#অন্যরকম তুই💘
#পর্বঃ২০
#লেখিকাঃDoraemon
অহনা মাটিতে বসে পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে চিতকার করে কাঁদতে লাগল। অহনার চোখ দিয়ে জল অনবরত পড়তে লাগল৷ অহনা পাগলের মতো কাঁদতে লাগল। অনন্তের বাসায় এখন কেউ নেই কারণ অনন্তের মা গ্রামের বাড়িতে গিয়েছে এবং অনন্তের বাবাও অনন্তের মতো অফিসে তাই এই মুহূর্তে অহনার কি হয়েছে তা জিজ্ঞেস করার মতো কেউ নেই। দুপুর থেকে রাত ঘনিয়ে এলো। অহনা এখনোও মাটিতে বসে আছে। অনন্ত অফিস থেকে ফিরে নিজের রুমে ঢুকে অহনাকে মাটিতে বসে থাকা অবস্থায় দেখে থমকে যায়। অনন্ত দৌড়ে অহনার কাছে গিয়ে অহনার মুখোমুখি মাটিতে বসে। অনন্ত দেখতে পেল অহনার চোখ নাকমুখ ফুলে একাকার হয়ে গেছে। অহনার চোখগুলো টকটকে লাল হয়ে আছে। অনন্ত অহনাকে নিজের কাছে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে অহনাকে উদ্দেশ্য করে বলল
–কি হয়েছে অহনা তুই এভাবে মাটিতে বসে আছিস কেন? আর তোর চোখমুখের এই অবস্থা কেন? দেখে তো মনে হচ্ছে তুই সারাদিন এখানে বসে থেকে কান্না করেছিস। কি হয়েছে আমায় বল?
অহনা অনন্তের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে শান্ত গলায় অনন্তকে উদ্দেশ্য করে বলল
–আপনি কেন বলেন নি যে আপনার ব্রেইন টিউমার হয়েছে? বলুন কেন বলেন নি আপনি? আমি কি আপনার এতটাই পর যে আমাকে একবারও জানানোর প্রয়োজনবোধ করলেন না?
অনন্ত অহনার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। অনন্তের আর বুঝতে বাকি রইল না যে অহনা সবটা জেনে গেছে। অনন্ত একটু মুচকি হেসে অহনাকে বলল
–অহনা তুই এসব কি বলছিস? আমার কিছু হয় নি তো। দেখ আমি ঠিক আছি৷ কিসব আজে বাজে কথা বলছিস তুই?!!
অহনা নিজের হাতে থাকা রিপোর্টটা অনন্তের দিকে ছুঁড়ে ফেলে বলল
–তাহলে এটা কি? এখানে তো স্পষ্ট লিখা আছে যে আপনার ব্রেইন টিউমার হয়েছে! আপনি আমার কাছে এত বড় সত্যিটা কেন লুকালেন স্যার?
অনন্ত কিছু বলছে না শুধু মাথা নিচু করে চুপ করে বসে আছে। অনন্তের এমন শান্ত আচরণে অহনা অভস্ত্য নয়৷ অহনা অনন্তকে বলল
–কি হলো স্যার কথা বলছেন না কেন? আমার প্রস্নের উত্তর দিন?
অনন্ত শান্ত গলায় অহনাকে বলল
–অহনা তুই যা জানতে পেরেছিস তা সবই সত্যি। হ্যা আমার ব্রেইন টিউমার হয়েছে। আমি আর বেশিদিন এই পৃথিবীতে নেই। যখন জানতে পেরেছি তখন খুব দেড়ি হয়ে গিয়েছে রে অহনা৷ আমি নিজেও তোর কাছ থেকে দূরে থাকতে চাই না কিন্তুু কপালের লিখন যে কেউ বদলাতে পারে না।
অনন্তের কথা শুনে অহনা রেগে অনন্তকে কষিয়ে থাপ্পড় দিয়ে দিল। অহনা কাঁদতে কাঁদতে অনন্তকে উদ্দেশ্য করে বলল
–বিশ্বাসঘাতক, বেঈমান, প্রতারক, আপনি! আমার কাছ থেকে দূরে চলে যাওয়ার প্লেন করছেন? যদি যাওয়ারই থাকে তাহলে কেন আমার জীবনে এলেন? বলুন কেন এলেন আমার জীবনে? আমার মনে কেন ভালোবাসা তৈরি করলেন আপনি? কেন আপনার প্রতি আমাকে দূর্বল করে দিলেন? আমি যে আপনাকে খুব ভালোবাসি তা কি আপনি বুঝতে পারছেন না?
অহনার কথায় অনন্তের চোখ দিয়ে টপ করে কয়েক ফোঁটা চোখের জল গড়িয়ে পড়ে। আজ প্রথম অনন্ত অহনার মুখে ভালোবাসি কথাটা শুনতে পেরেছে। অনন্ত খুশি হয়ে অহনাকে উদ্দেশ্য করে বলল
–তুই কি বললি অহনা? শেষের কথাটা আরেকবার বল?
অহনা চিতকার করে অনন্তকে উদ্দেশ্য করে বলল
–আমি আপনাকে ভালোবাসি, ভালোবাসি, ভীষণ ভালোবাসি। পাগলের মতো ভালোবাসি। আপনার কথা ভাবতে ভাবতেই আমি আমার হৃদয়টাকে ক্ষত বিক্ষত করেছিলাম। আপনি আমার জীবনে একমাত্র ব্যক্তি যাকে আমি নিজের অজান্তেই খুব ভালোবেসে ফেলেছি। এতদিন আমি আমার ভালোবাসাটা বুঝতে পারে নি। কিন্তুু আজ যখন বুঝতে পেরেছি তখন কেন আমাকে ফেলে দূরে চলে যেতে চাইছেন স্যার? আমি যে আপনাকে ছাড়া বাঁচব না তা কি আপনি বুঝতে পারছেন না? আমার প্রতিটা নিঃশ্বাস জুড়ে যে শুধু আপনি আছেন তা কি আপনি বুঝতে পারছেন না স্যার?
কথাগুলো বলেই অহনা চিতকার করে কাঁদতে লাগল। অহনার কান্না দেখে অনন্তের বুকটা কস্টে ফেটে যাচ্ছে। অনন্ত অহনাকে আবারো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কান্নাজড়িত কন্ঠে অহনাকে উদ্দেশ্য করে বলল
–তুই এভাবে কাঁদিস না অহনা। তোর কান্না যে আমার সহ্য হয় না। কি করব আমি অহনা তুই বল! আমারও যে তোকে ছেড়ে এ পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে ইচ্ছে করছে না৷ আমিও যে বাঁচতে চাই অহনা। তোর জন্য বাঁচতে চাই। খুব করেই বাঁচতে চাই অহনা। কিন্তুু এটা যে সম্ভব না। আমি যে আর বেশীদিন এই পৃথিবীতে নেই। আমার একমাত্র লক্ষ্য ছিল তোকে সুস্থ করে তোলা। আমি পেরেছি অহনা। আমি তোকে সুস্থ করতে পেরেছি। এখন যদি আমি মরেও যাই আমি তাতেও শান্তি পাব কারণ আমার মৃত্যুর আগে তোকে সুস্থ করে যেতে পেরেছি এবং আমার জীবনের কিছু মুহূর্ত আমি তোর সাথে কাটাতে পেরেছি৷ তোকে দুচোখ ভরে এতদিন দেখতে পেরেছি। আমি তোকে সারাজীবন আমার পাশে চেয়েছিলাম অহনা কিন্তুু আমার ভাগ্য যে বড়ই নিষ্ঠুর। আমার ভাগ্য যে তা হতে দিবে না।
অহনা অনন্তকে শক্ত করে জড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল
–আপনার কিছু হতে পারে না স্যার। আপনার কিছু হলে আমি বাঁচতে পারব না৷ দম বন্ধ হয়ে মরে যাবো আমি স্যার। মরে যাবো আমি৷ প্লিজ আমাকে ছেড়ে যাবেন না স্যার প্লিজ যাবেন না।
অনন্ত অহনাকে নিজের কাছ থেকে ছাড়িয়ে ধমকের স্বরে অহনাকে উদ্দেশ্য করে বলল
–চুপ একদম চুপ৷ আরেকবার মরার কথা বললে থাপ্পড় দিয়ে তোর সব কয়টা দাঁত ফেলে দিব বেয়াদব মেয়ে। তোর এত বড় সাহস কি করে হয় নিজেকে মেরে ফেলতে চাস? আমি মরে গেলে মরে যাব।কিন্তুু ভুলেও তুই নিজের কোনো ক্ষতি করবি না।
অহনা কাঁদতে কাঁদতে মুচকি হেসে অনন্তকে উদ্দেশ্য করে বলল
–আমার নিজেকে মারতে হবে না স্যার! আমার প্রাণ পাখিটা যে আপনাকে ছাড়া বাঁচবে না তাই নিজের অজান্তেই আমার দেহ থেকে বের হয়ে আপনার কাছে চলে যাবে। আপনাকে ছাড়া যে এ মন কিছুতেই থাকতে পারবে না৷
অনন্ত অহনার কথা সহ্য করতে পারল না৷ অনন্তের ইচ্ছে করছিল অহনাকে থাপ্পড় মারতে তবুও অহনাকে থাপ্পড় না মেরে অনন্ত মাটিতে বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে টেবিল থেকে একটা কাঁচের গ্লাস দেয়ালে ভেঙে নিজের হাত কেটে ফেলল। আর মুহূর্তেই অনন্তের হাত থেকে রক্ত ঝড়তে লাগল৷ অনন্ত অহনার দিকে মৃদু হেসে বলল
–আরেকবার যদি তোর মৃত্যুর কথা বলিস তাহলে এখনই নিজেকে শেষ করে ফেলব৷ যে কয়টা দিন বাঁচতাম সে কয়টা দিনও বাঁচব না৷ তার আগেই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাব।
অহনা অনন্তের কান্ড দেখে অবাক হয়ে যায়। অহনা কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে বসা থেকে উঠে দৌড়ে এসে অনন্তকে জড়িয়ে ধরে বলল
–এটা আপনি কি করলেন স্যার? কেন নিজের হাতটা এভাবে কাটলেন আপনি?
অহনা নিজের শরীরের ওড়নাটা ছিঁড়ে অনন্তের রক্ত ঝরা হাতটা বেঁধে দিল। অনন্ত অবাক নয়নে অহনার দিকে তাকিয়ে থাকে।
অনন্ত অহনাকে উদ্দেশ্য করে বলল
–তুই আমাকে ভালোবাসলি ঠিকই অহনা কিন্তুু তুই খুব দেড়ি করে ফেললি।
।
।
।
#চলবে…..