#অনুভূতির_অন্তরালে
#পর্ব:১৫
#Devjani
গতকালের অলির ঘটনা মনে পড়তেই আজ তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে পড়েছে আরাদ্ধা।উঠেই দেখে বিছানার পাশে আকাশ বসে ফোন টিপছে।আরাদ্ধা বিরক্ত হয়ে বলে,
— এত সকালে আপনি এখানে কি করছেন?
— আপনাকে গুড মর্নিং বলতে এসেছি।
আরাদ্ধা রুক্ষ গলায় বলে,বলা হয়ে গেলে এবার আসতে পারেন।
— আপনি কি বিরক্ত হচ্ছেন?
আরাদ্ধা বিরক্ত হয়ে বিরবির করে বলে, আবার জিজ্ঞেস করে।
মুখে বলে,আসলে আমি যখন তখন আমার রুমে আসা পছন্দ করি না।
আকাশ ভ্রু উঁচিয়ে বলে,এটা আপনি ভুল বললেন।এটা তো রোদ্দুরের রুম।
— তাতে কি।আমি রোদ্দুর ভাইয়ার স্ত্রী।সো এটা আমারও রুম।আর আপনি ওনাকে নাম ধরে ডাকলেন কেন? উনি তো আপনার বড় হয়!
— তুমি দেখছি আমাকে শাসন করছো।ভালো! কিন্তু শুনেছি তোমাদের বিয়েটা এক্সিডেন্টলি হয়েছে। তুমি কি এই বিয়েটা মানো?আর তুমি তো রোদ্দুরকে ভাইয়া বলে ডাকো।
— বিয়ে যখন হয়েছে তখন না মানার কি আছে আর আপনি সকাল সকাল এসব কথা বলে মাথা খারাপ কেন করেছেন?
— আরে রাগ করো না। আচ্ছা তুমি সকাল বেলাটা প্রতিদিন কিভাবে উপভোগ করো?
আরাদ্ধা রাগী দৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।আকাশ আরাদ্ধার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে। উঠে ছোট একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
আকাশ যেতেই আরাদ্ধা তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে বের হয়। বিছানার উপর থেকে ফোনটা নিয়ে রোদ্দুরকে কল করে।ওপাশ থেকে রোদ্দুর ঘুমঘুম গলায় বলে,হ্যালো,আরু?
— আপনি দেখছি আমার কোনো খবর নেন না।
— ঘুমাচ্ছিলাম। ঘুম থেকে উঠেই তোকে কল করতাম। কলেজ যাবি না?
— যাব। সকাল সকাল আপনার ওই আকাশ নামের ভাইটা মাথা খারাপ করে দিল।এমন গায়ে পড়া ছেলে আমি আগে কখনো দেখিনি। অসহ্য!
— ও ওই রকম।তুই চিন্তা করিস না।
— ও এখানে কেন এসেছে?আপনি জানেন?
— কি একটা কাজে এসেছে। আমি ঠিক জানি না।তবে তুই ওকে যেমন ভাবছিস ও তেমন নয়।ও অনেক ভালো ছেলে।
— আচ্ছা এদিকটা আমি সামলে নিব। আপনি তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে আসেন।
— হুম।রাখছি।
আরাদ্ধা ফোন কেটে দিয়ে পেছনে ফিরে দেখে আকাশ দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।মুখ দেখে মনে হচ্ছে আরাদ্ধাকে কিছু বলতে চায়।আরাদ্ধা তাড়াতাড়ি পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে আসে। বাসা থেকে বের হতেই রুনা বেগম ডাক দেয় তাকে।বলে,আরু মা কিছু খেয়ে যা।
আরাদ্ধা আকাশকে একপলক দেখে বলে, আন্টি এখন কিছু খাবো না।
— না খেয়ে তোকে যেতে দিব না।পরে রোদ্দুরকে বলবি আমি তোর যত্ন নেইনি।
— আন্টি প্লিজ খাব না এখন।একবার শ্রেয়ান ভাইয়ার বাসায় যাব।
— আকাশও বাইরে যাবে। আকাশের সাথে যা!আকাশ তোর টাইম হবে তো?
আকাশ কিছু বলার আগেই আরাদ্ধা বলে,না আন্টি ওনার কষ্ট করা লাগবে না।
আকাশ বলে, আমার কোনো কষ্ট হবে না।
— অসভ্য লোক কোথাকার!বিরবির করে বলে আরাদ্ধা।
মুখে হালকা হাসি নিয়ে বলে,আপনি আমাদের অতিথি।আপনাকে কষ্ট দেই কি করে।আপনি বললেও আপনার মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে আপনি রাজি নন।
আকাশ মুখে হাত দিয়ে বলে, কেন মুখ তো ঠিকই আছে!
আরাদ্ধা চোখমুখ কুঁচকে বলে, অদ্ভুত! আপনার মুখ আপনি কি করে দেখবেন? আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ান তারপর বুঝবেন।
— সেটা অবশ্য ঠিক।
আরাদ্ধা রুনা বেগমকে উদ্দেশ্য করে বলে, আন্টি আমি আসছি।আজ বাসায় নাও আসতে পারি।শ্রেয়ান ভাইয়াদের বাসায় থাকব।কথাটা বলে আড় চোখে একবার আকাশের দিকে তাকাল।
রুনা বেগম গম্ভীর গলায় বলে, বিয়ের পর এত ঘনঘন বাপের বাড়ি যাওয়া বেমানান আরু। তুমি নিশ্চয়ই এসব বুঝতে পারছো!
আরাদ্ধা মৃদু গলায় বলে,আমার বাবা তো নেই। এখন ওটা মায়ের বাড়ি। মায়ের বাড়ি যাওয়া তো যায়।আপনি চিন্তা করবেন না।
কথাটা বলে কাউকে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে বেরিয়ে আসে আরাদ্ধা। রোদ্দুরের মাকে বলার মতো যুক্তি পাচ্ছিল না।তাই এটা বানিয়ে বলে দিয়েছে।তবে এখন মনে হচ্ছে কথাটা এভাবে না বললেও পারতো।
♡♡♡
শ্রেয়ানের সাথে কলেজে যাচ্ছে আরাদ্ধা।শ্রেয়ানের সাথে দেখা হওয়ার পরপরই আকাশের কথা বলেছে। যদিও শ্রেয়ান এখন পর্যন্ত তার সাথে কোনো কথা বলেনি।সেই সব কথা বলে যাচ্ছে।
হঠাৎ শ্রেয়ান আরাদ্ধার হাতের উপর হাত রেখে বলে,আরু, আম্মুর শরীরের অবস্থা ভালো নেই।ভাবছি আম্মুকে ডাক্তার দেখানোর জন্য বাইরে নিয়ে যাব।
আরাদ্ধা সাথে সাথে কোনো উত্তর দিল না। কিছু একটা ভেবে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।বলে,তুমিও চলে যাচ্ছ।আমি একা একা কিভাবে থাকবো?
— চিন্তা করিস না। রোদ্দুর ভাইয়ার সাথে কথা হয়েছে। উনি বলেছেন তাড়াতাড়ি চলে আসবে।আর তোকে তো সেদিন বলাই হয়নি আসলে ব্যাপারটা হলো তোর বিয়ের ব্যাপারটা আমরা সবাই জানতাম। যদিও বড়রা কেউ জানতো না। রোদ্দুর ভাইয়া বিয়ে করতে চাননি। কিন্তু ওনার আম্মুর জন্য বাধ্য হতে হয়েছে।আর সুমাইয়ার ঠিক একই অবস্থা।ওকে জোর করে রাজি করানো হয়েছে।সবটা রোদ্দুর ভাইয়া আর সুমাইয়ার প্ল্যান ছিল।বিয়ের দিন সবাই সবটা জানতে পেরেছে। রোদ্দুর ভাইয়া আর সুমাইয়ার উপর সবাই অবশ্য রাগ করেছে খুব।
আরাদ্ধা শ্রেয়ানের কথার কোনো উত্তর দিল না। চুপচাপ শুনেছে।শ্রেয়ান আরাদ্ধাকে কলেজের সামনে নামিয়ে দিয়ে চলে গেল। অদ্রি আরাদ্ধার আগেই কলেজ চলে এসেছে।
আরাদ্ধাকে আসতে দেখে অদ্রি ওর কাছে গিয়ে দাঁড়ায়।মুখ ঘুরিয়ে বলে,বিয়ে করে তো আমাকে ভুলেই গিয়েছিস!
আরাদ্ধা নির্বিকার ভাবে বলে, তুই মনে হয় যেন মনে রেখেছিস।দিনে একবারও ফোন করিস না।
অদ্রি কিছু বলতে গিয়েও থেমে যায়।আরাদ্ধাকে ইশারায় গেটের দিকে তাকাতে বলে।আরাদ্ধা গেটের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়। আকাশ দাঁড়িয়ে আছে। মনে কাউকে খুঁজছে।
হুট করে মার্জিয়া ওদের পাশ কাটিয়ে গিয়ে আকাশের কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। চোখেমুখে খুশির আভা।বলে, আকাশ তুমি তাহলে শেষ পর্যন্ত আমার সাথে দেখা করতে এলে!
আকাশ হালকা হেসে বলে, হুম। কিন্তু তোমাকে খুঁজতে খুব কষ্ট হয়েছে।তোমার একটা বোন আছে না আরাদ্ধা ভেবেছিলাম ওর সাথে আসব।তাহলে তোমাকে খুঁজে পেতে সুবিধা হতো। কিন্তু ওতো চলে এলো আমার আগে।
মার্জিয়া মুখ ছিটকে বলে, তুমি আর মানুষ পেলে না। শেষ পর্যন্ত ওই মেয়েটাকে,,,,!ও একটা হিংসুটে মেয়ে।আমাকে একদম সহ্য করতে পারে না।
— কিন্তু আমার তো ওকে এমন মনে হয়নি।ভালো মেয়ে ও। যদিও ওর সাথে মিশতে গিয়েছিলাম কিন্তু মনে হলো ও বিরক্ত হয়েছে।
— ভালো মেয়ে না ও। শয়তান একটা।জানো ও একবার আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে।থাক ওর কথা বাদ দাও। কতদিন পর দেখছি তোমাকে।কেমন আছো?
— ভালো। তুমি?
— খুব ভালো।
আরাদ্ধা আড় চোখে অদ্রির দিকে তাকায়। অদ্রি অবাক হয়ে ওদের দেখছে।আরাদ্ধা হালকা ধাক্কা দিয়ে বলে,ওই অদ্রি কি দেখিস?
অদ্রি আরাদ্ধার দিকে তাকিয়ে বলে,মার্জিয়াকে ভালো ভাবতাম।
— হয়েছে আর বলা লাগবে না।কি মিথ্যুক!আমি নাকি ওকে ফেলে দিয়েছি। যত্তসব!
— ঠিক।
আরাদ্ধা বিরক্তি নিয়ে বলে, শুধু শুধু আকাশকে নিয়ে খারাপ কথা বললাম।এখন রোদ্দুর ভাইয়া আমার সম্বন্ধে কি ভাববে কি জানি?
অদ্রিকে বলে, ভেবেছিলাম আজ তোর বাসায় মানে শ্রেয়ান ভাইয়ার বাসায় থাকব। কিন্তু হলো না।অন্য একদিন যাবো।মাকে যে দেশের বাইরে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করবে তুই যাবি?
অদ্রি মন খারাপ করে বলে, ইচ্ছে ছিল।শ্রেয়ান নিবে না। পরীক্ষা তাই।
আরাদ্ধা ছোট নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,ভালোই হলো।নাহলে একা হয়ে যেতাম।
♡
♡
♡
ছাদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে আরাদ্ধা পাশে দাঁড়িয়ে আছে আকাশ।এই কয়েকদিনে আকাশের সাথে বেশ ভালো একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হয়েছে।
হুট করে নিচ থেকে কলিংবেল বেজে উঠার শব্দে নড়েচড়ে উঠে আরাদ্ধা।খুশিতে চোখমুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠে।আকাশ আড় চোখে একবার আরাদ্ধাকে দেখে নিয়ে বলে, রোদ্দুর ভাইয়া এসেছে হয়ত।চল নিচে যাই।
আরাদ্ধা আকাশের কথার উত্তর না দিয়ে দৌড়ে নিচে চলে যায়। পেছন পেছন যাচ্ছে আকাশ।
সিঁড়ি দিয়ে নেমে দেখে রোদ্দুর দরজার কলিংবেল বাজাচ্ছে। কিন্তু এখনো কেউ দরজা খুলছে না।
সিঁড়ি দিয়ে আরাদ্ধাকে নামতে দেখে রোদ্দুরের ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠে। কিন্তু পেছনে আকাশকে দেখেই সে হাসি নিমিষেই উড়ে গেল।
রুনা বেগম দরজা খুলে রোদ্দুরকে দেখে প্রশান্তির হাসি দেয়। রোদ্দুর গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরেই হালকা কথা বলেই নিজের রুমের দিকে পা বাড়ায়। পেছন থেকে আরাদ্ধা বেশ কয়েকবার ডাক দেয়। রোদ্দুর শুনেছে ঠিকই কিন্তু দাঁড়াল না।
আরাদ্ধা নিরুপায় হয়ে রোদ্দুরের পেছন পেছন যেতে থাকে।কি হলো ব্যাপারটা বুঝতে পারছে না। রোদ্দুরকে বেশ রাগী মনে হচ্ছে। কিন্তু হঠাৎ এভাবে রাগ করার মানে কি!
চলবে,