অনুভূতি পর্ব ৪৭

0
1896

অনুভূতি
পর্ব ৪৭
মিশু মনি
.
মিশু ফ্রেশ হয়ে এসে রেডি হয়ে নিলো। মেঘালয় বালিশ থেকে মুখ তুলে দেখলো মিশু চুল আচড়াচ্ছে। এতক্ষণ খেয়াল ই করেনি মেঘালয়, মিশুর লম্বা চুলগুলো কেটে ছোট ছোট করে ফেলেছে। মেঘালয়ের মেজাজ প্রচণ্ড গরম হয়ে গেলো। এত সুন্দর চুলগুলোর এই অবস্থা করে ফেলেছে!
মেঘালয় উঠে এসে মিশুকে হেচকা টানে বুকের উপর টেনে নিলো। তারপর রেগে বললো, “এই কয়েকদিন কিচ্ছু বলিনি তোমায়। তোমার চুল স্বপ্নে দেখে তোমার প্রেমে পড়েছি আমি। আর তোমার চুলের এই হাল কি করে হলো?”
মিশু মেঘালয়ের বাহুর বন্ধন থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করতে করতে বললো, “সবসময় চুল লম্বাই ছিলো। একটু ছোট করে দেখলাম কেমন দেখায়।”
– “চুল কাটার আগে আমার পারমিশন নিয়েছিলে?”
– “হেয়ার কাটিং এর জন্য পারমিশন কেন নিতে হবে?”
মেঘালয়ের আরো রাগ উঠে গেলো। ও মিশুকে দুহাতে চেপে ধরে বললো, “জানিস না তোর চুলের প্রতি আমার কত দূর্বলতা? কতবার করে বলেছি যেন আজীবন তোমার চুলের ঘ্রাণ এমনই থাকে। সবসময় চুলগুলো এমনই রেখো। আর তুমি চুল ছোট করে ফেলেছো,আবার কালার ও করেছো?”
মিশু বললো, “কক্ষনো করিনি। তাই ইচ্ছে করলো করতে।”
– “তুমি কখন পার্লারে যাও সেটাও আমাকে বলোনা। আমিতো তোমার চুল না দেখলে বুঝতেই পারতাম না তুমি আজকাল পার্লারে যাও।”
– “পার্লারে যাওয়াটা কি দোষের?”
– “মেঘালয়ের বউ পার্লারে কেন যাবে?”
– “আজব কথা বললে।”
– “হ্যা বললাম। কারণ আমার বউ কখনো পার্লারে যাবেনা, প্রয়োজনে পার্লার থেকে বিউটিশিয়ান নিজে আমার বাসায় এসে আমার বউকে সার্ভিস দেবে। আমি কখনোই চাইনি তুমি চুল কেটে কালার করে এতটা মডার্ন হয়ে যাও। তোমার ন্যাচারাল লুকটার জন্যই আমি তোমাকে ভালোবাসি।”
– “এখন কি ভালোবাসতে ইচ্ছে করছে না?”
মেঘালয় বললো, “ইচ্ছে করছে তোমাকে কামড়ে শেষ করে ফেলি। কতদিন থেকে সারাক্ষণ ব্যস্ততার অজুহাত দেখাচ্ছো। আমি কিচ্ছু বলিনি। তুমি সপ্তাহে একদিন আমাকে সময় দিলেও আমার আপত্তি নেই। যাতে তুমি ভালো থাকো সেটাই করো। কিন্তু তুমি নিজেকে চেঞ্জ করে ফেলবা আমি সেটা মানতে পারবো না। মাসে একবার দেখা হলেও তোমার পবিত্র আর বিশুদ্ধ ন্যাচারাল চেহারাটা দেখতে চাই আমি।”
মিশু এবার গায়ের জোরে মেঘালয়ের হাতের বন্ধন থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো। মেঘালয়ের রাগ এখনো কমছে না। কিন্তু মিশুকে কিছুই বলতে পারছে না ও। রাগে নিজের মাথার চুল ছিড়তে ইচ্ছে করছে ওর। বদলানো মানে একেবারে চেহারাও বদলে ফেলেছে! এটা কিভাবে সম্ভব!
মিশু বললো, “শান্ত হও মেঘ। এত রেগে যাবে আমি বুঝতে পারিনি। ভেবেছিলাম তুমি খুশিই হবে। কিন্তু আমার সব কাজে তুমি খুশি হওনা,সেটা আমার জানা ছিলোনা।”
মেঘালয় মিশুর সামনে এসে চোখে চোখ রেখে বললো, “তোমার সব ইচ্ছে পূরণ করতে নিজের জীবনটাও দিয়ে দিতে পারি আমি। কিন্তু তুমি নিজেকে বদলে ফেলো না প্লিজ। দোহাই লাগে তোমার।”
– “আমি একটুও বদলাইনি মেঘ। তুমি আমায় ভূল বুঝছো। আমাকে আগের মত ভালোবাসার চোখে দেখো, দেখবে আমি একটুও বদলাইনি।”
– “তুমি ইদানীং ওয়েস্টার্ন ড্রেস পড়তে শিখেছো?”
– “এটা নিয়েও তোমার অভিযোগ? যেখানে চলাফেরা করি,সেখানে পড়তেই হয়। তোমার চেয়ে ভালো কে জানে? একটা পার্টিতে কি আমি কামিজ স্যালোয়ার পড়ে যাবো?”
– “নিজের স্বকীয়তা হারিয়ে ফেলো না মিশু। তুমি যেমন ছিলে,তাতেই তোমাকে আর সবার থেকে অনন্য আর সুন্দর লাগতো। অন্যকে নকল করে সুন্দরী হওয়া যায়না।”
মিশু রেগে বললো, “আমি কাউকে নকল করছি না। আমার যেটা পড়তে বা যা করতে কমফোর্ট ফিল করবো, আমি সেটাই পড়বো। এতে কাউকে নকল করার কথা কেন আসছে মেঘ?”
মেঘালয় আর কিছু বললো না। এভাবে মিশুকে বোঝানো সম্ভব না। ওকে ধীরেসুস্থে ঠাণ্ডা মাথায় বুঝিয়ে বলতে হবে। কিন্তু মিশু তো দ্রুত রেডি হচ্ছে বাইরে যাওয়ার জন্য। মেঘালয় কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো। মিশু আয়নার সামনে সাজগোজ করছে। মেঘালয় একটু ভেবে এগিয়ে এসে ওকে পিছন দিক থেকে জড়িয়ে ধরলো। মিশুর পেটে হাত রেখে বলল, ” আমি বলেছিলাম না রেগুলার ইয়োগা করলে তোমার ফিগার দেখে যেকোনো ছেলের মাথা ঘুরে যাবে। দেখেছো পেটটা কত স্লিম লাগছে?”
মিশুর রাগ নিমেষেই কমে গেলো। ও আয়নার দিকে তাকিয়ে বললো, “সত্যি বলছো?”
মেঘালয় হেসে বলল, “হুম আমার পাগলী টা। কিন্তু একটু মেদ থাকলেই তোমায় সুন্দর দেখাতো, নাভীটা একদম কুয়ার মত লাগতো আগে।”
মিশু মুচকি হেসে বললো, “হা হা হা। সবার তো স্লিম ফিগার পছন্দ। তোমার আবার হালকা মেদ ভালো লাগে?”
– “তুমি আমার সেরা সুন্দরী ছিলে বুঝলে? এখনো ভালোই লাগছে। কিন্তু আগে তোমাকে ন্যাচারাল লাগতো ”
– “এখন কি প্লাস্টিক প্লাস্টিক লাগে?”
– “স্ট্যাচু স্ট্যাচু লাগে। হা হা হা।”
মিশু হেসে বললো, “ছাড়ো তো। রেডি হতে দাও।”
মেঘালয় মিশুর কাঁধে মাথা রেখে ওর গালে গাল ঘষে ছোট ছোট দাড়ির হালকা খোঁচা দিয়ে বললো, “তোমার গায়ের স্মেলটা দারুণ মিশু।”
মিশু শিহরিত হয়ে উঠলো। মেঘালয়কে ছাড়ানোর চেষ্টা করে বললো, “এখন দুষ্টুমি না। আমার রিহার্সাল আছে।”
– “যাবে তো। একটু ভালোবাসতে দাও। তোমাকে দেখলে একদম ই দূরে থাকা যায়না। বড্ড আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছো। পাগল হয়ে যাচ্ছি।”
– “মেঘ,তুমি এই অসময়ে কেন এলে? আমার কাজ আছে।”
– “একটু পরে গেলে কিছু হবেনা। রেগুলার তো আর আসিনা, কতদিন পরে এলাম।”
– “উফফ পেটে এভাবে হাত বুলাচ্ছো কেন মেঘ? অস্থির হয়ে উঠছি তো।”
– “অস্থির করতেই চাইছি। এখন তোমার কোথাও যাওয়া হবেনা। এখন আমার মাঝে মিশে যাবা তুমি।”
– “বাচ্চাদের মতন করোনা তো। আমার একটা প্রোগ্রাম আছে। কিছু ডায়ালগ মুখস্থ করতে হবে আমায়।”
মেঘালয় বললো, “সব হবে। পরে যেও। আমাকে কেন এত দূরে সরিয়ে রাখো বলোতো? এরকম একটা বউকে রেখে কি দূরে থাকা যায়?”
মিশু হাসার চেষ্টা করে বললো, “কাজের সময় দুষ্টুমি?”
মেঘালয় মিশুর টপসের নিচ দিয়ে হাত ঢুকিয়ে দিয়ে ওর পেটে চাপ দিতে দিতে বললো, “কতটা চেঞ্জ হয়ে গেছো তুমি। আজকাল আর লজ্জায় নীল হয়ে যাওনা। আগে যদি এভাবে বলতাম তাহলে বলতে, তুমি একটা খুব খারাপ। সেই কথাটা শুনতে এত ভালো লাগতো আমার! আমার বুকে মুখ গুঁজে দিয়ে লজ্জায় মরে যেতে। দুটো কিল বসাতে আমার বুকে। বড্ড মিস করি সেইসব দিনগুলোকে!”
মিশু কিছু বললো না। নিজের বদলে যাওয়ার কথাগুলো শুনতে শুনতে আর মেঘালয়ের পাগল করা স্পর্শে অস্থির হয়ে উঠতে লাগলো। মেঘালয় আস্তে আস্তে পিছনে সরে এসে মিশুকে বুকে জড়িয়ে ধরেই বিছানায় শুয়ে পড়লো। মিশুর জিন্সের ভেতর দিয়ে ওর তলপেটে হাত রাখলো। মিশুর ঘোর ঘোর লেগে যাচ্ছে। মেঘালয় মিশুর পায়ে পা রেখে আলতো করে ছুঁয়ে দিতে লাগলো। মিশু উত্তেজনায় ছটফট করতে শুরু করেছে। ছেলেটা এত দুষ্টু,এমন ভাবে ঘায়েল করে ফেলে যে নেশা ধরে যায়। এমন সময় মিশুর ফোন বেজে উঠলো।
মিশু ওঠার চেষ্টা করতেই মেঘালয় ওকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হলো। মিশু ফোন রিসিভ করে বললো, “হ্যালো”
ওপাশ থেকে কি বললো বোঝা গেলো না। মিশু বললো, “আচ্ছা আমি এক্ষুণি আসছি।”
ফোন রেখেই বললো, “সরি মেঘ। আমাকে যেতে হবে এখন। শিল্পকলায় একটা ফটোগ্রাফি এক্সিবিশন অনুষ্ঠানে উপস্থাপনা করতে বলেছে। আমি এখনো ফাইনালি জানাইনি কিছু। প্রধান অতিথি হাসানুল হক ইনু। সে কারণেই ইচ্ছে করছে প্রোগ্রামটা করি। এখান গিয়ে একটু দেখে আসতে হবে কি ব্যাপার।”
মেঘালয় কিছু বললো না। আজকাল এতকিছু করছে ওকে কিছুই জানানোর প্রয়োজন মনে করেনা মিশু। অযথা বলেই বা কি হবে। সে যাই করুক,এই অবস্থায় মেঘালয়কে ফেলে গেলে সেটা খুবই কষ্টদায়ক হবে মেঘের জন্য। ও সহ্য করতে পারবে না এরকম আচরণ। যাকে সবটুকু উৎসর্গ দিতে পারে,যার জন্য দিনরাত একাকার করে পরিশ্রম করে যাচ্ছে সেই মেয়েটাকে যদি একটু ভালোবাসতে না পারে এরচেয়ে বড় কষ্ট আর কি হতে পারে?
মিশু বললো, “তুমি কি যাবে? না গেলে তোমার কোনো কাজ না থাকলে বাসায় থাকো। আমি তাড়াতাড়ি ফিরবো।”
মেঘালয় একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। সারপ্রাইজ দিতে এসে নিজেই বারবার সারপ্রাইজড হয়ে যাচ্ছে। এতকিছু কল্পনাও করেনি ও। এত দ্রুত এত বিশাল সব পরিবর্তন সত্যিই মেনে নেয়ার মত নয়। মেঘালয় দুহাতে মুখ ঢেকে বিছানায় বসে রইলো। মিশু সেদিকে খেয়াল ও করলো না। ফ্রেশ হয়ে এসে আরেকবার চুলগুলো আচড়িয়ে নিয়ে ব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে বাইরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিলো। দরজার কাছে গিয়ে বললো, “আমি আসছি। জরুরি কাজ না থাকলে আজকে থেকে যাও।”
কথাটা বলেই চলে গেলো মিশু। মেঘালয়ের বুকটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে। জরুরি কাজ থাকলেও মিশু একবার বললে সবকাজ ফেলে ওকে সময় দিতো মেঘ। মিশুর খুশির জন্য সবই করতে পারবে ও। আজকে যদি ওর জায়গায় মিশু থাকত, আর মেঘালয়ের যদি সরকারি চাকরীও হতো তবুও মিশুর ভালোলাগার জন্য ডিউটিতে যেতো না ও। চাকরী জলে যাক,মিশুর প্রশান্তি আগে। যে মিশুর জন্য এতটা ভালোবাসা বুকে নিয়ে আজকে ওকে বিয়ের কথাটা বলবে বলে এসেছে,সে মিশু ওকে পাত্তাই দিলোনা। এতটা কাছে পাওয়ার পর এভাবে ফেলে চলে গেলে মানুষের মাথা ঠিক থাকার কথা না। সেখানে মেঘালয় ওকে নিজের চেয়েও বেশি ভালোবাসে,মেঘালয়ের মনের অবস্থা সাংঘাতিক রকমের খারাপ হলো। ও বিছানায় শুয়ে রইলো চুপচাপ।
৭৬.
মিশু সন্ধ্যার পরপর ই ফিরলো। বুয়া এসে রান্না করে দিয়ে গেছে। মেঘালয় বিছানা ছেড়ে ওঠেনি। শুয়ে থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে পড়েছিলো। ঘুম ভাঙার পর শুয়েই আছে। মিশু এসে বিছানার পাশে বসে বললো, “ঘুম হলো? ওঠো, নাস্তা করো।”
মেঘালয় কিছু বললো না। চোখ মেলে তাকালো মিশুর দিকে। মিশুকে খুবই স্নিগ্ধ দেখাচ্ছে। বাসায় ফিরে আবার শাওয়ার নিয়েছে বোধহয়। ভেজা চুল থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে। দুপাশের সামনের কাটা চুলগুলো মুখের উপর এসে পড়েছে। মেঘালয় অনেক্ষণ তাকিয়ে রইলো মিশুর মুখের দিকে। এই মেয়েটাকে ছাড়া ও বাঁচবে কি করে?
মিশু বললো, “কি দেখছো অমন করে? ওঠো, ফ্রেশ হয়ে এসে নাস্তা করবে। আমিতো ভেবেছিলাম তুমি চলে গেছো। যাক,থেকে গিয়ে ভালোই করেছো। কতদিন কাছে পাইনা তোমায়।”
মেঘালয় একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো, “দুপুরে ওভাবে আমাকে তাচ্ছিল্য করে ফেলে রেখে গেলে। এখন আবার এটা বলছো?”
– “মেঘ,আমি কাজ ছিলো বললাম না। সবকিছুর একটা সময় থাকে।”
– “হুম,আমার জানা ছিলোনা। সরি।”
– “রাগ করছো কেন? কাল আমার অফডে। আজকে সারারাত দুজনে জেগে জেগে গল্প করবো। এখন উঠবে কি?”
মেঘালয় উঠে ফ্রেশ হয়ে আসলো। রাত নেমেছে। চা খেতে খেতে বললো, “নতুন নতুন কাজ করছো। আমাকে জানাও না কিছু।”
– “ব্যস্ততার কারণে জানানো হয়না।”
– “জগতে ব্যস্ততা বলে কিছু নেই। সবই গুরুত্বের উপর নির্ভর করে। আমি কঠিন ব্যস্ততার সময়েও তোমাকে সময় দিয়েছি।”
– “তারমানে বলতে চাইছো আমি তোমায় গুরুত্ব দিইনা?”
মেঘালয় নিশ্চুপ রইলো কিছুক্ষণ। তারপর বললো, “একটা সারপ্রাইজ দিতে এসেছিলাম তোমায়।”
– “হুম বলো।”
মেঘালয় চায়ে চুমুক দিয়ে বললো, “আগামী দশদিনের মধ্যে আমাদের বিয়ে হচ্ছে।”
মিশু চমকে উঠে বললো, “বিয়ে মানে! কিসের বিয়ে?”
মেঘালয় বললো, “আমাদের বিয়ে। আব্বু আম্মু চাইছে তোমাকে বিয়ে করে বাসায় তুলতে। ভেবেছিলাম আরো তিন চার বছর পর বাসায় তুলবো। ওরা চাইছে যখন দেরি করে লাভ কি? আমাদের প্রথম বিবাহ বার্ষিকীর দিনেই আমরা আরেকবার বিয়ে করবো। কি বলো?”
মিশু অবাক হয়ে চেয়ে আছে। মাথা ঝাঁকিয়ে বললো, “সম্ভব না। কিছুতেই সম্ভব না।”
মেঘালয় অপ্রস্তুত হয়ে তাকালো মিশুর দিকে। ভেবেছিলো মিশু খুশিতে ওকে জড়িয়ে ধরবে। কিন্তু মিশু এরকম বলবে সেটা ও ভাবতেও পারেনি। অদ্ভুত লাগছে।
মিশু বললো, “এত তাড়াতাড়ি আমি সংসারে জড়াতে পারবো না। আগে নিজের মত করে লাইফটা এনজয় করি,ক্যারিয়ার গোছাই তারপর।”
– “তোমার লাইফে আমি ছাড়া আর কি আছে? সবই হবে,আমাদের ভালোবাসার স্বীকৃতি পেয়ে সব করবে।”
– “সংসার একটা ঝামেলার জিনিস। আমি এখন ই পারবো না।”
– “তোমাকে কোনো ঝামেলা করতে হবেনা। আমাদের বাসায় তোমার কোনো দায়িত্ব নেই,শুধু আমাকে ভালোবাসবে”
– “এখনি না মেঘ। আরো কিছুদিন সময় যাক তারপর। এত তাড়াতাড়ি কেন?”
– “তুমিই আগে বলতে কবে বাসায় তুলবো? আজ এটা বলছো?”
– “হ্যা,কারণ মাত্র ক্যারিয়ার শুরু হচ্ছে আমার।”
– “উফ ক্যারিয়ার রাখবে তুমি? আমার বিজনেস পুরোটাই তোমায় দিয়ে দিবো, সব তোমায় দিয়ে দিবো, সব। তুমি জনপ্রিয় Rj হয়েছো, টিভিতে উপস্থাপনা করছো। আর কি চাও?”
মিশু অবাক হয়ে গেলো মেঘালয়ের ঝাঁঝালো কথা শুনে। বললো, “একটু নিজের মত এনজয় করতে দাও।”
– “তোমার এনজয় করার জন্য তোমার আমাকে বাদ দিতে হবে? আমার সাথে কতদিন ভালোমতো কথা বলোনা তুমি?”
– “মেঘ,একটু বুঝার চেষ্টা করো। এত তাড়াতাড়ি সংসার পারবো না আমি।”
মেঘালয় উঠে এসে মিশুর পায়ের কাছে বসে ওর কোলে মাথা রেখে বললো, “তুমি একটু বোঝার চেষ্টা করো মিশু। আমি একদমই তোমাকে ছাড়া থাকতে পারিনা। আমার দম বন্ধ হয়ে আসে। আর তোমাকে নিয়ে আজকাল খুব চিন্তা হয়। তুমি ইদানীং বেপরোয়া ভাবে চলাফেরা করো। আমাদের বাসায় থাকলে একটু শাসনে থাকবা,আমার সাথে বের হবা সবসময়। আমার চিন্তা থাকবে না।”
– “তোমার সাথে সবসময় বের হতে হবে? আমার স্বাধীনতা কেড়ে নিতে চাইছো তুমি?”
– “এটা কি বললা মিশু? আমি তোমাকে স্বাধীনতা দিচ্ছি,সবসময় আমার সাথে রাখতে চাইছি আর তুমি বলছো?”
– “হ্যা। আমার স্বাধীনতা কেন কেড়ে নিতে চাও তুমি? আমাকে একটু স্বাধীন ভাবে থাকতে দিবানা?”
মেঘালয় মিশুর কোল ছেড়ে দিয়ে মেঝেতে পা মেলে দিয়ে বসে পড়লো। মিশুর মুখ থেকে এমন কথা একদম ই আশা করেনি ও। বুকটা ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে। ইচ্ছে করছে মাটির ভেতর ঢুকে যেতে। কি বলবে বুঝতে না পেরে নিশ্চুপ হয়ে রইলো। এমন সময় ফোন বেজে উঠলো ওর। মা ফোন দিয়েছে। রিসিভ করে বললো, “হ্যা আম্মু বলো।”
মা বললেন, “বাসায় আসবি একটু তাড়াতাড়ি? তোর আব্বু একটু তাড়াতাড়ি আসতে বলেছে। একসাথে ডিনার করবো। জলদি আসিস।”
মেঘালয় “আচ্ছা” বলে রেখে দিলো। ভালোই হলো। এই মুহুর্তে মিশুর সামনে বসে থাকলে মিশুর তিক্ততা আরো বেড়ে যেতো। আর ওরও খারাপ লাগতো খুব। তারচেয়ে এখন বাসায় চলে যাওয়াটাই ভালো হবে। ভেবেচিন্তে সবকিছু ঠিক করে ফেলতে হবে।
মেঘালয় মায়ের কথাটা মিশুকে বলে চলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হলো। মিশু একবার থাকতেও বললো না। ঠায় বসে রইলো সোফায়। মেঘালয় বুক ভরা যন্ত্রণা নিয়ে বেড়িয়ে এলো বাসা থেকে। ছেলেদের নাকি কখনো কাঁদতে নেই,যদি চিৎকার করে একবার কাঁদতে পারতো!
চলবে..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে