অনুভবে_তুমি পর্ব-২/৩
#সাইমা_ইসলাম_প্রীতি
পর্ব-((২))
.
.
বাইরে মোটামুটি ভালোমতই বৃষ্টি হচ্ছে।শীতের সময়ও যে এভাবে বৃষ্টি হতে পারে কে জানতো।।বৃষ্টি প্রচন্ড রকম টানে মিহিনকে।এমন কোনো সময় নেই যে বৃষ্টি হয়েছে আর ও ভিজে জ্বর বানায়নি।
কিন্তু আজ ও ভিজবে না।আসলে আজ না অনেক দিন যাবৎই বৃষ্টিতে ভিজা ছেড়ে দিয়েছে।
কোনো কারণ খুঁজে পায়না ভিজার তাই হয়ত।জীবন থেকে যে আরো অনেক আগেই এসব মুর্হূত গুলো হারিয়ে গেছে।
.
জালনার ধারে বসে রাতের বৃষ্টিতে এতোটাই ডুবে গেছে যে কখন ওর পাশে এসে একটা মানুষ বসেছে ওর কোনো খেয়ালই নেই।
মাথায় একটা কোমল হাতের র্স্পশ পেয়ে চমকে উঠে মিহিন।
পাশের মানুষটাকে দেখেই চোখের কোণাটা চিকচিক করে উঠে মিহিনের।দু-তিন ফোটা নোনাজল গড়িয়ে পরে গাল বেয়ে।
ঝাপটে জড়িয়ে ধরে তাকে।
.
.
রূপ বেশ মনোযোগ দিয়েই পড়া শুরু করে ডায়রিটা।।ডায়েরির প্রত্যেকটা লিখাই খুব চেনাচেনা লাগছে রূপের।মনটাতে একটা অন্যরকম অস্হিরতা কাজ করছে ।
সব ভাবনা একপাশে রেখে পড়া শুরু করলো রূপ।
প্রথম পৃষ্ঠায় ডেট লেখা ২৫শে মে,২০১৩।
রূপ যেন হারিয়ে গেল ডায়েরিতে,,,,,
“আজ প্রথম ক্লাস ভার্সিটিতে।মনটা বেশ ফুরফুরে লাগছে।।মা তুমি দেখছো তো তোমার মেয়ে আজ কত্তো বড় হয়ে গেছে।তোমার সব ইচ্ছা এই মিহিন ঠিক পূরণ করবে।”
মিহিন নামটা শুনে ধক করে রূপের বুকটা।মিহিন নামের কাউকে তো ও জানে না।তাহলে কেন এই অনুভূতি??
সব ভাবনা একপাশে রেখে আবার ফিরে গের রূপ,,,,,
“””খুব ভোরে ওঠেই ফ্রেশ হয়ে ফজরের নামাজটা আদায় করে নিলাম।কিছুক্ষন ছাদে প্রকৃতি বিলাস করে রুমে এসেই রেডি হয়ে,,বের হয়ে গেলাম ইশার বাসার উদ্দেশ্যে।
সবে মাত্র সাতটা বাজে।ইশার বাসায় পৌঁছে কলিংবেল চাপে দাড়িয়ে রইলাম।আন্টি(ইশার আম্মু)এসে দরজা খুলে আমাকে দেখেই বুকে জড়িয়ে নেন।
(((মিহিনের বাবা মা কেউ নেই।ও যখন অনেক ছোট,, গ্রাম থেকে শহরে ফিরার পথে এক্সিডেন্টে মারা যায় ওর বাবা।তার চার মাস বাদে মাও ওকে একা ফেলে যায় এই অচেনা পৃথিবীর নিষ্ঠুর কাঠগোড়ায়।এর পর নানুর কাছেই বড় হয়ে ওঠা মিহিনের।তাই ইশার আম্মু-আব্বু ছোট থেকেই অনেক আদর করে মিহিনকে।)))
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা
◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।
আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share
“দেখলে মামুনি তুমি সকাল সকাল রেডি হয়ে চলে আসলে আর এদিকে এই মহারানীকে দেখো কতো বেলা হলো এখনও পরে পরে ঘুমোচ্ছে।আর নামাজের তো নাম গন্ধও নেই”(আন্টি)
“আন্টি তুমি ছাড়ো তো আমি দেখছি এই শয়তানটাকে।ওর ঘুমের বারোটা না না তেরোটা আমি বাজাচ্ছি।”(মিহিন)
“হুম।তারপর মহারানীকে নিয়ে নিচে আসিও।ব্রেকফাস্ট করে নিবে”
“আরে না না আন্টি আমি খেয়েই আসছি।ইশুকে নিয়েই চলে যাব”
“সে তুমি যাই বলো না কেন আমি কিছু শুনছি না।তাড়াতাড়ি এসো নিচে কেমন”–বলেই আন্টি চলে গেলেন।
এখন কি করি আমি।ওফ সব সময় এই শয়তানটার জন্য আমি ফেসে যাই।দাড়া ঘুম পাড়াচ্ছি তোকে।
এক মগ পানি এনে ঢেলে দিলাম ওর উপর।
“আআআআ।কেরে পেত্নী?কার এতো বড় সাহস আমাকে ভিজিয়ে দিলো”
উঠে বসে আশেপাশে তাকিয়ে আমাকে দেখতে পেয়ে–
“ওহ তুই।দাড়া।আজ তোর একদিন আমার একদিন।”
আমিও এক দৌড়ে চলে আসলাম আন্টির কাছে।বেচারি ইশুর আবার বকাও খেতে হলো এতো লেইট করার জন্য।আর আমার দিকে এমন ভাবে তাকাচ্ছিল যেন রাক্ষসনী একটা।। এখনি টুপ করে ধরে খেয়ে ফেলবে আমাকে।
ব্রেকফাস্ট করে ভার্সিটির জন্য বের হয়ে গেলাম।
রিকশায় বসে-
“ওফফফ ইশু আমার যে কি খুশি লাগছে আমার।এতোদিন তো শুধু মুখে শুনেছি ভার্সিটি লাইফ কতো মজার এখন নিজেই উপভোগ করব”
“ইয়াহ।কতো হ্যান্ডস্যাম বড় ভাইয়ারা থাকবে।আমিতো একটাকে আজকেই পটিয়ে ফেলব দেখিস”
“আস্তাগফিরুল্লাহ্,নাউযুবিল্লাহ্।লুচু কোথাকার তুই আর সোজা হবিনা।”
“তো তোর মতো নিরামিষ হবো নাকি”
“আমি মোটেও নিরামিষ না।আমি একদম ঠিক আছি।বরং তোর কাজটা ঠিক না।তুই জানিস আল্লাহ্ কোরআন-শরীফে নিজে বলেছেন~~
“”ঈমানদার নারীদেরকে বলুন,তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে ও তাদের লজ্জাস্হানকে রক্ষা করে (সূরা আন্-নূর,আয়াত-৩১)””
তাই নিজেদের অবশ্যই ছেলেদের থেকে সংযত রাখা উচিত”
“হুম”
“এই তো চলে এসছি আমরা।নাম এবার”
ক্লাস শেষে আমরা দুজন পুরো ভার্সিটিটা ঘুরে দেখলাম।খুব সুন্দর।
বের হওয়ার সময় কিছু ছেলে দূর থেকে আমাদেরকে দেখছে।সম্ভবতো বড় ভাইয়ারা হবে।কিছুটা ভয় পেয়েই দ্রুত হাটছি।আর ইশুর তো সেদিকে কোনো খেয়ালই নেই।ও ওর মতো বকবক করেই যাচ্ছে।
হঠাৎ পেছন থেকে ঐ ভাইয়াদের গলার আওয়াজ পাওয়া গেল।ডাকছে আমাদের।
আমি তো ভয়ে পুরাই শেষ।
“ইশুওও।চল আমরা কেটে পড়ি এখান থেকে।এক দৌড়ে ভার্সিটির বাহিরে”
“না না একদম না।পরে কিন্তু প্রবল্যাম হতে পারে”
“তাহলে এখন,,,,,
আমার কিন্তু খুব ভয় করছে”
“আরে চল কিছু হবে না”
আমরা ওই দিকে যেতেই একটা ভাইয়া বলে ওঠলো–
“এই কানে শোনো না নাকি সেই কখন থেকে ডাকছি”
“জিনা ভাইয়া শুনি তো”(আমি)
“তোমাদের সাহস কেমনে হলো চলে যাচ্ছো এখনি”
“তো ক্লাস শেষ হয়ে গেলে কি এখানে বসে ঘাস কাটবো নাকি”(ইশু)
“কিহ এতো বড়,,,”আরেকটা ভাইয়া এই শয়তান ভাইয়া টাকে থামিয়ে মুচকি হেসে বলল,,,
“তোমরা ওই দিকটাতে যাও।আর একটু পর ওখানে একটা প্রোগ্রাম হবে”
ইশু কিছু বলতে নিলে আমি চিমটি দিয়ে ওকে চুপ করিয়ে দিলাম।
এখানে এসে তো আমার চোখ অক্ষিকোটর থেকে বের হয়ে যাওয়ার উপোক্রম।ভার্সিটির সব ছেলেমেয়েরাই দেখি এখানে।এজন্যেই তাহলে সব জায়গা এতো ফাঁকা। স্টেজের আশেপাশে তো এক ইন্চ্ঞি জায়গাও খালি নেই।সব মেয়েরা একসাথে সেখানে জড়ো হয়ে আছে।একেক জনের ড্রেসের কি ছিড়ি রে বাবাহ।
কিন্তু হচ্ছেটা কি এখানে।
একজনের কাছ থেকে জানতে পারলাম পুরু ভার্সিটির ক্রাস,,,,,আরিয়ান এহরাজ নাকি গান গাইবে এখন।”””
বাস্তবতায় ফিরে এলো রূপ।এখন আর বুঝতে বাকি রইছে না যে এই মিহিন নামের মেয়েটার সাথের ওর লাইফ ও জরিয়ে আছে।কিন্তু কে এই মিহিন,,,
ওর লিখা ডায়েরি রূপের স্টোর রুমেই কি করছে,,,
এই হাত দুটোই বা কার,,,
ওর সব প্রশ্নের উত্তর এখন একমাত্র এই ডায়েরিটা।।
“””মিহিন শুনছে সবাই ঐ ক্রাসের গানের প্রশংসা করছে,,,
সে নাকি অনেক ভালো গান করে।সবাই তার গানের ফ্যান।
ভালোই হলো আমারো গান শুনতে ভালোলাগে এই সুযোগে শুনা হয়ে যাবে।
কিছুক্ষন বাদেই আরিয়ান এহরাজ এসে স্টেজে ওঠলো।ইশুর তো আর হুশই নাই।আরিয়ানকে দেখে ওর মাথা পুরাই গেছে।
আমিও আরিয়ানকে দেখে কয়েক মিনিট হা করে তাকিয়ে ছিলাম।
সাদা প্যান্ট সাথে এশ কার্লারের শার্ট,,,
অফ-হোয়াইট কার্লারের টাইটা একদম খোলা অবস্হায় গলায় ঝুলছে,,,
চুলগুলো স্পাইক করা,চোখদুটো গাঢ় ব্রাউন কার্লার সাথে একটা কিলিং লুক,,,
গিটারটা নিয়ে যখন স্টেজে ওঠলো সব মেয়েদের তো জান যায় যায় অবস্হা।সবার মুখে একই কথা
“what a personality,,what a attitude,,,
এই মনে হয় প্রথম ছেলে যার দিকে আমি একনাগারে আট মিনিট তাকিয়ে ছিলাম।
কিছুক্ষন পর তাড়াতাড়ি চোখ সরিয়ে নিলাম।ছি ছি কি করছিলাম আমি এতোক্ষন।কতো গুনাহ্ না জানি হয়ে গেছে।আল্লাহ্ তুমি মাফ করো।
আরিয়ান গান শুরু করলো~~
“”Tenu itna main payaar karan
ik paal vich sau bar karan
tu jawbe jo mainu chad ke
mout da intejar karan
ki tere liye duniya chod-di hain
ki tujhpehi saans aake ruke
main tujhko kitna chahtihu
yee tu kabhi chahtihu
yee tu kabhi souch na saake
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
kuch vi nehi hain yee jahan
to hain to hain isme jindegi
ab mujhko jaana hain kahan
ke tuhi saafar hain akheri
ki tere bina jeena mumkin nehi
na dena kabhi mnjhko tu fasle
main tujhko kitna chahtihu
yee tu kabhi souch na saake
ki tere liye……..na saake
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
akhon ki hain yee khouaishe
chehrese teri
nindo me main hun bas tere
khabo nehi hain karwate
ki teri aur mujhko sad raste
main tujhko kitna chahtihu
yee tu kabhi sauch na saake
ki tere liye………na saake””
আমি তো আরিয়ানের গান শুনে একদম ফিদা।একেই আমার পছন্দের একটা গান তার উপর কেউ যদি এতো সুন্দর করে গায় তাহলে তো কথাই নাই।
ইশু হঠাৎ আমাকে চিমটি দিয়ে বলতে লাগল,,,
“মিহু একটা জিনিস খেয়াল করেছিস,, আরিয়ান কিন্তু গান গাওয়ার সময় বারবার তোর দিকে তাকাচ্ছিল”
“তোর মাথাটা পুরাই নষ্ট হয়ে গেছে।এখানে এতো সুন্দরী সুন্দরী মেয়ে থাকতে উনি আমাকে কেনো দেখবে”(ইশুকে যতো কিছুই বলি না কেন বিষয়টা আমিও খেয়াল করছি।উনিতো প্রায় পুরো গানটাই এদিকে তাকিয়েই গেয়েছে)
“উহহ।বললেই হলো তুই কি কম যাস নাকি।ইন ফ্যাক্ট ওই ডংঙ্গি গুলো থেকে তুই আরো অনেক বেশি সুন্দর”
“হুহ।ক্ষেত।।দেখ দয়া করে ওই শয়তান ভাইয়া গুলার সামনে পরার আগে ভাগ এখান থেকে”
“ঠিকই বলছিস।কিন্তু আরিয়ানের সাথে একটু কথাও বলব না!!”
“আরে ধুর রাখ তোর আরিয়ান।ঐ দেখ ওই শয়তান গুলো এদিকেই আসতেছে মনে হয়”
সেদিন কোনরকমে দুটিতে মিলে পালিয়ে ছিলাম ওদের চোখে ধুলো দিয়ে।কিন্তু তার শোধটা ঠিকই তুলে নিয়েছে পরের দিন।
রিদ্দি ভাইয়া (যে আমাদের সাথে ভালো মতো কথা বলেছিল)পুরো দুই ঘন্টা আমাকে আর ইশুকে তাদের সামনে দাড় করিয়ে রাখছেন।
কোনো কাজ ছাড়া যে শুধু দাড়িয়ে থাকাতে যেকতো বিরক্তকর আজ হারেহারে টের পেয়েছি আমি।
তাও ভাগ্য ভালো যে আরিয়ান ভাইয়া তখন আসছিল তাই ছাড়া পেয়ে গেছি।
আরিয়ান ভাইয়া ওদের গ্রুপের লিডার।ওনি এসে আমাদের এভাবে দেখে বলেন-
“এই তুমিই তো…..ফরগেট ইট।রিদ্দি এরা এভাবে এখানে কি করছে?”
“কি আর করবে শাস্তি ভোগ করছে”
“শাস্তি?কিসের শাস্তি?”
“কাল এই দুইটাতে আমাদের হাত থেকে পালিয়ে ছিল তাই”
উনি আমাদের অবস্থা দেখে ইচ্ছা মতো কতোক্ষন হেসে বলেন,,,
“এই শুটকিটাকে (ইশুকে) তুই দেখ আর এইযে তুমি(আমাকে দেখিয়ে) আমার সাথে এসো কথা আছে তোমার সাথে”
ওনার কথা শুনে আমার হাত-পা একদম ঠান্ডা হয়ে গেছে।একচুলও নরতে পারছা না।আজ পযর্ন্ত কোনো ছেলের সাথে একা কথা বলিনি আমি।
আমি যাচ্ছিনা বলে আরিয়ান ভাইয়া এসে আমার হাত ধরে নিয়ে গেল একটা ফাঁকা ক্লাসরুমে।
.
(চলবে)
#অনুভবে_তুমি
পর্ব – ((৩))
#সাইমা_ইসলাম_প্রীতি
.
ভয়ে আমার হাত-পা সব কাঁপছে।একে তো ওই গ্রুপের সবাইকে আমার অনেক ভয় লাগে তার উপর উনি আমাকে এই ফাঁকা রুমটাতে নিয়ে এলেন।
আল্লাহ্ এবারের মতো বাঁচিয়ে দাও প্লিজ এরপর থেকে পাক্কা এদের ছায়াও মারাবো না আমি।
.
আরিয়ান ভাইয়া তো দেখি সেই কখন থেকে আমার দিকে হা করে তাকিয়েই আছে।কিছু বলছেও না।সাহস করে বলেই ফেল্লাম,,,,,
-ভাইয়া কিছু বলবেন
-হুহুম।ওহ হে কাল এভাবে পালিয়ে গেছিলে কেন?কতক্ষন খুঁজেছি তোমাকে জানো?
-না মানে আসলে কোনো কাজ ছিলনা তো তাই
-নতুন???
-হুম
-নাম কি?
-জেহরাতুল হাসান মিহিন
-বাহ।নামটাও ঠিক তোমার মতোই সুন্দর।(আস্তে আস্তে)
-কিছু বললেন?
-আমাকে তো নিশ্চয়ই ভালো ভাবেই চিনো।
-জি।
-সো এরপর থেকে আমাকে দেখে পালানোর আগে ভালো করে আমার নামটা মনে করবে।আর আজতো রিদ্দি কোন শাস্তিই দিল না এরপর কিন্তু পুরো ভার্সিটির সামনে কান ধরে উঠবস করাবো মনে থাকে যেন।
-এএএএ।না না আর জীবনো কোনো দিন পালাবো না।
-গুড র্গাল(বলেই উনি আমার দিকে আসতে লাগল।আমি পিছাতে নিলেই এক ঝারি দিয়ে বলল পিছালে নাকি আমার পা ভেঙ্গে গুড়ো গুড়ো করে দিবে)
ভয়ে আমার আত্তা যায় যায় অবস্হা।সারা শরীরটা অবশ হয়ে আসছে।ওনি…ওনি এভাবে কেনো আসছেন আমার দিকে।আল্লাহ্ বাঁচাও আমাকে।
চোখ খিচে একদম সোজা হয়ে দাড়িয়ে আছি।
আমি ঠিকই টের পাচ্ছি যে ওনি আমার একেবারে কাছে চলে এসেছে।দূরত্ব মনে হয়না এক হাতও হবে।ওনার প্রত্যেকটা নিঃশ্বাস আমার মুখে এসে বাড়ি খাচ্ছে।
ইচ্ছে করছে মাটির সাথে মিশে যেতে।হৃদস্পন্দন এতোটাই বেড়ে গেছে যে আর কিছুক্ষণ এভাবে থাকলে বোধ হয় আমি এখানেই শেষ হয়ে যাব।
.
ওনি আমার চোখ থেকে চশমাটা খুলে নিয়ে নিয়ে ওনার শার্ট থেকে সানগ্লাসটা খুলে আমাকে পরিয়ে দিলেন।
-এই সুন্দর চোখ দুটো যেন আর এই ফ্রেমের পেছনে আর না দেখি।
আমি চোখ দুটো আরো শক্ত করে বন্ধ করে রেখেছি।আসলে ভয় করছে খুব।
.
-এই কিউটি।ওপেন ইউর আইস।
-কে .. .. ..কে.. .. ..কি…উ..টি??
-কেন তুমি।আর এমন তোতলাচ্ছ কেন।কিছুই তো করলাম না এখনও।
-আ..মার না..ম মি…হি..ন।(ওনি আমার ঠিক এতটা কাছে চলে এসছেন যে ভয়ে মুখ দিয়ে কথাও বের হচ্ছে না)
-কিঊটি।এই নামটা আমি দিলাম।
-ওহ,,,,,দিলেই হলো নাকি।আকিকা দিবে কে?
-কিছু বললে??(আরো কাছে এসে)
-ক…ক….কই না..তো।
-ওকে,কিউটি।u can go now।
ব্যাছ!আমাকে আর পায় কে।একদৌড়ে একদম গেইটের সামনে।আমার কান্ড দেখে আরিয়ান ভাইয়া তো হাসতে হাসতে শেষ।
.
আচ্ছা পালিয়ে তো আসলাম কিন্তু এখন ইশুকে খুঁজবো কোথায়?সারা ভার্সিটি খুঁজে শেষে ক্যান্টিনে গিয়ে দেখি ও বসে বসে আরামছে আইসক্রিম খাচ্ছে।এটা দেখে মাথাটা এমন গরম হইছে বলার মতো না।
-ওই হারামি,বান্দরনি,ফকিন্নি,বিলাই,ইদুঁর।আমি তোরে সারা ভার্সিটি খুঁজে বেড়াচ্ছি আর তুই এখানে,,,
-আরে আরে কথা বলিস পরে আগে বসে তুইও খা।
-ক্যান আইসক্রিমের বিল কি তোর বাপে দিবো।
-না না আমার বাপে ক্যান দিবো।দিবো তো রিদ্দির বাপে।
(শুনে তো আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পরছে)
-কিহ।।।কি বলস এসব।ও ক্যান দিবে?
-হেহে।বলছিলাম না একটারে পটামুই দেখলিতো!!
-আর খাবি না এক্ষুনি চল বলছি এখান থেকে শয়তান কোথাকার।অন্যের টাকা নষ্ট করস খালি।যা খাইছোস তার থেকে বেশি তো নষ্টই করলি।
ইশুকে আর খেতে দিলাম না।ও আর আমি বাড়ি চলে আসলাম।
বেচারি ইশু আটটা আইসক্রিম খেয়ে জ্বরে চারদিন আর খাট থেকে উঠতে পারেনি।
আসলে খাওয়ার নামে নষ্ট করছে শুধু।ওনি যে দুঘন্টা দাড় করিয়ে রাখার প্রতিশোধ নিছে।আটটা খাইছে আর সাতাশটা নষ্ট করছে।
অবশ্য আমার জন্য ভালোই হইছে।একে তো ওই রিদ্দি ভাইয়ার পকেট খালি আর এদিকে চার দিন ভার্সিটি না গিয়ে রাহিকে টাইম দিতে পারছি।
রাহি আমার বড় বোনের মেয়ে।ওর যখন দুমাস বয়স তখনই মারা গেছেন আপু আর ভাইয়া।তখন থেকে আমিই ওর মা আমিই ওর বাবা।ওর পৃথিবী ঘিরে যেন শুধু আমি।আপন বলতে আমার শুধু নানু,রাহি,আর খালামনি।বাসার বেশিরভাগ খরচ খালুই চালায়।খুব ভালোবাসেন আমাকে।
.
বিকেলে ফ্রি ছিলাম তাই রাহিকে নিয়ে ইশুর বাসায় এলাম।ইশুও এখন প্রায় সুস্থ।
-কাল তো যাচ্ছি ভার্সিটি তাই না।
-হুম।ঐ ফকিরের ঘরের ফকিরের আইসক্রিম খাইয়া আমার এখন এই অবস্থা।ওইডারে তো আমি।
-তুই নিজেই তো খাইলি।
-তো ওইডায় লোভ দেখালো ক্যান।
-এহ নিজে যেন কোত্তো ভালো।আচ্ছা দেখ আমাকে পানি দে এখন।খাব।খুব তৃষ্ণা পাচ্ছে।
-যা ভাগ।নিয়ে খা গিয়ে।?
-এনে দিলে কি হয়??(উঠে পানি আনতে যাচ্ছি।সঙ্গে রাহিকেও নিয়ে নিলাম)
-পারুম না।আর ওরে কই নেস।রাহি এদিকে আসোত মামনি।
রাহিও চলে গেল ইশুর কাছে।বাধ্য হয়ে আমার একাই আসতে হলো।
.
যদিও ইশুকে কোনো দিন বলিনি তবে ওর ঘরে একাএকা হাটতে খুব ভয় লাগে আমার আমার।আরে না না ভুতের ভয় না ভয় লাগেতো ইশুর ভাই ইশাদ কে।।।
ইশাদ ভাইয়া অনেক রাগি আর বদমেযাজি।বাসার সবাই ভয় পায় ওনাকে।
কিন্তু আমি ভয় পাই অন্য কারণে।ইশাদ ভাইয়া যে আমাকে ভালোবাসেন তা মুখ ফুটে না বললেও আমি বুঝি।আর চাইও না কোনো দিন সামনা সামনি বলুক।যদিও সব দিক দিয়ে সে পারফেক্ট কিন্তু আমার মোটেও ভালোলাগে না তাকে।
.
ওইতো যেখানে বাঘের ভয় সেখানে সন্ধ্যা হয়।???
হায় খোদা ইশাদ ভাইয়া দেখি ডাইনিং টেবিলে বসে আছেন আর আমাকেই দেখছেন।ওফ!! আন্টিকেও তো দেখা যাচ্ছে না আশে-পাশে।
ওল্টো ফিরে চলে আসতে নিলেই ডাক দেন ইশাদ ভাইয়া।আর ওনাকে যা ভয় করে,,,,ওনার ডাকে আন্সার না দেয়ার সাধ্য আর সাহস দুটোই আমার নেই।
-মিহিন।এই দিকে কই যাচ্ছো এদিকে এসো।
-জি ভাইয়া।(টেবিলের কাছে গিয়ে)
-আরে এতো দূরে দাড়িয়ে আছো কেনো?এদিকে আসতে বললাম না!
এমা আমি ওনার কাছে যাইনি দেখে ওনিই দেখি ওঠে আসছেন আমার কাছে।আল্লাহ্ এমিও এমন গাদা যে এমন জায়গায় এসে দাঁড়াইছি যে পেছনে রান্নাঘর।পালাবো ক্যামনে এখন।
ওনি দেখি একে বারে কাছে চলে আসছে আমার।আর আমি ভয়ে ওলরে কিচেনে ডুকে পড়ছি?।
.
.
.
চলবে?