#অনুভূতির_অন্তরালে
#পর্ব:১৪
#Devjani
কলেজে ক্যান্টিনে বসে আছে আরাদ্ধা। সকালের ঘটনাগুলো মাথায় ঘুরছে। রোদ্দুরের উপর ভীষণ রাগ হচ্ছে তার।তার কোনো কথাকেই গুরুত্ব দেয় না। সকালে এতগুলো কথা বলেছে।পরিবর্তে রোদ্দুর ভাবলেশহীন ভাবে জিজ্ঞেস করেছে,আর কোনো কথা আছে? রোদ্দুরের কথাটা মনে পড়লেই রাগ বেড়ে যায়।
আজ রোদ্দুরের সাথে আসে নি।শ্রেয়ানকে ফোন করে তাকে নিয়ে যেতে বলেছে।শ্রেয়ান অবশ্য কারণ জিজ্ঞেস করেছিল কিন্তু সে বলেনি।
হঠাৎ কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ পেতেই পেছনে তাকিয়ে দেখে শ্রেয়ান দাঁড়িয়ে আছে।
— কিরে কি এত চিন্তা করছিস?আরাদ্ধার পাশে বসতে বসতে প্রশ্ন করে শ্রেয়ান।
— কিছু না।
— না বলতে চাইলে বলার দরকার নেই।
— উহুম বলছি।ভাইয়া তুমি জানো রোদ্দুর ভাইয়া সব ইচ্ছে করে করেছে।
— তো কি হয়েছে?
শ্রেয়ানের কথায় অবাক হয় আরাদ্ধা এত সিরিয়াস হয়ে বলছে অথচ শ্রেয়ান কিনা ভাবলেশহীন ভাবে বলছে কি হয়েছে!তার ব্যাপারটা এলোমেলো লাগছে। ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করে,আমার সাথে অন্যায় হয়েছে।
— কি অন্যায় হয়েছে?
— আমি কিছু জানতাম না কেন?
— তাতে কি আমি তো জানতাম।
— মানে? অবাক হয়ে প্রশ্ন করে অদ্রি।
হঠাৎ শ্রেয়ানের ফোনটা বেজে উঠে।ফোনের দিকে একবার তাকিয়ে আরাদ্ধাকে বসতে বলে কল অ্যাটেন্ড করতে একটু দূরে চলে যায়।
আরাদ্ধা গালে হাত দিয়ে বসে আছে। হঠাৎ তার ফোনটাও বেজে উঠে। রোদ্দুরের মা ফোন করছে।আরাদ্ধা রিসিভ করতেই ওপর পাশ থেকে রোদ্দুরের মা বলে উঠে,আজ এত দেরি করছিস কেন?রোদ্দুরের সাথে দেখা করবি না?একটু পর তো বেরিয়ে যাবে!
আরাদ্ধা অবাক হয়ে প্রশ্ন করে, একটু পর বেরিয়ে যাবে মানে? কোথায় যাবেন উনি?
— ওহ্!তোকে তো বলাই হয়নি।কিভাবে বলা হবে কালই তো সব হলো।শোন রোদ্দুর একটু বাইরে যাচ্ছে।বাইরে বলতে লন্ডন যাচ্ছে। কিছুদিনের জন্য।তো একটু পরেই বেরোবে। তুই কখন আসবি?
আরাদ্ধা ফোনের মধ্যেই বিরক্তি প্রকাশ করে।রাগের সাথে এখন অভিমান হচ্ছে খুব। রোদ্দুর লন্ডন যাচ্ছে অথচ তাকে জানাল না।তাকে তো কাল রাতেও বলেছিল আসল মায়ের কাছে নিয়ে যাবে।যদি নাই নিয়ে যাবে তো শুধু শুধু বলার কি দরকার ছিল।আরাদ্ধা রাগ করতে যেয়েও এখন আর রাগ হচ্ছে না। হচ্ছে একরাশ অভিমান। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,আসছি।
আরাদ্ধা ফোন কেটে দেয়।শ্রেয়ান এখনও ফোন নিয়ে ব্যস্ত।আরাদ্ধা ইশারায় আসি বলে বেরিয়ে যায়।
♡♡♡
রোদ্দুর ওর মাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। আস্তে করে বলে,আসছি।
রোদ্দুরের মা রুনা বেগমও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে তাকে। মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে, সাবধানে যাস বাবা।
— হুম।
রোদ্দুর ধীর পায়ে আরাদ্ধার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।আরাদ্ধা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।চোখে পানি টলমল করছে। রোদ্দুর হালকা হেসে আরাদ্ধাকে কাছে টেনে নেয়।
— কাঁদছিস কেন পিচ্চি?
আরাদ্ধা ঠোঁট উল্টিয়ে বলে, আপনি যাচ্ছেন আগে বলেন নি কেন?
— হুট করে কাজ পরে গেছে তাই।সরি।আমি তাড়াতাড়ি চলে আসব।মন খারাপ করিস না। আর হ্যাঁ, মনোযোগ দিয়ে পড়বি।আমি যেন খারাপ রেজাল্ট না শুনি।
— আপনি কেন আমাকে কিছু বলেননি।
রোদ্দুর ভ্রু উঁচিয়ে বলে,তুই তো বলেছিস তোর বিয়েতে এমন কোনো ঘটনা চাই যাতে তুই সবার কাছে তোর বিয়ের ঘটনাটা বলতে পারিস!কথাটা বলে রোদ্দুর মুখ টিপে হাসল।
— সুমাইয়া আপু কষ্ট পেয়েছে।ওনার মা বাবার অপমান হয়েছে।আপনি এমনটা না করলেও পারতেন।
— সময় থাকলে সবটা বলতাম। কিন্তু এখন এসব বলার প্রয়োজন মনে করছি না।এসব কথা বাদ দে, মনোযোগ দিয়ে পড়তে বলেছি।কথাটা মাথায় রাখিস।
রোদ্দুর আরাদ্ধাকে ছেড়ে দিয়ে টাইগারের সামনে গিয়ে বসে।আদর করতে করতে বলে, টাইগার তোর ভাবিকে একদম ডিস্টার্ব করবি না।অলিকেও নিষেধ করে দিবি।
আরাদ্ধা অবাক হয়ে প্রশ্ন করে,কে ভাবি?কার ভাবি? কিসের ভাবি?
রোদ্দুর ধমক দিয়ে বলে,মাথার মধ্যে বুদ্ধি বলতে কিছু নাই তোর।ভাবি হলি তুই। টাইগারের একমাত্র ভাবি।
আরাদ্ধা চোখ বড় বড় করে প্রশ্ন করে,আমি ভাবি!তাও এই কুকুরের!
— এই আবার আমার টাইগারকে কুকুর বলছিস!তুই কখনো ঠিক হবি না।এটা কুকুর নয়।এটা আমার একমাত্র ভাই।কথাটা বলে রোদ্দুর টাইগারকে জড়িয়ে ধরে।
আরাদ্ধা টাইগারকে বোঝার চেষ্টা করে। রোদ্দুরের কথা টাইগার বুঝলো কিনা বোঝা গেল না।তবে রোদ্দুর টাইগারকে জড়িয়ে ধরার সাথে সাথে টাইগার স্থির হয়ে চোখগুলো বন্ধ করে নেয়।আরাদ্ধার ব্যাপারটা বেশ ভালো লাগল। ধীর পায়ে হেঁটে গিয়ে টাইগারের মাথায় ভয়ে ভয়ে তার ঠান্ডা হাত রাখে।এই প্রথম টাইগারকে ছুঁয়েছে। টাইগার হুট করে চোখ খুলে তাকাতেই ভয়ে দূরে সরে যায়। টাইগার পুনরায় চোখ বন্ধ করে নেয়।আরাদ্ধা দেখে টাইগারকে এখনো রোদ্দুর জড়িয়ে ধরে আছে।আরাদ্ধার গতকালের কথা মনে পড়তেই গিয়ে টাইগারের কান টেনে ধরে। সাথে সাথে টাইগার জোরে জোরে ডাকা শুরু করে দেয়।
রোদ্দুর চোখ রাঙিয়ে বলে,আরু!ব্যাথা পেয়েছে তো আমার ভাইটা।কি করছিস এগুলা?
আরাদ্ধা ভেংচি কেটে দূরে সরে দাঁড়ায়।
♡♡♡
পড়ার টেবিলে বসে এক নাগাড়ে পড়ে যাচ্ছে আরাদ্ধা। হুট করেই কেউ এসে তার চোখ জড়িয়ে ধরে।আরাদ্ধা চোখে জিজ্ঞেস করে,কে?
অপরিচিত কন্ঠস্বর বলে উঠে,আহ্!ঈশু আমাকে চিনতে পারছিস না?
— কে আপনি?আর কে ঈশু?চোখ থেকে হাত সরান।আমার এগুলো পছন্দ না।
— এত তাড়াতাড়ি ছাড়ছি না তোকে।আমাকে তো একেবারে ভুলেই গেলি।
— দেখুন আপনি কে আমি জানি না চোখ থেকে হাত সরান।ভালো হবে না কিন্তু।আমি আন্টিকে ডাকব।
— কোন আন্টি?কে আন্টি?
লোকটা আরাদ্ধা কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,কোনো আন্টিকে ডাকতে দিচ্ছি না আমি।
— কি হচ্ছে এখানে?
হঠাৎ রুনা বেগমের এমন কথায় ছিটকে সরে যায় লোকটি।
থতমত খেয়ে বলে,ফুপি তুমি?দেখ না ঈশু আমাকে চিনতে পারছে না।
রুনা বেগম অবাক হয়েও নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,ও ঈশু নয় আকাশ।আর ঈশু তো ইন্ডিয়া।এখানে কিভাবে আসবে!
— ও সরি সরি ফুপি।আমি ভেবেছিলাম ও ঈশু।আমি ভুল করে এমন করেছি। কিন্তু ও কে?
— ঈশু এখানে কিভাবে আসবে? তুইও পারিস!ও হলো আরু। মানে আরাদ্ধা।তোর রোদ্দুর ভাইয়ার বউ।
আরাদ্ধা এতক্ষণ অবাক হয়ে এদের কথা শুনছিল।তার মানে লোকটার নাম আকাশ।আর ফুপি ডেকেছে মানে রোদ্দুরের মামাতো ভাই। কিন্তু আকাশকে তার মোটেও পছন্দ হয়নি। রোদ্দুরের পড়ার টেবিলের অবস্থান অনুসারে রুমে ঢুকতেই তার মুখ স্পষ্ট দেখা যাবে।আর এই লোক কিনা বলে না দেখে এই আচরণ করেছে!কথাটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে তার।
রুনা বেগম আরাদ্ধার কাছে গিয়ে বলে,ও আমার ভাইয়ের ছেলে আকাশ।একটু কাছে এখানে এসেছে। কয়েকদিন ও এখানেই থাকবে। তোর পাশের রুমেই থাকবে।যদি প্রয়োজন হয় ওকে ডাকবি।
আকাশ একটু এগিয়ে গিয়ে হেসে বলে, তোমার বয়স খুব কম।তোমাকে ভাবি ডাকার ইচ্ছে আমার মোটেই নেই।আমি তোমাকে নাম ধরেই ডাকব।তোমার কোনো সমস্যা আছে?
আরাদ্ধা মৃদু গলায় বলে, না!
রুনা বেগম আরাদ্ধাকে উদ্দেশ্য করে বলে, অনেক রাত হয়ে গেছে।আর পড়তে হবে না।খেতে চল।
— আমি পরে খাব আন্টি।
— না।এখনি খাবি।চল।এই আকাশ আরাদ্ধাকে নিয়ে আয়।আমি যাচ্ছি।
কথাটা বলে রুনা বেগম রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
আকাশ আরাদ্ধার গা ঘেষে দাঁড়িয়ে বলে, সত্যিই আমি বুঝতে পারি নি তুমি আরাদ্ধা।আমি তোমাকে চিনতে পারিনি।
— সমস্যা নেই।
— চল আমরা যাই। আন্টি ডেকেছে তো!
— আপনি যান আমি আসছি।
— না,আমার সাথেই যেতে হবে।
আকাশ আরাদ্ধার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে থাকে।আরাদ্ধা বিরক্ত হচ্ছে আকাশের ব্যবহারে। কিন্তু মুখে মিথ্যে হাসি ঝুলিয়ে আকাশের সাথে যাওয়া শুরু করে।
খাওয়ার টেবিলে আরাদ্ধার বরাবর আকাশ বসে। পাশে রুনা বেগম।
আকাশ খাওয়ার মাঝে আড় চোখে আরাদ্ধার দিকে তাকাচ্ছে। ব্যাপারটা বুঝতে পারছে আরাদ্ধা। কিন্তু কিছু বলতে পারছে না। আকাশের এই ব্যবহারে বেশ অস্বস্তি লাগছে তার। হঠাৎ তার পায়ে উপর কারো পায়ের অস্তিত্ব অনুভব করে আরাদ্ধা। আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখে আকাশ মিটিমিটি হাসছে। বিরক্ত হয় সে।এমন মানুষ আগে কখনো দেখে নি।কয়েক মিনিটের পরিচয়ে আকাশের এই ব্যবহারে রাগ হচ্ছে আরাদ্ধার। খুব!
চলবে,