#অনুভূতির_সুপ্ত_কোণে🍂
#কায়ানাত_আফরিন (মাইশা)
পর্ব:১২
.
রুমে এসে মেহেরকে বিছানায় দেখে ভ্রু কুচকে ফেলে আদ্রাফ। মেহের আনমনে মোবাইল স্ক্রলে ব্যস্ত হলেও সে দেখতে চাচঞছে যে আদ্রাফ কি করবে।
.
—-আমার বেডে শুয়ে আছো কেন তুমি?
.
আদ্রাফের তীক্ষ্ণ ঝাঁঝালো ধরনের কন্ঠ শুনে মেহের আদ্রাফের দিকে তাকায়। ওর চোখে মুখে স্পষ্ট বিরক্তিভাব ফুটে উঠেছে। মেহের তবুও আদ্রাফের সেই খুঁটিনাটি বিষয়গুলো পরোয়া না করে প্রতিউত্তরে বলে,
.
—-তোমার বেড মানে কি?এই রুমে আমিও আছি।
.
—-এই কথাটা তোমার আগে মনে করা উচিত ছিলো যখন আমি তোমায় আসতে বলেছিলাম।
.
আদ্রাফের প্রতিটা কথার ভাঁজে মেহের প্রচন্ড রাগ অনুভব করতে পারছে। তবুও মেহের এটা মানতে বাধ্য যে আদ্রাফকে রাগলেও বড্ড বেশি কিউট লাগে। কালো চোখগুলো কেমন যেন টগবগ করে ওঠে। আর ঠোঁটের কথা মেহের নাহয় আর নাই ভাবলো । কেননা এই ঠোঁটেযুগল দেখলেই মেহেরের মন চায় টুস করে কামড় দিয়ে ফেলতে। মেহের বিছানায় হেলান দিয়ে বলে ওঠে ,
.
—-তোমার রাগ তুমি পুটলির মধ্যে ঢুকিয়ে রাখো। আগে যা হয়েছে সব বাদ। কোন এক জ্ঞানি জানি কি বলেছে?………….হ্যাঁ……….
”অতীতকে ছেড়ে বর্তমানকে নিয়ে ভাবো”
.
আদ্রাফ এবার আর কোনো কিছু বলে না। কারন সে জানে এই জেদি মেয়েকে কোনো কিছু বলাই বেকার। আদ্রাফ তাই এবার কোলে তুলে নেয় মেহেরকে। সাথে সাথেই মেহের হকচকিয়ে যায়। অবাকস্বরে বলে ওঠে…..
.
—-হঠাৎ আমায় কোলে নিলে কেন?
.
আদ্রাফ এবার মেহেরকে বারান্দায় নামিয়ে ভেতরে যায়। মেহের আগামাথা কিছুই বুঝতে পারছে না যে আদ্রাফ কি করছে। হঠাৎ আদ্রাফ একটা বালিশ আর কম্বল ওর দিকে ছুড়েঁ মারতেই মেহের ধরে নেয়।
.
—-গুড গার্ল এর মতো বারান্দায় শুয়ে পড়ো।
.
—-আমি বারান্দায় ঘুমাবো না।
.
আদ্রাফ রুমে যেতে নিয়েছিলো কিন্ত মেহেরের কথা শুনে পিছনে ঘুরে। একটা ব্যাঙ্গাত্নক হাসি দিয়ে মেহেরের কাছে এগিয়ে আসতে আসতে বলে……
.
—-বিয়ের রাতে তো খুবই বলেছিলে যে তুমি কচি খুকি না। তাই তুমি আমার ভয়ে ছাদে থাকতে চেয়েছিলে কিন্ত তবুও আমার রুমে থাকবে না। এখন ওই সাহস কই গেলো? আমার রুমে আসলে আমি যদি কিছু করে ফেলি তোমার সাথে?
.
শেষের কথাটি আদ্রাফ মেহেরের একেবারে কানের কাছে গিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে যার দরুন মেহেরের শ্বাস যেন ঘন হয়ে এসেছে। আদ্রাফের শরীর থেকে কেমন যেন একটা মাতালকরা ঘ্রাণ তাকে নাকে আসছে আর তাই অদ্ভুদ কিছু ভয়ঙ্কর ভাবনার সম্মুখীন হয়েছে সে। কাঁপাকাঁপা স্বরে মেহের বলে যে……..
.
—–আমি জানি তততুমি এএমন কিছুই কককরবে না।
.
একটা দুষ্টু হাসি দেয় আদ্রাফ। মেহেরকে নিজের সাথে মিশিয়ে বলে ওঠে…….
.
—-অন্য সবার সামনে ভদ্র হতে পারি ; কিন্ত বউয়ের সাথে কি ভদ্র হওয়া চলে মেহু? একটু তো অসভ্যতামি করতেই হয় !
.
আদ্রাফের স্পর্শে থরথর করে কাঁপছে মেহেরের শরীর। সে চাইছে বারবার নিজেকে শক্ত করে রাখতে। কিন্ত আদ্রাফের সামনে আসলে বরাবরই তার অনুভূতিগুলো যেন হামলে পড়ে। মেহেরের এ অবস্থা বুঝে আদ্রাফ সরে আসে মেহেরের কাছ থেকে। তার দুষ্টু হাসিতে এখন প্রখরতা ভর করেছে। নিজের ট্রাউজারের পকেটে হাত গুঁজে আদ্রাফ বলে ,
.
—–আমি একটু কাছে আসাতেই তোমার শরীরে ভূমিকম্প চলছে আর তুমি চাইছো আমার সাথে আমার রুমে ঘুমাতে? এসব অতিরিক্ত বাচ্চামি বন্ধ করো আর ওই ডিভানের ওপর শুয়ে পড়ো।
.
মেহেরকে কোনো সুযোগ না দিয়েই আদ্রাফ এবার চলে যায় ঘুমাতে। আদ্রাফের এমন কান্ডে মুখ ভার হয়ে আছে মেহেরের। মনে মনে ভাবছে কত্ত বড় ব্রিটিশ এই ছেলেটা। আদ্রাফ জানে যে সে কাছে আসলেই মেহের একটু অন্যরকম হয়ে যায়। আদ্রাফের স্পর্শে তার নিঃশ্বাস যেন বন্ধ হয়ে আসে। আর সেই সুযোগটাই সে কাজে লাগিয়ে নিলো।
.
.
.
.
রাত পাল্লাক্রমে গভীর হচ্ছে। কিন্ত মেহেরের চোখে ঘুম নেই। বাইরের ল্যাম্পপোস্টের আলোটি সরাসরি ওর মুখে পড়াতে মেহের ঘুমুতে পারছে না একটু পরপরই সে আদ্রাফের খাটের দিকে তাকাচ্ছে। আদ্রাফ এখন গভীর ঘুমে মগ্ন। মেহের মনে মনে ভাবছে , আচ্ছা ওর সাথে শুয়ে পড়লে মেহেরের কি খুব বড় কোনো ভুল হয়ে যাবে?
আদ্রাফ তো ওর হাজবেন্ট। মেহেরের ভুলের কারনেই রাগ করে আছে সে মেহেরের ওপর।আর মেহেরও চাচ্ছে আদ্রাফের রাগ ভাঙ্গাতে। তাই ধীরপায়ে ডিভান থেকে উঠে আদ্রাফের দিকে এগোতে থাকে সে। বাতাসের মৃদু হাওয়াতে সারা ঘরে কেমন যেন ঠান্ডা বিরাজমান।
.
আর এই ঠান্ডা হাওয়ার সাথেই পাল্লা দিয়ে ধকধক করছে মেহেরের হৃদয়। তার কারন শুধুমাত্র এই আদ্রাফ। নিজের কম্বলটি নিয়ে মেহের আদ্রাফের পাশে শুয়ে পড়ে। এখনও তার চোখে ঘুম নেই। তার কারনও এই আদ্রাফ।
.
আদ্রাফের ঘুমন্ত মুখ তাকে ঘুমোতে দিচ্ছে না। বাইরে থেকে আসা ল্যাম্পপোস্টের আলো বারান্দায় সরাসরি এসে পড়লেও ঘরে তা এসেছে তীর্যকভাবে। তাই আদ্রাফের মুখেও তা মৃদুভাবে মিশে আছে। মেহের ঘোর লাগা চোখে তাকিয়ে আছে আদ্রাফের দিকে। ঘুমের মধ্যেও আদ্রাফের ঠোঁট তিরতির করে কাপছে। রতের আধঁরেও দাড়িগুলো কেমন যেন দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে যার কারনে চমৎকার লাগছে আদ্রাফকে। আদ্রাফের কপালের এক কোণে ছোট্ট একটি কাটা দাগ আছে যা সবসময়ই চুল দিয়ে ঢাকা থাকে। এই দাগটা এত নিবিড়ভাবে দেখা হয়নি ওর। তাই মেহের আলতো হাতে ওই দাগটিতে স্পর্শ করে আদ্রাফের ওপরে উঠে।
নিজের অর্ধেক ভরই সে ছেড়ে দিয়েছে আদ্রাফের শরীরের ওপর। আদ্রাফের প্রতিটা বিষয়ই মেহের কেমন যেন বেশ খুঁটিয়ে খুটিয়ে দেখছে। আদ্রাফের প্রতিটা কাজই সবসময় ছিলো চোখ ধাঁধানোর মতো। কিন্ত কখনও ওর সৌন্দর্যকে এত নিবিড়ভাবে অনুভব করেনি মেহের।
.
কিন্ত আজ সে চাইছে আদ্রাফকে অনুভব করতে। খুব করে চাইছে। এতদিন একটি দায়বদ্ধতা থেকেই আদ্রাফের কাছাকাছি ছিলো সে। কিন্ত সে এখব অনুভব করতে পারছে যে ভালোবাসে সে আদ্রাফকে। আদ্রাফকে ভালো না বাসলে কখনোই আদ্রাফকে তার কাছে আসতে দিতো না।
.
আদ্রাফের বুকে নিজের মুখ ডুবিয়ে চোখ বন্ধ করে মেহের। তার কাছে মনে হচ্ছে এই জায়গাটিই বুঝি তার জন্য একটি শ্রেষ্ঠ জায়গা। আদ্রাফের শরীরের মাতালকরা ঘ্রাণের জন্য আরও মিশে যেতে মন চাচ্ছে আদ্রাফের সাথে।
মেহের মিনমিনিয়েবলে ওঠে……….
.
—–আদ্রাফ তোমায় ভালোবেসে ফেলেছি আমি। এবার তুমি যতই রাগ করে বসে থাকো না কেন ; সবশেষে আমাকেই তোমায় ভালোবাসতে হবে।
.
.
.
আদ্রাফের প্রখর দৃষ্টির জালে পড়ে মেহেরের ঘুমঘুম ভাবটা নিমিষেই যেন উড়ে চলে গেলো।
.
—-রাতে আমার সাথে এসে শুয়েছিলে কেন?
.
বিরক্তির রেশ ফুটে ওঠে মেহেরের মুখে। আদ্রাফকে সে বলে যে ,
.
—–আমার জামাইয়ের সাথে ঘুমাবো না তবে কি পরের বাড়িতে গিয়ে ঘুমাবো। আজব প্রশ্ন?
.
এবার যেন ধাপে ধাপে অবাক হচ্ছে আদ্রাফ। তার জানামতে মেহের ওকে কখনোই হাজবেন্ট হিসেবে মানেনি।
.
—–তুমি……………আমায় হাজবেন্ট হিসেবে মানো নাকি ! তাছাড়া তোমার মতো পাগল বউয়ের পাল্লায় আমি জীবনেও পড়ছি না।
.
—-লে হালুয়া ! একমাসও হয়নি আমার বাবা আমায় থাপ্পড় দিয়ে তোমার মতো কুমড়োপটাশ (আদ্রাফ কড়া চোখে তাকাতেই) আই মিন এত কিউট একটা ধুন্দলের সাথে বিয়ে করিয়ে দিলো। আর তুমি বলো কি-না আমি তোমায় হাজবেন্ট হিসেবে মানি নাকি !
.
মেহেরের উদ্ভট কথা শুনে আদ্রাফের মাথার তাড় ছিড়ে যাচ্ছে। এই মেয়ের জন্য সত্যিই একদিন ওকে পাগলাগারদে যেতে হবে।মেহের এবার বলে ওঠে……..
.
—-আর শুনে রাখো একটা কথা। আজকে যদি তুমি আমায় তোমার সাথে ঘুমাতে না দাও একেবারে ধরেবেঁধে বাবার কাছে নিয়ে যাবো। তখন বুঝবে আসল মজা।
মেহের ভালোমতোই জানে একমাত্র বাবার নাম করলেই এই ছেলেরে লাইনে আনা যাবে। আদ্রাফ এবার বিরক্তি স্বরে বলে ওঠে……….
.
—–তোমার জ্বালায় জীবন আমার ত্যানা ত্যানা হয়ে যাবে। জাস্ট রিডিকিউলাস !
.
.
.
.
একটা নীল রঙের শাড়ি পড়ে আয়নার সামনে মেহের নিজেকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে। আজ ভার্সিটিতে নবীনবরণের অনুষ্ঠান। তাই হালকা সাজগোজ করেছে সে। যদিও মেহের শাড়ি নামকে বিষয়ে তেমন অভ্যস্ত নয় কিন্ত ড্রেসকোডে শাড়ির কথা ছিলো বলেই শাড়ি পড়েছে সে।
.
আদ্রাফ অফিসের জন্য ফাইল রেডি করছে আর মেহেরকে আড়চোখে দেখছে বারবার। সবশেষে আদ্রাফ বলে ওঠে…………
.
—–বিয়ের রাতে বেনারসী শাড়ি পড়ে ছাদে যখন ঘুরঘুর করছিলো তখন তো পুরাই দেওভূত লাগছিলো । আর আজ তো শাড়ি পড়লে পুরাই শ্যাওড়া গাছের পেত্নী লাগবে !
.
.
.
.
.
~চলবে