#অনুভূতির_অন্তরালে
#পর্ব:১৬ ও শেষ
#Devjani
আরাদ্ধা নিরুপায় হয়ে রোদ্দুরের পেছন পেছন যেতে থাকে।কি হলো ব্যাপারটা বুঝতে পারছে না। রোদ্দুরকে বেশ রাগী মনে হচ্ছে। কিন্তু হঠাৎ এভাবে রাগ করার মানে কি!
আরাদ্ধা রোদ্দুরের পেছন পেছন যাচ্ছে। রোদ্দুর রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করার আগেই আরাদ্ধা ঢুকে যায়।
রোদ্দুর ছোট নিঃশ্বাস ছেড়ে বিছানার উপর বসে পড়ে। ভাবলেশহীন ভাবে বলে,মিস সরি মিসেস রেজওয়ান আমার পেছনে এভাবে ছুটেছেন কেন? টাইগার তাড়া করল নাকি?
আরাদ্ধা মৃদু গলায় বলে,আপনি ঠিক আছেন?রেগে গিয়েছিলেন কেন?এখন আবার এভাবে কথা বলছেন, অদ্ভুত!
রোদ্দুর রাগী দৃষ্টিতে আরাদ্ধার দিকে তাকায়।উঠে আরাদ্ধার সামনে এসে দাঁড়ায়।হালকা ঝুঁকে বলে,কালকে কি?
— কালকে কি?
— আমি তো সেটাই জিজ্ঞেস করছি কালকে কি?
আরাদ্ধা অবাক হয়ে তাকায় রোদ্দুরের দিকে। পরক্ষনেই নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,ওহ্!কালকে আমার শেষ পরীক্ষা। কিন্তু এটার সাথে আপনার রাগের সম্পর্ক কি!
— তুই একা গেলে ভাবতাম তোর পড়তে ভালো লাগছিল না।তাই ছাদে গিয়েছিলি। কিন্তু তোর সাথে আকাশ গিয়েছে।তার মানে হলো তোরা দুইজন গল্প করছিলি অনেকক্ষন ধরে। পড়াশোনা করা লাগবে না?রেজাল্ট যদি খারাপ হয় তো তোকে আছাড় মারবো।
আরাদ্ধা জোরে শ্বাস নিয়ে বলে,কথার কি লজিক!এই জন্য রাগ করেছেন!উফ,,,ভাবেছিলাম কি না কি হয়েছে আবার।ভয় পাইয়ে দিয়েছিলেন।
রোদ্দুর ভ্রু উঁচিয়ে বলে, কেন কোনো ভয় পাওয়ার মতো কাজ করেছিস?
— উহুম,,
— যা গিয়ে পড়তে বোস।নয়তো,,,,
— যাচ্ছি।
আরাদ্ধা ঠোঁট উল্টিয়ে পড়তে বসে যায়।কালকে পরীক্ষা শেষ হবে।এরপর শান্তি!
রোদ্দুর আরাদ্ধার দিকে তাকিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।
আরাদ্ধা রোদ্দুরের বইগুলো নেড়েচেড়ে দেখা শুরু করে। হঠাৎ রোদ্দুরের একটা বইয়ের ভিতর থেকে অনেকগুলো ছবি নিচে পড়ে যায়।
আরাদ্ধা কৌতুহল নিয়ে ছবিগুলো দেখে চুপসে যায়।তার রোদ্দুরের ছোট বেলার ছবি।একটা ছবিতে হুট করেই তার চোখ আটকে যায়। ছবিটাতে রোদ্দুর তাকে কোলে নিয়েছে।তখন আনুমানিক তার বয়স চার আর রোদ্দুরের বারো। কিন্তু এই ছবিটা তুললো কে?
আরাদ্ধা ছবিটা হাতে নিয়ে অন্য ছবিগুলো ঠিক জায়গা মতো রেখে দেয়।
রোদ্দুর ওয়াশরুম থেকে বের হতেই আরাদ্ধা বলে উঠে,আমি একটু বাসা থেকে আসছি।দাদির সাথে দেখা করতে যাব। বেশিরভাগ পড়াই শেষ।বাকিটা এসে পড়বো।যাই?
— যা।
রোদ্দুরের কাছ থেকে অনুমতি পেয়ে আরাদ্ধা তাড়াতাড়ি বেরোনোর আগেই হুট করে আকাশ তাদের রুমে চলে আসে। রোদ্দুরের দিকে তাকিয়ে ইতস্তত করে বলে, রোদ্দুর ভাইয়া তোমার সাথে কথা আছে।
— বল।
আকাশ বলতে গিয়েও থেমে আরাদ্ধার দিকে তাকায়। মৃদু গলায় ডাক দেয়,আরাদ্ধা!
আরাদ্ধা রোদ্দুরের দিকে তাকিয়ে মেকি হেসে বলে,আসলে ভাইয়া উনি বিয়ে করবে।সেটা বলতে চায়।
রোদ্দুর ভ্রু কুঁচকে বলে,তো আমি কি করবো।আমি কি কাজি নাকি।
— সেটা না।ওনার মা বাবাকে আপনি রাজি করাবেন।
— আকাশ!তুই বিয়ে করবি আর আমি তোর মা বাবাকে রাজি করাবো?পারবো না।দেখিস নাই মা বাবার ইচ্ছার বিরুদ্ধে আরুকে কেমন বিয়ে করেছি!তুইও করে নে।
আকাশ মন খারাপ করে বলে,যদি আম্মু বকা দেয়।
রোদ্দুর বিরক্ত হয়ে বলে,ভাই তুই দেখি মেয়েদের থেকেও বেশি লজ্জা পাস।
আরাদ্ধা বলে, আপনারা কথা বলেন আমি আসছি।
কথাটা বলে আরাদ্ধা বেরিয়ে যায়।
তাদের এ্যাপার্টমেন্টের সামনে আসতেই দাঁড়িয়ে যায়। এ্যাপার্টমেন্টের সামনে থাকা ফুলগাছ গুলোতে দাদি অত্যন্ত যত্ন সহকারে পানি দিচ্ছে।ফুলগাছ গুলো সে লাগিয়েছে।আর দাদি কত যত্ন নিচ্ছে।দাদি আসলেই ভালো মানুষ। কিন্তু তার সাথে কেন এমন করে?
আরাদ্ধা গিয়ে পেছন থেকে দাদিকে জড়িয়ে ধরে।
— এই কে রে!ছাড় আমাকে।কাজ করছি দেখছিস না। গাছগুলো মরেই যাচ্ছিল একদম।কেউ একটু যত্ন নেয় না।
— তাই বুঝি তুমি যত্ন করছো দাদি?
— আরু তুই।ছাড় আমাকে।ধরবি না একদম।
— একদম ছাড়ব না।আমার দাদিকে আমি ধরেছি।ছাড়বো কেন?এই দাদি তুমি আমার সাথে এমন করো কেন? কষ্ট লাগে তো!
দাদি ঘুরে আরাদ্ধাকে জড়িয়ে ধরে।বলে,বুড়িটা তোকে কত খারাপ কথা বলেছি।তাও,,,,,,
— তাও আমি এই বুড়িটাকে ভালোবাসি। আচ্ছা দাদি তুমি আমার সাথে এমন করতে কেন?
— সরি আরু,মার্জিয়া,,,,,,,
— বুঝেছি মার্জিয়া আমার নামে খারাপ কথা বলেছে তাই তো!
দাদি চুপ করে আছে।
আরাদ্ধা আবারও বলে, তুমি মার্জিয়ার কথা শুনে কেন আমার সাথে এমন করতে? সত্যি মিথ্যে যাচাই করলে না!আচ্ছা সেসব কথা বাদ দাও। তুমি যে আবার আমাকে কাছে টেনে নিয়েছো এটাই বড়ো।
♡
♡
♡
রাতের আকাশে আজ অনেকগুলো তারা উঠেছে।দেখতে ভীষণ সুন্দর লাগছে।আরাদ্ধা ছাদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে।তারা দেখছে।পাশে দাঁড়িয়ে আছে রোদ্দুর।সে আরাদ্ধাকে দেখছে।আরাদ্ধা আড় চোখে একবার রোদ্দুরকে দেখে নেয়।দেখতে দেখতে সাত বছর কেটে গেছে। রোদ্দুর এখনো পাল্টায় নি। আগের মতোই আছে। আগের মতো বকে তাকে।তবে তাকে খুব ভালোবাসে ব্যাপারটা আরাদ্ধা বেশ ভালোভাবেই বুঝেছে। কিন্তু আরাদ্ধা এখনো রোদ্দুরকে অনুভূতির অন্তরালের কথাগুলো মুখ ফুটে বলতে পারে নি।কখনো হয়ত বলতে পারবে না।হয়ত রোদ্দুর নিজে থেকেই তার মনের কথাগুলো বুঝে নিয়েছে।
রোদ্দুর মৃদু গলায় আরাদ্ধাকে বলে, পিচ্চি! কতগুলো বছর কেটে গেল। অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়ে গেছে তাই না?
— হুম।
— কি পরিবর্তন হয়েছে পিচ্চি?
— আমি ডাক্তার হয়েছি। হার্ট সার্জন ডাঃ আরাদ্ধা কায়নাত!
— আর?
— আকাশ আর মার্জিয়া বিয়ে করেছে।শ্রেয়ান ভাইয়া আর অদ্রির বেবি হয়েছে। টাইগার আর অলির বেবি হয়েছে।
— আর?
— আর….!আর আমি আবারও মা হতে চলেছি।
রোদ্দুর মুখ টিপে হাসে।বলে,আমাকে বাদ দিয়ে দিলি!আমি যে বাবা হচ্ছি?
হঠাৎ পেছন থেকে আরশি এসে আরাদ্ধাকে জড়িয়ে ধরে।চোখে মুখে ভয়ের ছাপ।আরাদ্ধার হাতগুলো টানতে টানতে বলে, আম্মু টমি,,,কোলে!
রোদ্দুর অসহায় দৃষ্টিতে আরাদ্ধার তাকিয়ে আরশিকে কোলে তুলে নেয়।বলে,মা মেয়ে দুজন একই রকম। কুকুরকে এতো ভয় পাস কেন তোরা? কিউট একটা প্রাণী!
আরাদ্ধা রাগী গলায় বলে, আপনার সাহস তো কম না। টাইগারকে কুকুর বলছেন!
রোদ্দুর ভ্রু কুঁচকে বলে, আমার ডায়লগ আমাকেই শুনাচ্ছিস!
— আমি বললে দোষ আর আপনি বললে কিছু না!বাই দা ওয়ে, আমি এখন কুকুর মানে টাইগারকে আর ভয় নাই না। দেখবেন?
কথাটা বলে আরাদ্ধা মিষ্টি গলায় টাইগারকে ডাক দেয়।আরাদ্ধার ডাক শুনেই টাইগার দৌড়ে আসে।সাথে অলি আর টমি।টমি টাইগার আর অলির বেবি।বয়স হয়েছে টাইগারের। আগের মতো তরতাজা ভাব নেই চেহারায়। কিন্তু আরাদ্ধা এখন আর ভয় পায় না টাইগারকে। খুব যত্ন করে তার।
আরাদ্ধা গিয়ে টাইগারকে জড়িয়ে ধরে।
— আই লাভ ইউ টাইগার!
(সমাপ্ত)
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।আর কেমন হয়েছে গল্পটা জানাবেন।