#অন্তরালে_তুমি_আমি
#পর্বঃ১৩
#Mst_Liza
“অহনা বুঝতে পারে আবির নিজেকে আঘাত করে করে শাস্তি দিয়েছে এতোদিন ধরে।অহনা আবিরের হাতটা উঠিয়ে আবিরের হাতের ক্ষতগুলোতে চুমু খেতে থাকে।অহনার চোখ বেয়ে পানি পরছে।আবির হাতটা টেনে অহনার গালটা আকড়ে ধরে আর বলে,”
—কি হয়েছে অহনা? এমন কেন করছো?
“অহনা কাঁদতে কাঁদতে আবিরের গায়ে কয়েকটা কিল বসিয়ে দেয় আর বলে,”
—তুমি খুব খারাপ! খুব খারাপ! প্রথমে আমাকে কস্ট দাও তারপর নিজেকে।আমাকে মেরেছিলে বলেই নিজের হাতে আঘাত করে এতোদিন শাস্তি দিয়েছো তাই না?
“আবির অহনার হাতটা টেনে ধরে অহনাকে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয় আর বলে,”
—এই অহনা শান্ত হও না এবার।আমি একদম ঠিক আছি।আমাকে আগে বলো তুমি কোথায় ছিলে এতোদিন?
“অহনা আবিরকে সব খুলে বলে।আজ তিনমাস অহনা জলিদের বাসায় ছিলো।অহনা আবিরকে এটাও বলে জলি প্রেগনেন্ট।”
—কি জলি প্রেগনেন্ট?
—হ্যাঁ আবির জলি প্রেগনেন্ট।আদির সন্তানের মা হতে চলেছে জলি।কিন্তু সমস্যা একটাই আদির কোনো খোঁজ নেই।আর আঙ্কেলও জলিকে অনেক মেরেছে।
—প্রেগনেন্সি অবস্থায় জলিকে মেরেছে আঙ্কেল?
—হুমমমম।কিন্তু কি করবে আঙ্কেল? এভাবে এটা মেনে নেওয়াটাও যে একজন বাবার জন্য অসম্মানের।তাছাড়াও আঙ্কেলের দৃষ্টিকোণ থেকে সে ঠিক আছে।সমাজের কথা ভাবাটা স্বাভাবিক নয় কি?
—হুমমমম সেটাও ঠিক।আমাদের উচিৎ আঙ্কেলকে বোঝানো।
—ঠিক বলেছো আবির।তারাহুরো করে আমি তোমার কাছে চলে আসলাম না জানি ওখানে কি হচ্ছে।
—আমাদের এখন ওবাড়িতে যাওয়া উচিৎ।
—হুমমমম।
.
.
.
.
“জলির বাবা জলির চুলের মুঠি টেনে ধরে বলছে,”
—ছিঃ জলি ছিঃ তোকে জন্ম দিয়েছি ভেবে আমার ঘৃণা হচ্ছে। এতোটা নিচে নামতে তোর লজ্জা করলো না? আজই এই বাচ্চাটাকে নস্ট করবি তুই আই আমার সাথে।
“কথাটা বলে জলির হাত ধরে টান দেয় জলির চিৎকার করে কাঁদে।কোনো মতে হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে বাবার পা জড়িয়ে ধরে বলে,”
—এটা করও না বাবা।এ আমার আদির সন্তান।একে আমি নস্ট করতে পারবো না।আমার আদি জানলে যে খুব কস্ট পাবে।আমাকে ঘৃণা করবে।
“জলির বাবা জলিকে চুলের মুঠি ধরে টেনে উঠায় তারপর বলে,”
—কে আদি? কি তার বংশ পরিচয়? আর কোথায় সে বল?
“জলি কেঁদে ওঠে।কাঁদতে কাঁদতে বলে,”
—ওর কোনো বংশ পরিচয় নেই বাবা।ওর জন্মের সময় মা মারা যায়।যে ওর মাকে আশ্রয় দিয়েছিলো সেই ওকে কোলে পিঠে করে মানুষ করেছে।দু’বছর আগে সেও মারা যায়। আর এখন ও কোথায় আছে আমি জানি না।
“জলির মুখে কথাটা শুনে জলির বাবা জলির গালে ঠাসসসস! ঠাসসসস! করে থাপ্পড় মারতে থাকে।জলির বাবাকে এসে জলির মা আটকায় বলে আর মেরো না আমার মেয়েটাকে।জলিকে বুকে জড়িয়ে জলির মা কাঁদে আর জলির বাবা দূরে সরে গিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলে এমন মেয়ে আমার চাই না।”
“জলির বাবা আলমারি থেকে জলির সব জিনিসপত্র বের করে কেরোসিন ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। তারপর জলির হাত ধরে টেনে হিচড়ে বাড়ির বাইরে নিয়ে এসে বলে তুই আর আমার মেয়ে না।যদি মরেও যাস তবুও আমার বাড়িতে আর আসিস না।কথাটা বলে জলিকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় জলি পরে যাওয়ার আগেই অহনা এসে জলিকে ধরে বসে।অহনার সাথে আবিরও এসেছে জলিদের বাসায়।”
“অহনা আর আবির জলির বাবাকে অনেক বুঝায় কিন্তু সে বোঝে না।জলিকে আর সে মেয়ে মানতেই চাই না।না পেরে আবির আর অহনা জলিকে নিজেদের সাথে নিয়ে আসে।”
“অহনা আর আবির জলিকে এই অবস্থায় আশ্রয় দেয় বলে জলি এদের প্রতি অনেক কৃতজ্ঞ থাকে।”
“এই অবস্থায় অহনা জলির খুব যত্ন নেই। জলির জন্য ভালোমন্দ রান্না করা।জলিকে খাইয়ে দেওয়া।এমনকি জলির চুলটা পর্যন্ত আঁচড়ে দেওয়া।”
“অহনার এতো কেয়ারিং আর যত্নে জলি অহনাকে বোন ভাবতে শুরু করে।এখন জলি আর অহনার সম্পর্কটা একদম দুই বোনের মতোন।মাঝে মাঝে আবিরের দেখলে হিংসা হয়। অহনা জলিকে বেশি সময় দেয় বলে আবির রাগ করে মাঝে মাঝে না খেয়েই ঘুমিয়ে পরে।অহনা এসে আবিরকে খাইয়ে দিলে তারপর খাই।”
“আবার মাঝে মাঝে আবির আর অহনার খুনসুটিময় ভালোবাসা চোখের সামনে দেখলে জলির আদির কথা মনে পরে।জলি আর আদির সম্পর্কটাই তো ছিলো খুনসুটিময়।তাই জলি তখন রুমে এসে দরজাটা বন্ধ করে পেটে হাত রেখে একা একা আদির সন্তানের সাথে কথা বলে।”
“এভাবে আট’টা মাস কেটে গেছে।আদির এখনো কোনো খোঁজ নেই। আজ সকালে হঠাৎ আবির চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে নিউজ পেপারটা হাতে নিয়েছে। পেপারের ১পৃষ্টায় চোখ যেতেই আবির চিৎকার দিয়ে ওঠে।”
—আদিইইইইই! অহনা জলি কোথায় তোমরা তারাতারি এসো।
“কিচেনে বসে জলির সাথে গল্প করতে করতে অহনা ময়দা মাখাচ্ছিলো রুটি বানাবে বলে।আবিরের চিৎকার শুনে আর আদির নামটা শুনে জলির বুকের ভেতরে ধপ দিয়ে ওঠে।উঁচু পেট নিয়ে জলি তারাহুরো করে উঠতেও পারছে না।অহনা জলিকে ধরে উঠায়।তারপর জলিকে নিয়ে আবিরের কাছে আসে।”
“জলি এসে আদিকে খোঁজে। এদিকে ওদিকে তাকিয়ে বলে।”
—কোথায় আদি?
“অহনা ভাবে আবির মজা করেছে।”
—কি হয়েছে’টা কি তোমার? এভাবে সাত সকালে চিৎকার চেঁচামেচি করছো কেন? চল বোন…..
“জলির হাত ধরে আবার কিচেনের দিকে যাবে অহনা আবির অহনাকে থামতে বলে।তারপর অহনার সামনে পেপারটা ধরে।অহনা পেপারটা দেখে বিশ্বাস করতে পারে না।হা হয়ে আছে।অহনার এমন হা হয়ে থাকা দেখে জলি পেপারটা হাতে নেয়।দেখে আদির ছবি।যা দেখে জলির চোখে পানি চলে আসে।তারপর লেখাটা পড়ে।”
—খুব অল্প সময়ে একজন সফল বিজনেসম্যান আদি চৌধুরী আগামীকাল দেশে ফিরছে।”
চলবে,,,,,