অনুভূতির সুপ্ত কোণে পর্ব-১৭

0
2219

#অনুভূতির_সুপ্ত_কোণে🍂
#কায়ানাত_আফরিন (মাইশা)
পর্ব: ১৭
.
সময়টা এখন সন্ধ্যা। আদ্রাফের কোলে বসে তার বুকে মাথা রেখে মেহের গুটিশুটি মেরে বসে আছে। শার্টের উপরের দুটি বোতাম খুলে বুকে আকিবুকি করতে মগ্ন। আর আদ্রাফ? বরাবরের মতোই উপভোগ করে যাচ্ছে প্রকৃতি তার মেহুর সাথে। যদিও মেহের দৃষ্টিপাত এখন সেদিকে নেই। সে তো আনমনে নিজের আঙ্গুল দিয়ে আদ্রাফের বুকে আকিবুকি করতে মগ্ন।
.
—-আদ্রাফ ? Next time থেকে তোমার জন্য গ্রে শার্ট পড়া নিষিদ্ধ। আর যেকোনো শার্টই পড়ো না কেন ; ভুলেও হাতা গুটিয়ে রাখবে না।
.
—-কেন?
.
—–উহ ! এমন ভাব করছে যেন কিছুই বুঝে না। এই ? তুমি জানোনা তোমাকে গ্রে শার্ট পড়লে একেবারে চার্মিং বয় মনে হয় ? আর হাতা গুটিয়ে রাখলে তো উফফফ! এ ব্যাপারে আর নাহয় নাই বললাম। আর ওই শয়তান বদমাইশ অসভ্য মেয়েগুলার কত্ত বড় সাহস ! এই মেহেরের জামাইয়ের দিকে নজর দেয়?
.
আদ্রাফ নির্বিকার। মেহেরের কথা শুনে মিটমিটিয়ে হেসে ওঠে সে। মেহের এবার ক্রুব্ধ হয়ে বলে ওঠে……….
.
——আমার কথা শুনে তোমার হাসি পাচ্ছে তাই না?তার মানে ওই শয়তান বদমাইশ অসভ্য মেয়েগুলা তোমায় চোখ দিয়ে গিলে ফেলেছিলো ওইটা ভালোলেগেছে? তাহলে থাকো তোমার হাসি নিয়ে। আমি গেলাম।
.
একথা বলে মেহের রেগে গজগজ করে উঠতে নিলে আদ্রাফ খুব কৌশলের সাথে মেহেরের কোমড় পেচিয়ে নিজর সাথে মিশিয়ে নেয়। মেহের সাথে সাথেই যেন ফ্রীজড হয়ে গিয়েছে। কেননা আদ্রাফ খুব গভীরভাবেই মেহেরের গলায় ডুবিয়ে রেখেছে নিজের ওষ্ঠ্যদ্বয়। মেহের এবার যেন হ্যাং হয়ে আছে। তার এতক্ষণের পুষিয়ে রাখা তেজ নিমিষেই পানি হয়ে গেল তাও আবার লাজরাঙা রঙে। আবেশে নিজের চোখ বুজে ফেলে খুব জোড়ালোভাবে আকড়ে ধরে নিজের পরনে কূর্তিটি। আদ্রাফের সেদিকে ধ্যান নেই। তার একহাত মেহেরের কোমড়ে আর আরেক হাত বিচরণ করে চলছে মেহেরের পেটের কাছে। মেহেরের তেজি কন্ঠ অনেকটাই এতে নুইয়ে পড়ে। মিহি কন্ঠে আদ্রাফের টিশার্ট খামচে ধরে বলে ওঠে…………
.
——-আ……আদ্রঅফ ? কককি করছো?
.
আদ্রাফ যেন মেহেরের প্রশ্নটি খেয়াল করেনি। মেহেরের গলায় নিজের স্পর্শ দিতে দিতে ধীরে ধীরে উপরে উঠে এগিয়ে আসে ওর অধরের কাছে। মেহেরের নিঃশ্বাস এবার ভারী হয়ে এসেছে। বুকে চলছে উথাল-পাতাল ঝড়। আদ্রাফের প্রতিটা মূভমেন্টই তাকে দুর্বল করে দেয় সেদিকে আদ্রাফের হুট করে কাছে আসাটাই যেন মেহেরের মাথা ঘুরপাক বাধিয়ে দিতে। তারও মন চাচ্ছে আদ্রাফকে নিজের সবটা উজাড় করে ভালোবাসতে।
.
আদ্রাফ এবার ফিসফিসিয়ে বলে ওঠে………..
.
——আমার থেকে দূরে যাওয়ার কথা বললে একেবারে বেধে রাখবো নিজের সাথে। আর আমার সবটাজুড়েই শুধুমাত্র তুমি। তাহলে অন্যমেয়ে যদি আমায় চোখ দিয়ে গিলেও ফেলে তাহলে কি তোমার জায়গা নিতে পারবে?আর তোমার মনে আমার পার্মানেন্ট জায়গা করার জন্য এতটুকু আদরের তো প্রয়োজনই ছিলো। আদ্রাফ শুধু মেহেরের আর মেহের শুধু আদ্রাফের। বুঝেছো?
.
আদ্রাফের ফিসফিসিয়ে বলে ওঠা শেষের কথাটুকু যেন মেহেরের বুকে একেবারেই গেঁথে গিয়েছে। এই ছেলেটার কথায় অন্যরকম একটা নেশা বা মাদকতা আছে যা সহজেই কাটিয়ে ওঠা যায় না। মেহেরও তা পারছে না।
——এখন নিচে চলো মেহু। তোমাকে এখন হালকা কিছু খেয়ে ওষুধ খেতে হবে।
.
——না খেলে হবে না?
.
আদ্রাফের বুকে আবার মাথা রেখে আদুরে গলায় মেহের আদ্রাফকে প্রশ্ন করে।
.
—– উহু ! মোটেও কিন্ত না । ভুলে গিয়েছো তুমি আমার শর্ত?
.
আদ্রাফ চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই মেহের চোখ ছোট ছোট করে নেয়। এখন যতই আদুরে গলায় কথা বলুক না কেন ; এই ছেলে সহজে গলবে না।
.
.
.
.
—————
মোটামোটি সন্ধ্যা পার হয়ে এখন চারিদিকে অন্ধকারের লীলাখেলা। তবে নিশা সেসব কিছুকে পাত্তা না দিয়ে নেটফ্লিক্সে একটা হলিউড মুভি দেখতে ব্যস্ত। একপাশে ধুলোবালিতে আচ্ছন্ন বই খাতা , খাটের পাশের ছোট্ট টেবিলে মোবাইল , ল্যাপটপ আর চার্জার অগোছালো করে রাখা আর ওয়াড্রবের দিকে তো তাকানোই যাচ্ছে না। হঠাৎ ফোনের রিং বেজে উঠতেই নিশা দেখে স্ক্রিনে দেখে শাওনের নাম্বার ভেসে উঠছে। একটু বললে ভুল হবে নিশা এতে অনেকটাই অবাক। তড়িঘড়ি করে ফোন রিসিভ করে ।
.
—–হ্যালো শাওন?
.
—–ফটাফট রেডি হয়ে বাইরে আয়। আমি নিচে দাঁড়িয়ে আছি।
.
একথা বলেই শাওন ফোন কেটে দেয়। তবে দ্বিধায় পড়ে গিয়েছে নিশা। এখন হুট করে শাওন কোথাই বা ওকে বাইরে আসতে বলছে এটা ভেবে সে কূল পাচ্ছে না। ব্যাচেলর থাকে বলে রাত বিরাতে বের হওয়া নিয়ে নিশার মধ্যে কোনো ঝামেলা নেই। তাই তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিচে চলে যায় সে।
.
শাওন বাইকে বসে অপেক্ষা করছে নিশার জন্য। নিশাকে দেখেই সে বাইকে বসে। ইশারায় নিশাকে বলে পেছনের সিটে বসতে। অপ্রস্তুত হয়ে যায় নিশা। কারন শাওন এই প্রথম তাকে এভাবে অফার করলো। বিব্রত হয়ে সে শাওনকে প্রশ্ন করে……….
.
—-রাতুল, রাহাত, শোভাও কি আসবে?
.
—-না।
.
—-কেন?
.
—আমরা দুজন কি কোথাও একা যেতে পারি না?
.
নিশা নিশ্চুপ। শাওন আবার ইশারা করতেই নিশা উঠে পড়ে শাওনের বাইকে। সরু রাস্তা আর গাড়ি বাস পেরিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাইকটি যা গিয়ে থামে শহরের অনেকটাই দূরে। জায়গাটি বেশ ভূতুড়ে মনে হলেও শাওন আর নিশা দুজনেরই এ বিষয় নিয়ে কোনো মাথাব্যাথা নেই। দখিনা হাওয়াতে চেয়ে যাচ্ছে দুজনের শরীর। শাওন নিশ্চুপভাবে একটা বিয়ারের বোতল নিয়ে তা উপভোগ করতে মগ্ন।
.
নিশাকে সে এখানে কেন নিয়ে আসলো নিশা তা ভেবে পাচ্ছে না। শাওন ওকে আরেক বোতল এগিয়ে দিতেই নিশা তা গটগট করে খেয়ে নেয়। শাওন উদাষীন গলায় বলে ওঠে………
.
——আমি রাইতাকে খুজে পেয়েছি নিশা?
.
ফ্যালফ্যাল করে নিশা তাকিয়ে আছে শাওনের দিকে। রাইতাকে খুজে পেয়েছে? এ কি করে সম্ভব?বিয়ার খাওয়াতে ভুলভাল শুনলো নাকি সে?
.
—–মমমানে?
.
—–রাইতাকে খুজে পেয়েছি আমি। ওই আদ্রাফ এহসানের ওয়াইফ মেহের এহসানই আমার হারানো বোন রাইতা যাকে সবাই মৃত বলে জানে?
.
নিশা ভাবছে এই শাওন মনে হয় পাগলই হয়ে গিয়েছে তবে এ কথা বললে শাওন যে ওকে জানে মেরে ফেলতে পারে এ ব্যাপারেও কোনো গাফলতি নেই। তাই সাহস করে সে শাওনকে প্রশ্ন করে…….
.
——তুই এত confident কিভাবে?
.
শাওন বিয়ারের বোতলটি ছেড়ে নিশার দিকে তাকায় নির্বিকার ভঙ্গিতে । নিশা অপেক্ষার প্রহর গুনছে উত্তরটি শোনার জন্য। শাওন তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে……..
—-সত্যিই জানতে চাস?
.
—-হ্যাঁ
,
শাওন উদাসীন ভঙ্গিতে ঘাসের গালিচায় বসে পড়ে। নিজের মাথাটি হেলিয়ে দেয় নিশার কাধে। নিশা এখন পাথরের ন্যয় বসে আছে। সে বুঝতে পারছে না এখন কোন দিকে নিজের আকর্ষণ রাখবে মেহেরের ঘটনার দিকে নাকি তার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আবেগের মালিক শাওনের দিকে?
.
.
.
.
~চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে