#অনুভূতির_অন্তরালে
#পর্ব:১
#Devjani
“– পরের মেয়ে পরের মেয়েই হয়।এতো আদিক্ষেতা করার কি আছে। যত্তসব!রেজাল্টাই তো বের হবে।কি অবস্থা হবে আমার জানা আছে।এত অভিনয় করার কি হয়েছে?
দাদির এরূপ কথা শুনে খারাপ লাগলো।এটা প্রায়ই বলে দাদি। কারণ আমি আমার বাবা মায়ের এডোপ্টেড চাইল্ড।অন্যান্য দিন হলে কেঁদে দিতাম।আজ দিচ্ছিনা কারণ ভীষণ টেনশনে আছি। এইচএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট দিবে আজ।দোয়া করছি যেন অল সাবজেক্টে এ প্লাস পাই।
সাধারণত রেজাল্টের ব্যাপারে আমি বরাবরই রিল্যাক্স থাকি। কিন্তু এখন এই ব্যাপারটায় আমি ভীষণ সিরিয়াস। কারণ ওই ডেভিল মার্কা লোক রোদ্দুর রেজওয়ান!ওনাকে দেখাতে চাই আমিও কোনো অংশে কম না।
ওনার জন্য গত একমাস ধরে আম্মুর কাছে বকা খেয়ে আসছি। আম্মুর মতে, উনি এত ভালো স্টুডেন্ট আমি কেন নই?
আজব!আমি জানি আমি ভালো স্টুডেন্ট না।আবার খারাপও না। স্কুলে সবসময় আমার রোল এক থেকে দশের মধ্যে থাকে। কিন্তু আম্মু সবসময় তার বান্ধবীর ছেলে ওই রোদ্দুর ভাইয়ার সাথে আমার কম্পেয়ার করতে থাকে।
ব্যাপারটা আমার একদম পছন্দ নয়।এমনেও রোদ্দুর ভাইয়া আমার থেকে কয়েকবছরের বড়। এক্ষেত্রে ওনার সাথে আমার কম্পেয়ার করে কি লাভ!এই ব্যাপারটাই আম্মু বুঝে না। এই জন্য আমিও কিছুদিন আগেই বলে দিয়েছি সব বিষয়ে এ প্লাস না পেলে মেডিকেল পড়ব না।এটা আমার কাছে চ্যালেঞ্জ। কারণ আমি একজন ডাক্তার হতে চাই।
তাছাড়া এমনেও রোদ্দুর ভাইয়াকে আমার ভালো লাগে না।এই পর্যন্ত যতবার ওনার সাথে আমার দেখা হয়েছে ঝগড়া ,কথা কাটাকাটি ছাড়া কিছুই হয় নি।আই হেইট দিস গায়!
তবে ভালো রেজাল্টের ব্যাপারটা আরও আগে বললেই পারতো। তাহলে পরীক্ষার আগে আরও ভালো করে পড়তাম।
হঠাৎ কলিংবেল বাজতেই আম্মু গিয়ে দরজা খুলে দিল। আব্বু এসেছে।দৌড়ে গিয়ে বললাম, আব্বু আমার রেজাল্ট,,,,
— বের করনি? আচ্ছা সমস্যা নেই আমি বের করে দিচ্ছি।
আব্বু গিয়ে সোফায় বসল। কিছুক্ষণ ফোন ঘেটে বলল,জেনে গেছি!
সাথে সাথে আম্মু জিজ্ঞেস করে, মোহনের রেজাল্ট কেমন হয়েছে?
— ৪.৮৫।
রেজাল্ট শুনে পুরোপুরি চুপসে গেলাম।হায়,কি ভাবলাম আর কি হলো!
— বললাম না দেখবি তোরা! পড়াশোনাও করে না। সারাদিন ফোনের উপর থাকে।ওর কি আর আমাদের মান সম্মান নিয়ে এত মাথাব্যথা আছে?
আব্বু ইশারায় দাদিকে চুপ করতে বলল।হয়ত আমার সামনে আসল পরিচয় তুলতে চায় না।তাতে কি!আমি তো জানি সত্যিটা জানি।আমি এডোপ্টেড।তবে এতে আমার কোনো মাথাব্যথা নেই।
দাদির কথায় পাত্তা না দিয়ে আম্মুর দিকে তাকালাম। আম্মু মন খারাপ করে কিচেনের দিকে চলে গেল। কান্না আসছে।সব সাবজেক্টে এ প্লাস পাব ভাবছিলাম।তবে রেজাল্ট যাই হোক না কেন মেডিকেলে তো আমি পড়বই।হুহ!
নিরর্থক বিষয়ের জন্য স্বপ্ন নষ্ট করার কোনো মানেই হয় না।
আব্বুকে বললাম, আমি মেডিকেলে পড়বই।একজন ডাক্তার হবো। তুমি আবেদন কর।
কথাটা বলে আম্মুর খোঁজে কিচেনের দিকে গেলাম। আম্মু কাজ করছে। মুখে মন খারাপের ছাপ স্পষ্ট। পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলাম। সাথে সাথে আম্মু রাগী গলায় বলল,ছাড় আমাকে!করিস না পড়াশোনা।ছেড়ে দে সব।কি রেজাল্ট করেছিস!
— আম্মু,সরি! পরের বার থেকে ভালো করে পড়ব।প্রমিস!
— এই এক কথা শুনে আসছি সেই কবে থেকে। মুখস্থ হয়ে গেছে।
— আম্মু আব্বুকে বলেছি মেডিকেলে আবেদন করতে বলেছি।আই প্রমিস, চান্স পেয়ে একজন ভালো ডাক্তার হয়ে দেখাব।
— তোর এইসব ফালতু প্রমিস আমাকে দেখাবি না।তুই কি কি করতে পারিস জানা আছে আমার। রোদ্দুরের কাছ থেকে কিছু শিখতে পারিস না!
আম্মুর মুখে রোদ্দুর ভাইয়ার কথা শুনে মেজাজ খারাপ হয়ে গেল।তেজ দেখিয়ে বললাম,এই আম্মু একদম রোদ্দুর রোদ্দুর করবা না।আমিও মেডিকেলে চান্স পেয়ে দেখাব। আমিও কোনো অংশে কম নই।হুহ!”
— আরু,,,,, তাড়াতাড়ি কর।তোর আব্বু নিচে গাড়ি নিয়ে ওয়েট করছে।
মায়ের ডাকে ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে এলাম।আহ্! শেষ পর্যন্ত মেডিকেলে চান্স পেয়েই গেলাম। আমিও কোনো অংশে কম নই।হুহ!
আরাদ্ধা কায়নাত আমি।কম হই কি করে!
চুলগুলো ঠিক করে এ্যাপ্রোনটা পড়ে নিলাম। আয়নায় নিজেকে একবার দেখে নিলাম।ইসস,,, নিজেকে কেমন ডাক্তার ডাক্তার লাগে!
তাড়াতাড়ি এ্যাপার্টম্যান্টের নিচে গেলাম। আব্বু পেছনের ছিটে বসে পত্রিকা পড়ছে।আর ড্রাইভিং সিটে করিম চাচা। গিয়ে আব্বুর পাশে বসে পড়লাম।আজ একটু তাড়াতাড়িই যাচ্ছি। নতুন একজন স্যার আসবে।লেট না করাই ভালো।
আব্বু মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে জিজ্ঞেস করল,গুড মর্নিং মাই প্রিন্সেস!
— গুড মর্নিং, আব্বু!
— পড়াশোনা কেমন চলছে?
— ভালো।
— ভেরি গুড।
আব্বুর সাথে কথা বলতে বলতে কলেজের সামনে চলে এলাম।
গাড়ি থেকে নামতেই অদ্রি এসে হাজির।আমাকে দেখে মুখ টিপে হাসল।বলল,রানী সাহেবা আজকে এত তাড়াতাড়ি!এম আই ড্রিমিং?
আমিও অদ্রির হাসির প্রত্যুত্তরে হাসলাম।
— ঐ আরকি আমি,,,,
হঠাৎ একটা কালো রঙের গাড়ি ধূলা উড়িয়ে সামনে এসে দাঁড়ালো। কথাটা শেষও করতে পারলাম না ধূলা উড়ার জন্য।অসহ্য!
অদ্রি আমাকে টেনে একসাইডে নিয়ে গেল।তবে ওর চোখগুলো গাড়ির উপর স্থির রাখল।আমিও ওর সাথে তাল মিলিয়ে চোখগুলো সেখানে রাখলাম।
গাড়ি থেকে একটা ছেলে নেমে এলো। সাদা শার্টের উপর কালো ব্লেজার আর জিন্স।মুখ দেখার উপায় নেই। কালো মাস্ক লাগানো মুখে।তবে ওনার মাস্কের উপর দৃশ্যমান কপাল দেখে বোঝা যাচ্ছে উনি অনেক ফর্সা।
উনি নেমে চারপাশে একবার দেখে নিল।কেমন একটা লজ্জা লাগায় চোখ নামিয়ে ফেললাম। কিন্তু আশেপাশে তাকিয়ে দেখি শুধু আমি বা অদ্রিই না, সবাই ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে ওনার দিকে।আর একটু হলে হয়ত চোখগুলোই বেরিয়ে আসবে।
পাশে তাকিয়ে দেখি শ্রেয়ান ভাইয়া আমার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
রোদ্দুর ভাইয়া সম্পর্কে যাই বলি না কেন বাস্তবে ওনাকে ভীষণ ভয় পাই।উনি অত্যন্ত বদমেজাজি,রাগী ধরনের লোক।এই ওনার পর যদি আর কাউকে ভয় পাই সে হলো এই শ্রেয়ান ভাইয়া।সবসময় রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে আমার দিকে। মাঝে মাঝে বকাও দেয়।
অদ্রিকে টেনে ক্লাসে চলে এলাম।সবাই কথা বলছে।একটু পর ক্লাস শুরু হবে।
তাই আমি বই খুলে পড়তে বসলাম।আম্মুকে প্রমিস করেছি,সবসময় ভালো রেজাল্ট করার চেষ্টা করব সবসময়।
টানা ১০মিনিট পড়ার পর কারো পায়ের আওয়াজ শুনলাম। আশেপাশে তাকিয়ে দেখি সবাই দাঁড়িয়ে আছে।আমিও দাঁড়িয়ে গেলাম। কিন্তু সামনে তাকাতেই আমি পুরোপুরি শক খেলাম।
— হ্যালো! আই এম ডাঃ রোদ্দুর রেজওয়ান।এন্ড ফ্রম নাও অন আই এম ইওর নিউ টিচার।
আল্লাহ্!আমার সামনে রোদ্দুর ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছে।তাও টিচার হয়ে!ইজ ইট ট্রু?স্বপ্ন দেখেছি না তো!ওনার পোশাকটা দেখে একটু আগের ছেলেটার কথা মনে পড়ে গেল।তার মানে ওই সময়ের ওই ছেলেটা রোদ্দুর ভাইয়া!
রোদ্দুর ভাইয়ার দিকে হা করে তাকিয়ে আছি।আগে প্রায়ই দেখা হতো কিন্তু লন্ডন যাওয়ার পর আজ প্রায় পাঁচ বছর পর ওনাকে দেখছি।
হঠাৎ উনি আমার দিকে তাকিয়ে জোরে ধমক দিল। বুঝলাম না কি হলো! আশেপাশে তাকিয়ে দেখি সবাই বসে আছে। শুধু আমিই দাঁড়িয়ে আছি।ওনার দিকে তাকিয়ে দেখি উনি রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।একটু মেকি হাসি দিয়ে বসে পড়লাম।হায় কপাল,উনি এখন আমার টিচার!না জানি ভাগ্যে কি কি আছে, আল্লাহ্!
হঠাৎ অদ্রির দিকে তাকিয়ে দেখি ও মুখ টিপে হাসছে। ভ্রু কুঁচকে তাকালাম ওর দিকে। ইশারায় হাসার কারণ জিজ্ঞেস করলাম।ও পাশে তাকাতে বলল।
অদ্রির কথায় পাশে তাকাতেই মেজাজটা ধপ করে গরম হয়ে গেল।
(ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।কেমন হয়েছে জানাবেন।)