#অনুরক্তি_অন্তরিক্ষ [২১ পর্ব]
তাসনিম তামান্না
কষ্টের পরে সুখ আসবে ক্ষনিকের জন্য হোক বা বাকিটা জীবনের জন্য হোক সুখ আসবে। তার মাঝে আবার কষ্ট আসবে। মান-অভিমান হবে, প্রেম হবে, ভালোবাসা হবে, স্বপ্ন হবে আবার সেগুলো পুরন ও হবে।
জারা অঝর ধারায় কেঁদে চলছে। তার জীবনে এতো কেনো কষ্ট? এতো কেনো কান্না? সুখের সন্ধান কি মিলবে না? না-কি সারাটা জীবন এভাবেই বুকভরা কষ্ট নিয়ে একাকিত্বে কেটে যাবে? জারা কাঁদতে কাঁদতে থেমে গেলো আর কাঁদবে না সে এই সম্পর্কে যখন এতোই বাঁধা এতো কষ্ট যেখানে একটুকরো ভালোবাসার নৌকা নেই সেখানে থেকে কি হবে? কার জন্য থাকবে যার জন্য এতো কিছু তার জন্য কি? কিন্তু আর কত? যথেষ্ট হয়েছে আর নয় যত তারাতাড়ি সম্ভব এই সম্পর্কে ইতি টানা উচিত!
জারা শোয়া থেকে উঠে হাতে ফোন নিলো। ফোন করলো কাউকে….
—–
সেদিনের পর কেটে গেলো বেশ কিছু দিন। জারা শানের থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে। শানও বোনের বিয়ে নিয়ে খুব ব্যস্ত জারার মুখোমুখি হলে দু-একটা কথা বললেও জারা উত্তর দেয় না। ইগনোর করে চলে আসে। শান বুঝতে পেরে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থাকে জারার যাওয়ার পানে বাড়ি ভর্তি লোকের সামনে কোনো রকম সিনক্রিয়েট করতে চাই না শান তাই মেজাজ ঠান্ডা করে রাখে। দেখতে দেখতে ইশার বিয়ের দিন ও ঘনিয়ে আসলো।
~ইশার হলুদ সন্ধ্যা~
জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান রংবেরঙের কৃত্রিম আলোই ভরপুর। জারা ছাদে এসে দেখলো ছোট বড় সকলেই মোটামুটি আছে। মিউজিক চলছে ইশা স্টেজে উঠে নাচছে ইশার সাথে কাজিন আর ফেন্ডরাও নাচছে বড়রা উৎসাহ দিচ্ছে। ইশাকে আজ মিষ্টি দেখাচ্ছে হলুদ শাড়ি সাথে মেকাপ আর ফুলের গহনা। জারার দূরে ফাঁকা জায়গায় দাড়িয়ে দেখছে সবটা জারার হাসি পেলো এই পাগলী মেয়েটার জন্য সেদিন কাঁদছিল আজ কি সুন্দর নাচছে। জারা আজ সুতির কলাপাতা রংয়ের শাড়ি পড়ে আছে চুলগুলো বেনি করে ছেড়ে দেওয়া চোখে গোলফ্রেমের চশমা থাকায় চোখে কাজল দেওয়া সেটা বোঝা যাচ্ছে না।
-‘ সেদিন ওভাবে না বলে চলে আসলি কেনো? আমাকে বলে আসতিস ‘
জারা চমকে পাশে ফিরে মুখের হাসি উড়ে গেলো। শানের দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিলো সাথে সাথে সাবধানে শ্বাস নিলো। সুঠাম দেহে শানের সাদা পাঞ্জাবিতে অসম্ভব সুন্দর লাগছে একেবারে অন্য রকম। জারা চোখ ফিরিয়ে মনে মনে বলল ‘ আপনি নামক মায়ায় আমি আর আটকাতে চাই না সব ছিন্ন করতে চাই আপনাকে মুক্তি দিতে চাই ‘
জারা মুখে ছোট করে বলল
-‘ এমনি শরীর খারাপ লাগছিল তাই ‘
-‘ ওহ তো আমাকে বলে আসলে কি হত? ‘
-‘ আপনি বিজি ছিলেন ডিস্টার্ব করে আপনার মূল্যবান সময়টা নষ্ট করতে চাই নি ‘
-‘ এমন ভাবে কথা বলছিস কেনো? ‘
-‘ আমি আবার কেমন ভাবে কথা বললাম সবার সাথে যেভাবে বলি আপনার সাথেও সেভাবেই বলছি ‘
-‘ সবাই আর আমি এক? ‘
-‘ অবশ্যই। আলাদা কিছু তো দেখতে পাই না ‘
শান কিছু বলতে যাবে তখনি সেদিনকের মেয়েটা ‘শান’ বলে ডেকে উঠল শান আর জারার চোখ মেয়েটার দিকে গেলো। মিউজিক বাজায় কেউ আর দূরে থাকায় মেয়েটার শান বলে ডাকাটা শান আর জারা ছাড়া কেউ দেখতে পেলো না। জারা দেখলো মেয়েটার শাড়ি পড়েছে যে কেউ দেখলেই এককথায় সুন্দরী বলে আক্ষায়ীত করবে। মেয়েটা প্রায় কাছাকাছি চলে আসায় জারার শ্বাস নিতে কষ্ট অনুভব করলো বুকে তীব্র যন্ত্রণা নিয়ে ছোট করে বলল
-‘ আসছি ‘
আর দাঁড়ালো না একপ্রকার ছুটে চলে আসল। স্টেজে ইশা ক্লান্ত হয়ে বসে থাকা ওখানে গেলো। এখন রুমে গেলে অনেকে অনেক কথা বলবে। ইশার পাশে বসে জুসের গ্লাস ধরিয়ে বলল
-‘ কি ক্লান্ত? ‘
-‘ হু এটারই দরকার ছিল ‘
জারা মলিন হাসলো। কিছুক্ষণ পর শান ঔ মেয়েটাকে নিয়ে ইশার কাছে আসলো। জারা উঠে চলে আসলো ‘মনি ডাকছে’ মিথ্যা বলে চলে আসলো। নিচে এসে শান্তির সাথে সাথে থাকলো এখন একা থাকলেই ওর কান্না পাবে। সুস্থ স্বাভাবিক জীবন চাই ওর এভাবে কেঁদে কিছু পাওয়া যায় না।
—–
~ ইশার বিয়ে ~
ইশা সকাল থেকে মন খারাপ করে বসে আছে। মাঝেমধ্যে কেঁদে উঠছে। সকলে এতো বুঝিয়েও ইশার কান্না থামাতে পারছে না। ইশা নিজের ইচ্ছেই থামছে আবার কেদে উঠছে। পার্লারের মেয়েরা মেকাপ করাতে গিয়ে হিমসিম খেয়ে যাচ্ছে। শান এসব শুনে ওপরে আসলো
-‘ শুনলাম তুই না-কি কাঁদুনি বুড়ি হয়ে গেছিসছ ‘
ইশা কিছু বলল না শানকে জড়িয়ে ধরে কাদলো। ভাইবোনের মধুর সম্পর্ক এমনই যতই ঝগড়াঝাটি করুক না কেনো মনেপ্রাণে ভালোবাসে দুজন দুজনকে। শানের চোখেও পানি চিকচিক করছে জারা দেখলো সেটা।
-‘ এই পাগলী কাঁদছিস কেনো? হুম তুই কেঁদে মেকাপ নষ্ট করার কোনো মানে হয়? উল্টো সকলে তোর কেঁদে ভাসিয়ে দেওয়া পেত্নী মুখ দেখে হাসবে ‘
ইশাকে অনেক কথা বুঝিয়ে শান ইশাকে থামালো। ধীরে ধীরে ইশার বিয়ে হয়ে গেলো। কত কাদলো মেয়েটা। কেঁদে চোখ মুখ ফুলিয়ে বলেছিল
-‘ আমি তোমাদেরকে ছেড়ে কোথাও যাবো না ‘
শানও কেঁদে ফেলছিল। একমাত্র বোনের বিদায়ে। ইশার সাথে জারাকে পাঠানো হলো।
—-
ইশাকে বাসায় এনে সব রিচুয়াল মেনেই ইশাকে রুমে নিয়ে গিয়ে চেজ্ঞ করালো। জারা এতো অচেনা মানুষের ভিরে আনকমফর্টেবল ফিল করছে। জিয়া এসে জারাকে একটা রুমে নিয়ে গেলো জারা যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচল।
চলবে ইনশাআল্লাহ
#অনুরক্তি_অন্তরিক্ষ [২২ পর্ব]
তাসনিম তামান্না
ঝকঝকে তকতকে নীল আকাশে খন্ড খন্ড মেঘের ভেলা। মেঘের ভেলাগুলো এদিক সেদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে। চারিদিকে অচেনা অপরিচিত আত্মীয় স্বজনদের ভীরে জারা একা হয়ে পড়েছে কখন ওবাড়ির চেনা পরিচিত মুখ গুলো দেখতে পাবে। এখানে আসার পর থেকে জারার মেজাজ ক্ষীটক্ষীটে হয়ে আছে। তার অবশ্য বিশাল কারণ আছে আর সেটা হলো জোহানের ফেন্ড ভিষণ বাজে ভাবে জারার পিছনে লেগেছে। তার মা-ও না-কি ছেলের জন্য জারার মতো মেয়েকে খুঁজছিল। এই তো কাল রাতে ঘটনা……
ফ্ল্যাসব্যাক
রাতে সকল হইহট্টগোলের পর জারা ক্লান্ত হয়ে রুমে এসে শুতেই চোখে ঘুমের ঢল নেমে আসে। তখনি ফোন বেজে ওঠে জারার। ধরপরিয়ে উঠে বসে ফোন হাতে নিয়ে দেখলো আননোন নম্বর প্রথমে ধরবে না ধরবে না করেও ধরল।
-‘ হ্যালো! মিস. জারা। আমি মারুফ বলছি আপনি চিনতে পেরেছেন। জোহানের ফেন্ড ‘
জারা ফোনের ওপাশের কথা শুনে জারা অবাক না হয়ে পারল না এতো রাতে ইনি কেনো ফোন দিলো ইশা ঠিক আছে তো? কথাটা ভাবতেই জারা ভয় পেলো।
-‘ জী ভাইয়া আপনি? আই মিন ফোন দিলেন যে ইশা ঠিক আছে ‘
-‘ হ্যাঁ সব ঠিক আছে। আসলে আপনার সাথে আমার কিছু কথা ছিল ‘
জারার ভ্রু কুচকে এলো মনে মনে বলল ‘ওনার সাথে আমার আবার কি কথা থাকতে পারে?’
-‘ জি বলুন ‘
-‘ আসলে আমি আপনাকে….’
-‘ জি বলুন শুনছি ‘
মারুফ একটু সময় নিয়ে বলল
-‘ আমি আপনাকে প্রথম দেখাতেই ভালোবেসে ফেলেছি। এনগেজমেন্টের দিন থেকে আমার ঘুম নাই শুধু আপনার কথা ভেবে। আপনাকে আমার লাগবে। উইল ইউ ম্যারি মি ‘
জারা এবার বিরক্তিতে মাথা চুঁইচুঁই তবুও হাসি মুখে বলল
-‘ সরি ভাইয়া আমার বয়ফ্রেন্ড আছে আপনি নিশ্চয়ই চাইবেন না আপনার ফিউচার ওয়াইফের প্রাক্তন থাকুক? ‘
-‘ আমি বিশ্বাস করি না প্লিজ আমার ব্যাপারটা একটু….. ‘
মারুফকে আর বলতে না দিয়ে বলল
-‘ রাখছি ভাইয়া ‘
ফোন কাটতেই আবার ফোন এলো জারার মাথায় এখন ঘুম ছাড়া কিছু আসছে না মাথা ব্যথায় ছিঁড়ে যাচ্ছে যেনো তার ওপরে আবার এই বাঁশ। জারা ফোন রিসিভ করে ওপাশে কিছু বলতে না দিয়ে বলল
-‘ দেখুন ভাইয়া প্লিজ এই রাতে ডিস্টার্ব করবেন না আমার যা বলার তো আমি বলেই দিয়েছি। আপনি অন্য মেয়ে খুঁজে নেন আমার বয়ফ্রেন্ড আছে বললাম তো আর আপনার মিনিমাম কমনসেন্স থাকলে আপনি আর আমাকে ফোন দিবেন না আশা করি ‘
জারা খট করে ফোন কেটে নিজেই নিজেকে বলল
-‘ “পুরান পাগলে ভাত পাই না নতুন পাগলের আমদানি ” কবে জানি আমি পাগল হয়ে যায় ‘
নিজে নিজে বকবক করতে করতে জারা ঘুমিয়ে পড়লো।
বর্তমান
জারা দেখলো ও বাড়ির সকলে এসে গেছে। জারা ওদের দিকে এগিয়ে গেলো। কুশল বিনিময়ের পরে শান্তি মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। জেনো নিজের প্রাণ ফিরে পেলেন।
জারা আর শান পাশাপাশি দূরত্ব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। শান্তি আর অন্য অন্য আত্মীয়রা এদিক সেদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। জারা আর শান পাশাপাশি দাঁড়িয়ে থাকলেও কেউ কারোর সাথে একটা কথাও বলে নি। জিয়া এসে বলল
-‘ আপু আমার সাথে একটু এদিকে আসো ‘
জারা জিয়ার সাথে যেতে যেতে বলল
-‘ কোথায় নিয়ে যাচ্ছো? ‘
-‘ আরে চলোই না গেলেই দেখতে পাবে। আর আমার কি মনে হচ্ছে বল তো? ‘
-‘ তুমি না বললে তোমার কি মনে হচ্ছে আমি কেমন ভাবে যানবো? ‘
-‘ হুম তাও ঠিক জানো আমার মনে হচ্ছে খুব শীগ্রই আমার একটা বিয়ের দাওয়াত পাবো।
-‘ আবার কার বিয়ে তোমার না-কি? ‘
জিয়া লজ্জা পেয়ে বলল
-‘ আরে দূর কি যে বলো না? নিজের বিয়ের দাওয়াত কি নিজে খাওয়া যায় না-কি আমি তো তোমার বিয়ের কথা বলছি ‘
জারা ভ্রু কুচকে বলল
-‘ মানে? ‘
-‘ আরে চলো গেলে-ই দেখতে পাবে।
জারা চিন্তিত হয়ে হাটতে লাগলো। কি অপেক্ষা করছে কে জানে? জারা গিয়ে দেখলো। শান্তি থমথমে মুখে দাঁড়িয়ে আছে তার সাথে একটা মধ্যে বয়স্ক মহিলা হাসি মুখে জারার দিকে তাকিয়ে আছে। জারা শুকনো ঢোক গিললো মনে মনে ভাবলো ‘ আমি আবার কোনো ভুল করে বসলাম না তো? ‘
জারা মুখে কৃত্রিম হাসি ফুটিয়ে বলল
-‘ মনি। তুমি ডাকছ? ‘
শান্তি বেগম মুখ কালো করে তাকিয়ে রইলো। মহিলাটা বলল
-‘ বাহ! মা-শা-আল্লাহ মেয়ে তো দেখি খুব সুন্দরী আমার ছেলের পছন্দ আছে বলতে হবে ‘
মহিলাটি জারাকে নিজের কাছে আনলেন। মুখে মাথায় হাত বুলিয়ে বলল
-‘ মা তোমার নাম কি? ‘
জারা ইতি মধ্যে বুঝে গেলো কি হচ্ছে জারা হাসি মুখে বলল
-‘ অায়রিন জারা আন্টি ‘
-‘ বাহ! তোমার মতো তোমার নামটাও মিষ্টি জারা ‘
মহিলাটা থেমে হাসি মুখে শান্তির দিকে তাকিয়ে বলল
-‘ কি বলেন আপা আপনার মেয়েকে আমার বাড়ির বউ হিসেবে দিবেন তো? ‘
শান্তি বেগম হাসার চেষ্টা করে কিছু বলার জন্য মুখ খুলতেই জারা বলল
-‘ মাফ করবেন আন্টি আমি বিয়ে করতে চাইছি না। আমার ক্যারিয়ার পড়ে আছে। আর…’
জারাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে মহিলাটি বলল
-‘ আমি জানি মা তুমি পড়াশোনা শেষ করে এখন এডভোকেট। তুমি এসব নিয়ে চিন্তা করো না তোমার কোনো কিছুতেই বাঁধা দিবো না তুমি বিয়ের পর ও তুমি এটা করতে পারো ‘
জারা কি বলবে খুঁজে পাচ্ছে না শব্দ গুলো যেনো হারিয়ে গেলো। মাথা নিচু করে উপায় খুজতে লাগল ফাঁকা ফাঁকা লাগল। জারা এতোক্ষণে বুঝে গেছে এই মহিলা একে বারে নাছোরবান্দা ভ-য়ংক-র মহিলা।
-‘ এখানে কি হচ্ছে? কার বিয়ের কথা হচ্ছে?
জারা চমকে মুখ তুলে তাকালো। শান দাঁড়িয়ে আছে। কেউ উত্তর দিচ্ছে না দেখে শান রেগে বলল
-‘ কার বিয়ে জারার? জারা তো ম্যারিড ওর আবার বিয়ে লাইক সিরিয়াসলি? ‘
শানের কথায় জেনো বজ্রপাতের ন্যায় বি-ষ-ফোড়ন হলো।
চলবে ইনশাআল্লাহ