অনুরাগ 11 পর্ব
লেখিকাঃ #Israt_Jahan
-‘ কী হয়েছে শ্রুতি?কোনো সমস্যা?’
দু চোখ বেয়ে পানির সঙ্গে আগুন ঝরছে শ্রুতির চোখে।ঈশাণের দিকে ভয়াবহ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ও।ঈশাণ আবার ও প্রশ্ন করলো,-‘ কী হয়েছে? এভাবে দেখছিস কেনো? দেখি কাগজ টা দে তো আমার কাছে।’
শ্রুতির হাত থেকে কাগজটা নিয়ে ঈশাণ পড়তে আরম্ভ করলো।প্রথম অংশ পড়ে তেমন কিছুই মনে হলো না ওর কাছে।শেষের দিকে এসে যা পড়ল তা পড়ার পর ওর হাত কাঁপতে শুরু করলো।যে মেয়েটিকে পুলক ওর বোন ভেবে নিয়েসেছিল সে সত্যিই পুলকের বোন ছিল না ঠিকই। কিন্তু পুলকের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ দিয়েছিল মেয়েটি তা সম্পূর্ণ সাজানো কথা ছিল।আর এই কথাগুলো শিখিয়ে দিয়েছিল ওই পতিতালয়ের সর্দারনী।কেনো এই কথাগুলো শিখিয়ে দিয়েছিল সেটাও স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে ওখানে।সবকিছু পড়ার পর ঈশাণ জোর গলায় বললো,-‘ শ্রুতি তুই ওর এসব কথা বিশ্বাস করছিস?ও তোকে যে এসব মিথ্যা বলছেনা তার প্রমাণ কী? ওর কাছে শোন যে কথাগুলো এখানে লিখা আর তা যে সত্যিই ওই মেয়েটির আর তার সর্দারনীর জবানবন্দী তার সত্যতা কী?’
শ্রুতি এবার সত্যিই দ্বিধায় পড়ল।সত্যিই তো! পুলক যে সবটাই সত্যি বলছে তার প্রমাণ কী?ও যদি সত্যিই বলে থাকে তাহলে এই তিনটা বছর ও কেনো শ্রুতির সামনে এলো না?এই কথাগুলো এই তিন বছরের মধ্যে কেনো ওকে বললো না?
শ্রুতি প্রশ্নচোখে পুলকের দিকে তাকাতে পুলক একটু একপেশে হাসল।তারপর বললো,
-‘ মেয়েটাকে আমি ঢাকা নিয়ে আসার পূর্বেই ঈশাণ নিজে ভালোভাবে যাচাই করে দেখেছে।আমি যে মেয়েটির সঙ্গে ঘোরাফেরা করেছি তার পরিচয় আসলে কী?এবং অবশেষে জানতেও পারলো আমি তাকে নিজের বোন ভেবে ওই পতিতাবৃত্তি থেকে তাকে মুক্তি দিয়ে নিজের বোনের পরিচয় দিতে যাচ্ছি।ঠিক তখনই ঈশাণ ওখানকার সর্দারনীর সাথে আলাপ করলো।পরিষ্কার হওয়ার জন্য জানতে চাইলো মেয়েটি সত্যিই আমার বোন কিনা।তখন সে তো আরো একটি সত্যি ঈশাণকে জানিয়ে দিলো যে সত্যটা আমি তখন জানতাম না।
আমার মামা আমার বোন কে যেখানে রেখে এসেছিল সেখান থেকে তারা কোথায় মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে যে ওকে বিক্রি করে দিয়েছে তাও তাদের মনে নেই।শুধুমাত্র নিজের চিকিৎসার টাকার জন্য মামা এমন একটা নাটক করেছিলো।
অন্য একটা মেয়েকে আমার বোন বানিয়ে দিলো।আর ওই সর্দারনীকে শিখিয়েও দিলো আমি খোঁজ নিতে এলে যেনো সে এটাই বলে ওই মেয়েটিই আমার বোন। সে তাই ই করলো।এতগুলো মিথ্যা কথা সে এই আশাতেই বলেছিলো সে জানতো আমি টাকার মায়া না করে আমার বোনকে এখান থেকে মুক্ত করে নিয়ে যাবো।আর এই ব্যাপারটা সে এমনি এমনি ঈশাণকে বলে দেয়নি।ঈশাণ তাকে আমার চেয়েও টাকার পরিমাণ বেশি দিয়ে কথাগুলো জেনেছে।আর তারপর ও আরো কিছু টাকা দিয়ে একটা কাহিনী সাজিয়ে ফেললো আমি ওই মেয়েকে ঢাকায় নিয়ে আসার আগেই। মেয়েটাকে শিখিয়ে দেওয়া হলো আমার বাসায় তাকে আনার পর সে যেনো বলে আমি তাকে বোনের পরিচয়ে নয় নিজের ভোগের বস্তু করে নিয়েসেছি।মেয়েটি তাই ই করলো।এবং শর্তমোতাবেক মেয়েটিকে ও আরো কিছু টাকা দিয়ে ঢাকার শহর থেকে ভাগিয়ে দিলো।’
-‘ এই একদম চুপ।একদম বাজে কথা বলবি না।এতদিন পর এসে একটা মিথ্যা কাহিনী বানিয়ে এনে কী সুন্দর সাজিয়ে সাজিয়ে বলছিস।আর ভাবছিস খুব সহজেই তা শ্রুতি বিশ্বাস করে নিবে।আর কতো ক্ষতি করতে চাইছিস মেয়েটার? আর কত অমানুষ হবি?’ ঈশাণ পুলকের কলার চেপে ধরে হুংকার দিয়ে বললো।