#অনুভূতির_সুপ্ত_কোণে
#কায়ানাত_আফরিন(মাইশা_
পর্ব:১০
.
মেহেরের প্রশ্নকে উপেক্ষা করে আদ্রাফ মেহেরের হাত ধরে সরাসরি ঘরের ভেতর প্রবেশ করে। আদ্রাফের এসব কাজ মেহেরের কেমন যেন মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে। এদিকে পূবাও যেন হতভম্ব হয়ে গিয়েছে। আদ্রাফকে সে বলে ওঠে……..
.
—-আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া। আপনি ! এতরাতে?
.
—-ওয়ালাইকুম আসসালাম। কি করবো বলো , বউকে না দেখলে আমার আবার ঘুম আসে না।
মিটমিটিয়ে হাসে পূবা। আবার মেহেরের তো যেন বুকটা ধুকধুক করছে। না বলে মেহের এবাড়িতে এসেছে আর আদ্রাফ কিছু বলবে না তা অসম্ভব। আদ্রাফের শান্তশিষ্টতার চরম প্রমাণ এমনিতেও আজ দুপুরে ভালোমতো পেয়ে গেছে। আদ্রাফ পূবার সাথে কথা শেষ করে মেহেরের হাত টেনে নিয়ে যায় মেহেরের রুমে।
.
দরজা সশব্দে লাগাতেই মেহেরের এবার মনে হচ্ছে যেকোনো সময়ই যেন সে হার্ট আ্যটার্ক করে মরে যায়। আদ্রাফ তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিয়ে এগিয়ে আসছে মেহেরের দিকে। আদ্রাফকে এভাবে এগোতে দেখে মেহের এক পা এক পা করে পিছিয়ে যাচ্ছে। মনে শুধু একটা আতঙ্কই জেগে ওঠছে…….রাগের বশে থাপ্পড়-টাপ্পড় মারবে নাকি।
.
একসময় মেহেরের পিঠ পেছনে বুকশেলফের সাথে ঠেকে গেলেই থেমে যায় সে। আদ্রাফ একটা নিরাপদ দুরত্ব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ওর সামনে। গহীন কন্ঠস্বরে সে বলে ওঠে……..
.
—-এখানে কি করছো?
.
—-মমমানে?
.
—-আমি বলছি তুমি এখানে কি করছো? আমার জানামতে এইসময় তো তোমার আমার রুমে থাকার কথা , তো?
.
.
আদ্রাফের প্রশ্নগুলো মেহেরের কাছে জটিল অঙ্কের মতো মনে হচ্ছে। ঠিক কি উত্তর দেবে এটা ভেবে পাচ্ছে না। তবুও একবুক সাহস নিয়ে সে বলে যে……….
.
—-আমার বাবার বাড়ি এটা। আমি যখন খুশি তখন আসতে পারবো।
.
মেহেরকে কথা শেষ করতে না দিয়েই ওর কাছে গিয়ে হাতদুটো শেলফের সাথে চেপে ধরে সে। মেহেরের সাহস যেন এবার উড়ে গিয়েছে স্বচ্ছ পদধূলির মতো। আদ্রাফের ওই গহীন কালো চোখে রয়েছে অজস্র রাগ। চিল্লিয়ে সে বলে ওঠে………..
.
—-তুমি যখন খুশি তখন আসতে পারবে না মেহু ! আর সাহস কি করে হলো তোমার without my permission তুমি এখানে আসছো? আমি কিছু বলিনা বলে উড়া শুরু করেছো ?
.
এতটুকু বলেই মেহেরের কাছ থেকে দূরে সরে আসে আদ্রাফ। কপালের সামনে পড়ে থাকা চুলগুলো একহাত দিয়ে পেছনে ফেলে অনবরত নিঃশ্বাস ফেলতে থাকে। আর মেহের তো মোমের ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে । আদ্রাফ আবারো বলে ওঠে………
.
—-ফোন কোথায় তোমার?
.
—-মেহের নিশ্চুপ
.
—-ফোন কোথায় তোমার?
.
—-বব…বন্ধ।
.
—-মোবাইল কি বন্ধ রাখার জিনিস? চেক করে দেখো তো কতগুলা কল দিয়েছি but not reachable………….আমার অবস্থা খারাপ হয়ে গিয়েছিলো। বাড়িতেও আম্মুকে ছাড়া কাউকে বলোনি। ১২:০০ টার সময় যখন বাসায় পৌঁছে দেখি তুমি নাই আমার অবস্থা কি হয়েছিলো জানো। জামাকাপড় না পাল্টেই আমি এখানে এসে পড়েছি। আর তুমি? পায়ের ওপর পা তুলে মুভি দেখতে ব্যস্ত।
.
.
আদ্রাফের কথাগুলো মেহেরকে প্রতিবারই ভাবনায় ফেলে দেয়। এই প্রথম একজন মানুষের সাথে কথায় পেরে উঠবে না সে ; কখনোই পারবে না এটা মনে স্থির করে নিয়েছে সে।
.
—-তো এবার বলো। তোমায় কি শাস্তি দেবো?
.
আদ্রাফের এ কথা শুনে গায়ে যেন হিম ধরে গিয়েছে মেহেরের।আদ্রাফের ভ্রু নাচানোর দৃশ্য দেখে যেন আরও ভয়ের বিষয় মনে হচ্ছে মেহেরের কাছে। আমতা আমতা করে সে বলে ওঠে…….
.
—শ…শাস্তি? কিসের শাস্তি ? কোন শাস্তি? কেন শাস্তি?
.
এত প্রশ্ন শুনে আদ্রাফের ঠোঁটে বাকা হাসির সঞ্চার হয়।মেহের কাছে গিয়ে দুপাশে হাত রেখে গভীর দৃষ্টিতে দেখতে থাকে মেহেরের মায়াবী মুখটি।আদ্রাফ বলে ওঠে………..
.
—আমার না বলে এখানে আসার শাস্তি।
.
—-এ্যাহ ! তুমি বললেই হইলো। আমিও কিছু বলছিনা বলে মনে করোনা যে আমি আর সেই দস্যুরাণী থেকে ভিজে বিড়াল হয়ে গেছি। আমার যেখানে মনচায় সেখানে যাবো। তবুও তোমার কাছে আর যাচ্ছিনা হুহ।😤
.
—-ভেবে বলছো তো?
.
দাঁতে দাঁত চেপে মেহেরের কাছে এই প্রশ্নটি ছুড়ে মারে আদ্রাফ। মেহের মনে মনে একটু ভয় পেলেও তা প্রকাশ করেনা। প্রতিউত্তরে সে বলে ওঠে……
.
—-অবশ্যই ভেবে বলেছি……….আর ততুমি প্লিজ এখান যাও।
.
আদ্রাফ কোনো উত্তর না দিয়ে পাশের ফুলদানিটা উঠিয়ে ঠাস করে ফ্লোরে ছুড়ে মারে। নিজের চোখের দৃষ্টি স্থির করে রেখেছে সে মেহেরের চোখের দিকে। মেহেরও এতে একটু ভয় পেয়ে যায়। আদ্রাফের চোখের ভাষা সে বুঝে উঠতে পারছে না। কেমন যেন অনুভূতিশূণ্য হয়ে আছে আদ্রাফের চোখগুলো।
.
সাধারনত মানুষের অঙ্গভঙ্গি দেখে অনুমান করা যায় যে সে মানুষ মনে মনে কি ভাবছে। কিন্ত আদ্রাফের ক্ষেত্রে তা একেবারেই ভিন্ন। আদ্রাফ প্রকাশ করে এক বিষয় আর মনে আবদ্ধ রাখে অন্য বিষয় যা যেকোনো মানুষকেই বিভ্রান্তে ফেলতে পারে।
.
আদ্রাফ এবার বলে ওঠে……..
.
—ওকে ফাইন ! থাকো তুমি তোমার মতো।
.
মেহেরকে আর কোনো সুযোগ না দিয়ে আদ্রাফ চলে যায়। মেহের এখনও সেভাবেই দাঁড়িয়ে আছে। আদ্রাফের এভাবে চলে যাওয়াতে অজান্তেই ওর বেশ খারাপ লেগেছে।
.
.
.
.
রাতের গভীরতার সাথে সাথে মানুষের জমজমাট বাড়তে থাকে বিভিন্ন নাইট ক্লাবে। এমনি একটা ক্লাবে একের পর এক পেগ নিয়ে যাচ্ছে শাওন। হুইস্কির টেবিলটার সামনে অগোছালোভাবে বসে আছে সে। আশেপাশে অনেক যুবক-যুবতিরাই নিজেদের মধ্যে ডান্স করতে মগ্ন। আবার কেউ কেউ তো……….
.
হুইস্কির নেশাটা একেবারে মাথায় চড়ে বসেছে শাওনের।মেহের মেয়েটিকে শাওনের খুবই পরিচিত মনে হচ্ছে। যেন মনে হচ্ছে তার তিক্ত অতীতের সাথে কোনো যোগসূত্র আছে মেয়েটির। বারবার ওর চোখের সামনে এসে পড়ছে মেহের নামের ওই মেয়েটার থাপ্পড় দেওয়াটা।আদ্রাফ ওর কলার চেপে যেই কথাগুলো বলেছিলো সেগুলো মনে পড়তেই হুইস্কির গ্লাসটি চাপ দিয়ে ভেঙ্গে ফেলে সে। হাতের ভাঁজ দিয়ে চুয়ে চুয়ে রক্ত পড়ছে।
.
শাওনের ঠোঁটে এক বাকা হাসি ফুটে ওঠে। আনমনে সে বলে ওঠে………..
.
—মন তো চাচ্ছে এখনই দুজনকে শেষ করে দেই। কিন্ত এত সহজে ছাড়বো না তোমাদের। তিলে তিলে শেষ করবো দুজনকে।
.
হঠাৎ কোথা থেকে এক সুন্দরী মেয়ে হুট করে বসে পড়ে শাওনের কোলে। অন্য সবার কাছে বিষয়টি বিব্রতকর মনে হলেও নাইট ক্লাবে এ দৃশ্য খুবই স্বামাবিক।মেয়েটি মিহি স্বরে বলে ওঠে………
.
—-হ্যালো বেবি……..তোমার মতো এত সুন্দর ছেলে একা বসে আছে এটা কি ভাবা যায়? সঙ্গ দেবো নাকি…….(কানের কাছে গিয়ে) একরাতের জন্য?
.
শাওন সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে আরও একটা পেগ নিয়ে বলে ওঠে……
.
—-Just stay away from me…….
.
মেয়েটি এবার আস্তে করে শার্টের বোতাম খুলতে থাকে শাওনের। শাওন মেয়েটির একহাত চাপা দিয়ে আবারো বলে ওঠে…..
.
—-I said just stay away from me……
.
এতটুকু বলেই মেয়েটাকে ধাক্কাদিয়ে সরিয়ে দেয় শাওন। মেয়ে বিষয়টিকে শাওন জাস্ট ঘৃণা করে। রাগে মুখ অনেকটাই লাল হয়ে গিয়েছে। এদিকে বারের সবাই অদ্ভুদভাবে তাকিয়ে আছে দুজনের দিকে। মেয়েটিও অপমানের কারনে নীরবে চলে যায় সেখান থেকে। শাওনের মনে শুধু একটাই আগুন ঝরছে…..
.
—-মেহের !
.
.
.
.
~চলবে