হট গ্রীষ্ম কাল সেজে থাকেন। যখন তখন মনটা ভাগ হয়ে যাবে।

সাদির সামনা সামনি দাঁড়িয়ে হাত উঁচু করে সাদির দাঁড়িতে হাত বুলিয়ে বলে ছোঁয়া।
এক লাফে দুরে সরে যায় সাদি। চোখ দুটো বড়বড় হয়ে গেছে।

” দুরে থাকো
ধমক দিয়ে বলে সাদি। চোখ মুখ শক্ত করে ফেলেছে। ছোঁয়া শুকনো ঢোক গিলে। এবার কি দুই চারটা থাপ্পড় পড়বে না কি গালে। পরি বিছানায় গোল হয়ে বসে গালে হাত দিয়ে ওদের দেখছে।

“এমন করেন কেন জামাই? শাশুড়ী বলেছে আপনাকে চুম্মা দিতে। শাশুড়ীর কথা না শুনলে আমাকে তো আস্ত চিবিয়ে খাবে।
মুখ গোমড়া করে বলে ছোঁয়া।
এখানে আর এক মুহুর্ত থাকাও সেফ না। এই মেয়ের মাথা নষ্ট হয়ে গেছে।
সাদি কপালের হাত বুলিয়ে ছোঁয়াকে পাশ কাটিয়ে বিছানার কাছে যায়। ফাইলটা হাতে নেয়। আর তখনই বুঝতে পারে পরির পেছনে কিছু একটা আছে।

” মামানি তোমার পেছনে কি?

ছোঁয়া এক দৌড়ে এসে সাদির সামনে দাঁড়ায়।

“পরির পেছনে কিছুই নেই। আপনার সামনে আমি আছি। আপনার একমাত্র মিষ্টি বউ। দেখুন?

এক গাল হেসে বলে ছোঁয়া।

” ইডিয়েট

বিরবির করতে করতে চলে যায় সাদি। সাদি যেতেই ছোঁয়া বুকে হাত দিয়ে জোরে শ্বাস নেয়।

“যাক বাবা বেঁচে গেছি।

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে