অন্যরকম তুই পর্ব-১৯

0
1934

#অন্যরকম তুই💘
#পর্বঃ১৯
#লেখিকাঃDoraemon
অহনাও অনন্তের কথা অনুযায়ী মন খারাপ করে অনন্তের বিছানায় শুয়ে পড়ল। কিন্তুু মুহূর্তেই অহনা ঘাবড়ে গিয়ে শুয়া থেকে উঠে বসল। অহনার এ কান্ড দেখে অনন্ত অহনাকে উদ্দেশ্য করে বলল
–কি হলো এভাবে টাকি মাছের মতো লাফিয়ে উঠলি কেন? শুয়ে পড় বলছি। নাহলে তোর জন্য আরো শাস্তি অপেক্ষা করছে।
অহনা ভয়ে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল
–স্যার আপনি কো কো কোথায় শুবেন? আমি তো আপনার বিছানায় শুয়েছি। আপনি কি আমার সাথে একই বিছানায় শুবেন নাকি? ভুলেও এমন কাজ করবেন না। আমি তাহলে বিছানা থেকে উঠে নেমে যাব।
অনন্ত মুচকি হেসে অহনাকে বলল
–আরে না রে পাগলি তুই বিছানায় শুয়ে পড়। আমি সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়ছি। আর হ্যা আমাকে এত ভয় পাওয়ার কারণ নেই। আমি তোকে আগেও বলেছি আমি রাগী হতে পারি কিন্তুু পশু নই।
অহনা আর কিছু বলল না। চুপচাপ মুখ গুড়িয়ে শুয়ে পড়ল। অহনা বিছানায় শুয়ে একটা অদ্ভুত সুগন্ধ পাচ্ছে যা অহনাকে মাতাল করে দিচ্ছে। একসময় অহনা ঘুমিয়ে পড়ল। অনন্ত অহনার কাছে এগিয়ে এসে বিছানার এক কোণে বসে অহনার কপালে আলতো করে চুমুর স্পর্শ এঁকে দিল। অহনার তাতে কোনো খেয়াল নেই। অহনা তো এখন ঘুমের দেশে চলে গেছে। অনন্ত অহনার মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। কিন্তুু হঠাৎই অনন্তের মাথায় প্রচন্ড ব্যথা অনুভব হতে লাগল। অনন্ত মনে মনে বলল
–আবারো আমার মাথায় সেই একই ব্যথা অনুভব হচ্ছে! উফফ এ ব্যথা যে কত যন্ত্রণার কি করে বুঝাবো! অহনা এখন ঘুমাচ্ছে। ওর যাতে কোনো মতেই ঘুমটা না ভেঙে যায় সেদিকে আমার খেয়াল রাখতে হবে। অনেক কস্ট করে ওকে ঘুম পাড়িয়েছি। ওকে কোনোমতেই আমার এই কস্টের কথা জানানো যাবে না।
অনন্ত বারান্দায় চলে গেল। এখন রাত ২ টা বাজে৷ প্রকৃতিটা চারিদিকে কত নিস্তব্ধ। হালকা বাতাস বয়ে যাচ্ছে চারপাশে। অনন্ত আকাশের তাঁরাগুলোর দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। অনন্তের মাথার ব্যথাটা প্রবল আকার ধারণ করছে। অনন্ত মাথায় এক হাত রেখে মুচকি হেসে মনে মনে বলল
–জানিস অহনা এখন তুই আমার খুব কাছে। আমার আর কিছু চাওয়ার নেই। আমি জানি তুই আমাকে ভালোবাসিস কিন্তুু মুখে স্বীকার করতে চাস না। হয়তোবা তুই নিজেও জানিস না যে তুই আমাকে ভালোবাসিস৷ তোর চোখে আমি আমার জন্য ভালোবাসা দেখেছি অহনা। কিন্তুু এই মনটা তবুও তোর মুখ থেকে একবারের জন্য হলেও ভালোবাসি কথাটা শুনতে চায়। নিজের মনটাকে কিছুতেই মানাতে পারছি না। আমি জানি যখন আমি এই প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যাবো তখন তুই আমার জন্য খুব কাঁদবি। খুব কস্ট পাবি তুই আমার জন্য ৷ একদিন ঠিকই তুই বুঝবি আমার কাছে কতটা ছিলিস #অন্যরকম তুই। তখন নাহয় আমি থাকব না তোর পাশে। কিন্তুু যাই হোক আমার শেষ নিস্বাস নেওয়ার আগেই আমাকে তোকে পুরোপুরি সুস্থ করে তুলতেই হবে। জানি আমার হাতে বেশিদিন সময় নেই। আমি নাহয় তোর মুখে ভালোবাসি কথাটা আকাশ থেকেই শুনে নিব।
অনন্তের মাথা ব্যথা ধীরে ধীরে আরও বাড়তে লাগল। অনন্ত মাথায় এক হাত রেখে তাড়াতাড়ি রুমে গিয়ে টেবিলের ড্রয়ার থেকে টেবলেট আর ঔষধ বের করে খেয়ে নিল। অনন্তের খুব কস্ট হচ্ছে। অনন্তের শ্বাস নিতেও কস্ট হচ্ছে। কিন্তুু আজ অহনা তার খুব কাছে। অহনার ঘুমন্ত মুখটা দেখেই অনন্ত তার সব কস্ট ভুলে যাচ্ছে। হাজারো কস্টের মাঝে অনন্তের মুখে একটু হাসি ফুটে উঠেছে। কিছু কস্ট আড়ালেই রেখে দিয়েছে অনন্ত। কারণ অহনা জানলে যে অনন্তের কস্ট সহ্য করতে পারবে না।
এভাবেই দিন যেতে লাগল। অহনা আর অনন্ত এখন খুব ভালো বন্ধু হয়ে উঠেছে৷ অহনা এখন আগের থেকে অনেকটাই সুস্থ। অনন্ত অহনাকে তার পরিবারের কাছে কিছুতেই যেতে দেয় না। অনন্ত অহনাকে তার নিজের কাছেই রেখে দিয়েছে। এটা অহনার মনে খুবই ক্ষোভ প্রকাশ করে। অহনার তার মা বাবার সাথে ফোনে কথা বলে। অহনার মা বাবা জানে অহনা তার বান্ধবীর বিয়ের জন্য তাদের বাসায় বেড়াতে গিয়েছে। কিছুদিন পরই ফিরে আসবে। দিন যাচ্ছে, সময় যাচ্ছে। অনন্ত আগের থেকে অনেকটাই শান্ত হয়ে গেছে৷ অনন্তের চোখ মুখ শুকিয়ে যাচ্ছে। চোখের নিচে কালো কালি পড়ে গেছে। অনন্ত ঠিকমতো খাবারও খায় না। অহনা অনন্তের এ অবস্থা দেখে অনন্তকে কিছু জিজ্ঞেস করলে অনন্ত ব্যাপারটা এড়িয়ে যায়। অনন্ত এখন অহনার কাছ থেকে কিছুটা দূরত্বে থাকে। আবার হঠাৎ করেই অহনাকে জড়িয়ে ধরে। অহনার ব্যাপারটা কেমন সন্দেহ হতে থাকে। অহনা মনে মনে বলল
–যেই স্যারটা এত রাগী ছিল সেই স্যারটা ধীরে ধীরে এমন শান্ত হয়ে যাচ্ছে কেন! আর উনাকে মাঝে মাঝেই দেখি মাথায় হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে থাকেন। ঘন নিশ্বাস ফেলেন। উনার কি হয়েছে? উনি ধীরে ধীরে এমন অসুস্থ হয়ে যাচ্ছেন কেন? উনাকে জিজ্ঞেস করলে তো উনি কিছুই বলেন না৷ আমাকেই খুঁজে বের করতে হবে উনার কি হয়েছে।
অনন্ত আজ অফিসে চলে গেছে৷ তাই অহনা অনন্তের পুরো রুমে খুঁজাখুঁজি করতে লাগল কিছু পায় কিনা। কিন্তুু অহনা পুরো ঘর খুঁজেও কিছু পেল না। হাল ছেড়ে দিয়ে অহনা বিছানায় বসে পড়ল। অহনা মন খারাপ করে বসে আছে। তখনই অহনার চোখ পড়ল অনন্তের বেডরুমের দেয়ালে থাকা বড় করে টাঙানো অহনার ছবির ফ্রেমটার দিকে। অহনা ছবিটা দেয়াল থেকে সরালেই নিচে একটা কাগজ অহনার পায়ে এসে পড়ল।
অহনা যখন কাগজটা হাতে নিয়ে খামটা ছিড়ে খুলে পড়তে শুরু করল তখন অহনার মনে ঝড় বইতে লাগল। কারণ কাগজে স্পষ্ট লেখা অনন্তের ব্রেইন টিউমার হয়েছে। আর অনন্তের বাঁচারও কোনো আশা নেই। ডেট একদম শেষ পর্যায় চলে গেছে। অহনার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়তে লাগল। অহনা ধুম করে মাটিতে বসে পড়ল।



#চলবে……

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে