#অনুভূতির_অন্তরালে
#পর্ব:৩
#Devjani
হঠাৎ রোদ্দুর ভাইয়ার কি হলো কে জানে?মাঝ রাস্তায় গাড়িটা থামিয়ে রাগী দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকাল। আচ্ছা আমি কি কোনো রাগার মতো কথা বলেছি?কথায় কথায় এত রেগে যায় কেন উনি?ভয় লাগে তো! উনি দাঁতে দাঁত চেপে বলল,আমি তোর স্যার হই।ভাইয়া না।আর তুইবা আমার কোন সম্পর্কের বোন হোস বলতো।লাস্টের কথাটা একটু শান্ত কন্ঠে বললেন তিনি।
— ইয়ে মানে,স্যার তো শুধু কলেজে।তাই না ভাইয়া?
বলার সাথে সাথে আবার ওনার অগ্নি দৃষ্টি দেখে ফ্যাকাসে হেসে বললাম, মানে স্যার। আচ্ছা স্যার বলব।এখন তো চলুন। আম্মু টেনশন করছে।দেখুন কল করছে।
— তো ধরছিস না কেন?
— ফোনে তো চার্জ নেই।বন্ধ হয়ে গেছে।
— তাহলে বুঝছিস কিভাবে আন্টি ফোন করছে?
— আরে,,,,,,,ঐটা হলো মনের কানেকশন।মনের মাধ্যমে বুঝতে পারছি।সবার সাথেই তো আমার মনের কানেকশন আছে।
— ওহ্,ভালো!সবার মনের সাথেই আছে। শুধু আমার মনের সাথেই তোর কানেকশন নেই।থাকলে হয়ত,,,,,,,,,,,
— অ্যাহ?
— কিছু না গাধী!
বলে উনি গাড়ি চালানো শুরু করলো। বুঝলাম না হঠাৎ গাধীর কি করলাম?ওহ্!আমি তো ভুলেই গেছি ওনার কাছে আমি বরাবরই গাধী। কিন্তু উনি!নিজেকে কি মনে করে।
রোদ্দুর ভাইয়া ওনাদের এ্যাপার্টমেন্টের সামনে গাড়ি থামিয়ে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলেন,গাড়ি থেকে নাম আরু।নয়তো ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিব।
— এটা কি ধরনের কথা হুম?আমি আপনার গাড়িতে উঠিনি।আপনি উঠিয়েছে।আমাকে আমার জায়গায় পৌঁছে দিন।নয়তো আমিও নামছি না।
— শুনবি না আমার কথা?
— না।
— ভেবে দেখ পরীক্ষায় নম্বর কম দিব।ভালো হবে না?
— আপনি?
— তোর স্যার!
কথা না বাড়িয়ে গাড়ি থেকে নেমে পড়লাম। রোদ্দুর ভাইয়াদের এ্যাপার্টমেন্টের পাশের এ্যাপার্টমেন্টে আমরা থাকি। কিন্তু আমার প্রবলেম সেটা নি। প্রবলেম হলো রোদ্দুর ভাইয়ার পোষা ভাইয়ার পোষা কুকুর টাইগার।।আমার সাথে তার কিসে শত্রুতা কে জানে!আমাকে দেখলেই ঘেউ ঘেউ শব্দে ভয় দেখানো শুরু করে।আর এই কুকুর নামক প্রাণীটাকে আমি বরাবরই ভীষণ ভয় পাই।
আমি নামার সাথে সাথে কুকুরটা হাজির।সাথে তার বিখ্যাত ডাকটা তো আছেই। কুকুরট কে দেখেই ভয়ে আবার গাড়ির ভেতরে ঢুকে বসে পড়লাম। রোদ্দুর ভাইয়া ছোট ছোট চোখ করে তাকালেন।
— আবার কি হলো?আমার গাড়ি থেকে নামতে ইচ্ছে করছে না বুঝি?
— আরে আপনার কুকুর।
— থাপ্পড় দিব কুকুর বলবি তো। টাইগার বলবি টাইগার!
— ওই আরকি একই তো হলো। আপনার কুকুরটাকে থুক্কু টাইগারকে একটু সরান না।ভয় লাগে তো।
— ঢং করার জায়গা পাস না?
— সত্যি বলছি ভয় লাগে।
— আচ্ছা তুই নাম দেখছি তোর কেমন ভয় লাগে!
রোদ্দুর ভাইয়া এই কথা বলেই গাড়ি থেকে নেমে গেল। আমি বসে আছি। কুকুরটা আমির সাইডে।আগে ভাইয়া তাড়াবে তারপর নামব। কিন্তু ভাইয়া তাড়ানোর পরিবর্তে মাথা হাত দিয়ে আদর করা শুরু করলো। রোদ্দুর ভাইয়ার ভাব দেখে মনে হচ্ছে তাড়ানোর ইচ্ছে নেই। কিভাবে থাকবে!সবসময় তো আমাকে বিপদে ফেলার চিন্তায় থাকে।
ভাইয়া আর কুকুর ব্যস্ত এই সুযোগে তাড়াতাড়ি গাড়ি থেকে নেমে পেছনে ঘুরতে কুকুরের ডাক।কুকুরটা চারদিকে গর্জন করতে করতে ঘুরছে।ভয়ে রোদ্দুর ভাইয়ার পেছনে গিয়ে দাঁড়ালাম। কিন্তু এই রোদ্দুর ভাইয়া ভাবলেশহীন ভাবে দাঁড়িয়ে আছে।মনে হচ্ছে ব্যাপারটা তার কাছে খুবই আনন্দের।আমি যে ভয় পাচ্ছি সেদিকে তার কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই।ভাইয়াকে হালকা ধাক্কা দিলাম।
— ভাইয়া কিছু করেন না।
ভাইয়া উল্টো রাগী গলায় বলল,আবার ভাইয়া!
— সরি,স্যার!এটাকে তাড়ান না। বাসায় যাব তো। আম্মু বকা দিবে।দেরী হয়ে যাচ্ছে।
— তোকে আন্টি বকা দিলে আমার কি!
বলে তিনি কুকুরটার সামনে গিয়ে বসে।বলে,নো টাইগার।গাধার পেছনে দৌড়ানো ভালো না।
আমি প্রতিবাদ করে বলে উঠি,আপনি আমাকে শুধু শুধু গাধা বলেন কেন?
— আমি তো গাধা বলেছি।আমি জাস্ট ওকে শিখাচ্ছিলাম গাধার পাছনে না দৌড়াতে।বাই দা ওয়ে, তুমি কি নিজেকে গাধা মনে করো নাকি?
— আপনি তো আমাকে উদ্দেশ্য করেই বলেছেন তাই না?
— তুই যা ভাববি।আমি ওকে দৌড়াতে নিষেধ করেছি।ওকি তোর পিছনে দৌড়াচ্ছিল নাকি। হুম?
— কিন্তু,,,,,,
— এই তুই কি আমার সাথে ঝগড়া করবি নাকি।
এই মানুষটার সাথে কথা বলা মানে ঝগড়া করা।তাই কথা না বাড়িয়ে তাড়াতাড়ি বাসার দিকে এগোতে থাকলাম।
☆☆☆
— শোনেন না,,,আমাকে একটু বাসায় পৌঁছে দেবেন?
— তোমাকে ইম্পসিবল।তোমার জন্য আরাদ্ধা চলে গেছে।বসে থাকো এখানে।রাগী গলায় বলে শ্রেয়ান।
— সরি।আপনি আরুর পিছনে এত লেগে থাকেন কেন?
— আমার ইচ্ছা তোমাকে কেন বলব?তোমার কি?
— আমার ব্যাপারটা ভালো লাগে না।
— তো আমি কি করব?বলে শ্রেয়ান উল্টোদিকে হাঁটা শুরু করে।
অদ্রির উপর ভীষণ রাগ হচ্ছে তার। সেই সাথে আরাদ্ধার উপরও। ভেবেছিল আজকে আরাদ্ধাকে তার মায়ের সাথে দেখা করাবে। কিন্তু কখন আরাদ্ধা চলে গেছে টেরই পায় নি।
অদ্রি শ্রেয়ানের পিছন পিছন ছুটে আসে।শ্রেয়ানের সাথে তাল মিলিয়ে হাঁটতে থাকে।আড় চোখে একবার দেখে নেয়।শ্রেয়ানের চোখেমুখে আজকাল ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট।সহজে হাসে না।অথচ আগে সবসময় হাসিখুশি থাকতো। প্রিয় মানুষটার এ অবস্থাতে অদ্রির খারাপ লাগছে। কিন্তু যার জন্য খারাপ লাগছে সে কি বুঝতে পারছে না?
শ্রেয়ান ওর গাড়ির সামনে গিয়ে অদ্রিকে দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকায়। শান্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করে, তুমি কি সত্যিই একা যেতে পারবে না?
অদ্রি গলা ঝেড়ে বলে,পারব।আমি আসি।
কথাটা বলে অদ্রি পেছনে ঘুরতেই হাতে টান পড়ে।
শ্রেয়ান বলে, তুমি যেতে পারো।আমার সমস্যা নেই।
অদ্রি একটু ভাব দেখিয়ে বলে, আমি যেতে পারব।আপনাকে এত ভাবতে হবে না।হাত ছাড়ুন।
— বললাম তো,আমার সাথে চল।আর যদি না যাও তাহলে,,,,,,
— তাহলে?
— আমি চলে যাচ্ছি।ওকে?
— এই না না।চলুন।
অদ্রি শ্রেয়ানকে এক পলক দেখে নেয়।আর কথা বাড়াল না। চুপচাপ গাড়িতে উঠে বসে।
☆☆☆
ঘড়ির কাঁটায় সন্ধ্যা ছয়টা বাজছে।বইয়ের পাতায় বিরক্তি নিয়ে মুখ গুজে বসে আছে আরাদ্ধা।সামনে বসে আছে রোদ্দুর।তাকে হার্ট সম্পর্কে বোঝাচ্ছে। বাজেভাবে ফেঁসে গেছে সে।বাসায় এসে শুধু বলেছিল নতুন স্যার রোদ্দুর আর বিকেলের দিকে বলেছিল পড়ি বুঝতে পারছে না।ব্যস এতটুকুই!
সন্ধ্যায় তার মা জোর করে তাকে রোদ্দুরের কাছে পড়তে পাঠিয়েছে।
এতক্ষণ পড়ায় মনোযোগ থাকলেও এই মুহূর্তে রোদ্দুরের পড়ার প্রতি তার মনোযোগ নেই। রোদ্দুরের পড়ার টেবিলের উপর রাখা স্টেথোস্কোপটা তাকে প্রবলভাবে আকর্ষণ করছে।
রোদ্দুর আরাদ্ধাকে প্রশ্ন করে, কোনো কিছুতে আর সমস্যা আছে?কি বলেছি বুঝেছিস?
আরাদ্ধা হঠাৎ মুখ ফসকে বলে ফেলে,স্টেথোস্কোপটা দিয়ে আপনার হার্টবিটটা চেক করি?
— কীহহ? রোদ্দুর শান্ত কন্ঠে আরাদ্ধির দিকে তাকায়।
আরাদ্ধা ঠোঁট উল্টায়।বলে,এই বিষয়টা এখনো বুঝি না।তাতে কি!একটু দেখ।প্লিজ!
রোদ্দুর তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায়।আরাদ্ধা ভাবছে রোদ্দুর হয়ত এখন তাকে বকা দিবে। মুখ দেখে তাই মনে হচ্ছে।আবার নাও দিতে পারে।বকার মতো কোনো কথা তো বলেনি।কিন্তু কখন যে এই মানুষটা শান্ত থাকে আর কখন রেগে যায় বুঝতে পারে না সে। রোদ্দুর চরিত্রটা সবসময়ই তার কাছে রহস্যজনক।
চলবে,