অনুভূতি পর্ব ৪৬

0
1987

অনুভূতি
পর্ব ৪৬
মিশু মনি
.
৭৩.
খুব সকালেই ঘুম ভাংলো সবার। পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় উপভোগ করা হলো। সাজেকের সৌন্দর্য দুহাতে ভেতরে গ্রহণ করলো সবাই। ক্ষণিকে ক্ষণিকে রূপ বদলায় সাজেক। এখনি সবকিছু সুন্দর স্পষ্ট, একটু পরেই আবার মেঘে ছেয়ে যায়। কুয়াশার মত মেঘ এসে গা ভিজিয়ে দেয়,আবার কখনো হুট করেই নেমে পড়ে বৃষ্টি। হেলিপ্যাডের সূর্যাস্ত, সূর্যোদয় সবই উপভোগ করা হলো। এখন চলে যেতে হবে ভেবে মিশুর মনটা একদম খারাপ হয়ে গেছে।
মেঘালয় ওকে খুব করে বোঝালো যে আবারো ওকে নিয়ে আসবে কিন্তু কিছুতেই ওর মুখে হাসি ফুটলো না। খুব কষ্ট পাচ্ছে মেয়েটা। লেগুনায় পুরোটা পথ ছাদের উপর বসে মেঘালয় শক্ত করে ধরে রইলো ওকে। সাজেক থেকে ফেরার পথে দীঘিনালা ঝুলন্ত ব্রিজ ও দীঘিনালা বনবিহার দেখে তারপর খাগড়াছড়ি ফিরলো। মিশু এখনো মুখ গম্ভীর করে বসে আছে। আসার সময় কত আনন্দ হচ্ছিলো আর যেতে হচ্ছে মনখারাপ করে। সারাজীবন যদি পাহাড়ের উপর বসেই কাটিয়ে দেয়া যেতো!
খাগড়াছড়ি থেকে বাস ছাড়লো রাত্রিবেলা। বাসে উঠেই মেঘালয়ের বুকে মাথা রেখে আরামের ঘুম দিলো মিশু। মেঘালয় ধরে রইলো ওকে। মেয়েটা এখনো বড় হলোনা,কোথাও গেলে আর ফিরতে চায়না কিছুতেই। এই মন খারাপের রেশ আরো কিছুদিন থাকবে ওর। খুব দ্রুত আরেকটা ট্যুরের ব্যবস্থা করতে হবে মনেহচ্ছে।
রোদ পূর্ব’র কাঁধে মাথা রেখে বসে আছে। পূর্ব ওর জীবনের নানান গল্প শুনাচ্ছে আর ও মুগ্ধ হয়ে শুনছে। পূর্ব বলেছে এখন থেকে রোজ দেখা হবে ওর সাথে। সকালে রোদকে অফিসে নামিয়ে দিয়ে যাবে আবার সন্ধ্যার আগে ওকে নিয়ে বাসায় পৌছে দেবে। নতুন এক সুখাস্পর্শে মুখরিত হয়ে উঠছে রোদ।
নিখিল ও দুপুরের প্রথম হানিমুন বেশ সুন্দর কাটলো। ওরা একে অপরকে হারানোর পর আবারো পেয়ে কি পরিমাণ সুখী হয়েছে তা শুধু ওরাই জানে। একে অপরকে নিজের চেয়েও বেশি ভালোবাসে যে!
৭৪.
দেখতে দেখতে ছয় মাস কেটে গেলো।
মিশু বেশ জনপ্রিয় রেডিও জকি হয়ে উঠেছে। মিডিয়ার জগতে নতুন পা দেয়ার পরও দ্রুত এত ভালো প্রোগ্রাম ম্যানেজমেন্ট করতে শিখবে এটা মেঘালয় কল্পনাও করেনি। ওর যেকোনো কাজ শেখার ক্ষমতা ভালো। মেধাকে দারুণ কাজে লাগাতে পারে মেয়েটা। রেগুলার ভার্সিটিতে যাওয়া আসা, প্রোগ্রামে আসা, টুকটাক ঘুরতে যাওয়া, আর কাজের ব্যস্ততার মধ্য দিয়েই ওর দিন কাটছে।
মেঘালয়ের নতুন এলবাম বেড়িয়েছে আর রেডিওতে গান করছে। গানের প্রতি ঝোক কমে এসেছে মেঘালয়ের। মিশু মিডিয়ায় পা দেয়ার পর থেকে ও এসব কাজের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। দুজনেই সেলিব্রেটি হয়ে গেলে সমস্যা। মিশু ক্যারিয়ারে দ্রুত উঠছে যখন, উঠুক। ইদানীং টিভির প্রোগ্রামে উপস্থাপনার কাজ করছে মেয়েটা। বেশ অফার পাচ্ছে কাজের। মোটামুটি জনপ্রিয় দুটো প্রোগ্রামে উপস্থাপনা করেছে। সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকে ও।
মেঘালয় গান কমিয়ে দিয়ে বাবার বিজনেসে মন দিয়েছে। একমাত্র ছেলে,সব দায়িত্ব ওকেই নিতে হবে। সারাদিন অফিসে কাজ দেখাশুনা করে ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফিরে যখন মিশুকে ফোন দেয়,
মিশু রিসিভ করে বলে, “আমি এখনো বাইরে। বাসায় ফিরে ফোন দিবো।”
মেঘালয় ফোন কেটে দিয়ে অপেক্ষা করে। অনেক্ষণ সময় পেরিয়ে যায় তবুও মিশুর কল আসেনা। ও আবারো কল দেয়। মিশু রিসিভ করে বলে, “মাত্র বাসায় ঢুকলাম, ফ্রেশ হয়ে ফোন দিচ্ছি।”
মেঘালয় ক্লান্ত শরীরে শুয়ে অপেক্ষা করে ওর ফোনের জন্য। তবুও কল আসেনা। দেখতে দেখতে ঘন্টাখানেক পার হয়ে যায়। মেঘালয় অস্থির হয়ে ওঠে। কথা না বললে ঘুমও আসেনা। ও একবার কথা বলার জন্য কল দেয় মিশুকে। মিশু রিসিভ করে ঘুম জড়ানো গলায় বলে, “ঘুমাচ্ছি। কাল ফোন দিও। খুব টায়ার্ড আমি। এখন ঘুমুতে দাও।”
মেঘালয় কল কেটে দিয়ে ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকে। অপলক ভাবে অনেক্ষণ তাকিয়ে থাকে। স্ক্রিনে মিশুর উচ্ছল ছবি। ওর ছবির দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। ওর জায়গায় মিশু থাকলে নির্ঘাত কান্না করে দিতো। ও তো ছেলে,তাই কাঁদতে পারেনা। গত দুটো সপ্তাহ ধরে প্রতিটা রাতেই এরকম করছে মিশু। মেঘালয় ওর বাসায় যেতে চায়,সেটাও বারণ করে দেয়। ব্যস্ততার অজুহাত দেখায়। সারাদিন কাজ করে ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফেরার পর সারারাত জেগে মেঘালয়কে সময় দেয়ার মত এনার্জি নাকি থাকেনা আর। মেঘালয় কিছুই বলেনা,শুধু ওর এই নিশ্চুপ বদলে যাওয়া দেখে যায়।
যেই মেয়েটা ছয় মাস আগেও একটা রাত ফোন না দিলে কান্নায় ভেঙে পড়তো, আজ তার কথা বলার মত সময় নেই। যে মেয়েটা পুরো সপ্তাহ অপেক্ষা করে বসে থাকতো মেঘালয় কবে আসবে, যেদিন মেঘালয় ওর কাছে আসতো সেদিন বিকেল থেকেই সাজগোজ করে বসে থাকতো। আজ সেই মেয়েটা পনের দিন ধরে দেখা না করেই আছে। একবার ভিডিও কল দিয়ে মুখটা দেখানোর মতন সময়ও নাকি নেই! মানুষ উপরে উঠে গেলে কি এমন ই হয়? কই মেঘালয় যখন সাধারণ একটা ছেলে থেকে একজন জনপ্রিয় শিল্পী হয়ে উঠলো,যখন প্রতিটা পত্রিকায় ওর মাউন্টেইনিয়ারিং এর ছবি ছাপা হলো তখন তো মেঘালয় একটুও বদলায় নি। বরং মিশুর ভালোর জন্যই গান গাওয়া কমিয়ে দিয়েছে ও। আর সেই মিশুই কিনা…!
রাত একটা থেকে দুটো, দুটো থেকে আড়াইটা বেজে গেলো। নার্ভগুলো ধীরেধীরে ক্লান্ত হয়ে পড়ছে। ঘুমে চোখ বুজে আসছে মেঘালয়ের। ফোনটা হাত থেকে পড়ে গেলো। ঘুমিয়ে গেলো আস্তে আস্তে।
বাইরে বৃষ্টি নেমেছে। খুব বাতাস হচ্ছে। মেঘালয়ের মা এসে দেখলেন রুমের দরজা খোলাই আছে। মেঘালয় জানালা খোলা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছে। উনি এসে রুমের জানালা লাগিয়ে দিলেন। মেঘালয়ের গায়ের উপর চাদর টেনে দিলেন। ছেলেটাকে খুবই মায়াবী দেখাচ্ছে। নিজের খেয়াল রাখেনা ঠিকমত, একটুও সেজেগুজে বাইরে যায়না। গত কয়েকদিন থেকে চুল ও আচড়ায় না ঠিকমত। মা একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন।
রুমে এসে মেঘালয়ের বাবাকে বললেন, “একটা কথা বলবো?”
আকাশ আহমেদ ঝড়ের শব্দে উঠে বসেছেন। উনি কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “হুম বলো।”
– “বলছি যে, মেঘ তো এখন বিজনেসে ভালোই মন দিয়েছে। ওর তো পড়াশোনাও শেষ। এখন কি বিয়েটা দেয়া যায়না ওর?”
উনি চমকে তাকালেন স্ত্রীর দিকে। বিয়ের কথাটা একদম ই মাথায় আসেনি ওনার। মাথাটা ঝাঁকিয়ে বললেন, “মেঘ কি এখনি বিয়ে করতে চায়?”
– “না চাওয়ার কি আছে? ওকে তো আর কষ্ট করে চাকরী নিতে হবেনা। গান করছে,বিজনেস করছে। এখন বিয়েটা দিয়ে দাও।”
– “হুম, জিজ্ঞেস করে দেখি কি বলে।”
মা বললেন, “যাই বলুক ওকে বিয়ের তাগাদা দিতে হবে। মিশুর সাথে প্রায় বছর খানেকের সম্পর্ক, ওরা কি চায়না বিয়ে করতে? এতদিনের সম্পর্ক, মেঘ মাঝেমাঝেই ওর ওখানে যায়। চার পাঁঁচবার ট্যুরেও গেলো একসাথে। ওদের সম্পর্ক নিশ্চয় স্বামী স্ত্রী’র মত হয়েই গেছে। আমাদের উচিৎ বিয়ে দিয়ে দেয়া তাইনা?”
বাবা বললেন, “হুম। আচ্ছা কাল নাস্তার টেবিলেই তুলে দেখো কথাটা।”
সকালে খাবার টেবিলে কথাটা বলতেই মেঘালয় উৎফুল্ল হয়ে উঠলো। মিশু আজকাল ব্যস্ততার অজুহাতে যোগাযোগ কমিয়ে দিয়েছে, ওকে ছাড়া থাকতে খুবই কষ্ট হয় মেঘালয়ের। এরকম একটা প্রস্তাব তো মেঘ না চাইতেই বৃষ্টির মতন। বিয়ে করে ওকে নিজের কাছে এনে রাখবে,সারাক্ষণ বাবা মায়ের সাথে থাকবে। সবাই জানবে ও মেঘালয়ের স্ত্রী। যখন তখন ওর কর্মস্থলেও গিয়ে হাজির হতে পারবে।
মেঘালয় খুশি হয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে বলল, “আমার লক্ষী আম্মু। দশদিনের মধ্যে আয়োজন করতে পারবা না? আমি আর দেরি করতে চাইনা।”
মা হেসে বললেন, “বাবাহ! এতদিন দেরি করতে পারলি আর এখন দশদিনের মধ্যেই?”
মেঘালয় লজ্জা পেয়ে বললো, “মা, ওর মত পুতুলটাকে দূরে রাখি কি করে বলো? আমিতো ভেবেছিলাম ওর পড়াশোনা শেষ না হওয়া অব্দি বিয়ের জন্য তোমাদেরকে বলতেই পারবো না।”
– “পড়াশোনা চালিয়েই যাক। আর দুজনেই তো মোটামুটি প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছিস, অযথা দেরি করে কি হবে?”
মেঘালয় মাকে জড়িয়ে ধরে রইলো। ওর কি যে আনন্দ হচ্ছে। এখন মিশুকে সারপ্রাইজ দিতে হবে।
৭৫.
ভার্সিটি থেকে ফিরেই মিশু দেখলো মেঘালয় ওর বিছানায় শুয়ে ঘুমাচ্ছে। বেশ অবাক হলো ও। রাতে মেঘালয় কল দিয়েছিল,কথা বলা হয়নি। সকালে ৮ টায় ক্লাস ছিলো,উঠে ক্লাসে চলে গেছে। মাত্র ফিরলো ভার্সিটি থেকে। ছেলেটার সাথে সেরকম কথা হচ্ছেনা কয়টাদিন ধরে।
মিশু এসে মেঘালয়ের গায়ে হাত রেখে বললো, “ঘুমাচ্ছো?”
মেঘালয় চমকে উঠলো মিশুর ডাক শুনে। ঘুম জড়ানো গলায় বললো, “একটু ঘুম এসে গিয়েছিলো। রাতে ঘুম হয়নি তো।”
মিশুর দিকে ভালোমতো তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো, “পনের দিন পর দেখছি তোমায়। কতটা বদলে গেছো!”
বলেই মিশুকে কাছে টেনে নেয়ার চেষ্টা করলো। ওর কাছাকাছি আসার পর যখনি ঠোঁট স্পর্শ করতে যাবে মিশু ওকে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে বললো, “আমার খুব উশখুশ লাগছে। সরো তো আগে ফ্রেশ হয়ে আসি।”
মেঘালয় হতাশ হয়ে ওকে ছেড়ে দিলো। মিশু আজকাল কেমন যেন হয়ে গেছে। আর আগের মত কাছে আসতেও চায়না।
মিশু বাথরুমে ঢুকে গেলো আর কিছু না বলেই। মেঘালয় উঠে বাইরে গিয়ে রান্নাঘর থেকে খাবার এনে টেবিলে সাজালো। যত্ন করে খাবার রেডি করে বসে অপেক্ষা করতে লাগলো মিশুর জন্য। মিশু গোসল থেকে বেড়িয়ে একটা টি-শার্ট ও কোয়ার্টার প্যান্ট পড়ে চুলে টাওয়েল বেধে খাবার টেবিলের কাছে আসলো। ওর স্নিগ্ধ চেহারা দেখে পাগল হয়ে গেলো মেঘালয়। উঠে এসে মিশুর কোমরে হাত দিয়ে ওকে কাছে টেনে নিয়ে বললো, “ইস! আমার বউটা দিনদিন যা আকর্ষণীয় হচ্ছে,ইচ্ছে করছে তোমাকেই খেয়ে ফেলি।”
মিশু মেঘালয়ের গালে বুলিয়ে দিয়ে বললো, “তুমি কালো হয়ে গেছো কেন?”
– “বউয়ের গায়ের রঙ বরের গায়ের রঙের ব্যস্তানুপাতিক। তুমি ফর্সা হচ্ছো তাই আমি কালো হচ্ছি।”
– “হা হা, তাই নাকি? তোমাকে খুবই উসকোখুসকো দেখাচ্ছে মেঘ। নিজের একটু কেয়ার করতে পারোনা?”
– “নাহ পারিনা। আমার দিকে তাকানোর সময় তো আজকাল তোমার নেই। অযথা নিজের কেয়ার করে কি করবো?”
মিশু হাসলো। মেঘালয়ের বাহুর বন্ধন থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে গিয়ে চেয়ার টেনে নিয়ে বসলো। মেঘালয় ওর পাশেই বসলো। মিশু খাবারে হাত দিয়ে বললো, “শুরু করো।”
মেঘালয় অবাক হয়ে যাচ্ছে মিশুর আচরণ দেখে। এত পরিবর্তন! হুট করেই হয়নি। ধীরেধীরে হয়েছে। মেঘালয় ওকে অনেকবার বলেছে, “মিশু তুমি কেমন যেন হয়ে যাচ্ছো। প্লিজ কখনো চেঞ্জ হয়ে যেওনা।”
মিশু হেসে বলেছে, “আমি আজীবন এমনই থাকবো মেঘমনি।”
তবুও আজ এতটা বদলে গেছে! মেঘালয়ের দিকে তাকানোর সময় ও ওর হচ্ছেনা। এমন ভাব করছে যেন মেঘালয় আসাতে খুব বিরক্ত হয়েছে ও।
মেঘালয় কষ্ট করে খাবার তুলে নিলো। কিন্তু নিজে মুখে না দিয়ে মিশুর দিকে এগিয়ে দিলো। মিশু ওর হাতেই খাবার খেয়ে যাচ্ছে অথচ একবার ও ওকে খেতে বলছে না। এমন কেন মেয়েটা?
মেঘালয় বললো, “আমার খিদে পেয়েছে মিশু।”
– “সেকি! তুমি খাচ্ছোনা কেন? খাও।”
মেঘালয়ের বুকটা ফেটে যাচ্ছে কষ্টে। মিশুর এমন পরিবর্তন ও মানতে পারছে না। অনেক কষ্টে একটু ভাত মুখে দিলো কিন্তু গলা দিয়ে নামলো না। মিশু বললো, “একটা নিউজ আছে।”
মেঘালয় নিশ্চুপ। মিশু বলেই গেলো, “একটা বিজ্ঞাপনে কাজ করার অফার পেয়েছি।”
মেঘালয় আঁৎকে উঠে বললো, “মডেল! কোনো দরকার নেই।”
– “কেন? আমিতো ভাবলাম তুমি শুনলে হ্যাপি হবে। বাট..”
– “মিশু,তুমি জকির কাজ করছো করো। আর উপস্থাপনার কাজটাও ভালো। কিন্তু পুরোপুরিভাবে মিডিয়ায় নেমে পড়ো আমি চাইনা সেটা। তোমাকে মডেল হতে হবেনা। তুমি আমার স্ত্রী, আমার ভালোবাসা, আমার মিশু।”
মিশু কিছু বললো না। কিন্তু ওর মুখটা কালো হয়ে গেছে। মেঘালয় বললো, “আমাকে একবার ও বলার প্রয়োজন মনে করোনি? আজকাল কোথায় যাও কি করো কিচ্ছু জানাও না।”
– “তুমি বিজি থাকো, কিংবা আমি আমি বিজি থাকি তাই জানানো হয়না।”
– “ভালো। তোমার কি মন খারাপ হচ্ছে? শোনো, আমি মডেলিং করতে দিবো না মিশু। তুমি মিডিয়ার আর কোনোকিছুতেই যেতে পারবে না। পড়াশোনা করো আর রেডিওতে কাজ করো। তোমার জীবনের অন্য একটা লক্ষ্য আছে সেটা ভূলে যেওনা।”
মিশু কিছু না বলে চুপচাপ খাচ্ছে। মেঘালয় আরেকবার মিশুর মুখে তুলে দিতে যাচ্ছিলো কিন্তু মিশু নিলো না। সরিয়ে দিয়ে বললো, “আর খাবো না। পেট ভরে গেছে।”
কথাটা শুনতে খারাপ লাগলেও মেঘালয় হাসলো। বললো, “হাত ধুয়ে নাও। রুমে যাও আমি আসছি।”
মিশু হাত ধুয়ে রুমে চলে গেলো। মেঘালয় রুমে এসে দেখলো মিশু বিছানায় শুয়ে ফোনে কি যেন করছে। মেঘালয় এসে পাশে শুয়ে পড়লো।
মিশু অনেক্ষণ ধরে ফোন চাপাচাপি করছে। মেঘালয় ওর হাত থেকে ফোনটা নিয়ে বিছানায় রেখে মিশুকে বুকে টেনে নিলো। আলতো করে কপালে চুমু এঁকে দিয়ে বললো, “রাগ করেছো?”
– “না। রাগ করবো কেন?”
– “তুমি আজকাল এত ব্যস্ত থাকো, আমার খুব কষ্ট হয় পাগলীটা। মিডিয়াকে ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নিলে ব্যক্তিগত জীবন বলতে কিছুই থাকবে না। বুঝো সেটা?”
মিশু একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো, “বাদ দাও। আমি করছি না আর কিছু।”
– “পড়াশোনা ঠিকমত করো। আর তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে। এ বছরের সবচেয়ে সেরা সারপ্রাইজ।”
– “দার্জিলিং ট্যুর নাকি? এখন কোথাও যাবোনা। কয়েকদিন টানা প্রোগ্রাম আছে।”
মেঘালয় হতাশ হয়ে বললো, “সেরকম কিছু না। এরচেয়েও বড় সারপ্রাইজ।”
মিশু সেদিকে কোনো উৎসাহ না দেখিয়ে উঠে বসতে বসতে বললো, “আমাকে বের হতে হবে।”
মেঘালয়ের বুকে হাতুরি পিটতে লাগলো। মিশু ওকে ফেলে এভাবে চলে যাচ্ছে আর বলছে বের হতে হবে? মেঘালয় কি বলতে চাইছে সেটা শোনার ও আগ্রহ নেই?
মিশু বিছানা থেকে নেমে ওয়াশরুমে চলে গেলো। মেঘালয় বালিশে মুখ গুঁজে দিয়ে দুহাতে শক্ত করে চেপে ধরলো বালিশটা। ওর সবকিছু ভেঙে ফেলতে ইচ্ছে করছে। মিশুকে বিন্দু পরিমাণ রাগ দেখানোর সাধ্য ওর নেই। ও কোনভাবেই মিশুকে আঘাত করতে পারেনা। ইচ্ছে করছে ঘরের সমস্তকিছু ভেঙে ফেলতে।
চলবে..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে