অনুভূতি পর্ব ৩৬

0
1883

অনুভূতি
পর্ব ৩৬
মিশু মনি
.
৫৫.
সায়ান ও বিদ্যা হাঁটতে হাঁটতে চা বাগানে চলে এলো। বাগানের পাতাগুলো চাঁদের স্নিগ্ধ আলোয় চিকমিক করছে। সায়ান বারবার আড়চোখে তাকাচ্ছে বিদ্যার দিকে। মেয়েটি দিব্যি নেচে নেচে বেড়াচ্ছে। এ কেমন মেয়েরে বাবাহ! এত রাতে কেউ ঘুম থেকে উঠে হাঁটতে বের হয়?
বিদ্যা বললো, “এই ছেলে তোমার নাম কি?”
– “সায়ান।”
– “সায়ান সায়ানা। তোমার বউয়ের নাম হবে সায়ানা। তোমার বউটা হবে খুব সেয়ানা।”
সায়ান হেসে ফেললো ওর কথায়।বিদ্যা একটু করে এগোচ্ছে আর নিচু হয়ে চা পাতার ঘ্রাণ নিচ্ছে। এটা তো মিশুর ই প্রতিফলন মনেহচ্ছে। মিশুও পাহাড়ে গিয়ে গাছপালার গন্ধ নেয়,মাটির ঘ্রাণ নেয়। দুজনেই একই ধাচে গড়া। সায়ান হা করে বিদ্যার চাল চলন খেয়াল করছে। বিদ্যা বললো, “বলোতো আজকে চাঁদের আলো এত কম কেন?”
– “চাঁদের আলো বেশিই আছে। আজকে কুয়াশা পড়েছে বলে আলো কম মনেহচ্ছে।”
– “আমার সাথে সায়েন্স কপচাপা না। সাহিত্য কপচাও।”
– “বুঝলাম না। এর সাথে সায়েন্স আর সাহিত্যের কি সম্পর্ক?”
– “তুমি যেটা বললা সেটা সায়েন্টিফিক ব্যাখ্যা হয়ে গেলো না? সাহিত্যের ভাষায় বলো, “বিদ্যা আজ তোমার রূপের কাছে চাঁদের আলো ম্লান হয়ে গেছে।”
সায়ান হো হো করে হেসে উঠলো। বিদ্যা ভ্রু কুচকে বললো, “হাসছো কেন? ভূল বলেছি?”
– “না, বিদ্যা আজ তোমার রূপের কাছে চাঁদের আলো ম্লান হয়ে গেছে।”
– “এবার ঠিকাছে। এভাবেই প্রেম হয়।”
সায়ান আবারো হেসে উঠলো। কুয়াশা পড়েছে দারুণ। মৃদু জোৎস্নায় কুয়াশায় ভিজতে ভিজতে দুজনে চা বাগানের ভেতর দিয়ে হেঁটে বেড়াতে লাগলো। সায়ানের ভয় হচ্ছে পোকা মাকড় নিয়ে। কিন্তু বিদ্যার এ নিয়ে কোনো ভয় নেই। সে দিব্যি গুনগুন করে গান গাইছে আর হাঁটছে।
মেঘালয়ের হঠাৎ ঘুম ভাংলে দেখলো মিশুর শরীর জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে। মিশু রীতিমত কাঁপছে। ব্যস্ত হয়ে উঠে বসলো মেঘালয়। মিশুর কপালে ও গলায় হাত দিয়ে জ্বর অনুভব করে দেখলো। তারপর বিছানা থেকে নেমে লাগেজ খুলে থার্মোমিটার বের করলো। মিশুর শিয়রে বসে জ্বর মেপে দেখে চিন্তায় পড়ে গেলো মেঘালয়। হুট করেই এত জ্বর এসে গেছে মেয়েটার। সন্ধ্যা থেকেই হয়ত জ্বর জ্বর লাগছিলো, কিছু বলেনি তখন। ওর মুখটা শুকনা দেখাচ্ছিলো। বিছানাকান্দি থেকে ভেজা গায়ে ফিরেছে, নৌকায় বাতাস লেগেছিলো গায়ে। গতরাতেও ঝরনা স্নান করে ভেজা কাপড়ে ফিরেছে। এজন্যই হয়ত ঠাণ্ডা লেগে গেছে মেয়েটার। ও দ্রুত ব্যাগ থেকে ওষুধ বের করলো। টুকটাক জ্বর,সর্দি, মাথা ব্যথার ওষুধ কোথাও গেলে সাথে নিয়ে যায় ও। এক গ্লাস পানি এনে মিশুকে একটু তুলে ধরে ওষুধ খাইয়ে দিলো। মিশু ওকে আলগা করে জড়িয়ে ধরে বললো, “আমার হাত পা ঝিমঝিম করছে মেঘ।”
ওষুধ খাইয়ে দিয়ে ওকে বিছানায় শুইয়ে দিলো মেঘালয়। গায়ের উপর ভালো মতো কম্বল টেনে দিলো। তারপর হাতে কিছুক্ষণ ম্যাসাজ করে দিয়ে বললো, “ভালো লাগছে এখন?”
মিশু জ্বরের ঘোরে বললো, “গা টা কেমন যেন করছে। ব্যথা করছে। পায়ে বেশি ব্যথা করছে। খুব ঝিমঝিম করছে।”
মেঘালয় ওর পায়ের কাছে বসে পায়ে হাত দিতেই মিশু বললো, “বর কখনো বউয়ের পা টিপে দেয়? দিওনা দিওনা।”
মেঘালয় বললো, “আমি ওসব নিয়ম মানিনা। তুমি আমার কাছে জগতের সবচেয়ে মূল্যবান জিনিস, এটাই সবচেয়ে বড় কথা।”
মিশু আর কিছু বললো না। জ্বরের ঘোরে কিছু বলতেও পারছে না। ঘুমিয়ে পড়েছে বোধহয়। মেঘালয় বসে বসে ওর পা টিপে দিতে লাগলো। পা দুটো সুন্দর করে টিপে দিচ্ছে আর মিশু আরামে ঘুমোচ্ছে। এভাবে কতক্ষণ কেটে গেলো কে জানে।
আবারো মিশুর ঘুম ভেঙে গেলো। মেঘালয় এখনো ওর পায়ের কাছে বসে পা টিপছে। মিশুর অতটা খেয়াল ছিলোনা। ঘোরের মাঝেই ও পা ঝাড়া দিতেই মেঘালয়ের বুকে লাত্থি দিয়ে ফেললো। মেঘালয় আচমকা এরকম পরিস্থিতিতে পড়েও নিজেকে সামলে নিলো। কিন্তু মিশু ওকে লাথি দিয়ে ফেলেছে বুঝতে পেরে ব্যস্ত হয়ে বিছানার উপর উঠে বসলো। মেঘালয়ের বুকে খুব জোরে লেগেছে। ও বুকে হাত দিয়ে চেপে ধরে আছে। মিশু এগিয়ে গিয়ে ওর সামনে বসে দুহাতে মেঘালয়ের মুখটা ধরে বললো, “আমি এটা কি করলাম! আমি বুঝতে পারিনি মেঘমনি। তুমি কি ব্যথা পেয়েছো? সরি মেঘ।”
মেঘালয়ের বুকে লাথিটা একটু জোরেই লেগেছে। তবুও ও ব্যাপারটা হজম করার চেষ্টা করলো। মুখে হাসি ফুটিয়ে বললো, “তুমি একটা পাগলী। এটা তো একটা এক্সিডেন্ট, আমি কিছু মনে করিনি।”
– “তুমি ব্যথা পাওনি?”
– “না রে পাগলী টা। ব্যথা পাইনি একটুও।”
– “সত্যি তো?”
– “সত্যি, একদম সত্যি।”
মিশু মেঘালয়কে জড়িয়ে ধরে ওর বুকে যে জায়গাটায় লাথি লেগেছিলো সেখানে মাথা রেখে বললো, “আমাকে মাফ করে দাও মেঘ। আমি বুঝতে পারিনি তুমি এখানে বসে আমার পা টিপছ। আমার অতটা হুশ ছিলোনা।”
মেঘালয় মিশুকে সোজা করে শুইয়ে দিয়ে গায়ে কম্বল টেনে দিলো। নিজে বসে রইলো ওর মাথার কাছে। মিশুর মাথাটা ওর কোলের উপর নিয়ে বললো, “ভূলে যাও এ ব্যাপারটা। ওটা জাস্ট একটা এক্সিডেন্ট। আর তুমি ইচ্ছেকৃত ভাবে লাথি দিলেও আমি কখনো কিছু মনে করবো না। তুমি পুরো টাই আমার। তোমার মাথাটা যদি আমার বুকে জায়গা পায়,পা কেন পাবে না? তুমি তো আমার ই।”
মিশু কেঁদে ফেললো কথাটা শুনে। উঠে বসার চেষ্টা করলো। কিন্তু মেঘালয় ওকে উঠতে দিলোনা। মিশু মেঘালয়ের একটা হাত বুকে চেপে ধরে বলতে লাগলো, “এত ভালো কেন তুমি! এত সুন্দর করে কিভাবে ভাবো? আমি বারবার আঘাত করে ফেলি তোমায়। আমি খুব খারাপ একটা মেয়ে।”
– “একদম এই কথা বলবা না। তুমি আমার লক্ষী একটা বউ। এবার ঘুমোও তো। শরীর কেমন লাগছে এখন?”
– “ভালো।”
– “জ্বর একটু ও কমেনি। তুমি ঘুমোও তো মিশু।”
মেঘালয় উঠে গিয়ে একটা বাটিতে করে পানি ও রুমাল নিয়ে এলো। রুমাল ভিজিয়ে মিশুর কপালে দিয়ে দিলো। তারপর বললো, “এখন চুপচাপ শান্ত মেয়ের মত ঘুমোও। ওষুধ খেয়েছো, এবার দেখবে জ্বর পালাবে। আর না পালালেও আমি জোর করে জ্বরকে তাড়িয়ে দিবো।”
মাথায় জলপটি দিয়ে দেয়াতে মিশুর খুব আরাম লাগছে। কপাল ও চোখের উপর মেঘালয় রুমাল ভিজিয়ে রেখে দিয়েছে। এখন আরামে চোখে ঘুম এসে যাচ্ছে। মিশু কি যেন বললো বোঝা গেলো না। ঘুমে ওর কথা জড়িয়ে যাচ্ছে। মেঘালয় বারবার রুমাল ভিজিয়ে জলপটি দিয়ে দিচ্ছে। মিশু ঘুমের ঘোরে বললো, “আমার শরীরে শুধু তোমার প্রেমের বীজ থাকবে,কোনো অসুখ বিসুখের বীজ তুমি থাকতেই দেবেনা। তুমি খুব…”
শেষে কি বললো বোঝা গেলো না। কথা জড়িয়ে যাচ্ছে। ঘুমিয়ে পড়েছে মিশু। মেঘালয় হাসলো। পাগলী একটা মেয়ে। বুকের যে জায়গাটায় মিশু লাথি দিয়েছে সেখানে হাত রেখে মনেমনে বললো, “শরীরে কত আঘাত দিতে পারিস দে। কখনো বুকের ভেতরে আঘাত দিস না মিশু। আমি তোকে খুব বেশি ভালোবাসি। তোর দেয়া আঘাত আমি সহ্য করতে পারবো না।”
মেঘালয়ের চোখে পানি এসে যাচ্ছে। ও মিশুর ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে মনেমনে প্রার্থনা করতে লাগলো যেন তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যায় মিশু। ওর শরীর অসুস্থ থাকলে মেঘালয়ের ও কষ্ট হবে। মেঘালয় তোয়ালে ভিজিয়ে মিশুর শরীরটা মুছে দিলো।মিশু এখন আরামে ঘুমোচ্ছে। আর মেঘালয় ওর মাথার কাছে বসে চুলে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। একটু পরপর জলপটি ভিজিয়ে আবারো কপালে দিয়ে দিচ্ছে।
সায়ান ও বিদ্যা অনেক্ষণ হাটাহাটি করলো একসাথে। বিদ্যার স্কুল জীবনের নানান মজার মজার গল্প বলছে ও। সায়ান শুধু মুগ্ধ হয়ে শুনছে। বিদ্যা বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে। বড় ভাইয়া ভার্সিটিতে ফাইনাল ইয়ারের স্টুডেন্ট। বাবা মা সবাই ওকে খুবই আদর করে আর আদরে আদরে ও একদম বাদর হয়ে গেছে এসব গল্প বলতে লাগলো সায়ানকে। সায়ান ও হেসে হেসে নানান প্রশ্ন করতে লাগলো।
– “আচ্ছা বিদ্যা, বেয়াদব বলাটা কি তোমার মুদ্রাদোষ?”
– “আমার কোনো দোষ নেই। যে বেয়াদব তাকে বেয়াদব তো বলবো ই তাইনা?”
– “তুমি জানো মেঘালয় কত বড় মনের একজন মানুষ? ওর মত মহান ব্যক্তি আর একটাও দেখিনি আমি আমার লাইফে। তুমি আর কক্ষনো ওকে এভাবে বলবে না। সম্মান দেখিয়ে কথা বলবা।”
– “উনি কোন থানার চৌকিদার?”
– “বিদ্যা, এভাবে বড়দের বলতে হয়না। মেঘালয় একজন মাউন্টেউনার।”
– “মাউন্টেইনার রা তো কালা কুচকুচে হয়। মেঘালয় এত ফর্সা কেন?”
– “আজব প্রশ্ন করো। ও কয়েক বছর যাবত আর অভিযানে যায়না। আন্টি ওকে যেতে দেয়না। সেজন্য ফর্সা হয়ে গেছে আবার। কিন্তু যেবার হিমালয় থেকে ফিরে এসেছে, আমরা কেউই ওকে দেখে চিনতে পারিনি। গায়ের রঙ একদম চেঞ্জ হয়ে গিয়েছিলো।”
– “এত তাড়াতাড়ি সে আবার ফর্সা হয়ে গেছে? নিশ্চয়ই ফর্সা হওয়ার নাইট ক্রিম ইউজ করে?”
– “হা হা হা। হাসালে আমায়। ও যেরকম পরিবেশে থাকে, তাতে গায়ের ময়লা এমনিতেই কেটে যায়। এর জন্য ফর্সা হওয়ার ক্রিম ইউজ করতে হয়না।”
– “ওহ আচ্ছা। যাক ভালো, একজন বড় মানুষকে বেয়াদব বলার সৌভাগ্য অর্জন করেছি আমি।”
– “এটা কি গর্ব করার মত কিছু?”
– “অবশ্যই গর্ব করার মতই কিছু। মেঘালয়কে কেউ কখনো এই গালিটা দেয়নি। যেটা প্রথম আমি দিয়েছি ”
– “তুমি ওকে শুধু মেঘালয় বলবে না। মেঘালয় ভাইয়া বলে ডাকবা।”
– “উনি আমার কেমন ভাই? আমার বাপের একটাই মাত্র ছেলে।”
– “সবসময় নিজের ভাইকেই ভাই বলতে হয়? প্রত্যেক মুসলিম একে অপরের ভাই।”
– “তাহলে তো মেঘালয় আমার বাপের ও ভাই। আমার তাকে চাচা ডাকা উচিত। আপনি ও তাহলে আমার চাচা।”
সায়ান ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বললো, “তা বুঝাইনি। বয়স অনুযায়ী কাউকে ভাইয়া ডাকতে হয়,আর কাউকে আংকেল ডাকতে হয়। বুঝেছো? আমাদের বয়স অনুযায়ী আমাদের কে তুমি ভাইয়া ডাকবা।”
– “ওহ আচ্ছা। বুঝেছি। এবার তাহলে ফিরে যাই আসুন। আমার ঠাণ্ডা লাগছে।”
দুজনে আবারো বাংলোর দিকে ফেরার জন্য পা বাঁড়ালো। সায়ানের হাসি পাচ্ছে বিদ্যার পাগলামি ভরা কথাগুলো শুনতে শুনতে। মেয়েটা পারেও বটে।
৫৬.
মিশুর ঘুম ভেঙে গেলো আবারো। ও চোখ মেলে দেখলো মেঘালয় এখনো ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। ও বললো, “মেঘমনি।”
– “হুম মিশু সোনা।”
– “তুমি ঘুমোও নি?”
– “তোমাকে এই অবস্থায় রেখে কিভাবে ঘুমাই বলো? তোমার কেমন লাগছে এখন?”
মিশু একটু উঠে বসার চেষ্টা করলো। মেঘালয় ওকে উঠে বসতে সাহায্য করলো। মিশু উঠে মেঘালয়ের বুকে মাথা রেখে ওর গলা জড়িয়ে ধরলো দুহাতে। আস্তে আস্তে বললো, “সারারাত এভাবে বসে থাকবা? কয়টা বাজে?”
মেঘালয় ঘড়ি দেখে বললো, “প্রায় চারটা।”
– “আমার কান্না পাচ্ছে মেঘ।”
মেঘালয় অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো, “কেন মিশু?”
মিশু বললো, “অনেকে বাবা মায়ের থেকেও এরকম সেবা পায়না। আমিতো কখনোই পাইনি। আমার অসুখ হলে মাথায় পানি ঢেলে দেয়ার মত কেউ ছিলোনা। ছোটবোন তো তার মত ব্যস্ত, আর আম্মু তো অসুস্থ। আজকে প্রথম কেউ আমার এভাবে সেবা করলো। সারারাত বসে জলপটি দিয়ে দিলা, পা টিপে দিলা, মাথা মালিশ করে দিচ্ছো। এভাবে কেউ আমাকে ওষুধ খাওয়ায় নি, আমার অসুখ হলে নিজেকেই ওষুধ কিনে এনে তারপর খেতে হতো।”
মিশু আঁকড়ে ধরে আছে মেঘালয়কে। মেঘালয় বললো, “তোমার সেবা করতে পেরে নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনেহচ্ছে মিশু। আমি তোমাকে যত ভালোবাসি, তত কম মনেহয়।”
-“এত ভালোবাসো কেন মেঘ? তোমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছি,মাথায় আঘাত পেয়েছো। আজকে আবার বুকে লাথি দিয়েছি। সেদিন ট্রেনে কতগুলা হিংস্র আচড় দিয়েছি। কত আঘাত দেই আমি তোমাকে। অথচ তুমি আমাকে কত্ত ভালোবাসো!”
মেঘালয় মিশুর চুলে হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো, “ভালোবাসলে বাসার মতই বাসবো, যেন আমার প্রিয় মানুষ টার লাইফে আর কারো ভালোবাসার প্রয়োজন না পড়ে।”
– “আমি কি তোমার এতটা ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য?”
মেঘালয় মিশুকে বুকে জড়িয়ে ধরে বললো, “যোগ্যতা আমি বুঝিনা। আল্লাহ তোমাকে পাইয়ে দিয়েছেন, এতে তার কাছে লাখ লাখ শোকরিয়া। আমি সুখী তোমাকে পেয়ে,এটাই সবচেয়ে বড়। তোমাকে আমার পাশে মানাচ্ছে কিনা সেটা আমার দেখার বিষয় না।”
মিশুর চোখে পানি এসে গেলো। মেঘালয় বুঝতে পেরে ওর চোখ মুছে দিয়ে বললো, “আমার শুধু একটাই চাওয়া তোমার কাছে, সবসময় আমার পাশে থেকো। কখনো যদি একটুও আড়াল হও,আমি পাগল হয়ে যাবো।”
মিশুর সুখে মরে যেতে ইচ্ছে করছে। এত ভালবাসা পেয়েও কি কখনো আড়াল হওয়া যায়? জীবনটাই তো উৎসর্গ করা যায় এই মানুষ টার জন্য। অজান্তেই লাথি দিয়ে ফেলাটা খুব অপরাধ হয়ে গেছে। মিশুর খুব খারাপ লাগছে সেজন্য। কথাটা আরেকবার বলতেই মেঘালয় বললো, “আমি ভূলেই গেছি ব্যাপারটা। তুমি এখনো সেটা ভেবে কষ্ট পাচ্ছো?”
– “সরি মেঘমনি।”
– “একদম মন খারাপ করে থাকবা না। তোমার অসুখ তাড়াতাড়ি সেরে যাক।”
– “তুমি আমার শরীর থেকে সমস্ত বিষ শুষে নাও না।”
মেঘালয় শিউড়ে উঠলো মিশুর কথায়। পুরো শরীর ঝাঁকুনি দিয়ে উঠলো ওর। গায়ের লোম দাঁড়িয়ে গেলো। চোখ বেয়ে টপটপ করে জল পড়তে লাগল। অজান্তেই মেঘালয় এই পাগলী টাকে কতটা ভালোবেসে ফেলেছে সেটা কি ও বোঝে? কখনো কি বুঝবে মেঘালয় ওকে কতটা ভালোবাসে? ওর মুখে হাসি ফোটাতে, ওকে একটু আনন্দ দিতে সবকিছু করতে রাজি ও। মিশু কি জানে সে কথা?
মিশু মেঘালয়ের কলার টেনে ধরে বললো, “তোমাকে ছাড়া আমি অপূর্ণ মেঘালয়। আমাকে পূর্ণ করে দিয়েছো তুমি।”
মিশুর জ্বর কমে যাচ্ছে আস্তে আস্তে। ভোর হতে শুরু করেছে। দুটো সুখী মানুষ একে অপরকে বুকে জড়িয়ে কাঁদছে, এ তো সুখের কান্না!
চলবে..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে