#অন্যরকম_তুমিময়_হৃদয়াঙ্গণ
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_২২
“আহ্ দোস্ত আমি এখানে বিবিজান কোথায়? তাকে কেনো দেখছি না? এই আকবর বল না সবাই এভাবে চুপ করে আছে কেনো? আম্মা আপনি বলুন তো মেয়েটা হুট করে কোথায় উধাও হয়ে গেল?”
ছেলের কথায় কি বলবেন ভেবে পাচ্ছেন না মিসেস ফেরদৌসী। মাত্রই ছেলেকে কেবিনে সিফট করা হয়েছে। জ্ঞান ফিরতেই নাজীবার কথা জিজ্ঞেস করে চলেছে। শ্বাশুড়ি-র সাথে যাওয়ার পর মেয়েটার চিহ্নটুকু আর হাসপাতালে নজরে এলো না। জনাব ইসমাইল বিরক্তসূচক গলায় বলেন,
“বাবা এখন শান্ত হও। এতো ভাবছিস কেনো? হবে হয়ত কোথাও। তুই আস্তেধীরে কথা বল এতো হাইপার হলে তোর বুকে ব্যথা লাগবে। এটা তো আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহর মেহেরবানী বলে বু’লে’ট তোর বুক ভেদ করেনি। নাহলে তোর জীবন তো হু’ম’কি’র মাঝে ঝুলে যেতো। এই যে এখন সুস্থ স্বাভাবিক ভাবে কথা বলছিস না? এটাও সম্ভব হয়েছে দীর্ঘ পাঁচ ঘণ্টা পর। জানিস তোর মা আর দাদির মধ্যে কি অবস্থা হয়ে ছিল? কান্নায় তাদের চেহারার দিকে তাকানো যাচ্ছিল না। সেখানে তুই সামান্য একটা মেয়ের ব্যাপারে কথা বলতে বলতে হাইপার হয়ে যাচ্ছিস। তোর কাছে মেয়েটা এখন বড় হয়ে গেল? আমাদের কি তোর চোখে পড়ে না? তোর ছোটকালেও ঐ মেয়ের কারণে জীবন সঙ্কটে পড়ে ছিল। আজ দেখ, আজ তো একদম তোকে হাসপাতালের বেডে শুয়ে ছাড়ল সে। তোর মায়ের কথাই আমার মান্য করা উচিৎ ছিল। কিন্তু ভেবে ছিলাম তোর বউ হয়েছে আর বিপদ হবে না কোনো। এইতো দেখি মেয়েটা নিজেই বিপদ। তোর জীবনে এসে আবারো জীবন সঙ্কটে ফেলে দিল। এমন মেয়েকে তুই তালাক দিবি। আজ আমি তোর বাবা বলছি তালাক দিবি বুঝতে পেরেছিস?”
বাকরুদ্ধ হয়ে বাবার দিকে চেয়ে রইল আফরাজ। তার কান ঝালাপালা হয়ে গেছে। পরিবারের চোখেমুখে কোথাও তার বউয়ের জন্যে একবিন্দু পরিমাণ ভালোবাসা পরিলক্ষ হচ্ছে না। যা লক্ষ হচ্ছে তা শুধুমাত্র ঘৃণা, বিরক্তি,ক্ষোভ। আকবর অসহায় চোখে বন্ধুর দিকে তাকালো। আফরাজ সকলের মুখোভঙ্গি দেখে বুঝতে পারল তারা সত্য না জেনেই মেয়েটা-কে দূরে সরিয়ে দিল। সে বুকের উপর হাত রেখে শুয়ে পড়ল। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান) এতক্ষণ বসে থেকে সবার কথা শুনে তার শ্বাস আঁটকে আসছে। সে কোনোমতে তার বাঁ হাত দিয়ে আকবর এর হাত চেপে ধরল। বন্ধুর হাত ধরার কারণ ভালোই বুঝতে পারল সে। আকুতিভরা দৃষ্টিতে আকবর এর দিকে তাকায় আফরাজ। তার চোখের চাহনি বলে দিচ্ছে ‘সে যেনো নাজীবা-র খোঁজ নিয়ে আসে জলদিই নাহলে সে শ্বাস আটকে মা’রা যাবে।’
আকবর সকলের চোখের আড়ালে আফরাজ কে আশ্বাস দিল। আফরাজ তার মুখ থেকে এমুহুর্তে কড়া কথা বের করতে পারছে না। কেননা নাজীবা যে নেই সেটা বাবার কথার দ্বারা বেশ বুঝতে পেরেছে। চোখ বুজে বুকের উপর হাত রেখে মনেমন বলে,
“বিবিজান প্লিজ প্লিজ ফিরে এসো।”
মিসেস ফেরদৌসীর কান্না থেমে গিয়েছে বহুক্ষণ হবে। তিনি ছেলের নিরর্থক বিরবির করা কথা শুনতে না পেলেও এতটুকু বুঝতে পেরেছেন ছেলে তার বউকে নিয়ে বিলাপ করছে। ছেলের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে স্বামীর দিকে তাকান। জনাব ইসমাইল দেখেও অদেখা করলেন। নীরবে রুম থেকে বেরিয়ে যান। মিসেস ফেরদৌসী ছেলের হাত ছুঁয়ে বলেন,
“বাবা ছাড় না এসব। একটা মেয়ের জন্যে তুই আমাদের মাঝে দেওয়াল তৈরি করছিস। ঐ মেয়ের চেয়েও বেটার একজন কে তোর স্ত্রী হিসেবে হাজির করবো আমি। তুই শুধু….।”
“আম্মু আপনি কি আব্বুকে ছাড়তে পারবেন?”
“আসতাগফিরুল্লাহ্ বাবা এই কথা মুখেও আনিস না। আমি কেন তোর বাবাকে ছাড়বো? সে কি কখনো আমাকে ঠকিয়েছে যে, আমার থেকে তাকে ছাড়তে হবে? তোর বাবাকে বিয়ের পর থেকে ভালোবেসেছি। সেই ভালোবাসা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত অবধারিত থাকবে।”
কথাটি শুনে তাচ্ছিল্যের হাসল আফরাজ। চোখ খুলে মায়ের দিকে তাকিয়ে নির্লিপ্ত গলায় বলে,
“আম্মু আপনি জিজ্ঞেস করছেন না কেনো আমি ঐ মেয়েটার জন্য পাগলামী করছি? ভেবে নিন আপনি আব্বুকে যে উদ্দেশ্যে ছাড়তে পারবেন না আমিও একই কারণে তাকে ছাড়তে পারব না। তবে হ্যা এক কথা অবশ্য বলতে পারি, আপনি যদি আমার বিয়ের সময় এদেশে থাকতেন,তখন ছাড়ার কথা বললেই আমি ছেড়ে দিতাম। কিন্তু এখন সে আমার প্রাণের সাথে মিশে গেছে। তার প্রতিটা পদক্ষেপে আমার কদম আবশ্যক। আপনি জানেন তার ব্যাপারে সব তথ্য আমি বের করে নিয়েছি। সেদিন রুমে আপনাকে অর্ধেক অতীত বলে ছিলাম। এবার শুনেন তার পুরো অতীত….।”
মিসেস ফেরদৌসী-কে অতীতের টানা কথা বলে দেয় আফরাজ। সবটা শুনে তিনি প্রথমেই তিরস্কার জানাল দাহাব এহসান কে। অতঃপর অনুতপ্ত কণ্ঠে ছেলের হাত আঁকড়ে ধরে বলেন,
“বাবা-রে তুই চিন্তা করিস না। সবটা তোর বাবাকে বলব। তিনি বুঝতে পারবেন।”
মায়ের কথার বিপরীতে নীরবে চোখ বুজে নেয় আফরাজ। তার শরীরে একরাশ ক্লান্তি এসে ভর করেছে। মিসেস ফেরদৌসী মুখ মলিন করে ছেলের পাশ থেকে উঠে কেবিনের বাহিরে চলে গেলো। জনাব ইসমাইল করিডোরে দাঁড়িয়ে বাহিরের দৃশ্য লক্ষ করছেন। পাশে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে মলিন কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলেন।
“বাবারা কী সন্তানের খারাপ চাই কখনো? আমি কি তোমার স্বামী হওয়ার যোগ্যতা রাখিনি? হয়ত আমি ছেলের চাওয়াটা অস্বীকার করছি তাই বলে এতটা ঘৃণা নিয়ে বলার তো দরকার ছিল না।”
“শুনেন আপনি মন খারাপ করিয়েন না প্লিজ। আফরাজ এর অবস্থা দেখেছেন তো। মেয়েটা আমাদের ছেলের জীবন কেড়ে নেয়নি। বরং তাকে নতুন জীবন দিয়েছে। আমি জানি আপনি শুনেছেন আপনার ছেলে কি কি বলেছে! আপনার ছায়া দরজার বাহিরে আড়চোখে দেখতে পেয়ে ছিলাম।”
“বউ নাজীবা-কে নিয়ে আসা উচিৎ। চলো দেখি ও কোথায়?”
স্বামীর কথায় মাথা নাড়লেন মিসেস ফেরদৌসী। তারা দুজনে বের হতে গেলে পথ আটকে দাঁড়ান খাদিজা বেগম। তিনি ঢোক গিলে শক্ত গলায় বলেন,
“কোনো দরকার নেই সেই মেয়ের খোঁজ করার। তাকে আমি চিরজীবনের জন্য পাঠিয়ে দিয়েছি। সে আর কখনো ফিরবে না। তার কথা ভুলে যাও।”
থমকে গেলেন জনাব ইসমাইল আর তার স্ত্রী। মায়ের কথায় প্রশ্নাতীত গলায় বলেন,
“কি বলছেন আপনি এসব আম্মা? নাজীবা আপনার পছন্দের মেয়ে,নাতবউ না? তবে হঠাৎ কী হলো যে, বলছেন দরকার নেই? বউমা-ও বা কোথায় আপনি না তাকে আপনার সঙ্গে নিয়ে গিয়েছেন?”
খাদিজা বেগম দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলেন,
“তাকে তার আসল জায়গায় পাঠিয়েছি।”
ধপ করে কিছু একটার শব্দে তারা পিছু মোড়ে তাকায়। আফরাজ-কে চোখ বড়বড় করে স্তদ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে তারা ভয় পেয়ে যান। তার চেয়েও বিবশ দৃশ্য হলো আফরাজ এর বুকের দিকে ব্যান্ডেজ লাল হয়ে ভিজে যাচ্ছে। সে মাত্রাতিরিক্ত বিস্ময়ে নীরব হয়ে মাটিতে বসে গিয়েছে।
ছেলের এরূপ দেখে মনেমন আতংকিত বোধ করছেন জনাব ইসমাইল আর তার স্ত্রী। খাদিজা বেগম নাতির দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন। তিনি ভেবে পাচ্ছেন না, এই কি সেই ছেলে যে বিয়ে করিয়েছি বলে তার দাদির সাথে কথা অব্দি বলতে চাইনি। আর এখন? তিনি নিজে দূরে করতে চাইছেন। তাতে বাঁধা দিচ্ছে সে স্বয়ং তার নাতি।
তিনি নাতির কাছে যেতে গেলে ভাঙচুরের শব্দে এক কোণায় দাঁড়িয়ে যান। আফরাজ এর শরীরে যেনো কোনো অশরীরী ভর করেছে। ছেলেটা উম্মাদের মত আশপাশের জিনিস ভাঙচুর করছে। তার আগুন চোখ দেখে ডক্টর নার্স ভয়ে পিছিয়ে আছে। আকবর বাহিরে গিয়ে ছিল ওষুধপত্র আনতে। কিন্তু আফরাজ এর বরাদ্দকৃত কেবিনের বাহির থেকে ভাঙচুর এর শব্দে সে থমকে যায়। তৎক্ষণাৎ ছুটে বন্ধুর কাছে গেল। ওষুধপত্র নার্স এর হাতে দিয়ে তার কাছ থেকে ঘুমের একটা ইনজেকশন রেডি করে দিতে বলে। নার্স তার কথামত রেডি করে আকবর এর হাতে দিল। আফরাজ চিল্লিয়ে বারংবার বলে যাচ্ছে তার বিবিজান-কে এনে দিতে। কিন্তু কেউ ভয়ে মুখ খুলতে পারছেন না। জনাব ইসমাইল কে আঁকড়ে ধরে রইলেন মিসেস ফেরদৌসী। তিনি ছেলের পরিণতি দেখে ফুঁপাচ্ছেন। খাদিজা বেগম মাথায় হাত ধরে বসে আছেন সিটের মধ্যে। তিনি বুঝতে পেরেছেন নাতবউ কে দূরে সরানো মোটেও উচিৎ হয়নি। আকবর ইনজেকশন কোনোমতে আফরাজ এর কাঁধে চুবিয়ে দেয়। আফরাজ এর হাত-পা ক্রমশ অচল হয়ে পড়ে। ঢলে পড়ে আকবরের কাঁধে। সে তার বন্ধুর ভার ধরে কেবিনের বেডে শুয়ে দিল। নার্স এর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে।
“কতঘণ্টার জন্য রেস্টে থাকবে?”
“ধরেন তিনঘণ্টা। তারপর হয়ত উনি আবারো হাইপার হয়ে ভাঙচুর করতে পারেন।”
নার্স আফরাজ এর পরিবারের সবার দিকে তাকিয়ে পুনরায় কিছু বলতে নিলেই ডক্টর হাঁপাতে থেকে বলেন,
“দেখুন স্যারের ওয়াইফ কোথায়? প্লিজ তাকে এখানে হাজির করুন। নাহলে দেখবেন স্যারের মেন্টাল কন্ডিশন ক্রিটিক্যাল হয়ে পড়বে। প্লিজ ম্যামকে নিয়ে আসুন।”
মিসেস ফেরদৌসী শ্বাশুড়ি-র হাত ধরে কান্নাময় গলায় বলেন,
“আম্মা মেয়েটা কোথায়? আপনি তাকে কোথায় পাঠিয়েছেন? প্লিজ বলে দিন না। দেখেন আমার ছেলেটার পাগলামী দশা শুরু করে দিয়েছে। প্লিজ আম্মা বলুন না কিছু।”
খাদিজা বেগম চোখে ঝাপসা দেখছেন। জীবনে দুদিক এর প্যাচালে পরে তিনি দিকবেদিক ভুলে বংশধরা রক্ষার স্বার্থে নাতবউকে এমন স্থানে পাঠিয়েছেন। যেখান থেকে তার ফেরা অসম্ভব। নাতবউও টর্চার এর ভুক্তভোগী হবে অথবা হচ্ছেও বোধ হয়। সেই ধারণা খাদিজা বেগম এর মস্তিষ্ককে প্রচন্ড অনুশোচনার অনলে পুড়িয়ে ছাড়ল। বউ-মাকে কিছু বলার পূর্বেই তিনি বুকে ব্যথা অনুভব করলেন। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান) আম্মাকে অজ্ঞান হতে দেখে জোরে ‘আম্মা’ বলে ডাক দেয় জনাব ইসমাইল। তৎক্ষণাৎ মা-কে জড়িয়ে ধরে ডক্টর নার্স ডাকলেন। আকবর পুরো পরিবারের বিচ্ছিন্ন বিক্ষিপ্ত দশা দেখে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ে। কুসুমার অবস্থা কি সেটাও জানার সময় সুযোগ পাচ্ছে না। আফরাজ কে হাসপাতালে ভর্তি করানোর সময় কুসুমা উপস্থিত থাকলেও পরিবেশ পরিচিতি বিবেচনায় তাকে কাজের মেয়ের সাথে বাসায় পাঠিয়ে দিয়ে ছিল। ফোন হাতে নিয়ে কুসুমা কে কল দেয়। সে ফোন হাতে নিয়ে বসে ছিল। ভাবছে একবার কল করে জানার চেষ্টা করবে। আশানুরূপ স্বামীর কল পেয়ে খুশি হলো। উত্তরে কিছু বলার সুযোগ পেল না। আকবর সবটা খুলে বলে। শুনে কুসুমাও চিন্তিত হয়ে পড়ল। নাজীবা ভাবী কে কোথায় পাঠাতে পারে তাও তার ধারণাতীত।
আকবর বউকে সাবধানে থাকতে বলে নাজীবা ভাবীর খোঁজ লাগাতে গার্ড’স লাগিয়ে দেয়। আফরাজ এর কাছ থেকে ভাবীর অতীত সম্পর্কে জানলেও ভাবী যে হাসপাতালে ভর্তি ছিল এর নাম অজানা রয়ে গেল। খোঁজতে কষ্ট হলেও সে বন্ধুর সুস্থতার খাতিরে হলেও নাজীবা-কে খোঁজে বের করবে।
অন্যথায়, নাজীবা হাত-পা ছড়িয়ে চিৎকার করে বলছে,
“প্লিজ এই ইনজেকশন আমাকে দিয়েন না। আমি অসুস্থ ,পাগল নয়। প্লিজ আমাকে যেতে দিন প্লিজ! আমার আফরাজ অসুস্থ তার কাছে যেতে দিন। না না প্লিজজজ আহহহহহ।”
চলবে…..
#অন্যরকম_তুমিময়_হৃদয়াঙ্গণ
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_২৩ (স্পেশাল-০২)
আফরাজ কে না দেখে সকলে চিন্তিত হয়ে পড়ে। তাকে ঘুমের মধ্যে রেখেই পরিবারের সদস্যরা নাজীবার খোঁজ করতে ব্যস্ত ছিল। খাদিজা বেগমের আকস্মিক মিনিহার্ট এ্যাটেক হয়েছিল। তিনঘণ্টা পর তিনি সুস্থতা বোধ করায় ঘুম থেকে সজাগ হয়ে উঠেন। তখনি মস্তিষ্কে নাতির কথা হানা দিলে তিনি ছটফট করা শুরু করেন। হাতের থেকে সুঁই খুলে কোনোমতে উঠে বসতে গেলেন তৎক্ষণাৎ কেবিনে কাজরত নার্স দেখে ফেলে। সে খাদিজা বেগম কে থামালে তিনি করুণ গলায় আওড়ান।
“আমার ছেলেকে ডাকুন প্লিজ!”
নার্স তাকে শান্ত করে চিৎকার করে জনাব ইসমাইল কে ডেকে উঠে। জনাব ইসমাইল মায়ের কেবিনের বাহিরে পায়চারী করছিলেন। ছেলে হুট করে কোথায় উধাও হয়ে গেল তার খোঁজ চালাতে গার্ড’স কে লাগাতার কল করছেন। কিন্তু একটা গার্ড’স ও কল ধরছে না। আকবর কেও সকাল থেকে চোখে পড়েনি। তারও ফোন বন্ধ দেখাচ্ছে। চিন্তায় প্রেশার যেনো বেড়ে যাবে মত অবস্থা জনাব ইসমাইল এর। এমতাবস্থায় মায়ের কেবিনে থেকে চিৎকার শুনে দৌড়ে কেবিনের ভেতরে ঢুকে পড়েন। মায়ের জাগ্রত অবস্থা দেখে খুশি হোন তিনি। মায়ের হাত ধরে বলেন,
“আম্মা আপনার কি হলো ছটফট করছেন কেনো? কিছু বলবেন?”
খাদিজা বেগম মাথা নেড়ে তড়ফড়িয়ে বলেন,
“ব্যাটা নাতবউ-কে নিয়ে আয়। তারে ছাড়া আমার নাতি মরে যাইবো। শোন নাতবউকে ফার্মহাউস এ পাঠিয়ে দিয়েছি। কিন্তু এখানে আমায় হু’ম’কিতে ফেলে দিয়ে ছিল দাহাবে। ঐ নাতবউকে তার লগে নিয়া গেছে। আকবর-রে বল ফার্মহাউস এ খোঁজ নিতে।”
মায়ের কথায় থমকে গেলেন জনাব ইসমাইল। তবুও আশ্বাস দিলেন তিনি বিষয়টা দেখছেন। মা’কে রেস্ট করতে বলে তিনি বেরিয়ে যান। তিনি বের হওয়ার পরপরই কেবিনের ভেতর এক লোক ঢুকে পড়ে। নার্সও কেবিনের মধ্যে ছিল না। খাদিজা বেগমের অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ডক্টরের কাছে গিয়েছে। অথচ কেবিনের ভেতর লোকটি-কে দেখে খাদিজা বেগম আতংকে হাত-পা ছড়াছড়ি করে চিৎকার করতে চাইলেন। কিন্তু পারলেন না তার আগেই লোকটি ইনজেকড করে দিল। যেই ইনজেকডের ফলে খাদিজা বেগম এর চোখজোড়া দিয়ে দু’ফুটো পানি পড়ে চোখজোড়া বন্ধ হয়ে গেল। লোকটি পৈশাচিক হেসে বেরিয়ে গেলেন। ফোন হাতে নিয়ে কল লাগায়। অপরপাশে কল লাগায় ‘হ্যালো’ বলে।
“হ্যা বলো কাজ হয়েছে?”
“জ্বী শ্বশুর আব্বা। আপনার কথামত খাদিজা বেগমকে অ্যানেস্থেসিয়া-র ইনজেকশন দিয়ে ফেলেছি। এখন তিনি এই সুন্দর পৃথিবীতে আর নেই বললেই চলে।”
দাহাব এহসান শুনে হাসতে লাগলেন। নাজীবা-র রুমের দিকে তাকিয়ে বলেন,
“গ্রেট জব এবার নাজীবা আর আমার পথের কাঁটায় কেউ রইল না। ওহ হ্যাঁ তোমার মেয়েকে মনে হয় আফরাজ এ ধরে রেখেছিল। তার এক গার্ড কে হাত করে তোমার মেয়ে-কে ছাড়িয়ে এনেছি। রাস্তার মোড়ের পাশে পুরাতন বাড়িতে বোধহয় তাকে সেবাযত্ন করছে আমার পালিত লোকগুলো। তাদের কাছে গিয়ে দেখে নাও।”
শ্বশুরের কথা শুনে মেয়ের জন্য জনাব লিয়াকত এর মনটা কেঁপে উঠল। তিনি এতদিন কৌশলে সবটা জেনে ছিল। তার শ্বশুর খাদিজা বেগমকে মা’রার জন্যে লোক-ভাড়া করতে গিয়েও করলেন না। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)বিপরীতে নিজের মেয়ের জামাইকে বেছে নিলেন। ব্যাপারটা তার স্ত্রীর অজানা। সে ঢোক গিলে তৎক্ষণাৎ বেরিয়ে যায়। তার হাতে দু’দুটো ঘটনা ঘটে গেলো। এখন পালাতে পারলেই বাঁচেন তিনি। একে তো আফরাজ কে নিহত করার কাজে তবুও আহত হয়েছে ছেলেটা। দ্বিতীয়ত আফরাজ এর দাদি-কে মে’রে ফেলার কাজে। মিসেস ফেরদৌসী সবেই হাসপাতালের ভেতর আসলেন। ছেলের নিখোঁজে তার প্রাণ যেন ক্ষয়ে ক্ষয়ে যাচ্ছে। তবুও শ্বাশুড়ি-র সুস্থতাও জরুরি। সেই চিন্তাচেতনায় শ্বাশুড়ির জন্য বাসার থেকে খাবার বানিয়ে এনেছেন তিনি। কেবিনের ভেতর ঢুকে আশপাশে নার্স না দেখে অভিভূত হলেন। শ্বাশুড়ি-র কাছে গিয়ে দেখলেন চোখজোড়া বন্ধ। তিনি মৃদু হেসে টিফিন বক্সের ঢাকনা সরাতে থেকে বলেন,
“আম্মা অনেকক্ষণ ঘুমিয়েছেন এবার উঠুন তো দেখি। আপনার জন্য খাবার এনেছি। কোনো চিন্তা করিয়েন না আফরাজ কে আমরা পেয়ে যাবো। ছেলে আমার সিংহরাজ। তার অগ্নি তান্ডবে তো খারাপ লোকদের প্যান্ট ভিজে যায়। আপনি মোটেও চিন্তা করবেন না। আপনার নাতি…।”
কথাটি শেষ করতে পারলেন না। টিফিন বক্স রেখে যেই না শ্বাশুড়ি-র শরীরে হাত দিলেন চমকে হাত সরিয়ে নিলেন। হাতজোড়া কেঁপে কেঁপে উঠল যেন। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)ঢোক গিলে পুনরায় শ্বাশুড়ি-র শরীরে স্পর্শ করলেন। বোবা হয়ে যান তিনি। বাকরুদ্ধ হয়ে শ্বাশুড়ি-র নিথর শরীরের দিকে চেয়ে রইলেন। দেহটার প্রাণ বুঝি কবেই চলে গেল না ফেরার দেশে। এই শ্বাশুড়ি তো তার অনুপ্রেরণার সর্দারনী ছিলেন। তবে কেমনে এক চটে হারিয়ে গেলেন? চিৎকার করে ‘আম্মা’ বলে শ্বাশুড়িকে জড়িয়ে ধরলেন তিনি। খাদিজা বেগম এর কেবিন থেকে কান্নার চিৎকার শুনে সেই কেবিনের আওতায় নিয়োজিত ডক্টর আর নার্স ছুটে আসল। ডক্টর জনাব ইসমাইল এর স্ত্রীকে কাঁদতে দেখে তৎক্ষণাৎ খাদিজা বেগম এর পার্লস চেক করেন। চমকে নার্সকে জিজ্ঞেস করল।
“একি তোমরা সবাই কি মরে গেছিলে? একটা পেশেন্ট মা’রা গেল তার খবর অব্দি জানাও নাই?”
দু’জন নার্স একে অপরের দিকে চাওয়াচাওয়ি করে করুণ গলায় বলে,
“ডক্টর হাতে অন্য পেশেন্টের কাজ থাকায় যেতে হয়ে ছিল। বুঝতে পারছি না কেমনে কি হলো?”
ডক্টরের কথায় মাথা গরম হয়ে গেল মিসেস ফেরদৌসীর। তিনি তার কলার চেপে ধরে বলেন,
“এখনই এর আইডেন্টিফাই করুন কেনো আমার শ্বাশুড়ি মা’রা গেলো? আরে গতরাতেও তো তিনি সুস্থ ছিলেন। সকালে নার্সও বলে ছিল মিনি হার্ট অ্যাটাক তাহলে মা’রা যাওয়ার কথাই নয়। এখনি আইডেন্টিফাই করুন নাহলে আপনার হাসপাতালের নামে আমি থানায় অভিযোগ দেবো।”
ডক্টর ঘাবড়ে গেলেন। তিনি কাকুতিমিনতি করে বলল।
“দেখেন আপনি শান্ত হোন আমি আইডেন্টিফাই করে জানাচ্ছি। আপনি প্লিজ পেশেন্টের পুরো পরিবার-কে খবর দিন।”
মিসেস ফেরদৌসী নিজেকে সামলে পিছু মোড়ে। তখন টেবিলে রাখা বক্সগুলো দেখে কান্নায় চোখ ভরে গেল তার। খাবারগুলো খুব আদরের সহিতে শ্বাশুড়ি-র জন্য এনেছিলেন তিনি। অথচ কি হলো? বক্সগুলো নিয়ে হাসপাতালের বাহিরে গরীবের মাঝে বণ্টন করে দিলেন। একটা চেয়ারে বসে নীরবে চোখের পানি জড়াতে লাগলেন। এক-দেড় মাসের ব্যবধানে তার পরিবারটা যেনো উজাড় হয়ে গেল। নিশ্চিহ্ন প্রাণে তিনি ফুঁপাতে লাগলেন। তিনি জানেন না কেমনে একথা তার স্বামীকে শোনাবেন? স্বামী কথাটি শোনার পর কি আদৌও নিজেকে টিকিয়ে রাখতে পারবেন? নাকি তিনিও গভীর ভাবে আহত হয়ে পড়বেন? হঠাৎ মসজিদের মধ্যে আযান দেওয়ায় তিনি সময় দেখলেন। যোহরের ওয়াক্ত শুরু হবে। তিনি আর সহ্য করতে না পেরে নামাজের জন্য হাসপাতালের লেডিস মসজিদ রুমে ছুটে গেলেন। একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কেউ পথ দেখানোর নয়।
____
“দোস্ত আমরা ফার্মহাউস এ কি করছি? আর তুইও বা কেনো এ অসুস্থ শরীরে এখানে এসেছিস? ফোনও ধরতে দিচ্ছিস না? হলোটা কি তোর বলবি?”
আকবর এর লাগাতার প্রশ্ন নীরবে শুনে গেল আফরাজ। তার মাঝে ভ্রুক্ষেপ নেই। সে তার মত লেপটপ ঘেঁটে সিসিটিভি কানেক্ট করার চেষ্টা করছে। আকবর বিরক্তির কণ্ঠে কিছু বলতে গিয়েও চুপ হয়ে গেল। তার নজর গেল লেপটপের স্ক্রিনে। সেখানে দেখা যাচ্ছে আফরাজ এর বেলকনিতে তার শরীরে বু’লে’ট লাগার দৃশ্যটি। সেখানে সুস্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। রাস্তার বিপরীত পাশে তিনজন লোক তাদের মধ্যে একজনের হাতে অস্ত্র। সেই বু’লে’ট ছুঁড়ে দেয়। বাকি দুজনের চেহারা অস্পষ্ট হলেও বুড়ো বয়সী এক লোকের চেহারা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। আফরাজ এর শরীরে বু’লে’ট লাগার পরপর তারা বেরিয়ে যায়। এই ফুটেজ পরিবর্তন করে ফার্মহাউসের ফুটেজ ওপেন করে। সেখানে নাজীবা-কে বেঁধে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্যটি দেখা গেল। সবটা দেখে একশত ভাগ নিশ্চিত হলো এই কারবার দাহাব এর। সেই লোক ভাড়া করে নাজীবাকে নিয়ে গেল। আফরাজ লেপটপটা অফ করে আকবরের দিকে তাকিয়ে বলে,
“দ্যাটস ইট তাদের টার্গেট ছিলাম আমিই। তাহলে এই কাজ যে,দাহাব এহসান এর তা বেশ বুঝতে পেরেছি। এবার হবে সামনাসামনি টক্কর। আমার বিবিজান-কে অপ’হর’ণ করার শাস্তি কেমন তা এবার টের পাবেন তিনি? ছোটবেলার আফরাজ ভেবেছেন তো আমায়! যে প্রতিবাদ করতে পারেনা ,যে অচল সেই আফরাজ কি জিনিস সেটা দেখানোর সময় চলে এসেছে।”
স্বেচ্ছায় ফোন বের করে দাহাব এহসান কে কল লাগায়। তিনি আফরাজ এর কল দেখে মনে মনে ভয় পেলেও নাজীবার দিকে চেয়ে বাঁকা হেসে ফোন রিসিভ করলেন। ছেলে কে তাচ্ছিল্যেতা দেখিয়ে বলেন,
“কি গো আমার দাদুভাইয়ের জামাই গো? বেশি কষ্ট হচ্ছে বুঝি? বউয়ের জন্য মরে যাহ নাহহ। বেঁচে থাকতে তো আর তাকে পাবি না। আমি এমন জায়গায় লুকিয়েছি যার সন্ধান অব্দি তুই পাবি না। তুই…..।”
“এই চুপ মুরগি ম’রার আগে ছটফটে হয়ে যায় বলে যে তোর অবস্থাও তেমনি। শোন বিবিজান আমার। আমাকে চিনিস নাই আগে যাহ্ নালায়েক এর বাচ্চা আমার পরিচয় জেনে নেহ্। তারপর ভাবতে থাকিস আমার সাথে কেমনে মুখোমুখি হয়ে লড়াই করবি।”
কট করে কলটা কেটে দিল আফরাজ। দাহাব এহসান ফোনের মধ্যে তৎক্ষণাৎ লিয়াকত কে কল দেয়। তড়জড় গলায় বলেন,
“শোন তুই এই শহর থেকে আপাতত পালিয়ে যাহ্। নাহলে আফরাজ এর হাতে পড়লে কু’ত্তার ম’রা মরবি।”
শ্বশুরের কথায় ঢোক গিলে মাঝরাস্তায় দাঁড়িয়ে যান তিনি। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান) মেয়ে তার শ্বশুরের কাছে সুস্থ থাকবে সেই আশায় শহরের বাহিরে চলে যাওয়ার জন্য গাড়ি ঘুরিয়ে নেন। আফরাজ তার পরণে শার্ট আর জ্যাকেট পরে নেয়। মানিব্যাগে বিবিজান এর ছবির দিকে তাকিয়ে বলে,
“তুমি চিন্তা করো না বিবিজান। তোমার জামাই তার পুরোনো ফর্মে আসতে চলেছে। তোমার তো জানাই নেই তোমার জামাই ছোট থেকেই জেলাসি প্রকৃতির মানুষ। তোমার সাথে যে যে খারাপ কাজ করতে চাইছে তাদেরকে হাসপাতালের বেডে শুয়ে ছেড়েছি। সেখানে তোমার জীবন হু’ম’কি’র মধ্যে ফেলা মানুষ কে তো হাসপাতালের বেডে নয়, কেয়ামত দেখায় ছাড়বো।”
মানিব্যাগ পকেটে রেখে রুম থেকে বের হলো আফরাজ। বাঁকা হেসে বলে, ‘অল অফ ইউ গাইস আর রেডি?’
‘ইয়েস স্যার।’
গার্ডস রেডি দেখে অবাক হলো আকবর। সে প্রশ্নাতীত নজরে তাকায়। আফরাজ হেসে বলে,
“এভাবে কি দেখছিস নাকিব মুনসিফ এর কথা ভুলে গেলি নাকি? এই গার্ডস তার পাঠানো। আমাদের গার্ডস তো আছেই।”
“কি নাকিব স্যার কেন গার্ডস পাঠিয়েছে?”
আফরাজ জবাব দিল না। চোখের ইশারায় যাওয়ার জন্য ইঙ্গিত দেয়। কিন্তু যেতে গিয়েও এক ফোন কলে আফরাজ আর আকবর এর হুঁশ উড়ে যাওয়ার মত হলো। তারা তৎক্ষণাৎ হাসপাতালের উদ্দেশ্যে বের হয়।
জনাব ইসমাইল মায়ের আকস্মিক মৃত্যু সইতে না পেরে জ্ঞানহীন হয়ে হাসপাতালের বেডে পড়ে রইলেন। মিসেস ফেরদৌসী কোথার থেকে কি সামলাবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। একের পর এক শোকবার্তা যেনো পিছে পড়েছে। তিনি মাথায় হাত চেপে বসে রইলেন। কাঁধে কারো স্পর্শ পেয়ে চোখ তুলে তাকান। ছেলেকে দেখে কান্নাময় গলায় বলেন,
“বাবা-রে তোর দাদি আর নেই। তোর বাবাও শোক সামলাতে না পেরে অজ্ঞান হয়ে গেল। এই বাবা কি অভিশাপ পড়ল আমার পরিবারের উপর? জানিস তোর দাদি কে না কোন লোক নাকি এসে অ্যানেস্থেসিয়ার ইনজেকশন দিয়েছে। এতে তোর দাদি আজীবনের জন্য চোখ বুজে নিলেন। বাবা-রে ঐ লোককে ছাড়িস না। যাবতজীবন কারাদণ্ড দিস।”
মায়ের আহাজারির চেয়েও দাদির মৃত্যু আফরাজ এর রাগের সীমাকে পাড় করে দিল। দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“আম্মা রেডি হয়ে যান। দাদির দাফন কার্য শুরু করতে হবে।”
মা’কে ছেড়ে করিডোরে এসে দাহাব এহসান কে ফোন দেয়। বেচারা চিন্তায় পায়চারী করছেন। আফরাজ এর শান্ত কণ্ঠ যেনো কোনো তাণ্ডব এর ইশারা করছে। ফোন আসায় দেখলেন আফরাজ এর কল। ঢোক গিলে কল রিসিভ করেন।
“তোর কেয়ামত দেখার খুব শখ তাই না? আমার পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করার স্পর্ধা করলি। এর পরিণাম খুব ভয়াবহ হবে। এই আফরাজ ফাহিম তার পুরোনো ফর্মে ফিরে এসেছে। তোর শাস্তি কেমন ভয়াবহ হবে তুই কল্পনাও করতে পারবি না। যাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ।”
চলবে…..