#অনুভূতির_অন্তরালে
#পর্ব:৪
#Devjani
রোদ্দুর আরাদ্ধাকে শান্ত কন্ঠে বলে, বুঝিস না তো দেখে কি করবি?
— ইয়ে মানে স্যার,,,,সেটা বুঝতে কোনো কষ্টই হবে না।ঐ যে বললাম, মনের কানেকশন!
রোদ্দুর খানিকটা তীক্ষ্ণ কন্ঠে বলে, কিন্তু মনের কানেকশন দিয়ে তো শুধু মনের কথা বোঝা যায়।
আরাদ্ধা জেদি কন্ঠে বলে,এত কথা কেন বলেন আপনি?আমি দেখবো মানে দেখব!
আরাদ্ধা রোদ্দুরের স্টেথোস্কোপটা নিয়ে বলে,সামনে আসুন দেখছি।
রোদ্দুর প্রশ্ন করে,মানে?
— আহ্!এত মানে মানে করেন কেন? সামনে আসুন। বিরক্তি সহকারে বলে আরাদ্ধা।
রোদ্দুর বুঝতে পারছে না আরাদ্ধা কি করতে চাচ্ছে।তবে সামনে ঝুঁকলো।
আরাদ্ধা কিছুক্ষণ দেখে।খুশিতে চেঁচিয়ে উঠে বলে, বুঝতে পারেছি।
— কী? ছোট ছোট চোখ করে প্রশ্ন করে রোদ্দুর।
— স্টুডেন্ট আর টিচার হিসেবে বলতে পারবো না।তবে ভাইয়া হিসেবে বলছি, আপনি একাকীত্বে ভুগছেন। আপনার কাউকে প্রয়োজন।
আরাদ্ধার ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি ঝুলছে।
— মানে?
— মানে হলো আপনার বিয়ে করা উচিত।ইয়েস! আমার একটা ভাবি লাগবে।
রোদ্দুর বড়ো বড়ো চোখ করে তাকায়।বলে,বিয়ে?ভাবি?
হঠাৎ রুমে রোদ্দুরের মা রুনা বেগম প্রবেশ করে।আরাদ্ধার সবকথাই তিনি শুনেছেন। মিটিমিটি হাসতে হাসতে আরাদ্ধার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। মাথায় হালকা বাড়ি দিয়ে বলে,আরু তুই বোঝা এই ছেলেকে।এই ছেলে আমাকে জ্বালিয়ে মারবে। কতদিন ধরে বলছি একটা বিয়ে করতে।কথা শুনে আমার?
রোদ্দুর বিরক্তিতে চোখমুখ কুঁচকে ফেলে।বলে, আম্মু এখনো সময় হয়নি।সময় হলে করব বললাম তো।
— বিয়ের কথা বললেই এইসব কথা বলিস। কিছুটা রাগী গলায় বলে রুনা বেগম।
— আম্মু কাকে বিয়ে করবো।যাকে বিয়ে করতে চাই সে না বুঝলে আমার কিছু করার আছে?আড় চোখে একবার আরাদ্ধাকে দেখে নেয়। ড্যাবড্যাব করে তার দিকে তাকিয়ে আছে। রোদ্দুরের রাগ হয় আরাদ্ধার উপর। মনের কানেকশন নিয়ে এতো বকবক করে অথচ মনের কথাগুলোই বুঝতে পারে না মেয়েটা।
রোদ্দুরের কথায় রুনা বেগমের চোখে মুখে খুশির ঝিলিক ফুটে উঠে। মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠে।
— তার মানে কেউ আছে তোর মনে।আগে বলবি না! আচ্ছা আমি যাচ্ছি।আরু তোর মাকে কাল আসতে বলিস।একটু জরুরী কথা আছে।বলে রোদ্দুরের দিকে তাকিয়ে একবার হাসেন।
ছোট করে “আসি”বলে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
রোদ্দুর রাগী দৃষ্টিতে আরাদ্ধার দিকে তাকায়। থমথমে গলায় ডাকে,আরু,,,,!
আরাদ্ধা মেকি হাসি দিয়ে বলে,আমিও যাই।তার
এই মুহূর্তে এখানে থাকা রিস্কি।বলা যায় না যেভাবে তাকিয়ে আছে বকা খাওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়।আরাদ্ধা তাড়াতাড়ি বের হয়ে যায়। সবচেয়ে বড় কথা হলো, টাইগার এখন ঘুমাচ্ছে।ওর ঘুম থেকে উঠার আগে আগে যেতে পারলেই মঙ্গল।
আরাদ্ধা গিয়ে আবার ফিরে আসে।বলে, ভাইয়া
রাগ না করলে একটা কথা বলব?
— আমি কি বেশি রাগী?
আরাদ্ধা অবাকের সাথে বলে, আপনার মনে হয় আপনি একজন ভালো মানুষ?আচ্ছা বাদ দিন।শুনুন বলছিলাম যে,রাইয়ের সাথে কথা হয় আপনার?
হঠাৎ রাইয়ের কথায় খারাপ লাগে তার।সেই সাথে অপরাধবোধ কাজ করে নিজের মধ্যে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,হয়না।ওর শাশুড়ি হয়ত পছন্দ করে না। কিন্তু আমি জানি ও ভালো নেই।
— কাল বিকেলে আমার সাথে দেখা করতে পারবেন?আমি ঠিকানা পাঠিয়ে দেব। অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে আপনার সাথে।এখানে বলতে পারবো না।
☆☆☆
বিছানার উপর বসে এক নাগাড়ে শ্রেয়ানকে ফোন করে যাচ্ছে অদ্রি। মেজাজ গরম হওয়ার কথা। কিন্তু হচ্ছে না।শ্রেয়ান এখন ফাইনাল ইয়ারে। অনেক ব্যস্ত থাকে সে।আর শ্রেয়ান যে এত সহজে তার ফোন ধরবে না সে সম্পর্কে তার যথেষ্ট ধারণা আছে। কিন্তু সেও এতো সহজে ছাড়বে না।গুনে গুনে দশবার ফোন দিয়েছে। কিন্তু কল ক্যান নট বি রিচড্।
অদ্রি আবার কল করে। তিন বার রিং হওয়ার পর রিসিভ হয়।
অদ্রি খুশির সাথে বলে উঠে, এতক্ষণে আপনার ফোন ধরার টাইম হলো।আরাদ্ধা হলে তো ঠিকই ফোন ধরতেন।আমার সাথে এমন করেন কেন?
ওপাশ থেকে মেয়েলি কন্ঠ ভেসে আসে।
— আমি শ্রেয়া!ভাইয়া ছাদে গেছে।ফোন নেয় নি।
অদ্রির মন খারাপ হয়ে যায়।বলে,আসলে কল ব্যাক করতে বলবেন।
শ্রেয়া প্রশ্ন করে, আপনি কে?আরাদ্ধা?
অদ্রি এই মুহূর্তে আরাদ্ধার নাম আশা করেনি।রাগ লাগছে তার।ছোট নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,নাহ্!আমি আরাদ্ধা নই।অদ্রি!অদ্রিজা রায়হান।
— ওহ্! আচ্ছা।রাখি।
☆☆☆
নিজের রুম জুড়ে রীতিমত পায়চারি করছে আরাদ্ধা। সময়ের গতিটা মনে হয় যেন অনেক স্লো হয়ে গেছে।সময়টা কাটছেই না। অন্যান্য দিন না চাইতেই সময়টা দ্রুতগতিতে চলে যায়। কিন্তু আজ কত করে চাইছে সময়টা তাড়াতাড়ি বয়ে যাক।রাত পেরিয়ে সকাল হোক তাড়াতাড়ি। কিন্তু সময়টা যাচ্ছেই না।
রোদ্দুরকে রাইয়ের কথাগুলো না বলা পর্যন্ত শান্তি নেই তার। ইদানিং তার ফোনে অনেক ইমেইল আসছে।ব্যাপারটা রোদ্দুর ছাড়া কারো সাথে শেয়ার করতে পারছে না।
আরাদ্ধা জানালা দিয়ে বাইরে তাকায়।চারিদিকটা আলোকিত হয়ে আছে।হয়ত পূর্ণিমা। জানালা দিয়ে থেকে চাঁদটা দেখা যাচ্ছে না। অদ্রি ভেবে নেয়,এই মুহূর্তে ছাদে যাওয়াই যায়। চাঁদ দেখা হবে। সেই সাথে সময়টাও কাটবে।
আরাদ্ধা ধীর পায়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।রাত ১১টা বাজছে। কিন্তু এখনো কেউ ঘুমায়নি।তার দাদির রুমে বসে কথা বলছে।কথা বিষয়বস্তুটা যে সে নিজে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কারণ ইদানিং তার দাদি তার বিয়ের জন্য মা বাবাকে চাপ দিচ্ছে। কিন্তু তাতে কি হবে!তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাকে বিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা কারো নেই।
তবে মন খারাপের বিষয়টা হলো এই আগে তার দাদি মোটেই এমন ছিল না। অনেক ভালোবাসত তাকে। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে হুট করে পাল্টে গেছে।
আরাদ্ধা নিঃশব্দে ছাদে উঠে আসে।থালার মতো রুপালি চাঁদটাকে একবার দেখে নেয়।
হুট করেই তার মনে হচ্ছে তার পেছনে কেউ দাঁড়িয়ে আছে।ভয় লাগছে তার। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখার সাহস পাচ্ছে না। মনের ভ্রম ভেবে আরেকটু সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। ঠান্ডা বাতাস আসছে।পরিবেশটা কিছুটা ভুতুড়ে মনে হচ্ছে।সেই সাথে মনেও সব ভুতুড়ে চিন্তা জেগে উঠেছে।কি ঝামেলা!এত রিস্ক নিয়ে চাঁদ দেখা যায়!
আরাদ্ধা ভেবে নেয় চলে যাবে ঘরে।আর চাঁদ দেখা লাগবে না। চাঁদ কি জীবনে প্রথম দেখছে নাকি!এভাবে এতরাতে এসে দেখার কি আছে!
আরাদ্ধা উল্টো দিকে ঘুরেই হাঁটা শুরু করে।
সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে পায়ে হালকা ব্যথা পায়। অন্ধকারে ঠিকভাবে ব্যথা পাওয়া দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু চিনচিন ব্যথা করছে।
রুমের সামনে এসে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নেয়।
বিছানার উপর বসে জায়গাটা দেখে নেয়। রক্ত বের হয় নি।তবে লাল হয়ে গেছে।
ফোনটা হাতে নেয়। মেসেঞ্জারে ঢুকতেই রোদ্দুরের আর শ্রেয়ানের অনেকগুলো মেসেজ দেখে।আগ্রহ নিয়ে রোদ্দুরের মেসেজ পড়া শুরু করে,,,,,,এত রাতে ছাদে যাস না পিচ্চি।বলা তো যায় কখন কার নজর পড়ে তোর উপর।হয়তো কারো নজর আরো আগেই তোর উপর পরেছে।আর এই সুযোগে সেটার ফায়দা নিচ্ছে,,, লেখাটার পরে অনেকগুলো হাসির ইমোজি দেওয়া।
আরাদ্ধা লেখাটা পড়ে চুপসে গেছে।এই কথার মানে কি?নজর,,,! কিন্তু কার?
দিনদিন রোদ্দুরকে আগের থেকে অন্যরকম লাগে আরাদ্ধার। কিন্তু একটা জিনিস ভালোভাবেই বুঝতে পারছে। রোদ্দুরকে যেমনটা মনে হয় ও ঠিক তেমনটা নয়।এই রোদ্দুরের মাঝে সূক্ষ্ম একটা শয়তানি আছে,,,,যেটা কেউ ধরতে পারে না।
চলবে,