#অনুরক্তি_অন্তরিক্ষ [২৮ ও শেষ পর্ব]
তাসনিম তামান্না
গোধূলি লগ্ন অম্বরিতে রক্তিম আলোর ছড়াছড়ি। পাখিদের নীড়ে ফেরার তাড়া। মৃদু শীতল বাতাসে গাছপালা এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে ফুলের সুবাস ভেসে যাচ্ছে। শান দাড়িয়ে আছে ছাদের কার্ণিশ ঘেষে আজ দেড় মাস পর জারা শানকে ছাদে ডাকছে। সেদিন রাতে বাসায় এসে জারা কড়া গলায় শানকে তার আসে পাশে আসতে বারণ করেছে তারপর আসলেও জারার রাগারাগিতে আর সাহস পাই নি। আজ জারা নিজে থেকে ডেকেছে ভাবতেই শান পুলকিত হচ্ছে মনে মনে জারা এসে শানের পাশাপাশি দাঁড়িয়ে বলল
-‘ কেমন আছেন? ‘
-‘ এতোদিন ভালো ছিলাম না এখন ভালো আছি ‘
-‘ হঠাৎ এনি রিজন? ‘
-‘ তুমি ‘
-‘ আমি? আমি কেনো? ‘
-‘ এই যে নিজে থেকে ডেকে কথা বলার সুযোগ করে দিল তো বল কি বলবে ‘
-‘ বেশি ব্যস্ত ‘
-‘ উহুম তোমার জন্য আমি সমসময় ফ্রী ‘
-‘ হঠাৎ তুমি করে বলছেন যে? ‘
-‘ নিজেকে পরিবর্তন করছি সম্পর্কটা সহজ করছি চাইলে তুমি ও তুমি করে ডাকতে পারো যেটাতে তুমি কমফোর্টেবল ফিল করবে ‘
জারা শানের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। জারা নিজের মনে বলল ‘ লোকটা যেনো আগের থেকে বেশি সুদর্শন পুরুষ হয়ে গেছে না-কি আমি নতুন দেখছি? ‘
-‘ আপনি কি কষ্ট পেয়েছেন? ‘
-‘ কষ্ট পাবো কেনো? ‘
-‘ এই যে একছাদের নিচে থেকেও দুটো ব্যাক্তি দু’প্রান্তে না আছে কথা বার্তা না আছে দেখা শোনা। আচমকা যখন দেখা হয় তখন তাছাড়া তো তখন হয় না ‘
-‘ নাহ এটা আমার পাওয়ার দরকার ছিলো। এর চেয়ে বড় শাস্তি পাওয়ার দরকার ছিলো তোর কষ্টটা ফিল করার দরকার ছিল আর যখন আচমকা তোমার আর আমার দেখা হতো তখন শান্তি পেতাম ‘
জারা হেসে বলল
-‘ আপনি অনেক পাল্টে গেছেন আপনার কথায় প্রকাশ পাচ্ছে ‘
শান কাতর গলায় বলল
-‘ তাহলে কি এখন আমাকে কাছে টেনে নেওয়া যায়? ‘
জারা হেসে বলল
-‘ অবশ্যই যায় সেজন্য তো এসেছি সবটা আপনার কাছে শুনতে ‘
-‘ আচ্ছা বলো কি শুনতে চাও ‘
-‘ আমি জানতে চাই আপনি আমার সাথে এতো মিসবিহেব কেনো করতেন? আবার এখন হঠাৎ এতো ভালোবাসা? ‘
শান হেসে এলোমেলো দৃষ্টি দিলো। বলল
-‘ তোমাকে কি আমি আজ কই মাস ভালোবাসি? না-কি তোমার আগে থেকে? তোমার কি মনে হয়? ‘
জারা বিষময় চোখে তাকালো শানের দিকে শান ভাবলেশহীন আকাশ পানে তাকিয়ে আছে জারা বলল
-‘ মানে কি বলছেন আপনি? বুঝিয়ে বলুন ‘
-‘ আচ্ছা তোমার মনে কি প্রশ্ন জাগেনি? যে বিয়ের আগের শান আর বিয়ে কথা উঠার পর বা বিয়ের পরের শান একদম ভিন্ন একদম অচেনা এতো পরিবর্তন হওয়ার কারণ কি? ‘
-‘ হ্যাঁ অবশ্যই জাগছিল কিন্তু তখন আমি ভাবছিলাম আপনি অন্য কাউকে ভালোবাসেন নাহলে আমার মতো মেয়েকে আপনি পছন্দ করেন না ‘
শান কিছু বলতে যাবে তার আগে আজানের ধ্বনি ভেসে আসলো। শান কিছু বলতে গিয়েও চুপ হয়ে গেলো। জারা মাথায় কাপড় টেনে দিলো ভালো করে।
-‘ নিচে যাও ‘
-‘ আমি সম্পূর্ণটা না শুনে কোথাও যাবো না ‘
আজান শেষ হতেই শান জারাকে দোল নায় বসিয়ে বলতে শুরু করলো
-” আমার এখনো মনে আছে তখন তোমার সদ্য জন্ম একেবারে সাদা কিউট পুতুল ঠোঁট গুলো লাল সেই ঠোঁট হা করে কান্না করছিলে। তোমার কান্না দেখে আমি তোমাকে আদর দিয়ে দি আর তখন তোমার কান্না থেমে গিয়ে আমার দিকে বড়বড় চোখ করে তাকিয়ে থাকো আমি সহ সবাই অবাক তখন ছোট মামা বলল ‘ বাহ ভাইয়ের আদর পেয়ে চুপ আর এতোক্ষণ আমার এতো কিছু করলাম চুপ হলো না ‘ তখন মামার কথা শুনে আমি রেগে গিয়ে বললাম ‘ ও আমার বোন না আমি ওকে বউ বানাবো লাল টুকটুকে শাড়ি পড়িয়ে বিয়ে করবো ‘
আমার কথা শুনে সবার কি হাসি সে হাসির থামাথামি নাই। রাগে দুঃখে আমি কেঁদে দিলাম সাথে সাথে তুমিও কেদে উঠলে ”
জারা লজ্জায় কাচুমাচু হয়ে বসে আছে। মুখ লজ্জায় লাল হয়ে গেলো শান বলল
-‘ তুমি কি লজ্জা পাচ্ছো? ‘
-‘ নাহ আপনি বলেন থামলেন কেনো? ‘
-” আচ্ছা বলছি তারপর আমরা দু’জন বড় হতে লাগলাম আমার লাল পুতুল টাকে খুব ভালো লাগত দেখলেই আদর করতে ইচ্ছে হতো আদর করতাম তাকে চকলেট দিতাম তার স্কুলের সামনে দাড়িয়ে তাকে দূর থেকে দেখতাম অন্য কোনো ছেলেকে তারপাশে ঘেঁষতে দিতাম না তারপর সে বড় হলো সবটা উল্টো পাল্টা হয়ে গেলো। তার বাবামা মারা গেলো এক্সিডেন্টে। সে ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেলো। সে কাদলো খুব কাদলো তার চোখের পানি দেখে আমার খুব কষ্ট হতো। কিন্তু আমি নিরুপমায়। অতঃপর তার আমার বিয়ে হলো তাকে কষ্ট দিতাম তার কান্না দেখতাম লুকিয়ে সেও কাঁদত কিন্তু কি করবো এই পিচ্চিটাতো বুঝে না জীবন সহজ নয় তার মনের মতো সহজসরল নয়। তাই তাকে কষ্ট দিয়ে নিজের থেকে দূরে সরাতাম তোর মনে নিজের জন্য ঘৃণ্য জন্মালো। আমি চাইতাম সে অনেক বড় হোক নিজের পায়ে দাঁড়াক কিছু করুন। আর হ্যাঁ আজ সে সফল আজ যদি আমি তাকে কঠিন না বানাতাম তাহলে সে আগের মতো অবুঝ রয়ে যেতো পাগলামি করত ভালোবাসা দিয়ে সবটা বোঝানো যায় না আবার যায় ‘
জারার চোখে পানি চিকচিক করছে শান তাকাতেই পানি গড়িয়ে পড়লো। জারা শানকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো জারা ফুপাতে ফুপাতে বলল
-‘ আপনি আগে কেনো এগুলা বলেন নি? আপনাকে আমি শুধু শুধু কষ্ট দিলাম আপনি তো আমার ভালোর জন্য করছেন ‘
-‘ উহুম কিছু কথা আমি বলতে চাই নি তাও আমার মুখ দিয়ে বের হয়ে গেছে খুব জঘন্য কথাগুলো ‘
-‘ ভালোবাসি আপনাকে ‘
-‘ আমি তোমাকে একটু ভালোবাসি না ‘
-‘ আমি বাসি আপনাকে বাসতে হবে সারাজীবন পাশে থেকে হাতে হাত রেখে হাঁটলে হবে আর কিছু চাই না ‘
-‘ কিন্তু আমার যে তোমাকে খুুব কাছ থেকে চাই ‘
জারা লজ্জা পেয়ে শানের বুকে মুখ লুকালো। শান শরীর দুলিয়ে হাসলো।
-‘ আপনি খুব খারাপ জানেন ‘
-‘ বউদের কাছে সব স্বামী খারাপ ‘
শান জারা কপালে চু’মু খেলো। বলল
-‘ রাতে খেয়ে রুমে আসবি না হলে তোকে তুলে আনবো মাইন্ড ইট ‘
জারা লজ্জা পেলো। কিছুক্ষণ পর বলল
-‘ জানেন মনি আমাদেরকে কেনো বিয়ে দিয়েছে? ‘
-‘ কেনো?’
-‘ আমাকে যেনো কেউ খারাপ কথা বলতে না পারে এমন কি আপনিও না ‘
বলেই জারা মুখ চেপে হাসলো।
-‘ খুব না মজা বুঝাবো। আমার ভালোবাসার অম্বরিতে পূর্ণ চন্দ্র সাথে তোমার দেখা মিলবে সব মিলেমিশে একাকার হয়ে যাবে। ভালোবাসার পূর্ণতা পাবে। থাকবে না কোনো দূরত্ব মানবে না কোনো বাঁধা ‘
সমাপ্ত