#অন্তর্দহন_প্রণয়
#দ্বিতীয়_খন্ড
৪।
সুরাইয়া সাত্তার ঊর্মি
❌(কপি করা নিষেধ) ❌
আমেরিকার কোনো এক শহরে…. নিরব চারপাশ। এক দুই কিলোমিটার পর পর একটি বাড়ি এই শহরে…. জনশূন্য একেবারেই কম। ভিআইপি শহরের অন্তর্ভুক্ত একটি শহর। সাজানো-গোছানো মনোরোম পরিবেশ। কোলোহল মুক্ত এই পরিবেশে আজ কিছুটা কোলাহল সৃষ্টি হলো পুলিশের হুইসলার এর জন্য।
দিনটি সকাল…. চারিদিকে খেলা করছে মিষ্টি রোদ। ঠান্ডার সাথে পাল্লায় নেমে যেন প্রতিযোগীতায় ব্যস্ত…। এই মিষ্টি সকাল কারো কারো জন্য যেন দুঃখজনক..
একটি দোতালা বাড়ি ঘিরে আছে পুলিশ। বাড়িটি থেকে ভেসে আসচ্ছে কান্নার শব্দ। জনশূন্য এই জায়গায় এখন মানুষের সমাগম। সবার মুখে এক কথা… ডা. সাহিল ইজ ডেথ!” ডা. সাহিল মারা গেছে!” তাকে মেরে ফেলা হয়েছে। কেউ কেউ বলছে… উনি সুসাইড করেছেন! আদো কোনটা সত্যি? নিজ কক্ষের বেলকনির নিচে পার্ক করা গাড়ির উপর পাওয়া গেছে তার লাশ…. দেখে মনে হচ্ছে কেউ নখ দিয়ে খামচে নিয়েছে শরীরের চামড়া রক্তাক্ত শরীর…. তারপরেও মনে হচ্ছে এটি সুসাইড….! আসলে কোনটা সত্য?
ডা. সাহিলে স্ত্রী ভ্যারোনিকা… যিনি আমেরিকার একজন ডাক্তার । উনি কান্না করে যাচ্ছেন। পুলিশ তাকে নানান প্রশ্ন করে চলেছেন। তার উত্তর একটাই…
” আমি কিছু জানি না… কাল রাতেও সব ঠিক ছিলো… এক সাথে আমরা পার্টিতে গেছিলাম… তারপর বাসায় ফিরে এলেন তিনি। আমার একটা সার্জারি থাকায় আমি চলে গেছিলাম হসপিটালে। সকালে ফিরে দেখি… উনি… উনি…”
বলতে বলতেই কেঁদে দিলেন। পুলিশ ডেড বডি নিয়ে গেলেন। ডা. আদর, ডা. অভিনব এবং রুফাইদা আর জয়নব-ও এসেছে এখানে। নিজের বাবা মরে যাওয়ার খবরে ভেঙে পরেছে অভিনব-ও। রুফাইদা সামলে নিচ্ছে তাকে…..! কিন্তু ডা. আদর কঠিন মুখে তাকিয়ে আছে জয়নবের দিকে। জয়নব ভাবলেশহীন….
কি হয়েছিলো ডা. সাহিলের সাথে………
লাল, হলুদ আলোয় সজ্জিত হয়ে আছে ক্লাব। ডা. সাহিল নিজের বউ ছেড়ে ঘেঁসে দাঁড়িয়ে আছে অন্য এক রমনীর সাথে। থেকে থেকে করছে আলিঙ্গন। ভ্যারোনিকা দূর থেকে কষ্ট পেলেও.. কিছু করার নেই… ডা. সাহিলকে ভালোবেসেই বিয়ে করেছিলেন উনি। কিছুটা আবার পায়ের নিচের মাটি শক্ত করতে বৈকি…. ভ্যারোনিকা না সইতে পেরে সরেই গেলেন। নিজ স্বামীকে অন্য কারো বাহু ডোরে কেই বা দেখতে চায়?
সাহিল ড্রীংক করছিলো। এতটাই ডুবে ছিলো নেশায়… যে বুঝতেও পারলো না…. কখন কেউ এসে তার গ্লাসে বিষাক্ত ব্লিচড ডেলে দিলো। গটগট করে যখন খেয়ে নিলো সবটুকু । কেমন জানি তিক্ততা অনুভব করলো সে। তবুও পাত্তা দিলো না সে….
কিছুক্ষণ পর ভ্যারোনিকা এসে বলল,
” আমার যেতে হবে, সার্জারি আছে একটা!”
নেশায় বুদ সাহিল হাত নাড়ালো। দীর্ঘ শ্বাস বেড়িয়ে এলো ভ্যারোনিকা। বড় বড় পা ফেলে বেড়িয়ে গেলো ক্লাব থেকে। কিন্তু সকালে যখন ফিরলো? সাহিল আর নেই…৷৷
জয়নব সাহিলের ডেথ বডির সামনে দাঁড়িয়ে মুচকি হাসলো। খোলা চোখ জোড়া সাহিলের… দেখে ভয়ংকর মনে হচ্ছে। এই বুঝি ছুটে এসে চেপে ধরবে জয়নবের গলা। জয়নব ভয় পেলো কিছুটা। তবুও চুপ রইলো। কিছু মুহূর্ত এভাবেই কেঁটে গেলো। পুলিশ লাশ নিয়ে বিদেয় হলো। তার পর মুহূর্তেই একটা শক্ত পক্ত হাত চেপে ধরলো জয়নবের হাত…. টেনে নিয়ে গেলো গাড়ির দিকে। জয়নব ভয়ে ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে রইলো। সামনে ভেসে উঠলো আদরের হিংস্র মূর্তি। জয়নব শুকনো ঢুক গিললো। ভয়ে ভয়ে বলল,
” আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?”
আদর তার ফ্যাকাসে চোখ জোড়া মেলে ঠান্ডা দৃষ্টিতে তাকালো। জয়নবের বুক কেঁপে উঠলো। যেমন একটি সাপের পায়ে পা দিলে যেভাবে ছোবল দিতে চায়? ঠিক তেমনি ছোবল দিবে যেন আদরের দৃষ্টি। জয়নব চোখ সরিয়ে নিলো। গাড়িতে উঠবে ঠিক সেই মুহূর্তে রুফাইদার আওয়াজ ভেসে এলো,
” ডা. আদর জয়নবকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছেন?”
আদর জয়নবকে বসিয়ে নিজেও বসছিলো রুফাইদার কন্ঠ শুনে থেমে গেলো। রুফাইদার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বলল,
” আমার বউকে আমি কোথায় নিয়ে যাবো? তা বলতে আপনাকে আমি বাধ্য নই!”
রুফাইদা ভ্রু জোড়া কুচকে তাচ্ছিল্য ভাবে বলল,
” বউ! হাহ্। কাউকে জোর করে বিয়ে করলেই কেউ বউ হয়ে যায় না মি.!”
আদর এবার ক্ষ্যাপে গেলো। মুখের অভিব্যক্তি পরিবর্তন হতে লাগলো। বলল,
” ভাবি আজকাল খুব কথা বলতে শিখেন দেখছি। ডা. সাহিল মরার পিছনে যদি আপনার হাত হয়? আমি কিন্তু ছেড়ে দেবো না কাউকো!”
রুফাইদা ঘাবড়ে গেলো। তা দেখে চট জলদি জয়নব বলল,
” বড়পু আমি বাসায় গিয়ে তোমার সাথে কথা বলবো!”
রুফাইদা মাথা নাড়লো। তীক্ষ্ণ দৃস্টি মেলে তাকালো আদরের দিকে। আদর আর কোনো দিকে না তাকিয়ে গাড়ি চালিয়ে স্বা করে চলে গেলো।
আজ কদিন যাবত আদর জয়নবকে একটি ফোন দিয়েছিলো কথা বলার জন্য। কিছুটা ছাড় দিয়ে ছিলো বন্দিজীবন থেকে। কিন্তু তার এই সুযোগের ব্যবহার জয়নব করে দিয়েছে। তাই তো আজ সাহিল নেই….! এদিকে জয়নব ভয়ে কুঁকড়ে যাচ্ছে। সব কিছু উপেক্ষা করলেও আদরকে উপেক্ষা করার ক্ষমতা তার নেই। লোকটি তাকে যেমন পাগলের মতো ভালোবাসে, তেমনি তার পালক বাবা সাহিলকেও ভালোবাসতো। যদিও লোকটির চরিত্র ভালো ছিলো না। তাতে কি? আদরের মতো ছেলেকে মাটি থেকে কুড়িয়ে এনেছিলেন, লালনপালন করে বড় করেছেন, দু মুঠো ভাত দিয়েছেন। সেই লোকটির মরার পিছনের কারণ তারই বউ.. তার ভালোবাসা। জয়নব যেন সাহিলকে কিছু করতে না পারে… তাইতো বিয়ে করেছিলো সে জয়নবকে। আর অথচ তাই হলো! সাহিল আজ মৃত। ভাবতেই আদরের মুখের এক্সপ্রেশন চেঞ্জ হতে লাগলো।
এদিকে জয়নব ভয়ে গুটিশুটি মেরে থাকলে-ও মনে তার শান্তি। জয়নব যানে আদর তাকে বকাঝকা ছাড়া তেমন একটা কিছু করবে না। বড়োজোর ঘর বন্দি করবে আবার। তাতে কি? তার প্রতিশোধ নিয়া তো হয়েছে! কিন্তু আসলেই কি সত্যি জয়নবের শত্রু শেষ হয়েছিলো? জয়নব সব বাদ দিয়ে ভাবনায় চলে গেলো,
কাল রাতে রুফাইদার সাহায্য বিষাক্ত ব্লিচডটি মিলিয়ে দেয় সাহিলের ড্রিংক্সে। তার পর থেকেই শুরু হয় হ্যালুসিনেশন। এর মাঝেই আসে একটি ফোনকল…. ওপাশ থেকে ভেসে আসে তীক্ষ্ণ ধারালো কন্ঠে,
” সাহিল… তোর মরার সময় ঘনিয়ে এসেছে।৷ সামনে দেখ এখন পর্যন্ত যাদের মেরেছিস! সবাই তোর জন্য অপেক্ষা করছে।”
সাহিলের মাথায় কথা গুলো কেমন যেনো ঘুরপাক খেতে লাগলো। সামনে তাকিয়ে দেখলো, দাঁড়িয়ে আছে আয়ান, দেবাশীষের মেয়ে, ওয়ার্ড বয় দুজন, এছাড়া আছে অনেকেই… যাদের অপারেশনের মাঝে কিডনি গুর্দা ফুসফুস চুরি করে নিয়েছিলো সে। ডা. সাহিল চোখ ঢলে ভালো করে চাইলে, নাহ্ সে স্বপ্ন দেখছেনা এটা বাস্তব। দাঁড়িয়ে আছে শত শত মৃত মানুষ। যাদের শরীর থেকে বেড়ি যাচ্ছে পুঁজ, পোকা মাকড়। দেখেই বমিতে ভাসিয়ে দিলেন সাহিল। ভয়ে চোখ মুখ শুকিয়ে গেছে তার। সুন্দরী রমনী ছেড়ে এক রকম পালিয়ে বাসায় চলে আসেন উনি। কিন্তু তাতেও রক্ষে নেই। মৃত দেহে গুলো তাকে তারা করছে যেন। এদের শরীর থেকে বেড়িয়া আসা ময়লা গুলো সাহিলের শরীরে উঠতে লাগলো। সাহিল নিজের শরীর থেকে খামচে খামচে সরাতে লাগলো সব। ঠিক তখনি আয়ান এসেই তার মাথাটা খুলে দিলো। রক্ত ফিনকি যেয়ে যেনো মাখিয়ে দিচ্ছে সাহিলের শরীর। আরেক জন এসে যেন সাহিলের হাত ধরলো। দুইটা ওয়ার্ড বয় ধারালো ছুঁড়ি নিয়ে যেন সাহিলের পেটের এফোড় ওফোড় করে দিলো। সাহিলের কল্পনায় সাহিলকে কাতর করে দিতে লাগলো। শেষ পর্যন্ত সক্ষম হলেও মৃত দেহে গুলো যখন তাকে ঘিরে ধরলো তখনি নিজ রুমের ব্যালকনিতে থেকে ঝাঁপিয়ে পরে সে ঠিক গাড়ির উপর। আর সেখানেই ডেথ। মৃত দেহ গুলো যেন হাসতে থাকলো তার দিকে তাকিয়ে।
চলবে,