অনুরক্তি এসেছে তোমার শহরে পর্ব-০১

0
897

#অনুরক্তি_এসেছে_তোমার_শহরে
#পর্বঃ১
#বর্ষা

”বুঝছো বাবু তোমার বাবা আমায় বিয়ে করলে তুমি আমার মতো কিউট একটা আম্মুর ছেলে হতে!তোমার জন্য আমার দুঃখ হচ্ছে বুঝছো”

ইলিয়ানা দূরে দাঁড়ানো বহু বছরের পুরনো প্রেমিক পুরুষের দিকে তাকিয়ে বাচ্চা ছেলেটিকে বললো।বয়স কত হবে ছেলেটার পাঁচ বা ছয়।ইলিয়ানা তো তার প্রেমিক পুরুষটিকে হারিয়েছিলো আরো আগে।তখন হয়তো তার মাঝে কিউটনেস ছিল,তবে সৌন্দর্যতা চোখ ঝাঁজালো ছিলো না।তবে এখন ইলিয়ানাকে একবার দেখলে দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং চতুর্থবার সবাইকেই তাকাতে হবে। সৌন্দর্যতা মাশাআল্লাহ। চোখের নিচের কালো দাগ গুলো আর নেই।আগের মতো গোলুমোলু দেহের অধিকারী এখন আর সে নেই। পারফেক্ট দেহের অধিকারী সুন্দরী রমনী হয়েছে সে।ইলিয়ানা বাচ্চাটাকে আবারো তার দিকে কিছুটা টেনে এনে বললো,

”ঐ ব্ল্যাক টিশার্টের লোকটাই তো তোমার বাবা তাই না?”

”হুম!”

”আচ্ছা বাবু শোনো,আমি তোমাকে অনেকগুলো চকলেট কিনে দিবো তুমি আজ থেকে মাম্মা বলে ডাকবে।ঠিক আছে?”

”এহহ,লাগবে না তোমার চকলেট।আমি আব্বুকে বলে দেবো!”

পিচ্চিটা ছুট লাগায়।তবে ইলিয়ানার প্রেমিক পুরুষটিকে পেরিয়ে আরেকজনের কাছে যায়।সেই লোকটাও ব্ল্যাক টিশার্ট পড়েছে।ইলিয়ানা যখন বুঝতে পারে কিছু একটা গড়বর সে পাকিয়ে ফেলেছে তখন উল্টা দিকে হাঁটা শুরু করে।

পার্টি এরিয়ার দিক থেকে যেতে নিলেই ইলিয়ানা এবার মুখোমুখি হয় ওই বাচ্চার বাবার সাথে।বাচ্চাটা ইলিয়ানাকে দেখেই বলে,

”আব্বু আব্বু এই আন্টিই ছিলো!”

ইলিয়ানা ‘ইয়ার মেনে গালতি কার বেঠি হুঁ ‘এমন একটা এক্সপ্রেশন দিয়ে সালাম দেয় সামনের ব্যক্তিটিকে।লোকটা সালামের জবাব নিয়ে রাগ দেখিয়ে বলে,

”আমার ছেলেকে কি বলেছেন এগুলো?ও বাচ্চা মানুষ। বাচ্চাদের মস্তিষ্কে ভুলভাল ঢুকাচ্ছেন কেন!”

”ও হ্যালো স্যার আমিও তখন বাচ্চা ছিলাম। অবশ্য ওর থেকে ছয় বা সাত বছরের বড় ছিলাম তাতে কি।আপনি আমাকে সেই বয়সে ভালোবাসার মানে শিখিয়েছেন।তো এখন আমি আপনার ছেলেকে কিছু বললেই দোষ লাবিব স্যার!”

”আপনাকে চেনাচেনা লাগছে কে আপনি?”

”চিনতে পারেন নাই!চিনতে না পারারই কথা।হাই,আমি ইলিয়ানা।”

লাবিব স্যার অবাক দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ছেলেকে কোল থেকে নামিয়ে ওইপাশে খেলতে পাঠিয়ে দেয়।বলে,

”তোমাকে একদম চেনা যাচ্ছে না।আগের থেকেও অনেক সুন্দরী হয়েছো!”

”হুম জানি।যাইহোক,আসল কথা হলো আমি জানতাম না ওটা আপনার ছেলে।আমি ভেবেছিলাম ও…”

”কার ছেলে ভেবেছিলা?”

”বাদ দেন। রিইউনিয়নে এসেছেন। পুরনো শিক্ষার্থীদের সাথে দেখাসাক্ষাৎ করেন।চলি!”

ইলিয়ানা চলে আসে।লাবিব স্যার তাকিয়ে থাকে।মনে মনে বলে যে ইলিয়ানা আগের থেকে তোমার এ্যাটিটিউড দ্বিগুণ না না ট্রিপল হয়েছে।ইলিয়ানা লাগেজ নিয়ে নিজের জন্য বরাদ্দকৃত টেন্টে চলে আসে।পুরনো বন্ধুগুলো সত্যিই আগের মতোই আছে।ইলিয়ানার চোখগুলোর মাধ্যমেই তাকে চিনে ফেলেছে। ঝাঁপিয়ে পড়েছে তার ওপর।সত্যিই ছোটবেলার বন্ধুত্বে ততটা স্বার্থের সন্ধান থাকে না।

—ইলিয়ানা আমাদের সিক্রেটটা বল না ইয়ার কিভাবে এখনো তোর সৌন্দর্যতা ধরে রেখেছিস!

ইলিয়ানা হাসে আয়শার কথায়।মেয়েটার চোখে সে সুন্দরই রইলো।ইলিয়ানার চোখ দুটোই নাকি তাকে বেশি আকৃষ্ট করে!একে একে অনন্যা, তাসনিম,অন্তরা,মেহের,আফরোজ সবার সাথেই দেখা। ইলিয়ানার মনটা মুহুর্তেই প্রফুল্লতায় ভরে ওঠে। বন্ধুত্ব জিনিসটাই এমন।যেখানেই থাকুক না কেন এবং যেমনই মনের অবস্থা থাকুক না কেন,মনটা সকলের সঙ্গে ভালো হতে বাধ্য!গল্পের ভান্ডার খুলে বসেছে ওরা।

—ইয়ার শেষমেশ বিয়ে করছিই।জামাই আমার সদা ব্যস্ত থাকে।তবে এবার শাস্তি স্বরুপ ছেলের দায়িত্ব দিয়ে এসেছি ওর ওপর। অবশ্য শাশুড়ি আম্মু তো আছেনই।(অন্তরা)

—এখানে ইঞ্জয় করতে এসেও মেয়েটার চিন্তায় পাগল পাগল লাগছে। আম্মুর কাছে অবশ্য নিশ্চিতেই রেখে এসেছি।তবুও ভয়ভয় লাগছে।(তাসনিম)

—ভাগ্য ভালো ওয়াইল্ড লাইফ লিড করতে গিয়ে এখনো বিয়ে করেনি।নয়তো এখানে এসেও তোদের মতো চিন্তা চিন্তা মরতাম!(আফরোজ)

—হ,ওইযে মোবাইলের দিকে দেখ।তোর বিএফ কল দিছে।

মেহেরের কথায় আফরোজ দ্রুত ফোন হাতে নেয়। ঠোঁট কামড়ায়।ধরা পড়ে গেছে তাই‌।বিএফের সাথে লুতুপুতু করতে শুরু করে। ইলিয়ানাসহ ওর ফাজিল বন্ধুদল হাসছে। অবশ্য এদের ফাজিল বলা চলে না।এরা তো চঞ্চল।

ইলিয়ানার মোবাইলে কল আসতেই ‘এক্সকিউস মি’ বলে সরে আসে সে।সাইডে দাঁড়িয়ে ফোন রিসিভ করে।ভিডিও কল তাও কনফারেন্সে।একসাথে চার জন চিল্লিয়ে বলে,

”আর ইউ ক্রেজি!হয়াই ডিড ইউ গো টু বাংলাদেশ উইথ আউট টেলিং আস?হ্যাভ ইউ থট হোয়াট উইল হেপেন ইফ আংকেল ফাইন্ডস আউট?”

”ডন্ট ওয়ারি।আই উইল কাম আফটার টেন ডেস!”

ইলিয়ানা কথা বলতে বলতেই আটকে যায় সামনে থাকা লোকটার চাহনিতে।লোকটা যে একদৃষ্টিতে তারই দিকে তাকিয়ে তা সে বেশ বুঝতে পারে।লোকটার চাহনিতে তো কিছু একটা আছে।দম বন্ধকর,গলা শুকিয়ে আসাময় কিছু একটা।ইলিয়ানার হার্টবিট দ্রুত থেকে দ্রুততর হচ্ছে।এটা কি ওর ভ্রম নাকি বাস্তব!

ইলিয়ানা কয়েক কদম এগিয়ে গিয়ে লোকটার সামনে দাঁড়ায়।কল সে কেটে দিয়েছে কখন তা সে নিজেও জানে না।লোকটার সামনে গিয়ে বলে একটা চিমটি কাটেন তো!লোকটা ভ্রু কুঁচকে তাকায়।ইলিয়ানা আবারো একই কথা বলে।

”আউচ,আপনি আমায় চিমটি কাটলেন কেন?”

”তুমিই না বললা!”

”আপনি না মেয়েদের বিশ্বাস করেন না। তাহলে আমার কথায় বিশ্বাস করে আমাকে চিমটি কাটলেন কেন?”

কোনো জবাব আর দেয় না লোকটা।এখনো সেই আগের মতো সৌন্দর্য এবং গম্ভীরতায় সেরাই রয়ে গেলো সে। বাস্তবতায় ইলিয়ানার সাথে তার এতোটা কথা হয়নি যতটা অনলাইন জগতে হয়েছে।পাগলের মতো আচরণ করেছে সে এই লোকটার সাথে।তবে তা এখন ধামাচাপা পড়েছে।নিরবতা ভেঙে লোকটা বললো,

”কি অবস্থা তোমার?”

হাতে চিমটির ব্যথা ভুলে প্রফুল্লতাময় এক হাসি মুখে ফুটিয়ে ইলিয়ানা প্রফুল্লতা নিয়ে বললো,

”বিন্দাস। আপনার?স্যার আমার সাথে আপনার বউয়ের পরিচয় করিয়ে দিবেন না?”

”আলহামদুল্লিলাহ।হুম তা নাহয় দেখা করিয়ে দিবো।তার আগে বলো হাজব্যান্ডকে আনোনি নাকি?”

ইলিয়ানার হাসি আরো প্রশস্ত হয়।লোকটার দিকে কিছু এগিয়ে গিয়ে ধিম কন্ঠে বলে,

”অনেক আগে কাউকে বলেছিলাম,যদি কাউকে জীবনে চাই তবে সেটা একমাত্র সেই,নয়তো অন্য কাউকেই এ জীবনে চাই না”

”ভালোবাসো এখনো আমায়?”

ইলিয়ানার জবাব দেওয়ার পূর্বেই পেছন থেকে অবশ্য কিছুটা দূর থেকে একজন রমনী ডেকে ওঠেন,”আহান স্যার ”

আহান স্যার পেছনে ফেরেন।সামনে ঘুরে ইলিয়ানার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকান।ইলিয়ানা হেসে উল্টো চলে আসে।আহান স্যার তো আগে থেকেই তাকে বলতো যে ইলিয়ানা তোমাকে আমি বিয়ে করতে পারবো না কেননা সমাজ মানবে।তুমি আমাকে ভালোবেসো না। কিন্তু ইলিয়ানা তো ততদিনে পাগলপ্রায় আহান স্যারের প্রতি। অনেকে বলে বয়ঃসন্ধিকালের ভালোবাসা হচ্ছে আবেগ,রঙিন চশমা চোখে থাকার ফল। তাহলে এখনো হয়তো ইলিয়ানার চোখের চশমাটা সরেনি!

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে