অনুভূতি
পর্ব ২৫
মিশু মনি
.
৩৮.
মেঘালয় মিশুকে সিটে শুইয়ে দিয়ে ওর মাথাটা নিজের কোলের উপর রাখলো। ওর চুলে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো, “তুমি ঘুমোও।”
মিশুর মোটেও ঘুমাতে ইচ্ছে করছে না। মেঘালয় জোর করে ওকে ঘুম পাড়াতে চাইছে। বারবার বলছে, “কালকে সারাদিন ঘুরতে হবে। তুমি ঘুমাও সোনামণি।”
বাধ্য হয়েই ও ঘুমানোর ভান করে চোখ বন্ধ করে রইলো। মেঘালয় ওর চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। বেশ কিছুক্ষণ পর মেঘালয় ওকে জিজ্ঞেস করলো, “ঘুমাইছো?”
মিশু কোনো সাড়া দিলো না। জেগে আছে বুঝতে পারলে মেঘালয় আবারো জোর করে ঘুম পাড়াতে চাইবে। সেজন্যই ও চুপ করে রইলো।
মেঘালয় যখন বুঝতে পারলো মিশু ঘুমিয়ে গেছে তখন একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো। জানালাটা বন্ধ করে দিয়ে এসি বাড়িয়ে দিলো। ব্যাকসিট থেকে হাত বাড়িয়ে চাদর নিয়ে মিশুর গায়ের উপর দিয়ে দিলো। তারপর আবার ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। মিশুর চোখে পানি এসে যাচ্ছে। প্রায় আধ ঘন্টা ধরে ছেলেটা ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। এভাবে কেয়ার করতে হয় বুঝি? মানুষ নাকি দুই অবস্থায় পড়লে কান্না করে। অধিক সুখে আর অধিক কষ্টে! ইদানীং মিশুর শুধু সুখেই কান্না পায়। এমন করে কেউ কেয়ার করলে সুখী না হয়ে উপায় আছে!
সায়ান জিজ্ঞেস করলো, ” ভাবি ঘুমাইছে?”
মেঘালয় জবাব দিলো, “হুম, বাচ্চাটা ঘুমালো।”
– “হা হা হা, বাচ্চাটা? রাতেও কি বাচ্চাটা বাচ্চাটাই ছিলো?”
– “কথায় বলেনা ঢেকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে? বাচ্চা তো সবসময় বাচ্চাই। সে কি বাসর ঘরে হুট করে বড় হয়ে যাবে নাকি?”
পূর্ব বললো, “যাই বল,মিশুর মত আনাড়ি বউ পাওয়াটাও সৌভাগ্য। মেয়েটা কিচ্ছু বুঝেনা। হাতে ধরে সবকিছু শিখিয়ে দিবি,প্রেম শেখাবি, তারপর দেখবি তোর চেয়েও বেশি বেশি করে তোকে ভালোবাসবে।”
মেঘালয় হেসে বললো, “আমার এতেই হবে। সবসময় যে ভালোবাসার বিনিময়ে ভালোবাসাই লাগবে এমন টা তো নয়। মিশু আজীবন এমন পাগলী আর অবুঝ থাকুক না। আমি একাই না হয় ভালোবাসবো। আমার ভালোবাসা দিয়েই সবটুকু উসুল করে নিবো।”
আরাফ বললো, “সে কি তোকে ভালোবাসে না? লাইফের প্রথম প্রেমে পড়েছে তো, আস্তে আস্তে দেখিস কেমন পাগল হতে শুরু করে।”
মেঘালয় বললো, “আমি চাইনা ও পাগল হোক। ও আমার পাগলী হয়েই থাকুক। তবে ও আমাকে একটু দূরে সরিয়ে দিলেই কেমন যেন আমার মাথা খারাপ হয় যায় রে। আজকে ও আমাকে রেগে বলেছে, আমাকে একা থাকতে দাও কিছুক্ষণ। যাও এখান থেকে। বিশ্বাস কর বাইরে এসে আমি কান্না করে ফেলছি। মেঘালয়ের সমস্ত নিয়ম ভেঙে গুড়িয়ে দিচ্ছে মেয়েটা। আমি আমার নিয়মের বাইরে গিয়ে যত সব কাণ্ড করে ফেলছি।”
সায়ান বললো, “এরকম ই থাকিস আজীবন। মিশুর জন্য এটা খুব জরুরি। মানুষ বড় হলে নাকি চেঞ্জ হয়ে যায়। তুই আবার ওই নিয়মের মধ্যে ঢুকে যাস না যেন। তাহলে তোকে নিয়ে যত প্রাউড ফিল করি, সব ভেস্তে যাবে আমাদের।”
মিশুর চোখ থেকে পানি পড়ছে। মেঘালয় আর ওর বন্ধু বান্ধবদের কথা শুনে আরো সুখ সুখ অনুভূত হচ্ছে। মেঘালয়ের মত একজনকে পাওয়াটা সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার। অনেক ভাগ্য করে ওকে পেয়েছে মিশু। এসব ভেবে ভেবে কান্না এসে যাচ্ছে। মেঘালয় ওর চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। আরামে চোখ বুজে রইলো ও।
কখন ঘুমিয়ে পড়েছে নিজেও জানেনা। ঘুম ভাংলে চোখ কচলে উঠে বসলো। মেঘালয় বললো, “ঘুম হলো মহারাণী’র? আর কিছুক্ষণ ঘুমাতে।”
মিশু মেঘালয়ের গলা জড়িয়ে ধরে বসে রইলো। ওর বুকে মাথা রেখে শুয়ে বললো, “আর ঘুম আসছে না।”
কথাটা বলা শেষ হতে না হতেই আবারো ঘুমিয়ে গেলো। মেঘালয় হাসলো। পাগলী একটা। এক হাতে ওকে ধরে রইলো মেঘালয়। হাতটা মিশুর কাঁধের উপর দিয়ে নিয়ে ওর চুলে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। মেঘালয় একটু নড়তেই মিশু রেগে বললো, “এত নড়াচড়া করো কেন?”
মেঘালয় হেসে ফেললো। প্রায় এক ঘন্টা যাবত ওর কোলে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে আর মেঘালয় ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। সে আবার মেঘালয়কেই ঝাড়ি মারে? হা হা হা।
হাসি চেপে গেলো মেঘালয়। পাগলিটা ঘুমাক আরাম করে। কাঁধটা একটু সোজা করে নিতে পারলে ভালো হতো তবুও আর একবার ও নড়লো না মেঘালয়। গাড়ির গান ও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। মিশু ঘুমাচ্ছে বলে সবাই নিরবতা পালন করছে। মেঘালয় সিটে হেলান দিয়ে মিশুকে জাপটে ধরে ঘুমিয়ে গেলো।
গাড়ি ব্রেক কষতেই ঘুম ভাংলো মেঘালয়ের। একটা দোকানের সামনে এসে গাড়ি দাড় করিয়েছে। মেঘালয় কারণ জিজ্ঞেস করতেই সায়ান বললো, “দোস্ত চা খেয়ে আসি। খাবি?”
– “ইচ্ছে তো করছে। মিশু ঘুমাচ্ছে,ওর ঘুম ভাঙাবো না।”
– “আচ্ছা এনে দিচ্ছি।”
ওরা তিনজন গাড়ি থেকে নেমে গেলো। মেঘালয় বসে রইলো মিশুকে ধরে। মিশু একদম ওর বুকে মাথা রেখে গলা ধরে বাচ্চাদের মতন গুটিসুটি মেরে ঘুমাচ্ছে। দোকানের বারান্দায় লাইট জ্বলছে, লাইটের আলো এসে পড়েছে মিশুর মুখে। ঘুমন্ত মুখটা দারুণ আদুরে দেখাচ্ছে। কিছু চুল এসে পড়েছে মুখের উপর, আরো বেশি মায়াবতী লাগছে মেয়েটাকে। মেঘালয় অপলক ভাবে চেয়ে রইলো।
মিশু নড়েচড়ে উঠে চোখ মেললো। হাই তুলে বললো কোথায় আমরা?
– “বুঝতে পারছি না। দোকানে তো কোনো সাইনবোর্ড ও নেই। ওরা আসলে জিজ্ঞেস করে নিবো। তবে ঢাকা ছেড়েছি অনেক আগেই ”
– “ওরা কি বিড়ি খেতে গেছে?”
মেঘালয় হেসে বললো, “হুম। একটু আধটু খায় আরকি।”
– “তুমি খাওনা কেন?”
– “আমি আগে মাঝেমাঝে খেতাম। এখন আর ছোঁবো না।”
– “কেন ছোঁবে না?”
– “বারে, নিকোটিন নিলে আয়ু কমে যায়। আমিতো আর তাড়াতাড়ি মরতে চাইনা। আমি মরে গেলে এই পাগলী টাকে ভালোবাসবে কে?”
– “তাহলে আগে খেয়েছো কেন?”
– “আগে কি জানতাম আমার এমন একটা লক্ষী বউ জুটবে? জানলে তো কখনোই খেতাম না।”
– “অনেক আয়ু কমিয়ে ফেলছো। ধরে মাইর দেই?”
– “আচ্ছা দাও।”
– “নাহ, এরকম মিষ্টি ছেলেটাকে মারতে ইচ্ছে হয়?”
বলেই মেঘালয়ের গলা জড়িয়ে ধরলো। মেঘালয় বললো, “আরো একটু ঘুমাও মিশমিশ।”
– “নাহ। এখন ঘুমালে অন্যায় হয়ে যাবে। আমি জার্নিতে কখনোই ঘুমাই না।”
– “সেজন্যই তো সেদিন ট্রেনে আমার বুকের উপর পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছিলে।”
মিশু অবাক হয়ে বললো, “সত্যি! ছি আমি কি নির্লজ্জ!”
– “অবশ্য ঘুমিয়েছো বলেই আরো পাগল হয়ে গেছি। তোমার ঘুমন্ত মুখে একটা মায়া আছে।”
পূর্ব এসে গাড়ির পাশে দাঁড়ালো। মেঘালয় জানালা খুলে দিলো। পূর্ব এক কাপ চা এগিয়ে দিয়ে বললো, “ভাবির ঘুম ভেঙেছে? ভাবি কি খাবেন আপনি?”
– “চুমু”
কথাটা বলেই জিহ্বায় কামড় দিলো মিশু। ও মোটেও এটা বলতে চায়নি। এমনকি এটা চিন্তাও করেনি। তবুও কেন যে এটাই বেড়িয়ে এলো মুখ দিয়ে! লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে। পূর্ব হেসে জানালা থেকে মুখ সরিয়ে নিলো। তারপর দোকানের দিকে চলে গেলো। মেঘালয় মিশুর দিকে তাকিয়ে বললো, “ওর সামনে এটা বলতে হলো?”
মিশু মুখ কাচুমাচু করে বুঝিয়ে বললো। ওর একদম ই অজান্তে মুখ ফস্কে বেড়িয়ে গেছে কথাটা। লজ্জায় জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইলো। মেঘালয় হাসছে মুখ টিপে। পাগলি একটা মেয়েকে নিয়ে কি যে করবে!
মিশু বললো, “একটু বাইরে নামতাম।”
– “এখানে নামা যাবেনা।”
– “কেন যাবেনা?”
– “শহরের বাইরে চলে এসেছি, একলা মেয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেই রিস্কি হয়ে যাবে। তার উপর আমরা চারজন ই ছেলে।”
– “তাহলে তাড়াতাড়ি গাড়ি ছাড়তে বলো।”
মেঘালয় জানালা দিয়ে মাথা বাড়িয়ে ওদেরকে ডাকলো। সায়ান একটা পলিথিন ব্যাগ ভর্তি খাবার এনে দিলো মেঘালয়ের হাতে। মিশু চেয়ে দেখে সেটার ভেতর দুটো চিপস,কয়েকটা চকোলেট, দই,বিস্কুট, কেক আরো কি কি যেন। ও অবাক হয়ে বললো, “এগুলা কে খাবে?”
সায়ান বললো, “তোমার জন্য।”
– “আমি এত্তগুলা খাবো? আমি কি ছোট মানুষ? এগুলা তো ছোট মানুষ খায়।”
সায়ান হেসে ফেললো। ব্যাগটা দিয়ে গাড়ির ভেতর চেপে বসলো। এবার ও মেঘালয়ের পাশেই বসেছে। পূর্ব ও আরাফ এসে সামনে উঠে পড়লো। এবার গাড়ি ড্রাইফ করে পূর্ব। পাশের সিটে আরাফ বসেছে। মিশু ব্যাগটা নিয়ে ইতিমধ্যে খাওয়া শুরু করে দিয়েছে। ও মেঘালয়কে বললো, “তোমরা সবাই এত্ত ভালো কেন!”
মেঘালয় উত্তরে হাসলো। মিশু একটার পর একটা খেতে শুরু করেছে। মেঘালয় ও চিপস নিচ্ছে একটু পরপর। সায়ান মেঘালয়কে বললো, “দোস্ত গান ধরছিস না কেন?”
মিশুও সাথে যোগ দিয়ে সায়ানকে গান গাইতে বললো। মিশুর কথা শুনে মেঘালয় গান গাইতে আরম্ভ করলো। সাথে ওর বন্ধুরাও যোগ দিলো,
“যার সনে যার ভালোবাসা..
যার সনে যার ভালোবাসা,
তারে ছাড়া প্রাণ বাঁচেনা…
পিরিতি এই জগতে জাতি কূলের ধার ধারেনা… পিরিতি..ই..ই
পিরিতি এই জগতে জাতি কূলের ধার ধারেনা… পিরিতি..ই..ই
এক জাইত্যা লতা আছে বাইতে বাইতে উঠে গাছে,
গাছ মরিলে লতা মরে, তবু লতায় গাছ ছাড়েনা…
পিরিতি এই জগতে জাতি কূলের ধার ধারেনা…”
গান শেষ করতেই মিশু হাত তালি দিয়ে বললো, “খুব সুন্দর করে গেয়েছো।”
মেঘালয় বললো, “তোমার জন্য ছিলো। আমি হচ্ছি সেই লতা,আর তুমি হচ্ছো গাছ। গাছ মরলে লতাও মরবে তবুও লতা গাছ ছাড়বে না।”
মিশু হেসে উঠলো- “গানটা সত্যি সুন্দর ছিলো! আরেকটা গান শুনাবা?
মেঘালয় আবারো গান ধরলো। একটার পর একটা গান চলতেই লাগলো। চারবন্ধু মিলে একসাথে গাইছে। মিশু জানালায় মাথা দিয়ে বাইরে চেয়ে আছে আর গান শুনছে। মেঘালয়ের হাতের মুঠোয় ওর হাত। মিশুর যে কি পরিমাণ আনন্দ হচ্ছে তা ভাষায় প্রকাশ করা হয়ত সম্ভব নয়। ও বারবার খুশিতে মেঘালয়কে জাপটে ধরছে। মেঘালয় ওর উচ্ছ্বসিত মুখ দেখে হাসছে।
ভৈরবে এসে গাড়ি থামাল ওরা। রাত আড়াইটা বাজে। রেস্টুরেন্ট এ ফ্রেশ হওয়ার জন্য ঢুকলো। ফ্রেশ হয়ে এসে একটা টেবিলে বসে গেলো নাস্তা করতে। মিশুর একটুও খিদে পায়নি। তবুও মেঘালয় জোর করে খাওয়ালো ওকে। খাওয়া শেষ করে আবারো গাড়ি স্টার্ট দিলো। এবার সায়ান ড্রাইভ করছে। আরাফ মেঘালয়ের পাশে এসে বসে সিটে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে, পূর্ব সামনের সিটে বসেই ঘুম। সায়ান ড্রাইভ করছে গান ছেড়ে দিয়ে।
মিশু মেঘালয়কে বললো, “আমি একটা কথা বলি তুমি কি রাগ করবা?”
– “না, বলো।”
মিশু বললো, “তুমি এখন একটু ঘুমিয়ে নাও। একটু ঘুম দরকার না বলো? আমি বরং সামনের সিটে গিয়ে সায়ান ভাইয়ার সাথে বসে গল্প করি আর রাস্তা দেখতে দেখতে যাই? আমার বাইরেটা দেখতে খুব ভালো লাগে। এখানে বসে তো ভালোমতো দেখাই যায়না। আর আমি কথা বলতে থাকলে সায়ান ভাইয়ার ও ঘুম আসবে না। সবাই ঘুমাচ্ছো, সে একা একা গাড়ি চালাচ্ছে।”
মেঘালয় বললো, “আচ্ছা ঠিকাছে, সামনে গিয়ে বসো।”
পূর্ব পিছনে এসে মিশুর সিটে বসলো। আর মিশু ড্রাইভারের পাশে অর্থাৎ সায়ানের পাশে বসে ননস্টপ রেডিওর মত কথা বলতে শুরু করলো। মেঘালয় হাসছে ওর কথা শুনে। এভাবে বকবক করলে সায়ানের কান ঝালাপালা হয়ে যাবে। বেচারার ভূলেও ঘুম আসবে না। সায়ান শুধু মাথা ঝাঁকাচ্ছে আর গল্পের সাথে তাল মিলাচ্ছে। মেঘালয় সিটে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো। বাকিরা ঘুমিয়ে পড়তেই মিশু সায়ানের সাথে বকবকানি চালিয়ে যেতে লাগলো।
হোটেলে এসে পৌছল সকাল ছয়টার একটু আগেই। মিশু বাইরে নেমে দাঁড়ালো। বাকিদের ঘুম থেকে ডেকে তোলা হলো। মেঘালয় নেমে এসে মিশুকে জিজ্ঞেস করলো, “জার্নি কেমন লাগলো?”
– “খুব ভালো। সামনের সিটে বসতে দারুণ মজা তো। সবকিছু সুন্দর দেখা যায়! আমিতো আর একটুও ঘুমাই নি। তোমার ঘুম হলো?”
মেঘালয় মিশুর কানেকানে বললো, “স্বপ্নে বিভোর ছিলাম। ‘মিশু রাজ্যের রাজকন্যা’ স্বপ্নে এসে প্রেম বুনছিলো।”
– “ওহ আচ্ছা।”
মিশু মাথা ঝাঁকিয়ে হাসতে লাগলো। ওরা হোটেলের ভেতরে ঢুকে লিফটের কাছে চলে এলো। লিফটে পূর্বরা তিনজন সহ আরো কয়েকজন উঠলো। মেঘালয় মিশুকে নিয়ে বাইরে দাঁড়িয়ে রইলো। পরেরবার মিশুকে নিয়ে লিফটে উঠলো মেঘালয়। এবার শুধু ওরাই দুজন ভেতরে। মেঘালয় একটানে মিশুকে বুকে টেনে নিলো। শক্ত করে এক হাতে ওর মাথাটা চেপে ধরে আলতো করে ঠোঁটে ঠোঁট রাখলো। মিশুর পেটে হাত রেখে আস্তে আস্তে চাপ দিতে দিতে ওকে উপরে তুলে গভীর আবেশে চুমু খেতে লাগলো।
লিফট থেকে বের হয়ে রিসিপশনিস্টের কাছে এসে মিশু লজ্জায় চোখ মেলতেই পারছিলো না। রুমের চাবি নিয়েই ওরা একসাথে রুমে চলে এলো। দুটো রুম পাশাপাশি। সায়ান, পূর্ব ও আরাফ একরুমে ঢুকে গেলো। মেঘালয় বলে দিলো “আট টায় দরজায় নক করবি।”
রুমে ঢুকে দরজা লক করেই মিশুকে কোলে তুলে এনে বিছানায় ফেলে দিলো মেঘালয়। মিশু লজ্জায় নীল বর্ণ ধারণ করলো। ও দুহাতে মুখ ঢেকে আঙুলের ফাঁক দিয়ে মেঘালয়কে দেখতে লাগলো। মেঘালয় লাগেজ খুলে জামাকাপড় বের করে নিয়ে বললো, “ওঠো, এখন কোনো আদর নয়। গোসল করে রেডি হয়ে নিবে আসো।”
মিশু লজ্জা পেয়ে বিছানা থেকে নামতে গেলো, সেই মুহুর্তে মেঘালয় আচমকা ঝাঁপিয়ে পড়লো ওর উপর। একে অপরের মাঝে মিশে যেতে লাগলো। নরম তুলোর বিছানায় তলিয়ে গেলো দুজনে।
চলবে..