অন্তরালে তুমি আমি পর্বঃ১২

0
1873

#অন্তরালে_তুমি_আমি
#পর্বঃ১২
#Mst_Liza

“জলির বাবা জলিকে খুব মারছে।আর জলি চিৎকার করছে।জলির মা রুমের বাইরে থেকে দরজা তাকাচ্ছে।আর কেঁদে কেঁদে বলছে মেয়েটাকে আর মেরো না।এই চিৎকার চেঁচামেচির আওয়াজ অহনার রুমে ভেসে আসে।অহনা আজ তিন মাস নিজের রুম থেকে বের হয় না।কারও সাথে তেমন কথাও বলে না।অহনার যাওয়ার কোনো জায়গা নেই তাই না চাইতেও জলিদের বাসায় পরে আছে।কিন্তু অহনা ভাবে জলি ঠিকই আবিরের সাথে সুখে আছে।অহনা আবিরকে আর জলিকে একসাথে দেখতে পারবে না।এতে অহনার খুব কস্ট হবে তাই নিজেকে বন্দী করে রেখেছে রুমে।কিন্তু কেন যেন অহনার আজ বাইরে যেতে খুব ইচ্ছা করছে।অহনা ভাবছে কিসের এতো চেঁচামেচি?”

“অহনা রুম থেকে বের হয়ে জলির রুমের সামনে আসে দেখে জলির মা দরজা তাকাচ্ছে আর কাঁদছে বলছে আর মেরো না মেয়েটাকে।অহনা জলির মাকে গিয়ে ধরে বলে আন্টি শান্ত হোন কি হয়েছে আমাকে বলুন? জলির মা অহনাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদে আর বলে জলিকে ওর বাবা তখন থেকে মেরে যাচ্ছে। অহনা দরজাটা তাকিয়ে বলে আঙ্কেল দরজা খুলুন কি হয়েছে? এভাবে মারছেন কেন জলিকে? অহনার কন্ঠ শুনে জলির বাবা থেমে যায়। এতোদিন পর অহনা নিজের রুম থেকে বেরিয়েছে বলে খুশি হয়।নিজের চোখের পানি মুছে এসে দরজাটা খুলে দেয়। আর অহনার মুখের দিকে তাকিয়ে কাঁদে।”

“অহনা জানতে চাই,”
—একি আঙ্কেল আপনি কাঁদছেন কেন? কি হয়েছে?
—সব শেষ হয়ে গেছে মা।আমার মান সম্মান সব এই মেয়ে মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছে।আমার আর সমাজে মুখ দেখানোর উপায় নেই।
—মানে?
“জলির বাবা কাঁদতে কাঁদতে বলে,”
—ডাক্তার বলেছে জলি প্রেগনেন্ট।

“কথাটা শুনে অহনা বড়সড় একটা ধাক্কা খাই।অহনা ভাবে সন্তানটা আবিরের।”

“জলির বাবা আবার বলে,”
—আমি আর সমাজে মাথা উঁচু করে দারাতে পারবো না।বিয়ের আগে আমার মেয়ে মা হতে চলেছে এটা জানাজানি হলে লোক সমাজে আমি মুখ দেখাতে পারবো না।রাস্তায় বের হলে লোক আঙুল দেখিয়ে বলবে দেখ জলির বাবা যাচ্ছে।

“অহনা নিজেকে সামলে নেয়।নিজের মনের মধ্যে থেকে বের হয়ে আসা কান্নাটা রোধ করে বলে।”
—কিচ্ছু হবে না আঙ্কেল।জলি আর আবির তো একে অপরকে ভালোবাসে।আর এই সন্তানটা তো আবিরের।আবিরকে বলুন জলিকে বিয়ে করে নিতে।

“কথাটা বলে অহনা রুমের মধ্যে যায়। জলি বিছানার উপরে বসে হাঁটুতে মুখ গুজে কাঁদছে। আর হাঁপাচ্ছে। এতো মার খেয়ে জলির আর শক্তি টুকু নেই উঠে দাড়াবার।অহনা গিয়ে জলির কাঁধে হাত রাখে। জলি আস্তে করে মাথাটা উঠায় আর সামনে তাকিয়ে অহনাকে দেখতে পাই।”

—অহনা তুমি এখানে?

“এমন সময়ে জলির বাবা রুমে ঢুকে পরে আর অহনাকে বলে,”
—আবির একটা দুশ্চরিত্র অহনা।ও কখনোই জলিকে বিয়ে করবে না।
“অহনা প্রশ্নসূচক ভঙ্গিতে জলির বাবার দিকে তাকায় আর বলে,”
—কি বলছেন আঙ্কেল?
—ঠিকই বলছি।আবির শুধু মেয়েদের ব্যাবহারই করে।প্রথমে তোমাকে ব্যাবহার করে তারিয়ে দিয়েছে।তারপর আমার মেয়েকে ব্যবহার করে ছেড়ে গেছে তার অন্য ভালোবাসার কাছে।

“জলি তার বাবার কথা শুনে অবাক।জলি তার বাবার কাছে জানতে চাই,”
—অহনাকে তারিয়ে দিয়েছে মানে? আবির তো অহনাকে পাগলের মতোন ভালোবাসে?

“অহনা জলির দিকে তাকায়। অহনা বুঝছে না জলি এটা কি বলছে।জলি আবার বলে,”
—আমি চেস্টা করেছিলাম আবিরকে অহনার থেকে আলাদা করে ফেলতে কিন্তু পারি নি।কারণ আমার কাছে যেমন অহনাকে হারানোর জেদ ছিলো আবিরের কাছে তেমন অহনাকে ভালোবেসে বেঁধে রাখার শক্তি ছিলো।

“অহনা জলিকে ঝাকিয়ে বলে,”
—এসব তুমি কি বলছো জলি? আবিরের সন্তানের মা হতে চলেছো তুমি।আবির যদি সত্যি আমাকে ভালোবাসতো তাহলে ও আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিতো না।তোমার সাথে ওই রাতে ওসব করতে পারতো না।

“জলি বুঝতে পারে অহনা কোনো ভান্তের মধ্যে আছে।জলি ভাবে, তাহলে কি এতোগুলা দিন আমার জন্য দুটো ভালোবাসার মানুষ আলাদা হয়ে আছে? নাহ এ হতে পারে না।এই পাপের শাস্তিই হয়তো আমি পাচ্ছি।জলি টেনে অহনাকে বিছানায় বসায়।আর সবকিছু খুলে বলে।জলি যা যা করেছে আবির আর অহনাকে আলাদা করবার জন্য।আর সেদিন রাতে তাদের মধ্যে কিছুই হয়নি।জলি আদির কাছে গিয়েছিলো সেদিন।”

“জলির মুখে সব শুনে অহনা জলিকে জিজ্ঞাসা করে,”
—তাহলে এই সন্তান আদির?
“জলি নিজের পেটে হাত রেখে মাথাটা ঝাকিয়ে কান্না জড়িত কন্ঠে বলে,”
—হুমমমম।এটা আমার আর আদির সন্তান।

“কথাটা শুনেই অহনা বিছানা থেকে নেমে নিচে এসে দাড়ায়। অহনা খুশি হবে না কাঁদবে কিছুই বুঝে উঠতে পরছে না।অহনা ভাবছে কেন আমি আবিরকে ছেড়ে চলে আসলাম? ওতো এমনই করে তাই বলে ওকে এতোটা অবিশ্বাস করলাম?অহনা জলির বাবা-মাকে বলে জলিদের বাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসে।সেই মুহূর্তেই খালি পায়ে ছুটতে ছুটতে আবিরের কাছে আসে।বাড়িতে কলিং বেল বাজায়।আর কিছুক্ষণ পর আবির এসে দরজাটা খুলে দেয়। দরজা খুলতেই আবির তার চোখের সামনে অহনাকে দেখে।আবির কিছু বলার আগেই অহনা ঝাপিয়ে আবিরের বুকে আছড়ে পরে।আর কাঁদতে থাকে।কাঁদতে কাঁদতে বলে,”
—আমার ভুল হয়ে গেছে তোমাকে ছেড়ে চলে যাওয়া।প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও আবির।

“আবিরও অহনাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদে আর বলে,”
—কোথায় ছিলে এতোদিন? কতো কস্টে ছিলাম জানো? তুমি জানো না তোমাকে ছাড়া আমি কিছুই করতে পারি না?
—হুমমমমম।আর যাবো না।জলি আমাকে সব বলেছে।তোমার কোন দোষ নেয়। তুমি ঠিক করেছো আমাকে সেদিন মেরে।তোমার জায়গায় আমি হলে আমিও ঠিক এমনটাই করতাম।কারণ তোমাকে আমি ভালোবাসি।আমি তোমার সাথে অন্য কাউকে দেখতে পারি না।আমার তখন খুব কস্ট হয়।

“আবির অহনাকে ছাড়িয়ে নিজের সামনে এনে অহনার মুখটা আকড়ে ধরে।অহনা দু’হাত দিয়ে আবিরের হাতে হাত রাখতেই আবির আহ্ করে ওঠে। অহনা আবিরের হাতদুটো নিজের সামনে এনে দেখে প্রচন্ড ক্ষত।”

—একি আবির তোমার হাতে কি হয়েছে?
—তেমন কিছু না। আগে বলো তুমি এতোদিন কোথায় ছিলে?

চলবে,,,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে