#অন্তরালে_তুমি_আমি
#পর্বঃ০৩
#Mst_Liza
ঘুমন্ত চোখ খুলতেই আবির লক্ষ করলো তার মাথাটা ব্যাথায় চিরে যাচ্ছে।মাথায় জোড় খাটিয়ে মনে করতে গেলে কিছুই মনে করতে পারে না।পাশ ফিরে তাকিয়ে দেখে অহনা বিছানার এক পাশে বসা।মাথাটা নিচু করে হাটুর সাথে মিশিয়ে হাঁপাচ্ছে।আর জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস নিচ্ছে।কারণ কাল রাতের আগুনে অহনার কোমড়ে, পেটে আর হাতে কিছুটা পুড়ে দাগ বসে গেছে।আবির আস্তে করে মাথাটা চেপে ধরে উঠে অহনার কাছে আসে।তারপর অহনার হাতের পোড়া স্থানটাই স্পর্শ করতেই অহনা মুখ তুলে আহ্ করে চিৎকার দেয়।আবির অহনার মুখটা নিজের দিকে নিয়ে বলে,
—তোমার এই অবস্থা কিভাবে হলো অহনা?
অহনা কান্না জড়িত কন্ঠে পা ঘেষে আবিরের থেকে কিছুটা দূরে সরে এসে বলে,
—কেন মনে পরছে না? আমি চলে যাবো।আর থাকবো না এখানে।
কথাটা বলে অহনা নিজের পোড়া দাগগুলোতে হাত বুলাতে লাগে।অহনার পোড়া স্থানে জ্বালাপোড়া করছে তাই অহনা ব্যাথায় কুকড়ে আছে।
আবির বুঝতে পারে কাল রাতে নিশ্চয় অহনার সাথে খারাপ কিছু করেছে কিন্তু কি!
দুই হাত দিয়ে চোখ দুটো ডলে ভালোভাবে তাকিয়ে দেখে অহনার গালেও থাপ্পড়ের পাঁচটা আঙুলের ছাপ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।
—তাহলে কি অহনার এই অবস্থার জন্য আমি দায়ী?
এরই মধ্যে আবিরের ফোনটা বেজে ওঠে।আর আবির গিয়ে রিসিভ করে।
—হ্যালো!
—হ্যালো আবির কোথায় তুই?
জলির নেশা এখোনো কাটে নি।মাতাল হয়ে এখনো আবল তাবল বকছে।
—কে?.. জলি?
নেশা নেশা কন্ঠে দুলে দুলে বলে,
—হ্যাঁ জলি! তোর জলি! ওই অহনা একদম ভালো না।ওকে মেরে তারিয়ে দে! তারপর আমি তো আছিই।তুই দেখিস আমার কাছে আসলে তুই ভালো থাকবি!
—জলি..তুই কি কিছু খেয়েছিস?
—হ্যাঁ, খেয়েছি তো..এখনো খাচ্ছি।সেলিব্রেট করছি!
—কিসের সেলিব্রেট?
—আরেহ অহনা তোর জীবন থেকে দূরে সরে যাচ্ছে নাহ,
সেই সেলিব্রেট!
—মানে???
—মানেটা এখনো বুঝতে পারছিস না? তুই আমার তাই তোকে পাওয়ার ব্যবস্থা করছি।
পাশ থেকে বনি এসে জলির হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নেয়। ফোনটা কেটে দিয়ে বলে,
—কি তখন থেকে ফোন নিয়ে পরে আছিস জলি? ওদিকে সবাই তোর জন্য ওয়েট করছে চল…
বলে জলিকে টেনে নিয়ে যায় বনি।তারপর সব বন্ধুদের উদ্দেশ্য করে বনি বলে,
—এখন আমাদের মাঝে জলি একটা গান শোনাবে।কিরে জলি শোনাবি তো?
বনির কোনো কথাই জলির কানে যায় না।জলি গিয়ে মদের বোতল হাতে নিয়ে ডগডগ করে মদের বোতলে চুমুক দেয়।
বনি আবার বলে,
—গা না একটা গান আমরা সবাই শুনি!
তারপর জলি দুলতে দুলতে বন্ধুদের গায়ে পরে পরে গান গায়,
—আবির হবে আমার
বাহরে বাহরে বাহ,,,,,
অহনা যাবে চলে,,,
আরে বাহরে বাহরে বাহ
হবো আমি আবিরের গিন্নি
অহনা যাবে আবিরকে ছেড়ে,,
মদের বোতলে নখ বাজিয়ে গান গাইতে গাইতে পরে যায় জলি।আর জলির সাথে নাচতে নাচতে অন্য ফ্রেন্ডরাও থেমে যায়।
আদি বলে,
—যাহ এইটুকু খেয়েই পরে গেল।আমি তো ভালোভাবে নাচতেও পারলাম না।তবে ভালোই হলো, বলেই জলিকে উঠিয়ে কোলে করে আদি রুমে নিয়ে গিয়ে বিছানায় ফেলে দেয়।তারপর ভেতর থেকে দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে জলির কাছে যেতে চোখ মেলে ঝাপসা আদিকে দেখে জলি বলে,
—আবির তুই এসেছিস?
আদি বলে,
—হ্যাঁ, সোনা আমি এসেছি।
কথাটা বলেই আদি জলিকে জড়িয়ে ধরে। আর জলিও আদিকে আবির ভেবে নিজেকে আদির মাঝে সমার্পণ করে দেয়।
।
।
।
ওদিকে অহনা আবিরের থেকে দূরে দূরে থাকছে।আবির না পেরে অহনাকে ধমক দিয়ে দিয়ে অহনার পোড়া যায়গাগুলোতে মলম লাগাচ্ছে।আর অহনাকে বলছে,
—কি করেছি আমি বলছো না কেন?
আবিরকে একটু স্বাভাবিক ভাবে কথা বলতে দেখে অহনা ভয় কাটিয়ে আবিরকে ধাক্কা দিয়ে সরে যায়। আর কান্না জড়িত কন্ঠস্বরে বলে,
—খুব খারাপ তুমি! আমাকে পুড়িয়ে মারতে চেয়েছিলে।
কথাটা শুনে আবিরের বুকের ভেতরটা ধপ করে ওঠে।ভাবে এটা অহনা কি বলছে?
উঠে দাড়িয়েই অহনার মাথাটা আবির নিজের বুকের বা’পাশে চেপে রেখে বলে,
—বিশ্বাস করো অহনা আমার কিচ্ছু মনে নেয়। আর যদিও এমনটা করে থাকি আমার তখন হুঁশ ছিলো না।তুমি তো আমার হৃদপিণ্ড। আমি কি তোমাকে মেরে ফেলতে পারি?
আবিরের কথাশুনে অহনা আবিরকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদে। তারপর কান্না থামিয়ে আবিরের শার্টটা খামচে ধরে মুখোমুখী হয়ে বলে,
—বড্ড বদলে গেছো তুমি।আজ এমন বলছো কাল আবার ঠিক এই একই ভুল করবে।
আবির অহনার গালটা আকড়ে ধরে বলে,
—নাহ আমার হৃদপিণ্ডটাকে আমি আর কখনো কস্ট দেবো না।
—সত্যি?
—হুমমমম!
,
,
,
,
চলবে,,,,,