অনুভবে_তুমি পর্ব-৬/৭/৮
#সাইমা_ইসলাম_প্রীতি
.
তিরা আপু আর তার ফ্রেন্ডরা যা ইচ্ছে বলে অপমান করেই চলেছে।
তিরা আপুর আরেকটা ফ্রেন্ড বলল,
-আরে তিরা এসব কার সাথে কথা বলছিস হে?আর সব র্থড ক্লাস ফ্যামিলির মেয়েরা এমনি হয়।নিজেদের বাবাতো ফকির আর বড়লোক কোন ছেলে দেখলেই হলো,,,যত্তোসব।
এই কথাটা শুনে আর থেমে থাকতে পারলাম না।চোখ দিয়ে তো টপটপ করে পানি ঝরেই চলেছে।আমি কিছু বলতে যাবো তখনই,,,
.
-কাকে র্থাড ক্লাস আর রাস্তার ফকির বলছো তোমরা হ্যা?শুধুমাত্র মার্জিত পোশাক পড়লেই কেউ র্থাড ক্লাস,আর তার বাবার টাকা না থাকলেই তার কোনো স্ট্যাটাস নেই সেটা তোমায় কে বললো?(রূপ)
-রূপ তুমি ভুল বুঝছো আমাকে।আসলে এই মেয়েটা অনেক খারাপ।ও কি বলেছে জানো?ও বলেছে আমি নাকি,,,,
(তিরাকে থামিয়ে দিয়ে)
-দেখো তিরা ও কি বলতে পারে আর তোমরা কি করতে পারো তা আমার ভালো করেই জানা আছে।শুধু একটা কথা বলি ভালো করে তোমার এই ছোট্ট ব্রেইনহীন মাথায় ডুকিয়ে নাও।
ও কোনো র্থাডক্লাস মেয়ে নয়।যদি কেউ হয়েই থাকে তাহলে সেটা তোমরা।না আছে কোনো গুন,না আছে মনে কোমলীয়তা আর না আছে ভালো আচরণ করার ক্ষমতা।
আর হ্যা ওর বাবার টাকা নেই।তোমার বাবার আছে।তো তোমার বাবার টাকা কি তুমি উপার্যন করে দাও?সেগুলো তার কষ্টের ইনকাম যেগুলো তুমি শুধু উড়াতেই পারো।তাহলে তো তুমি আরো বড় ফকির।
আর এতটুকু ভদ্রতাটুকুও তোমার নেই যে ওর মৃত বাবা সর্ম্পকে তুমি এটা বললে।
-রূপ তুমি কিন্তু আমাকে অপমান করছো।আই ওইল সি হার।
-তোমার মতো মেয়ের সাথে এর চেয়ে বেশি কিছু আসে না।আর দেখো ভালো করেই দেখো আমার মিহিন দেখার মতোই।
.
আমি শুধু হা করে দেখলাম ওনি আমার জন্য তিরা আপুকে এভাবে বললেন!
কথাগুলো শুনে তো তিরা আপু রাগে কটমট করছিল তার মধ্যেই ওনি আমার হাত ধরে নিয়ে আসেন দেখে পারেনা এখনি খেয়ে ফেলে আমাকে।
.
রূপ ভাইয়া আমাকে একটা ফাঁকা ক্লাসে নিয়ে এসে ঝাঁকি দিয়ে হাতটা ছেড়ে দিলেন।
-এই মেয়ে তোমাকে না আমি এক থাপ্পর দিয়ে সবগুলো দাঁত ফেলে দিব বললাম।
(রূপ ভাইয়ার এই কথা শুনে তো আমি ভয়ে আরো বেশি কাঁদছি)
-এই কান্না বন্ধ করবে নাকি সত্যি সত্যি দিব থাপ্পর?
(তাড়াতাড়ি চোখ মুছে নিলাম)
-তুমি কি বোবা?কিছু বললেনা কেনো তখন?(রেগে)
-বললে যে বেয়াদবি হতো।আর যখন বুঝাতে চাইছিলাম তখন তো আপনিই এত্তোগুলা অপমান করে দিলেন।আপু কিন্তু সত্যিই অনেক কষ্ট পেয়েছেন।
.
মিহিনের কথা শুনে রূপ কিছুক্ষন থ মেরে রইল।একটা মেয়ের মন এতটা পবিত্র আর অবুঝ কি করে হতে পারে?
-আর ও যে কষ্ট দিয়েছে তোমায়।
-মানুষ মাত্রই তো ভুল হয়।তিরা আপুর ও হয়েছে।ঠিক মতো বুঝালেই তো হতো।
-যে ইচ্ছে করে ভুল করে তাকে বুঝালেও কিছু হয় না।
-কিন্তু,,,,
-কিউটি ইউ নো হোয়াট তোমার এই কোমলতাকেই আমি সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি।এটাই বারবার তোমার প্রতি ঝুকিঁয়ে দেয় আমায়।
.
এই কয়েকদিনে ডান্স প্রেক্টিসের জন্য মিহিন আর রূপ একে অপরের অনেকটা কাছে চলে এসছে।ডান্স কাম্পিটিশান এইবারও রূপই জিতে।
.
রিদ্দি আর ইশাও এখন একে অপরকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছে।শুধু বাকি এখন রূপ-মিহিনের প্রেম।
মিহিন যে রূপকে ভালোবাসে রূপ বুঝলেও মিহিন নিজেই তা বুঝতে পারছে না।
জীবন বড় দোটানায় ফেলে দিয়েছে ওকে।
কিসের দোটানা সেটাও জানা নেই মিহিনের।জীবনে নিজের সব প্রিয় মুখ গুলোকে নিজের চোখের সামনে হারাতে দেখেছে তো তাই,,,ভয় হয়।বড্ড বেশি ভয়।রূপকে ভালোবেসে বাকিটা যা আছে নাও আবার হারিয়ে না ফেলে।
মনটা খুব টানে রূপের প্রতি।ইচ্ছে করে,,,ইচ্ছে ছুটে চলে যেতে ওই বুকের মাঝে।লুকিয়ে ফেলতে নিজেকে রূপের অস্তিত্বের মাঝে।ইচ্ছে করে ঐ চোখ দুটোর দিকে তাকিয়ে থাকতে যে চোখগুলো ভাষা একটাই
“ভালোবাসি মিহিন
. ভালোবাসি
যতোটা বাসা যায় তার চেয়ে অনেক অনেক অনেক বেশি”
কিন্তু যাওয়া হয়না ওই বুকে আর হারানো হয়না নিজেকে।দিন শেষে পাওয়া না পাওয়ার খাতার হিসেবে গরমিলে হয় যায় শূণ্য।শুধু ভয় এতো সুখ সইবে তো কপালে???
.
চলবে
#অনুভবে_তুমি
পর্ব-((৭))
#সাইমা_ইসলাম (প্রীতি)
.
মিহিনের দিনকাল ভালোই কেটে যাচ্ছে পড়ালেখা আর রূপের খুনসুটিতে।
এর মধ্যেই আমার ইয়ার ফাইনাল এক্সাম শুরু হয়ে আবার শেষও হয়ে গেছে।এই কয়েকদিন রূপ ভাইয়ার সাথে তেমন একটা দেখা হয়নি।দেখা হয়নি বললে ভুল হবে আমিই এড়িয়ে চলেছি।তবে কেনো যেন কষ্ট হয়েছে খুব এভাবে এড়িয়ে চলতে।তবে সামলে নিয়েছি নিজেকে সবার অগোচরেই।রূপ তো না অজুহাতে শুধু খুঁজে বেড়িছে আমাকে।
তবে আর যাই করিনা কেনো ওনার গানকে ইগনোর করার ক্ষমতা আমার হয়নি।তাই যখনি গান করতে দেখেছি প্রত্যেকবারই শুনেছি তবে লুকিয়ে।
.
একদিন রাতে মনোযোগ দিয়ে বসে পড়ছি।হঠাৎ ফোনটা টুং করে বেজে ওঠলো।পাত্তা না দিয়ে আবার বইয়ে মুখ গুঁজতেই একসাথে কয়েকবার টুং করে বেজে ওঠলো ফোনটা।মেজায গরম করে হাতে নিতেই দেখি একটা আননোন নম্বর থেকে সতেরটা ম্যাসেজ আসছে।কিছু না ভেবেই রিপ্লাই দিয়ে দিলাম।
“”ওই হারামজাদা।ঘরে কি বউ না তোর যে রাতে হুদাই মাইয়াদের ম্যাসেজ পাঠাছ।টাকা বেশি হইয়া গেছে না?আজাইরা ডিস্টার্ব।লাল হনুমান।চায়ের কাপে পইড়া মরবি তুই।আর একটাও যদি ম্যাসেজ করছস না তাইলে তোরে ফ্রাই করা বান্দররে খাওয়ামু””
মিহিনের রিপ্লাই দেখেতো রূপের হার্ট-এট্যাক করার উপক্রম।ও ঠিক হাসবে নাকি কাঁদবে বুঝতে পারছে না।তবে একটু একটু রাগ ঠিকই হচ্ছে।
ওর রিপ্লাই পাওয়ার সাথে সাথেই রূপ কল করে ওকে।
এতক্ষন তো ম্যাসেজ করছে আর এখন সেই আননোন নম্বর থেকে খুন করতে ইচ্ছা করছে।বিরক্ত হয়ে ফোন তুল্ল মিহিন।
-আসসালামু আলাইকুম।কে আপনি?অনেকক্ষন ধরে ডিস্টার্ব করছেন আমাকে।
-ওহ আচ্ছা।আর তুমি যে রাতের ঘুমটাও কেড়ে নিয়েছ আমার।
(কন্ঠটা খুব বেশি চিনাচিনা লাগছে)
-কে,,,কে।কে বলছেন?
-এতটা ভালবেসেছি যে নিজের পরিচয়টাও যে হারিয়েছি তোমাতে।
-কে,,রূ,,রূপ ভাইয়া?
-আর কতদিন ভাইয়া বলবে বলতো?
-আপনি এ,,এতরাতে?তাহল আপনিই ম্যাসেজ করছিলেন এতক্ষন।
-হুম।আর কি যেন বলছিলে তুমি?আমি হারামজাদা?আমাকে ফ্রাই করে কাকে যেনো খাওয়াবে?
-আসলে ভাইয়া ওইটা ভুল হয়ে গেছে।সরি।
-কোন সরিটরি নাই।শাস্তি পেতেই হবে এসবের।
-না না না(ভয় পেয়ে) আর জীবনেও হবেনা কথা দিলাম।এইবারের মতো মাফ করে দিন প্লিজ।
-ওকে তা করতে পারি তবে একটা সর্তে।
-কি?
-আর কোনো দিন ভাইয়া বলা যাবে না।
-এএএএএ,,,,,
-এএ না হ্যা।না হলে কিন্তু,,,
-ওকে।চেষ্টা করব।
এভাবে রাত প্রায় সাড়ে তিনটা পযর্ন্ত গল্প করেছি রূপের সাথে।
মাঝে মাঝেই হুটহাট গভীর রাতে ফোন দিয়ে বলতো বারান্দায় আসত একটু আমি দাড়িয়ে আছি সেই কখন থেকে।ওনার এই জিনিসটা আমার সবচেয়ে বেশি ভালোলাগত ।যদিও বুঝতে দেইনি কখনো।
.
আজ পড়ার চাপ অনেক বেশি।মিরাজ স্যার একটা এসাইমেন্ট দিয়েছে।কিছু পৌরণিক কাহিনী আর বেশ কিছু পুরনো জাহাজের নাম কালেক্ট করে তার ডিটেল্স এসাইনমএন্ট করে জমা দিতে হবে।
আমার আবার এসকল বিষয়ে ঝোঁক একটু বেশি।তাই ব্যাপারটাকে অনেক ভালোলাগার সাথেই নিলাম।
কিন্তু সমস্যাটা হলো সময়।শনিবারের মধ্যে কমপ্লিট করে দিতে হবে।মানে হাতে সময় মাত্র তিনদিন।তার মধ্যে আজ সারাদিন তো এখানেই কেটে যাবে।
তাই দেরি না করে চলে এলাম লাইব্ররিতে।এখানে এসব সম্পর্কিত কিছু বই আছে সেটা জানি।পুরোপুরি না পড়লেও এই বইগুলোর কিছুটা আমি আগেই পড়েছিলাম।
এখন সেগুলোই খুঁজছি যদি কিছু হ্যাল্প এখান থেকে পাই তাই আর কি।
পুরো ভার্সিটির সব ক্লাস শেষ তাই ভার্সিটি আর লাইব্রেরি ফাঁকা বললেই চলে।
ইশুর আবার লাইব্রেরিতে এলার্জি আছে।বই একদমই পড়তে চায়না।তাই বাধ্য হয়েই ইশুকে বাহিরে রেখে এলাম।লাইব্রেরিতে এখন আমি একাই।
বইটা খুঁজছি এমন সময় হঠাৎ পেছনে অনেক জোড়ে একটা আওয়াজ হলো।ভয়ে আমার হাতে যে বইটা ছিল তা মাটিতে পড়ে গেল।
কিন্তু পেছনে তাকিয়ে দেখি কেউ নেই।বেশ অবাক লাগল বেপারটা।কেঊ না থাকলে আওয়াজ আসবে কোথ্থেকে?
হঠাৎ পেছন থেকে কেউ একজন আমার মুখ চেঁপে ধরলো।না পারছি চেঁচেতে আর না পারছি কিছু করতে।তবে সেই হাতটা এমন ভাবে আমার মুখ চেঁপে ধরেছে যে আমি শ্বাস পর্যন্ত নিতে পারছি না।সেই লোকটা আমার মুখ চেঁপে ভার্সিটির পেছনের গেইটে নিয়ে এসে ছেড়ে দিলো।রেগে চিল্লাতে চিল্লাতে পেছনে ফিরে দেখি,,,,,
-এই কে অসভ্য লোক কোথাকার আমাকে এভা…..
(পেছনে তাকাতেই দেখি রূপ দাড়িয়ে আছেন)
রূপ কিছুটা কপাল কুঁচকে জিঙ্গেসা করলো,
– কে ? কাকে যেন কি বলছিলে তুমি। অসভ্য টাইপ কিছু একটা। তাই না?
-আরে না…..না (ভয়ে তোঁতলিয়ে) আপনি সব সময় এমন করেন ক্যান হ্যা?
-কেমন!
-এই যে এভাবে কেউ আনে নাকি? আমি ভয় পাইছি না।
-আচ্ছা আচ্ছা মিস রাগিনী ভুল হইছে আমার। আর করব না এমন। এখন তাড়াতাড়ি গাড়িতে ওঠে বসো।
-গাড়িতে ওঠবো মানে? (পুরোই বলদ হয়ে)ইশু আমার জন্য অপেক্ষা করছে।তাছাড়া আমি তো বইটাও নিতে পারলাম না।
-ওঠবে মানে ওঠবে।I don’t like qustion. So,do it.আর তোমার ইশাকে নিয়ে ভাবতে হবে না। ওর সাথে রিদ্দি আছে।
-না মানে বলছিলাম কি,,,,,
রূপ এমনভাবে চোক রাঙ্গিয়ে তাকালো আমার দিকে যে ভয়ে আমি তাড়াতাড়ি ওঠে পড়লাম গাড়িতে।
রূপ আমার পাশে বসেই গাড়ি স্টার্ট করলেন।আমার জোড়াজোড়িতে গাড়ির গ্লাসটা নামিয়ে দিলেন আর সাথে ছেড়ে দিলেন আমার পছন্দের রবীন্দ্র-সংগীত,,,
“”আমার একলা আকাশ থমকে গেছে রাতের স্রোতে ভেসে,
শুধু তোমায় ভালোবেসে।
আমার দিনগুলো সব রং চিনেছে তোমার কাছে এসে,
শুধু তোমায় ভালোবেসে।
তুমি চোখ মেলেলই ফুল ফুটেছে আমার ছাদে এসে,
ভোরের শেষের ঘুম ছুয়ে যায় তোমায় ভালোবেসে।
আমার একলা আকাশ থমকে গেছে রাতের স্রোতে ভেসে,
শুধু তোমায় ভালোবেসে।
আমার দিনগুলো সব রং চিনেছে তোমার কাছে এসে,
শুধু তোমায় ভালোবেসে।
. . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . .
আমার ক্লান্ত মন ঘর খুঁজেছে যখন,
আমি চাইতাম পেতে চাইতাম শুধু তোমার টেলিফোন।
ঘর ভরা অতঃপর আমার একলা থাকার সুর,
রোদ গাইতো আমি ভাবতাম তুমি কোথায় কতদূর।
আমার বেসুরো গিটার সুর বেঁধেছে তোমার কাছে এসে,
শুধু তোমায় ভালোবেসে।
আমার একলা আকাশ চাঁদ চিনেছে তোমার হাসি হেসে,
শুধু তোমায় ভালোবেসে।
. . . . . . . . . . . . . . . . . . . . .
অলস মেঘলা মন আমার আবছা ঘরের কোণ,
চেয়ে রইত ছুঁতে চাইত তুমি আসবে আর কখন।
স্রান্ত ঘুঘুর ডাক ধুলো মাখা বইয়ের তাক,
যেন বলছে বলে চলছে থাক অপেক্ষাতেই থাক।
আমার একলা আকাশ থমকে গেছে রাতের স্রোতে ভেসে,
শুধু তোমায় ভালোবেসে।
আমার দিনগুলো সব রং চিনেছে তোমার কাছে এসে,
শুধু তোমায় ভালোবেসে””
.
ঘুম ভাঙ্গতেই আশে-পাশে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম না ঠিক কোথায়।ঠিকঠাক হয়ে বসে নিজেকে আবিষ্কার করলাম রূপের গাড়িতে।কিন্তু ওনি তো পাশে নেই।
আসলে এতো সুন্দর একটা মুর্হূতে রবীন্দ্র-সংগীত শুনতে শুনতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম খেয়ালই নেই।
ঘড়িতে দেখলাম রাত আটটা বাজে । বাহিরে তাকিয়ে দেখলাম জায়গাটাকেও চিনতে পারছি না।কোথায় এটা?চারদিকে কেমন ঘন কূয়াশার চাঁদর ঘেরা।গাড়ির জানালার কাঁচগুলো সব লাগানো তারপরও কেমন যেন শীত শীত করছে।
আস্তে করে গাড়ি থেকে বের হয়ে পরলাম।নাহ সত্যিই এখানে আগে কখনো এসছি বলেতো মনে হয় না।
রূপ কেন নিয়ে এলেন এমন একটা জায়গায়? কি চাচ্ছেন টা কি ওনি? আর এখানে একা ফেলে যাওয়ার মানেটাই বা কি? খুব করছে আমার এখানে এভাবে একাকি দাড়িয়ে থাকতে।
রূপের সাথে থাকলে হয়তো এমনটা হতো না।যদিও ওনাকে আমি এখনো পুরোপুরি চিনা না,বুঝতে পারি না।তাও ওনার কাছে নিজেকে কেনো যেন পৃথিবী সব থেকে সুরক্ষিত মনে হয়।কিন্তু আমায় রূপই বা গেলেন কোথায়?
কেমন একটা গা ঝিনঝিন করছে।এমন সময়তো আর রেগুলার ঘুমাই ধা তাই হয়তো।
.
কিছুক্ষন একাই দাড়িয়ে রইলাম গাড়ির পাশে।ঠান্ডাতে হাত-পা সব কাঁপছে আমার।কিছুক্ষন বাদে রূপও চলে এলো।হাতে দুটো কফির গ্লাস।
-তুমি কখন ওঠলে?
-আপনি তো দেখি খুব বাজে একটা লোক।কেনো ছেড়ে গেছিলেন আমায়?
রূপ কিছুটা ঝুঁকে আমার কাছে এসে বলল
-এখনো তো কাছে এলামই না তাতেই বলছো ছেড়ে কেন গেলাম?
রূপের ঠোঁটে একটা দুষ্টু স্মাইল।
-আচ্ছা তাড়াতাড়ি ওঠে বসতো গাড়িতে।বাইরে অনেক ঠান্ডা।আর নাও এটা খেয়ে নাও।এই ওয়েদারের সাথে ভালোলাগবে খুব।
-হুম।আচ্ছা আমরা এখন কোথায়?আপনি আমাকে এখানে কেন নিয়ে এসছেন?
-দেখো না আশে-পাশে কতো জঙ্গল।তোমায় মের গুম করে ফেলব তাই।
ওনার কথা শুনে একটু একটু ভয় লাগছিল।তবে ভয়টা জঙ্গলের কারণে।আর মারার কথা শুনে তো হাসি আর চেপে রাখতে পারলাম না।
-এই এভাবে হাসছো কেনো? ভয় করছে না?
-আপনার এই কথা শুনলে যে কেউ হাসবে তাই।
-হাসির কি বললাম আবার।
-এটাই যে মেরে ফেলবেন আমাকে।
-কেনো পারিনা?
-যে কিনা আমার একচুল পরিমান কষ্টও সহ্য করতে পারেনা সে মারবে আমায়!লাইব্রেরি থেকে জোড় করে নিয়ে আসার সময় সামান্য কেটে যাওয়া এই হাতে ব্যান্ডেজ করতে গিয়ে যে আপনার চোখ দিয়ে পানি পড়েছে তা আপনার অগচর কিনা জানি না।আমি কিন্তু তার সাক্ষী।.
মিহিনের মুখে এই কথা শুনে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে রূপ।”মিহিন কিভাবে দেখল এটা?আমি তো,,,,
আর তাছাড়া ওতো ঘুমিয়েছিল তখন।নাকি,,”
-কি হলো?
রূপ আমার দিকে অনেকটা ঝুকে এসে বলল
-এতোই যখন বুঝো তখন ভালো কেনো বাসো না।এটা বুঝো না যে কষ্ট হয় আমার? যখন দূরে দূরে থাকো মনে হয়,,,মনে বুকের বাম পাশটা কেউ ছিড়ে আলাদা করে দিচ্চে।
বুঝতে হয় বুঝলে,বুঝতে হয় ভালোবাসার মানুষের কিছু চাওয়া পাওয়া বুঝতে হয়।
তার কষ্ট অনুভব করতে হয়।
বেধে রাখতে শিখতে হয় তাকে।
.
রূপের কথা গুলো শুনার পর কেমন যেন হাত-পা আর কান গরম হয়ে যাচ্ছে আমার।বুকের ধিপধিপ আওয়াজটা বেড়ে চলেছে আরো যেন এখনি কেই ছিড়ে ফেলছে।
এ কেমন অনুভূতি?
আগে তো এমন হয়নি। তাহলে আজ কেন?
.
-আ….। আমি….ভালোবা..সি না আপ..নাকে।
-তোমার চোখ দুটো যে অন্য কিছুই বলে আমায়।
রূপ পলকহীনভাবে তাকিয়ে আছে আমার চোখে আর পিষে ফেলছে আমার সব আমিত্ব।হারিয়ে ফেলছি নিজেকে।কিছুতেই সামলানো যাচ্ছেনা আর।
-এভাবে তাকাবেন না প্লিজ।সহ্য করতে পারিন আমি।
আমার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।অথচ আমি টের পাইনি।
রূপ মুছে দিল আমার চোখ।কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলল,
-মেরো না আর আমাকে এভাবে।কষ্ট হয় যে খুব। খুব কষ্ট।
.
.
To be continue?
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা
◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।
আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share
((৮))
মিহিনের মুখে এই কথা শুনে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে রূপ।
“মিহিন কিভাবে দেখল এটা?আমি তো,,,,
আর তাছাড়া ওতো ঘুমিয়েছিল তখন।নাকি,,”
-আচ্ছা আপনি কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন তা বলছেন না কেন আমাকে?
-বেশি কথা বলো তুমি।চুপচাপ চলতে থাকো।
আমারও আর কি করার যাচ্ছি ওনার সাথে।খুব ভয়ও করছে এভাবে যেতে।যদি একা পেয়ে কিছু করে!
ধ্যাত আমিও না!আমার মাথায় বোধ হয় দুনিয়ার সব আজগুবি জিনিস ছাড়া আর কিছুই আসে না।কতো ভাল মানুষ ওনি আর আমাকে কত্তোটা ভালোবাসে আর আমি কি ভাবছি এগুলো
।
উনি আমায় যেখানেই নিয়ে যাক না কেন সেখানেই যাব।রাত একটার বেশি বাজে বোধ হয়।
চোখ খুলতেই দেখি রূপ আমার দিকে ঝুকে আছেন।হঠাৎ করে এমন হওয়াতে অনেক ঘাবড়ে গেছিলাম আমি।ওনি সরে যাওয়া যাওয়াতে ঠিক হয়ে বসে খেয়াল করলাম সকাল হয়ে গেছে আর আমি গাড়ির ব্যাক সিটে।
-একটা মানুষ যে এমন পরিমানে ঘুমোতে পারে সত্যিই তোমাকে না দেখলে আমি যানতাম না।
-(চুপ করে বসে আছি)
-রাতে আবার ঘুমিয়েছো।কি ঘুমরে বাবাহ।
-তো,,,,কি ঘুমাবো না নাকি?
-ঘুমাবা।কিন্তু এভাবে?ঘুমাতে ঘুমাতে আমার পায়ের উপরই শুয়ে পড়ছো ডাইরেক্ট।সেজন্যেই তো ব্যাক সিটে নিয়ে আসছি।
ওনার কথা শুনে আমার লজ্জায় হাওয়ায় মিলিয়ে যেতে ইচ্ছা করছে।
.
.
.
মি. আফজালের খুব টেনশন হচ্ছে মিহিনের জন্য।আজ রাতের ফ্লাইটেই কক্সবাজার চলে যাচ্ছে মিহিন আর রাহি।খুব টেনশন আর কষ্ট হয় মেয়েটার জন্য।এইটুকুনি মা মরা মেয়েটাকে কতটাই না কষ্ট পেতে হচ্ছে।এতটা…… এতটা ভালোবাসা যেটাতে একজন অপরজনের জন্য নিজের সর্বস্ব ত্যাগ করতে পারে,,,কেনো পেলো না এই ভালোবাসা পরিনতি?অন্যকারোর পাপের জন্য?ভাবতেই ঘেন্না হয় মি. আফজাল রহমানের। নিজের বোনের প্রতি।কি দোষ ছিল এই অপূর্ণ দুটি প্রাণের যারা একে অপরের মাঝে খুঁজে পায় জীবনের পূর্ণতা।
মাঝে মাঝে ওনি ভাবেন রূপ ওর জীবনে না আসলেই হয়তবা ভালো হতো।
নষ্ট,কারোর পায়ের আঘাতে পিশে যাওয়া গোলাপের মতো হতো না মিহিনের জীবনটা।এখন তো বেঁচে থেকেই মরে গেছে মেয়েটা।
.
কথা গুলো ভাবতে ভাবতেই গাড়ি চালাচ্ছিলেন আফজাল রহমান।হঠাৎ ব্রেক কষে দেন।
-ওফ।কি যে করছি না আমি।মিহিনকে এয়ারপোর্ট দিয়ে আসতে গিয়ে তো রূপের কোন খবরই নিতে পারিনি।নিতামই বা কি করে এমনিতেই মিহিন মা আমার কেঁদে কেঁদে মরে যাচ্ছে।ওর সামনে রূপকে ফোন দিলে তো আর সামলাতেই পারতো না।
.
পকেট থেকে ফোন বের করে রূপকে ফোন করলেন ওনি।চার-পাঁচ বার রিং হওয়ার পর ফোন তুললো রূপ।চোখে মুখে তার বিরক্তির ছাপ।
কান দুটো আরো আগেই গরম হয়ে আছে।নিজের জীবনের এতো বড় সত্য যদি কেউ এভাবে জানে এমনটা তো হওয়ার ই কথা।
রূপের এখনো বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে যে মিহিন নামের কেউ ওর জীবনের এতবড় সত্য তাহলে কোথায় ও??
.
-হ্যালো রূপ,,,হ্যালো,,,।রূপ শুনতে পাচ্ছিস তুই আমায়? রূপ,,,।হ্যালো,,,।
-মিহিন কে?
-মি,,,হি,,ন! এ,,এটা আবার,,,কে?(ঘাবড়ে গিয়ে)
-কেনো মামা তুমি কি সত্যিই চিনো না মিহিন কে?
-না,,,না,,,কই নাতো।আমি জানি না তো।
-ভয় কেনো পাচ্ছো।আমি তো এমনি বললাম নামটা শুনা শুনা মনে হচ্ছিল তাই।কিন্তু তো এমন ভাবে নিচ্ছো যেন মিহিন নামের কেউ কোনো দিন ছিলো আমার লাইফে।
-(আল্লাহ্ বাঁচা গেছে।কপালে জমে যাওয়া ঘামটা মুছে নিলাম)কি করছিস এখন?
-এই তো নিজের ভালোবাসাকে খুঁজছি।
-মানে?
-কিছুনা শুয়ে আছি।বিজি আছি।রাখছি।
-হ্যা বাবা সাবধানে থাকিস। আর হ্যা আমি কিছুদিন ঢাকা থাকব না।দিদি যতদিন না আসছে নিজের খেয়াল রাখিস বাবা।
-শেরপুর ফার্মহাউজ যাচ্চো?
-হ্যা।কিভাবে বুঝলি?
-মামি কে মিস করছো খুব?
-না।
-তাহলে কেনো যাচ্ছ?
-দূরে যেতে।
-আমাকে একা ফেলে কেন যে সবাই চলে যায় বুঝিনা।আমি কি এতটাই খাবাপ মামা? আচ্ছা বাদ দাও।মন খারাপ তাই তো?যাও।ভাল থেকো।রাখছি।
-হুম।
.
ফোন কেটে দিলেন আফজাল রহমান।
এতটুকু ঠিকই ধারণা করতে পারেছেন মিহিনকে ঘাটাচ্ছে রূপ।ভালো মতই ঘাটাচ্ছে।তবে ঘাটালেই ভালো।যদি ধোঁয়াশার সাগর থেকে উঠতে পারে আর কি।
কিন্তু একটা কথা ভেবে অজানা ভয়ের আশঙ্খা দেখা দিচ্ছে আফজাল রহমানের মনে।যথি হিতে বিপরীত হয়?
ডাক্তারের রিপোর্ট আর দিদি যদি আবার কিছু করে বসে।
.
রূপ চলে গেল নিচে।কফি বানাতে।নিজের হাতের কফিই ওর সবচেয়ে বেশি ভালোলাগে।কারণটা জানা নেই।কফি বানানো শিখেছে কিভাবে তাও জানে না।
এখন আপাদত মাথায় একটাই চিন্তা।
ডায়েরিটা শেষ কখন হবে।ওর জীবন যে ওর ডায়েরির শেষ পাতার সাথেই আটকে গেছে।
.
-আরে আরে দাদাবাবু।আপনি এইখানে ক্যান।ম্যাডাম যদি এবার জানেন আস্তা গিল্লা খাইব আমারে।আমি বানাইয়া দেই।ভালো বানামু।
-আমার চেও।
-বানাইতে তো পারুম।তয় আপনার চেয়ে ভালো না।
-তাহলে চুপচাপ দাড়িয়ে থাকো।কফি খাবে?
আশরাফ চাচা বত্রিশটা দাঁত বের করে হাসলেন।মানে খাবেন।
-আইচ্ছা দাদাবাবু আপনে এতো ভাল কইরা কফি বানানু শিখছেন কইথেইক্কা।ম্যাডাম ও তো পারে না এমনে।
.
রূপ ভাবছে সত্যিই ও জানেনা।কোথা থেকে শিছেছে।তবে আবছা আবছা মাঝে মাঝে দেখতে পায় একটা মেয়েকে জড়িয়ে ধরে আছে পেছন থেকে।কিচেনে।আগে বুঝত না কে ওটা?এখন তো জানে।মিহিন হয়তো।
.
কফি নিয়ে উপরে এসে একচুমুকে শেষ করে ফলল রূপ।কফি তো না যেন অমৃত।এটা নিশ্চয়ই মিহিনই শিখিয়েছে ওকে।
কফির মগটা পাশে রেখে আবার ডায়েরিতে হারায় রূপ।
.
আমাকে রূপ একটা রুমে নিয়ে এসছে।এসেই একটা প্যাকেট দিয়ে বলল রেডি হয়ে নিচে আসতে।সারপ্রাইজ আছে আমার জন্য।
প্যাকাট খুলেই আমার চোখ বড়বড় হয়ে গেছে।এটা,,,,,,,
.
.
.
To be continue?