#অনুভবে_তুমি
#পর্বঃ০১
#সানজিদা_আক্তার_সীমা(তিতিপাখি)
আজ আমি ভীষণ খুশি।
আমার সব থেকে খুশির দিন আজ।
,
হঠাৎ ই মাঝরাতে ঘুম ভেঙে যায় লাজুক এর।ডুকরে কেঁদে ওঠে লাজুক।
এ কান্না খুশির কান্না।এ কান্না সুখের কান্না।
,
,
তখন ই লাজুক ঘুম থেকে উঠে বসে।অনেক বছর আগের সেই প্রিয় পুরোনো ডায়েরী টা হাতে নেই।
যেখানে লেখা আছে লাজুকের অতীত।লুকানো অতীত।
যে অতীত আজ লাজুক কে এখানে এনে দাঁড় করিয়েছে।
,
,
লাজুক আবারো ডায়েরী লিখতে বসে, সেই পুরোনো দিনের মতো।
“অনেক বছর পর আজ আবার ও লিখতে বসেছি।জানিনা কি লিখবো?কীভাবে লিখবো।কোথা থেকে শুরু করবো।তবুও আজ লিখতে ইচ্ছে করছে।
আজ যে আমার খুশির দিন।লিখতে তো আমাকে হতোই।”
,
,
এটুকু লিখেই লাজুক থেমে যায়।
মনে পড়ে যায় তার পুরোনো কথা।ওখন লাজুক নিয়ম করে ডায়েরী লিখতো।একটা বিশেষ দিন ও বাদ যায়নি তার লিখতে।
কিন্তু অনেকগুলো বছর আর ডায়েরী লিখেনা লাজুক।
,
এই মাঝের কয়েকটা বছর কি এমন ঘটলো যে ডায়েরী লেখা ছেড়েই দিলো লাজুক??
,
,
এসব ভাবতে ভাবতেই ডায়েরীর পেইজ উল্টাতে থাকে লাজুক।একটা পেইজে এসে চোখ আটকে যায় তার।
সেখানে তার সব থেকে প্রিয় মানুষ টার ছবি আছে।
হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে লাজুক ডায়েরী টা বুকে নিয়ে।
কিছুক্ষন পর কান্না থামিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায় চোখে মুখে পানির ঝাপটা দিতে।
,
ফ্রেশ হয়ে এসে আবার ডায়েরীর পেইজ উল্টিয়ে একটা সাদা পেইজে লেখে-“আজ অনেক বছর পর আবার কাঁদলাম।”
,
,
ওই পেইজ টা ওভাবেই রেখে দেই।ডায়েরীর পেইজ ওল্টাতে ওল্টাতে একদম প্রথিমে চলে আসে। পেইজের শুরু থেকে পড়তে থাকে।
০১.০১.২০..
আমি লাজুক রহমান।ডাক নাম লাজ।বাবা মা এর আদরের একমাত্র সন্তান।
আমার নাম টা আমার ভীষণ পছন্দ।কারন আমার বাবা আমাকে এই নাম দিয়েছে।
ও হ্যা,আমার বাবা সামসুর রহমান।তিনি একজন ব্যবসায়ী।আর মা নাহার বেগম।তিনি গৃহিণী।
আমাদের টাকা পয়সার কোনো অভাব নেই।শুধু অভাব একটা ছোট ভাই বা বোন এর।
,
,
আমি আজ প্রথম ডায়েরী লিখছি।আজ অবশ্য আমার একটা বিশেষ দিন।আমি এখন ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ি।বাবা আজ হাইস্কুলে ভর্তি করিয়ে দিয়ে এসেছে।সাথে দিয়েছে এই ডায়েরী টা।
ডায়েরী টা দিয়ে বাবা আমায় বলেছে,”আজ থেকে এটা আমার সুখ-দুঃখের সাথী।
,
তাই তো আমি লিখছি।আমার বর্ণনা টা একটু দেই।আমার বয়স এগারো ছুঁইছুঁই। বয়সের তুলনাই আমি একটু লম্বা বেশি।আমার কাছে তাই মনে হয়।
আমার গায়ের রং উজ্জ্বল শ্যামলা।কোমর অবধি কোঁকড়ানো চুল।
,
বাবা বলেন আমি মায়াবী।তাই আমিও এটাই বিশ্বাস করি।সবাই আমাকে কালো বলে কিন্তু আমি জানি আমি কালো না।আমি মায়াবী।কারন এটা আমার বাবা বলেছে।
আই লাভ ইউ বাবা।
,
,
এটুকু লিখতেই মা এর ডাক পড়ে।”লাজ”,এই “লাজ”? কই মা তুই?খাইতে আয়।
,
লাজুক ডায়েরী টাওভাবেই খোলা রেখে ছুটে চলে যায় রাতের খাবার খেতে।তড়িঘড়ি করে খেয়ে চলে আসে,আবার ডায়েরী লিখতে।
,
,
” আজ আমার হাইস্কুলের প্রথম দিন ছিলো।আমার কোনো বন্ধু হয়নি।তবে ইফরা কে আমার খুব ভালো লেগেছে।কি সুন্দর করে আমাকে সই ডাকলো মেয়েটা।আজ থেকে ইফরাই আমার বেস্টফ্রেন্ড।”
,
এটকু লিখেই লাজুক ঘুমিয়ে পড়ে। কারন কাল তার স্কুল আছে।
এটুকু পড়তেই লাজুকের মনে পড়ে যায় সেদিনের কথা।লাজুক ভাবতে থাকে।
,
,
পরেরদিন সকালে নাহার বেগম নামাজ শেষ করে মেয়ের রুমে আসেন।এসে দেখেন তার মেয়ে এখনো ঘুমাচ্ছে।
মা পরম যত্নে মেয়ের মাথায় হাত বুলাতে থাকেন।
আস্তে করে মমতার সুরে ডাকতে থাকেন।””আম্মা,ও আম্মা”! আর কতো ঘুমাবি মা? ওঠ এখন,বেলা তো বয়ে গেলো।নামাজের সময় শেষ হতে চললো।মা ও মা”।
,
,
নাহার বেগমের ডাকে লাজুক লাফ দিয়ে ঘুম থেকে উঠে পড়ে।এক দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।
নাহার বেগম একটু ও অবাক হয়না তার মেয়ের কান্ডে।কারন সে অভ্যস্ত।তার মেয়ে প্রতিদিন ই এমন করে।
লাজুক ওযু করে এসে নামাজ পড়তে দাঁড়িয়ে যায়।
আর নাহার বেগম মেয়ের বিছানা গোছাতে ব্যস্ত।
লাজুক নামাজ শেষ করে মা কে সালাম দেয়।”আসসালামু আলাইকুম আম্মু”।এটা বলে নাহার বেগম কে জড়িয়ে ধরে।এটা লাজুকের রোজকার রুটিন।
নাহার বেগম ও মেয়েকে জড়িয়ে ধরে চুমু খান কপালে।আমার লক্ষ্মী মা,এখন হাঁটাহাঁটি কর একটু।আমি রান্না বসায়।এটা বলেই নাহার বেগম চলে যায় তার মেয়ের রুম থেকে।
,
,
সেদিনের এই কথা ভাবতেই লাজুকের মন ভালো হয়ে যায়।আবার পেইজ উল্টাতে থাকে।
ডায়েরীর বেশ কিছু পেইজ বাদ দিয়ে আবার পড়তে শুরু করে।বছরের শেষ দিন এর লেখা।বিশেষ দিনের কথাগুলোই লিখতো লাজুক।
,
কি লিখেছিলো সেদিন?
,
চলুন দেখি।
৩১.১২.২০..
আজ আমাদের বার্ষিক পরীক্ষার রেজাল্ট দিয়েছে।স্কুলে বাবার হাতটা শক্ত করে ধরে বসে ছিলাম।ভয় করছিলো খুব।তখনো জানতাম না রেজাল্ট কি হবে।আমাদের স্কুলে সর্বশেষ প্রথম তিন জন এর রেজাল্ট দেয়,আর যারা ফেইল করে তাদের।ততক্ষনে সবার রেজাল্ট দেওয়া হয়ে গেছে।বাকি ছিলাম আমরা ক’জন।
স্যার ডাকলেন,তৃতীয় স্থান অধিকার করেছে তুলিকা আক্তার।
দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে ইফরা খানম।
আমি তখন কান্না করে দিয়েছি।ভেবছি ফেইল করেছি।
কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে স্যার যখন বললেন।
চলবে,,