অনুভূতির সুপ্ত কোণে পর্ব-১৮

0
2374

#অনুভূতির_সুপ্ত_কোণে🍂
#কায়ানাত_আফরিন (মাইশা)
পর্ব : ১৮
.
বিদীর্ন এই খোলা প‍্রান্তরে শাওন নিশার কাধে মাথা দিয়ে রাখাতে নিশার মনে খেলা করছে কিছু চাঞ্চল্যকর অনুভূতি।শাওনের উষ্ণ নিঃশ্বাস আর হৃদয়ের কম্পন স্পষ্টভাবে সে গুণতে পারছে। শাওন নির্বিকার ভঙ্গিমায় নিশার এক বাহু জড়িয়ে কিছু একটা ভাবতে মগ্ন। কিছুটা আশা নিয়ে সে শাওনকে প্রশ্ন করে…..
.
—-শাওন কিছু বলছিস না কেন? মেহের তোর বোন হয় তুই এত নিশ্চিত কিভাবে?
.
—-DNA test করার পর।
ভ্রু কুচকে ফেলে নিশা। শাওনের কথাটা সে বুঝেছে কিন্ত ঠিক মানতে পারছে না। শাওন চোখ বন্ধ করে মাথা এলিয়ে রাখাতে নিশা কিছু বলতেও পারছে না। খানিকাটা বিরক্তি চেপেই সে বলে……..
.
—–এমনি চুপ করে আছিস কেন? আর DNA test মানে? তুই DNA test কবে করলি?
.
—–সেদিন হসপিটালে। আমার ব্লাড নেওয়ার সময়ই যখন আমার test করানো হলো তখনই আমি জানতে পারি। দুজনের সেম report দেখে ডাক্তারও বেশ অবাক হয়েছিলো।পরে রাহাতকে দিয়ে মেহেরের অতীত সম্পর্কে খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করেছি অনেক। বাট ফলাফল জিরো। তবে এতটুকু জানতে পেরেছি যে মেহেরকে এতিমখানা থেকে নিয়ে আসা হয়েছে যা ওর বর্মান বাবা-মা ছাড়া কেউই জানে নি।
.
—-তুই জানলি কিভাবে?
.
নিশার প্রশ্ন শুনে শাওন নিশার কাধঁ থেকে মাথা উঠিয়ে সশব্দে হেসে ওঠে। নিশা হৃদকম্পন যেন এবার তড়িৎগতিতে ছুটতে শুরু করলো। নির্জন রাতের খোলা প্রান্তরে চাঁদের মায়াবী আলোতে সে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে শাওনের স্ফটিক হাসি। শাওনের বাকা হাসিটা যতটাই না সবার মনে ত্রাসের রাজত্ব করে তেমনি সশব্দে বেরিয়ে আসা এই হাসিটাও যেন ফুটিয়ে তোলে এক অভূতপূর্ব সৌন্দর্য।
.
—–তোর কি মনে হয় নিশা ; শাওন চৌধুরি আমি। আমার ভয়ে সবার কাপাকাপি শুরু হয়ে যায় আর মেহেরের ওই দত্তক বাবা-মা তো আমার কাছে সামান্য কপাটের মতো। আমার Gun বের করতেই গলগল করে সব উপচে দিয়েছে।
.
নিশা নীরব থাকে। শাওনের এসব অভদ্র কাজকর্মগুলো নিশার কাছে অপছন্দ হলেও মুখ ফুটে বলার মতো দুঃসাহস ওর নেই।
.
—–মেহের কি এই সত্যি জানে?
.
—–না । জানে না। আর কখনও জানতেও পারবে না।
.
হাসির তালে কথাটা শাওন উড়িয়ে দিলেও নিশা স্পষ্ট অনুভব করতে পারছে শাওনের মনের চাপা আর্তনাদ।নিশা জানে ; শাওন কখনই ওর কষ্টা মুখ ফুটে কাউকে বলবে না শুধু হিংস্রতার রূপ নিয়ে আড়াল করে রাখবে তার কষ্টগুলো।নিশা আবারও বললো…….
.
—–কেন জানতে পারবে না?
.
—–আমার so called dad হায়াৎ চৌধুরির জন্য।
.
কিঞ্চিত অবাকের রেশ দেখা গিয়েছে নিশার মধ্যে। কেননা শাওনের তাচ্ছিল্যর হাসিটা নিমিষেই যেন রূপ নিয়েছে এক ভয়াবহ রাগে। এই হায়াৎ চৌধুরিকে বরাবরই ঘৃণ্য বস্তু মনে হয় শাওনের কাছে। আজ তার জন্যই তো শাওনের জীবনটা এলোমেলো হয়ে গেলো।
.
——হায়াৎ চৌধুরি কি করেছে?
.
হাতে থাকা বিয়ারের ক্যানটা পানিতে ছুঁড়ে ফেলে দেয় শাওন। দাঁতে দাঁত চেপে বলে ওঠে…….
.
——রাইতা যে এখনও বেঁচে আছে এটা জানলেই সে তা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করবে রাইতা আই মিন মেহেরকে খুন করে……..এই ব্যাপারে I am definitely sure………..সামনে এমনিতেও তার ইলেকশন। এখন মেহেরকে না মারলে তো তার কালোকাজগুলো ফাঁস হয়ে যাবে। আর আমি চাইনা যে রাইতা ফিরে আসুক। ওর পরিচয় এখন মেহের আদ্রাফ এহসান। সেই পরিচয়েই ও আজীবন থাকুক। আমার মতো অনিশ্চিত জীবনের মুখে আমি কখনোই ওকে ফেলতে চাইবো না।
এতটুকু বলেই নিজের কন্ঠস্বর মিলিয়ে ফেলে শাওন। আজও সিগারেটের ধূয়ো উড়োতে মন চাচ্ছে এই নিশিআকাশে। তবে এখন সেই পরিস্থিতিটা আর নেই। এর কারন হয়তো বা নিশা। কেননা নিশার কাছে যেই বিষয়টা দৃষ্টিকটু লাগে শাওন সবসময় চেষ্টা করে তা নিশার সামনে না করতে।
.
—–তুই এতো ভালো কেন রে?
.
নিশার স্বতস্ফূর্ত প্রশ্নে শাওন নির্বিকার। তবুও বিবেকের সাথে তালগোল পাকিয়ে কঠোর দৃষ্টিতে তাকায় নিশার দিকে।
,
.
—-কে বলেছে আমি ভালো? আমি খারাপ ! অনেক খারাপ ! চাঁদাবাজি করি , টিজ করি, ragging করি……….মানুষ সমাজ না বুজে যেখানে সেখানে ড্রিংক-পার্টি-ক্লাব-সিগারেট এগুলো তো আছেই।
.
—–এতেই কি মানুষ খারাপ হয়ে যায়?
.
—–শাওন নিশ্চুপ।
.
—–থাক ! এসব কথা আমি আর বলবো না। আমি শুধু একটা কথাই জিজ্ঞেস করবো মেহের কি তবে কখনই ওর সত্যি জানতে পারবে না?
.
—–কখনোই না।
।শাওন আর নিশা দুজনের মধ্যেই এবার পিনপন নীরবতা। একজনের হয়তো চাপা কষ্টের কারনে আর অন্য একজনের হয়তো নিজের আবেগটাকে উজাড় না করে দেওয়ার কারনে। মনেমনে নিশা বলে ওঠে……….
.
—–আমি আজীবন তোর এই কষ্টের ভাগীদার হতে চাই ; শাওন !
.
.
.
.
———————————
.
দেখতে দেখতেই সময় পার হয়ে গিয়েছে। আদ্রাফ আর তনু বেগমের সযত্নে মেহের এখন পুরোপুরি সুস্থ। তাই বিগত দুদিন ধরেই আদ্রাফ অফিসের চাপে ভালোমতো সময় দিতে পারছে না মেহেরকে। মেহেরের চোখ খোলার আগেই সে চলে যায় ; আর রাতেও ফিরে অত্যন্ত দেরি করে।
মেহের মনেমনে একটু বিরক্ত হলেও তা প্রকাশ করে না। তারও দিন কাটে ভার্সিটি টু বাসা আর টিভি দেখে।
.
এখন রাত প্রায় দেড়টা। মেহের মুখ ফুলিয়ে খাটে বসে ফেসবুকের নিউজফিড স্ক্রল করছে । আর আদ্রাফ খাটের অন্যপাশে নিজের পা জোড়া ক্রস করে মেলে তার উপর নিজের ট্যাবে বিজনেস গ্রাফ চেক করছে। মেহেরে তো এবার বিরক্তির চরম সীমান্তে। এত সুন্দর একটা বউ পাশে বসে থাকতে আদ্রাফ এমনভাবে ট্যাব দেখছে যেন ওটাই মনে হয় ওর বউ। মেহেরের তো এবার ওই ট্যাবকে দেখে প্রচুর পরিমাণে হিংসে হচ্ছে।
.
রাগের বশে ফেসবুকের একটা নিউজ দেখে জোরে জোরে বলে ওঠে……..
.
” স্বামী স্ত্রীকে সময় দেয় না দেখে স্ত্রীর হাতে স্বামীর নির্মম মৃত্যু😤”
.
আদ্রাফ চোখ বাকিয়ে তাকায় মেহেরে দিকে। মেহের রাগে ফোঁস ফোঁস করে চলছে। আদ্রাফ মনে মনে ভাবে যে……….”এই মেয়ে কি ওর খুনের পরিকল্পনায় মেতে আছে?’😒’
.
.
.
.
~চলবে
ভুলক্রুটি ক্ষমাসুলভ চোখে দেখবেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে