অনুভবে_তুমি পর্ব-৪৫/৪৬ শেষ পর্ব
#লেখকঃসাইমা_ইসলাম_প্রীতি
.
শিহরণ বয়ে যাচ্ছে মিহিনের প্রত্যেকটা শিরার মাঝে।উষ্ণ হয়ে ওঠেছে শরীরের রক্ত।কাঁপুনি ধরেছে ঠোঁটে।দুটো ঠান্ডা হাত শাড়ির ফাঁকে উন্মুক্ত পেটে প্রবেশ করাতেই সারা শরীর বেয়ে শীতল কিছু বয়ে গেলো।
চোখ দুটো বন্ধ করে নিলো মিহিন।রূপ এভাবে কেনো মারছে ওকে?
রূপের প্রত্যেকটা স্পর্শেই যে ওর মরণ হয় জানেনা সে।
———————————
চোখ মেলতেই শূণ্যে হারিয়ে গেলো রূপের সেই স্পর্শগুলো।এই কয়েকটা বছরে কম করে হলেও হাজার বার পেয়েছে এই স্পর্শ।
ধোঁকা!মনের ধোঁকা।
জানে সবটাই তবুও কেনো যেনো সত্যি মনে হয় বারবার।
সাগরের বিশালতার কাছে একরক্তি আশা নিয়ে দাড়িয়ে আছে মিহিন।মন খুব টানছে।বলছে তোর রূপ আসছে
আসছে,সে তোর কাছে।
চোখ দুটো বুঁজে নিলো মিহিন।শরীরের চাদরটা ফেলে দিলো নিচে।বালিতে।ঠান্ডা জায়গাটা প্রচুর।ভালোই লাগছে মিহিনের।
ধুকপুক ধুকপুক করছে ভেতরটা।
অনুভূতিতে মিশে হারিয়ে গেলো মিহিন ‘রুদ্র মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ’র কবিতায়,,
“”””গোপন লজ্জার মতো লুকানো
ছিলে প্রেম রক্তের গহনে
ছিলে লুকিয়ে সুপ্ত তরু বীজের
জঠকে,আজন্ম আরাধনায়
গোপন লজ্জা তুমি হে
প্রেম,বৈশাখী বৃষ্টিতে
ভেজালে শরীর। “”””
.
একটা অন্যরকম অনুভূতি।
রূপ ওর মাঝেই আছে।মিহিনের মাঝে।রূপের ভালোবাসা গুলোর প্রতিটা বিন্দু কণা পর্যন্ত ছুঁতে পারছে মিহিন।
কলিজাটা মোচর দিয়ে ওঠছে মিহিনের।ঠান্ডায় হাত-পা টানছে।মিহিন হারিয়েছে।সমুদ্রে মাঝে কুয়াশার ভীর।ঝাপসা!
মিহিনের অতীতের মত ঝাপসা পুরোটা।
—————————–
রূপের চোখ আটকে আছে মেয়েটার দিকে। স্পষ্ট মনে করতে না পারলেও রূপ শিওর এই সেই মেয়েটা যাকে দেখে গান গাইতে ইচ্ছা করছিল ওর।
এমন ঘোর লাগানো রূপে কেনো দাড়িয়ে আছে এই মানবী রূপের সামনে?
নেশা লেগেছে চোখে।চোখ কেনো অবাধ্য হতে চাইছে এতো এই অজানা মেয়েটাকে দেখে?
রূপ ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলো মিহিনের দিকে।কতোটা রোমাঞ্চকর পরিবেশ চারদিকে।দুটো এক হওয়ার সন্ধ্যানী আত্তা এতটা কাছাকাছি আছে অথচ একে অপরের অজানা।রূপ মিহিনের কাধে হাত রাখতে নিয়েও সংযত করে নিলো নিজেকে।কেনো করছে ও এসব?
ও শুধু মিহিনের এই আজানা মেয়েটির কাছে কেনো এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে সব কিছু?ঠিক নয় এটা!ঠিক নয়?
দু কদম পিছিয়ে নিলো রূপ নিজেকে।মন আরো বেশি অবাধ্য হয়ে ওঠার আগেই দ্রুত চলে গেলো সেখান থেকে।
বাড়ি ফিরে নিজেকে শান্ত করতে পারছে না রূপ কিছুতেই।শরীর রক্ত গরম হয়ে গেছে ওর।হৃৎপিন্ড খুব দ্রুত ওঠানামা করছে।এমন কেনো হচ্ছে!
তিরাকে দেখে তো এমনা হতো না তাহলে।কি আছে মেয়েটাতে?যাদু জানে!
আচ্ছা এমনকি হতে পারে না এই ওর মিহিন?ও তো মিহিনকে দেখেনি!ডায়েরি পড়ে ভালোবেসেছে মিহিনের ভালোবাসাকে।
————————————–
মুহূর্তের মধ্যেই মিহিনের আলমারি খুলে মিহিনে জামার মাঝে আবার মুখ গুজলো রূপ।
নাহ!এই সেই মাতাল করা নেশা।যেটা একটু আগেই অবশ করে দিয়েছিল ওর মস্তিষ্কের নিউরনকে!উম্মাদের মতো সেন্সবিহীনভাবে বাড়ি ফিরতে বাধ্য করেছে ওকে।
রূপ বিড়বিড় করে আওড়াতে লাগলো,
—মিহিন…..মিহিন…..মিহিন!আমার মিহিন ছিল ও…………..।
সামনে থাকা ফুলদানিটা সজোরে আছাড় দিলো রূপ।কিভাবে ফেলে এলো আবার এই প্রেমময়ী মেয়েকে ও একা?
.
রূপের রুম থেকে ভেসে আসা উচ্চ আওয়াজে ঘুম ছেড়ে লাফিয়ে ওঠলেন মিসেস সীমান্তি এহরাজ।কি হয়েছে?
রূপ আবার পাগলামি শুরু করেছে?
দ্রুত রুম থেকে বের হতেই দেখলেন রূপ জ্যাকেট হাতে নিয়ে পড়তে পড়তে দৌড়ে বের হয়ে যাচ্ছে।
আত্তাটা আতৎকে উঠলো সীমান্তির।কই যাচ্ছে রূপ এতো রাতে……………..?
.
.
To be continue ?
#অনুভবে_তুমি
লেখকঃ সাইমা ইসলাম প্রীতি
পর্ব-৪৬
অন্তিম পর্ব
.
পেছন থেকে এক হাত মিহিনের শাড়ি ভেদ করে মসৃন পেটে ডুকিয়ে দিলো রূপ।মিহিনের আঙুলের ভাজে হারিয়ে নিলো নিজের আঙুল।আলতো করে কানে কামড় দিলো মিহিনের। মুখ কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বললো,
–এই কি আছে তোমার মাঝে?
–নেশা!
–কিসের নেশা?
–মিহিনের।
রূপ একটানে ঘুরিয়ে নিলো মিহিনকে নিজের দিকে।
লজ্জায় মিহিন তাকাতে পারছে না রূপের দিকে।নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। হাতের আঙুল মোচড়াচ্ছে বারবার।
রূপ দেখছে। গভীর দৃষ্টি দিয়ে দেখছে ওর প্রতিচ্ছায়াকে।গাঢ় কালো রঙের শাড়িটাতে কি পবিত্রই না লাগছে মিহিনকে। চুল গুলো ছাড়া। সাজের ছিটে ফোঁটাও নেই মুখে। তাও পৃথিবীর সবচেয়ে আবেদনময়ী নারী লাগছে ওকে এই মুহূর্তে। রূপের চাহনির হাত থেকে রক্ষা পেতে মুহুর্তের মধ্যে নিজেকে রূপের বাহুডোর লুকিয়ে নিলো মিহিন।রূপও খুব শক্ত করে জরিয়ে ধরেছে মিহিনকে।
.
মিহিনের চোখে চোখ রেখে রূপ বললো,
—আর আমার ‘অনুভবে_তুমি’ হয়ে থাকতে হবে না তোমায় মিহিন।আজ থেকে তুমি শুধুই আমার।দেবে আজ আমায় তোমার অধিকার।।দেবে নিজের করে নিতে। দেবে রূপমিহিনের ভালোবাসার নতুন অধ্যায় লিখতে? প্রতিউওরে মুচকি হাসলো মিহিন। একঝাটকায় কোলে তুলে নিলো রূপ মিহিনকে।
নাকে নাক ঘষে রূপ বললো,
—তোমার ভালোবাসার জোরেই ফিরে পেয়েছি আমি তোমায়।একরাতের ব্যবধান ,আর তুমি আমার এতকাছে।নাহলে সেদিন এভাবে…………
–আজ শুধু ভালোবাসা চাই আর কিছুনা।
–আজ ভালবাসার বৃষ্টিতে ভেজাবো তোমায়। —————————————
রূপ পাগলের মতো ছুটে গিয়েও পেলো না মিহিনকে।উম্মাদের মতো কেদেছে সীমান্তি এহরাজকে জরিয়ে ধরে।বাড়ি ফিরতে না চাইলেও সীমান্তি জোর করে বাড়ি নিয়ে আসেন রূপকে।
বাড়ি ফিরে তিরা আর মিস্টার ইজাজকে একসাথে দেখে রূপের মেজাজ চটে যায়।মিস্টার ইজাজ রূপ দেখে বিশ্ব জয়ের হাসি দিয়ে বলেন,
—দেটস মাই সন।
কোথায় ছিলে এতক্ষণ?
মিসেস সীমান্তি চটে গিয়ে বলেন,
—আপনি?আপনি কেনো এসেছেন এখানে।
মুচকি হেসে মিস্টার ইজাজ বলেন ,
—রূপ নিশ্চয়ই তোমাদের মতো বোকা নয়! নিজের পায়ে নিজে কোড়ল মারা ছেলে না রূপ। মিহিন মেয়েটার বুদ্ধি আছে বটে তাই তো এত সহজে সরে গেছে।
রূপ চিৎকার করে বলল,
—হেই কি বলতে এসেছেন আপনি এখানে।বলে আমার চোখের সামনে থেকে বিদায় হন।
—আরে কুল কুল। এভাবে কেউ নিজের শ্বশুর এর সাথে চেঁচায় নাকি?
—কিসের শ্বশুর?আপনার মেয়েকে আমি আমার নিজের জান থাকতে বিয়ে করবো না।
—তুমি বোধহয় ভুলে যাচ্ছো আমি তোমার মাথার উপর থেকে হাত সরিয়ে নিলে উপর থেকে এমন ভাবে মুখ থুবড়ে নিচে পড়বে তুমি মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির আর কেউ তোমাকে বর্তমান জায়গাটায় ফিরিয়ে দিতে পারবে না। ইন্টারন্যাশনাল সিংগার হওয়ার কথা বহুত দূরের কথা।
—হুমকি দিচ্ছেন ?
—তোমার নতুন সব গানের রেকর্ডিং আমার কাছে। আর আমেরিকার সিংগিং স্কটের তিন কোটি টাকার ডিল।আমার পারমিশন ছাড়া কোনোদিনও এই গানগুলো লঞ্চ হবে না।একবার এই দুটো যদি নষ্ট হয়ে যায় না তোমার ফ্যামিলির রাস্তায় দাঁড়াবার জোও থাকবে না।
—আপনার কান অব্দি বোধ হয়ত খবর টা পৌছায়নি এখন!মিহিনকে বিয়ে না করা পর্যন্ত ফিনানশিয়ালি আমি কোনো গান করবো না।যদি তাতে মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি থেকে আরিয়ান এহরাজ এর নাম মুছে যায় তো যাবে।আর রূপক মুছে দিতে চাইলে যে সব থেকে আগে নিজে শেষ হয়ে যাবেন তার ধারণা মে বি আপনার আছে।
মিস্টার ইজাজ কিছু বলার আগেই চিৎকার করে তিরা বলে উঠলো,
—বাবা অনেক তো নিচে নামলে, আর কতো।ভালোবাসা কি জোরে বলে পাওয়ার জিনিস?আমি বিয়ে করবো না রূপকে।
—মা এসব কেনো বলছিস।তুই তো ভালোবাসিস রূপকে। তাই……….
—থাকনা বাবা। রূপের মনের অধিকার তো অন্য কারোর আমি বউয়ে অধিকার পেলেই কি করবো।আমি চাই না বিয়ে করতে ওকে।
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মিস্টার ইজাজ বললেন,
—মিহিনের তো বিয়ে,কাল।
রূপ হতচকিত হয়ে তাকালো মিস্টার ইজাজের দিকে। বলল,
—মা…মানে।আপনার কোনো কথা শুনতেই আমরা কেউ আগ্রহী নই।এখান থেকে বের হয়ে যান এক্ষুনি।
—আমি তো যাবোই।তবে তোমার জানে জিগার বন্ধু রিদ্দি আর তার বউ দুজনেই ঠকাচ্ছে তোমাকে। ইশার কারণেই আজ মিহিন নেই তোমার কাছে। আর যতদিন ও থাকবে মিহিনকে পাবেও না তুমি।
তিরা একটু বিরক্ত নিয়ে বলল,
— বাবা এখন কি শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে চাইছো?
—-নারে মা। অন্তত তুই ভুল বুজিস না আমায়। এই সব কিছুর পিছনে মূল খেলোয়াড় ইশা।
—মানে?
—আমি রূপ আর মিহিনের বিয়ে তে খুশিই ছিলাম। তুই বল আমি কোথা থেকে জানতাম তুই রূপকে ভালোবসিস?ইশা বলেছে আমায়। ইশা তার মাএ দুদিন আগেই জানতে পারে ইশাদ মিহিনকে ভালোবাসে।নিজের ভাইয়ের দাম সবার আগে ওর কাছে। আমি না চাইলেও আমাকে ভুলভাল বুঝায় ইশা। মিহিনের নাকি আগে থেকে অ্যাফায়ার আছে ইশাদের সাথে,টাকার জন্য রূপকে বিয়ে করতে চায়।আরো অনেক কিছু। এ ও বলেছে রূপকে ঠকিয়ে ও চলে যাবে ইশাদের কাছে।
আর আমিও নিজের মেয়ের খুশির জন্য নিজের হিতাহিত বোধ হারিয়েছিলাম। পারলে মাফ করে আমাকে সবাই।আর ইশাই মিহিনকে সরিয়ে নিয়েছে এখান থেকে। জোর করে বিয়ে দিচ্ছে ইশাদ আর মিহিনের।
.
সারা শরীর জ্বলে যাচ্ছে রূপের। কিভাবে ইশা এত্ত স্বার্থপর হতে পারলো।নিজের স্বার্থের জন্য বন্ধুত্বের অপব্যবহার করছে।ঠকিয়েছে ওদের। রূপ কতটানাই বিশ্বাস করতো ইশাকে।
——————————————
একদিন আগেই ইশাও এসেছে কক্সবাজার। মিহিন,রূপ একই শহরে থাকবে!মনকে শান্ত করতে পারছিলো না কিছুতেই।যদি কোন ভাবে দেখা হয়ে যায় তাহলে ওর এতো দিনের সব কষ্ট বৃথা যাবে।আর ইশাদের কষ্ট সহ্যই বা করবে কি করে ও!
.
কিন্তু পরদিন ভোর হতে না হতেই ইশা ছুটে এলো মিহিনের ফ্ল্যাটে।এসেই রূপের কাছে গিয়ে মিনতি করে বলতে লাগলো,
—মিহিন এই বাসায় এসেছে নাকি!কাল রাতে বাড়ি থেকে বের হয়ছে আর ফিরে নি।
.
ইশাকে দেখে রূপ রাগ কন্ট্রোল করতে পারিনি। কাচ ফ্লাওয়াবাস সজোরে দেয়ালে বাড়ি দিতে গিয়ে নিজের হাতই কেটে ফেলে খুব বাজে ভাবে।প্রচুর ব্লিডিং এর কারণে বাধ্য হয়ে হসপিটালে যেতে হয়। সীমান্তি নিজে নিয়ে যান রূপকে হসপিটালে।
ওখানেই যে ওর মিহিনকে পেয়ে যাবে কে জানতো!
.
হসপিটালে যাওয়ার পর রূপকে যখন ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছিল সীমান্তি কয়েকজন ডাক্তারের মুখে শুনে একজন রোগীর নাকি খুব বাজে ভাবে এক্সিডেন্ট হয়েছে।ব্লিডিং হয়েছে প্রচুর।চার ব্যাগ রক্ত ও দেওয়া হয়।
আগ্রহ বশে সেই রোগীকে দেখতে যেয়েই দেখে সে মিহিন। চোখের জল আর সামলাতে পারেন না সীমান্তি। দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরেন।পরে মিহিনের কাছ থেকেই জানতে পারেন সাগরের পাড় থেকে বাড়ি ফিরার পথে এক্সসিডেন্ট হয় মিহিনের।মাথায় আঘাত পায় খুব। —————————————
শফাৎ করে এক তিলোক আলো এসে পড়লো মিহিনের চোখে।আড়মোড়ে চোখ দুটো ডিপ ডিপ করে খুললো মিহিন।তাকাতেই চোখের সামনে মেলে ধরলো হাতের সম্মুখভাগ।মনে হলো কেউ ঝাপটে জরিয়ে রেখেছে ওকে।পাশে তাকাতেই রূপের ঘুমন্ত চেহারাটা দেখতে পেলো মিহিন। গতকাল রাতে সব কথা মনে পড়ে গেলো মুহুর্তেই। রূপের আদর, স্পর্শ। ছিঃ ছিঃ লজ্জায় বাতাসে মিলিয়ে যেতে ইচ্ছা করছে ওর।আলতো করে হাত বুলিয়ে দিলো রূপের অগোছালো সিল্কি চুলের ভাঁজে।নরেচরে ওঠলো রূপ।সাথে সাথে লজ্জায় আবার চোখ বুজে নিলো মিহিন।ঘুম থেকে উঠেই মিহিনকে এভাবে ঘুমন্ত দেখে খুব ভাগ্যবান মনে হচ্ছিলো নিজেকে।কপাল, গাল, ঠোঁটে -ঠোঁট বুলিয়ে দিয়ে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলো রূপ। —————————————
মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়ে এলো রূপ। মিহিন তখন শাওয়ার নিচ্ছে। রুমে ঢুকেই চেঁচামেচি শুরু করলো রূপ।
—-এই এক্ষন বের হও বলছি।এতক্ষন লাগে নাকি।
—আপনি রুম থেকে বের না হলে আমিও বের হবো না।
—?এই কি বলো এসব?
—না না।আমার লজ্জা লাগছে অনেক। আপনার সামনে আসতে পারবো না।
—কিহ, পাগল হইছো।তাড়াতাড়ি আসো বলছি।
মিহিনের আর কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া যাচ্ছে না।
রূপও বুঝেছে ও থাকতে এই পাগল মেয়ে বের হবে না।
—আচ্ছা বাবা যাচ্ছি রুম থেকে।আর আসবো না। বের হও তুমি।
.
সকালেই খাবার অর্ডার দিয়েছিলো রূপ।এতক্ষণে এসেও পড়েছে। খাবার টেবিলে সাজিয়ে নিলো দ্রুত। রুমে ঢুকে রূপের মাথা আরো একবার নষ্ট হয়ে গেছে। শুভ্র মায়ায় ঢেকে আছে মিহিন। টিয়া কার্লারের শাড়ি সাথে লাল কার্লারের চুড়ি।ভেজা চুল গুলো লেপ্টে আছে গলার সাথে।টুপ টুপ করে জল বেয়ে পড়ছে ভেজা চুল থেকে। কপালের কোনায় জমে আছে বিন্দু বিন্দু পানি কণা। ঠোঁট দুটো গাঢ় লাল দেখাচ্ছে।
শুধু কম আছে যা, কাজল। গাঢ় খয়েরী রঙের চোখ দুটো কাজল বিহীন।কাজল দেয়নি ভালোই করেছে।দিলে হয়তো রূপের মরণ আজ মিহিনের চোখেই হতো। অবশ্য ক্ষতি কি ছিলো!রূপ মনে করতে পারছে না আজ অবধি মিহিনকে কাজল চোখে দেখেছে কি না।তবে কাজল ছাড়াই সুন্দর। রূপকে দেখে লজ্জায় কি করবে বুঝতে না পেরে ওয়াশরুমের দিকে দৌড় দিলো মিহিন তার আগেই ধরে ফেলেছে ওর হাত।একদম কাছে গিয়েই বলল,
—এও লজ্জার কি আছে হে! তোমার রূপ আমি।
—হুহ
—খুব কষ্ট হয়েছে না এতদিন আমার জন্য অপেক্ষা করতে?
—উহুহ
—কিভাবে?
—আপনি তো আমাকে সৃষ্টি করার জন্য নিজের বুকের পাঁজর থেকে একটা হাড়ই দিয়ে দিয়েছেন আল্লাহ কে। তখন কষ্ট না হলে আমার মাত্র কয়েকটা দিন অপেক্ষা করতে কেনো কষ্ট হবে? তবে হুম,খারাপ লেগেছে। সৃষ্টিকর্তার কাছে ভিক্ষা চেয়েছি আপনাকে। বলেছি ইহকালে না পেলেও পরকালে আমার আপনাকেই, শুধু আপনাকেই চাই।
মিহিনের কথা শুনে জরিয়ে ধরলো রূপ মিহিনকে।
—আর যাবো না কোনোদিন ছেড়ে।
.
রিদ্দিসহ কেউ মাফ করতে পারিনি ইশাকে।আর পারবে বলে ও মনে হয়না। ইশাদের প্রমোশনের কারণে লন্ডনের খুব নামি-দামি কলেজে ফিজিক্সের লেকচারার হয়েছে।কালই চলে যাবে লন্ডনে। তিরা তার ছোট বেলার বন্ধু নাহিলকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।ছেলেটা অনেক আগে থেকেই ভালোবাসত তিরাকে।
বেশ কয়েকদিনের মধ্যেই রূপের রেকর্ড করা গান গুলো ও রিলিজ হয়ে গেলো।বিশ্বব্যাপি বিখ্যাত হয়ে গেলো গানগুলো মুহূর্তের মধ্যেই। রূপ আর মিহিনের সময়গুলো ও দ্রুত ভালোবাসার মাঝেই কেটে যাচ্ছে। আষ্টে-পৃষ্ট বেধে রেখেছে একে অপরকে ভালোবাসার অদৃশ্য কোনো এক সুতোয়।
.
সমাপ্ত
আল্লাহ হাফেজ।