অনুভবে পর্ব-৩৮+৩৯

0
650

অনুভবে
পর্ব-৩৮
নিলুফার ইয়াসমিন ঊষা

রিসোর্টের একটু দূরত্বে একটি উঁচু জায়গা রয়েছে। সেখান থেকে দেখা যায় উঁচু সকল পাহাড়। ইনারা বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করে, “আপনি চান আমি শাড়ি পরে এখানে উঠি। মাথা খারাপ আপনার?”
“উঠতে পারবে না?”
“অবশ্যই না। শাড়িটা পরার পর চারবার হোঁচট খেয়েছি।”
সভ্য হাসে। ইনারার বিরক্তি আরও বেড়ে যায়, “আপনার হাসি পাচ্ছে? আপনি মজা নেবার জন্যই আমাকে শাড়িটা পরিয়েছেন? ধ্যুর আপনার কথা শুনাটাই ভুল হলো। আমি ফেরত যাচ্ছি।”
ইনারা পিছনে ফিরে যেতে নিলেই সভ্য তার হাত ধরে নেয়। কোনো কথা বলার পূর্বেই কোলে তুলে নেয় ইনারাকে।”
“কী করছেন!” ইনারার আশ্চর্যান্বিত কন্ঠ।
সভ্য উওর দেয় না। তাকে নিয়ে সে ছোট পাহাড়িটার উপর উঠতে থাকে। ইনারা বলতে থাকে, “আপনি পাগল হয়ে গেছেন? কেউ এদিকে এসে পরলে?”
“আসবে না। এদিকে সহজে কেউ আসে না। এত সকালে তো একটুও না।”
“কিন্তু আপনার কষ্ট হচ্ছে তো।”
সভ্য তাকায় ইনারার দিকে। তাকে নীলাদ্রি সাজে দেখেই বুকের ভেতর সুক্ষ্ম মিষ্টি ব্যাথা হলো। তার চোখ যেন এই ব্যাথার মাত্রা হাজারোগুণ বাড়িয়ে দিলো। এই ব্যাথার জন্য ইনারাকে শুকরিয়া বলতে ইচ্ছা করছে। কেমন আরাম পাচ্ছে সে। সে বলল, “এই শুভ্র সকালে আজ প্রথম কোনো প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করার সুযোগ পেয়েছি। এমন স্মৃতিচারণ মুহূর্তে কোনো সঙ্গী না থাকলে বেমানান হয় না?”
সভ্য আবারও সামনে তাকায়। তাই সে দেখতে পায় না ইনারার গালের লালিমা। তার ঠোঁটের মুচকি হাসি। সে হাসিতে লুকিয়ে রইলো তার প্রতি গুপ্ত অনুভূতির বাহার।

ইনারা তার গলায় হাত আবদ্ধ করে। সভ্যের থেকে এক মিষ্টি সুগন্ধি আসছে। যা মাতাল করার মতো। এই মাতোয়ারা পরিবেশে সে সভ্যের বাহুডোরে। ভাবতেই ইনারার ব্যাপারটা স্বপ্নের মতো লাগলো। কিন্তু স্বপ্নে কী এমন মাতাল সুগন্ধি পাওয়া যায়? মনে হয় না। সে অকারণেই লজ্জা পেয়ে সভ্যের বুকের মাঝে মুখ লুকিয়ে নিলো।

পাহাড়ের চুড়ায় সভ্য যেয়ে ইনারাকে নামায়। হাফ ছেড়ে বলে, “ইন্দুরনী তুমি দেখতে এতটুকু তারপরও কী ভারীরে বাবা! আমি জিম করি প্রতিদিন, তাও কোমরটা ভেঙে গেল আমার।”
ইনারার এতক্ষণ খুব প্রেম প্রেম পাচ্ছিল। যা মুহূর্তে হাওয়া হয়ে গেল। সভ্যের কথায় তার নাকের ডগায় রাগ এসে হাজির হলো। সে সভ্যের বুকে মেরে বলল, “তো আপনাকে বলেছিল কে আমাকে উঠিয়ে নিজের কোমর ভাঙতে। হনুমানের নাতি কোথাকার।”
বলে সে মুখ ফুলিয়ে বসে পড়ে। শেষ কথাটা শুনে প্রথমে সভ্য কিছুক্ষণ বিরাম নেয়। সে কল্পনা করে একটি কফি রঙের চেয়ারে কালো স্যুট পরা তার দাদা বসে আছে। সে হাতে একটি লাঠি নিয়ে থাকেন সবসময়। আর সবসময়ই সবাইকে বকে। এমন সময় তার দাদুর মুখটা ইনারার কথানুযায়ী কল্পনা করতেই হাসিতে লুটিয়ে পড়ে সে। শব্দ করে হাসতে থাকে। ইনারার পাশে বসে হাসিতে গড়াগড়ি খায়।

এদিকে ইনারা ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রয় সভ্যের দিকে। সে কি কারণে এভাবে হাসছে বুঝতে পারছে না। সে জিজ্ঞেস করে, “কী হলো? কোনো ভূত মাথায় চড়ে নাচছে না’কি? অকারণে এমন খি খি করে হাসছেন কেন?”
“ভূত না তবে পেত্নী। তুমি।”
“আমি পেত্নী? আমাকে পেত্নীর মতো দেখা যায়?”
ইনারা তার বুকে মেরে বসে। কিন্তু হাত সরানোর সময় সভ্য হাতটা তার বুকের কাছেই ধরে নেয়। সভ্যের হৃদয়ের স্পন্দন দিশেহারা। হাত ধরে রেখেই ইনারাকে নিজের দিকে টান দেয় সে। তার ঠোঁটের কোণে মুগ্ধতা ছড়ানো হাসি, “তোমাকে শুভ্র দেখাচ্ছে, নীল রঙের ছোঁয়ায় নীলাদ্রি লাগছে, মায়াবতী দেখাচ্ছে তোমার দৃষ্টি এবং লজ্জায় রঙে থাকা তোমার গালদুটোর কারণে লজ্জাবতী লাগছে।” সভ্য তার দিকে আরেকটু ঝুঁকে আসতেই কেঁপে উঠে ইনারা। সাথে সাথে কেঁপে উঠে তার অন্তরও। সে চোখ বন্ধ করে নেয়। হাতের মুঠোয় আঁকড়ে নেয় সভ্যের শার্ট।

সভ্য খোঁপায় বাঁধা তার কেশ খুলে দিতেই হাওয়ায় মুহূর্তে এলোমেলো হয়ে যায় তার মাতোয়ারা আঁকাবাঁকা চুল। কতগুলো চুল মুখে এসে লাগে সভ্যের। কেশের মাতাল ঘ্রাণে সে মুগ্ধতার নেশায় আসক্ত হয়ে যায়। হুঁশ যেন হারিয়ে যায়। চোখ বন্ধ করে তার কানের কাছে মুখ এনে বলে, “আর তোমার এই চুলগুলো খুলে দিলে কারও হৃদয়ের স্পন্দন বন্ধ হবার কারণও হতে পারো।”

ইনারা আর সামলাতে পারে না। তার হৃদয়ের যন্ত্রণা বেসামাল হয়ে যায়। সে সভ্যকে সরিয়ে দিয়ে অন্যদিকে তাকায়। সে সভ্যের শব্দের নেশায় মাতোয়ারা হয়ে যায়। আর তার হৃদয়ের স্পন্দন হয় দিশেহারা। সে হাঁটুতে মুখ রেখে তাকিয়ে রয় সামনের পাহাড়ের দিকে। বিশাল সবুজ পাহাড়ের উপর শুভ্র মেঘেরা দুলে বেড়াচ্ছে।

ইনারা তার হৃদয়ের অবস্থা প্রকাশ করতে চায় নি সভ্যের কাছে। তাই নিজেকে সামলে স্বাভাবিক গলায় বলে, “এগুলো তো উপন্যাসের নারী চরিত্রের উপাধি। কিন্তু এর কোনো বৈশিষ্ট্য আমার মাঝে নেই। আমি কোনো কবির কবিতা হতে পারি না।”
“আর তোমার তা কেন মনে হয়?”
“মনে হলো। আমি বেশি কবিতা পড়ি নি, না উপন্যাস। কিন্তু আমার মনে হয় কোনো কবির কবিতা হবার জন্য চাই কাজল মাখা কৃষ্ণচক্ষু, ঘন কালো কেশ, শ্যামলা রঙের হলেই তো তারা মায়াবতী হয়। তাহলে আমি কীভাবে কোনো উপন্যাসের নায়িকা হতে পারি?”
“কোনো গায়কের গান হবে?”
“আমি? এমন বৈশিষ্ট্য আমার নেই।”
সভ্য তার চিবুকে হাত রেখে তার দিকে তাকায়। চোখে চোখ মেলায়। বলে, “তোমার সমুদ্রের মতো নীলাভ দৃষ্টিতে কতজন হৃদয় হারিয়েছে জানো তুমি? তোমার সোনালী চুলগুলো দেখলে যে চোখ সরানো দায়, এর ধারণা আছে তোমার? তোমার ফর্সা মুখের গোলাপি আভায় যে কেউ তোমার প্রেমে পড়ে যাবে। তুমি গান হলে গানের নাম কী রাখতাম জানো?”
“কী?” ইনারাও মুগ্ধ স্বরে প্রশ্ন করে।
“প্রণয়ী। আমার প্রণয়ী।”
শব্দটা কেমন বুকে যেয়ে লাগে ইনারার। তখনি সভ্য উঠে দাঁড়ায়, “এক্ষুণি আসছি আমি।”
“যাচ্ছেনটা কোথায়?”
“আসছি মহারাণী। ধৈর্য্য ধরুন।”

সভ্য চলে যায়। কিছু সময় কাটে সভ্য আসে না। ইনারার রাগ হয় প্রচুর। এখানে তাকে জোর করে এনে এভাবে ফেলে যাবার মানে হয় না। সে বোর হচ্ছিল তার ব্যাগ থেকে ফোন বের করে একটি ছবি তুলে পাঠায় তার, সুরভি এবং প্রিয়’র ‘থ্রি ইডিয়ট’ গ্রুপে। ছবি দেবার সাথে সাথেই কল এসে হাজির। ওপাশ থেকে সুরভির কন্ঠ, “হ্যালো জানেমান। আমি এতবার তোমাকে তেল মারার পরও তুমি আমাকে উল্টাপাল্টা বুঝিয়ে ঘোল খাওয়াইসো। আর এখন শাড়ি পরে পাহাড়ে বসে আছো? জানেমান কী চলছে সত্যি করে বলো তো।”
“কোথায় কি চলছে? কিছুই চলছে না। এমনিতেই শাড়ি পরলাম। শাড়িটা মা’য়ের।”
“আর কার কথায় শাড়ি পরেছ?”
“কারও না।”
“মিথ্যুক। সভ্যের কথায় শাড়ি পরেছিস। মিথ্যা বলতে লজ্জা লাগে না তোর? সভ্যের কথায় তুই শাড়ি পরেছিস তাই না?”
“স..সভ্যের কথায়? না তো। মানে..মানে সে বলেছিলো পরলে মা’কে খুব কাছ থেকে অনুভব করতে পারবো। কিন্তু তার জন্য পরি নি। আমার কি ঠেকা যে আমি তার জন্য শাড়ি পরতে যাব?”
“কিন্তু তোর কথার সুর তো অন্যরকম মনে হচ্ছে জানেমান।” টেনে বলে সুরভি।

“ওয়েট, ওয়েট। থাম তোরা।” দুইজনকে থামায় প্রিয়। সে এতক্ষণ চুপ করে দুজনের কথোপকথন শুনছিল। সে বিস্মিত সুরে জিজ্ঞেস করে, “সভ্য সেখানে? আমাদের ফেভারিট সভ্য? দ্যা গ্রেট সভ্য!”
“গ্রেট না ছাই। এই ব্যাঙেরছাতাকে কীভাবে গ্রেট মনে হয় তোদের?”
সুরভী কথাটায় চেতে যায়, “লোকটা তোর জন্য এত কষ্ট করে গিয়েছে তাও তোর মুখে একটু প্রশংসা আসবে না। কত মানুষ পাগল ওর এক ঝলকের জন্য আর তুই তাকে কাছে পেয়েও পাত্তা দিস না। উফফ কেবলমাত্র আমার জন্য যদি সভ্য এতদূরে যেত তাহলে তো আমি সেখানেই তাকে নিয়ে কাজী অফিসে যেয়ে বিয়েটা সেরে ফেলতাম।”
কথাটায় রাগ উঠে যায় ইনারার। সে কাঠকাঠ গলায় বলে, “ভেবে চিনতে তো মুখে কথা আসে না। আসছে বিয়ে সেরে ফেলতে।”
ওপাশ থেকে মিটিমিটি হাসে সুরভি, “এত জ্বলছ কেন জানেমান। তোমার মনে কি সভ্য নামক অনুভূতি হানা দিয়েছে? প্রেমে পড়ে গেলি না-কি?”
“যা তা বলিস না তো।”
“তোকে তোর থেকেও ভালো চিনি। তুই তাকে পছন্দ করতে শুরু করেছিস অনেক আগের থেকেই। তোর সাথে যখনই কথা হয় সভ্য ছাড়া কোনো নাম নেই তোর মুখে। আর তুই যে ওর জন্যই চাকরিটা ছাড়ছিস না আমি ভালো করেই জানি। আর তার নাম যখনই নিস লজ্জায় তোর গালদুটো লাল হয়ে যায়। এ জীবনে আর কখনো তোকে লজ্জা পেতে দেখি নি ভাই। কী জাদু করল তোর উপর সভ্য?”

প্রিয় কথায় বাঁধা দিয়ে বলে, “ইনু সম্ভবত জোহানের কাছ থেকে ছ্যাঁকা খেয়ে এখন সভ্যের উপর ক্রাশ খেয়েছে। যাক আমাদের টিম বাড়ল।”
“প্রিয়র বাচ্চা চুপ কর। আমি সিরিয়াস। আমার মনে হয় সভ্যও ওকে পছন্দ করে।”
“পাগল হলি না-কি! সভ্য এত বড় সেলিব্রিটি। হাজারো তারকাদের সাথে তার ওঠাবসা। সে কেন আমাদের ইনুকে পছন্দ করবে। তুই ওর মাথা খারাপ করিস না তো। একবার জোহান জোহান করে এমনিতেই কষ্ট পেয়েছে। অবশেষে কি হলো? জোহান ঠিকই অভিনেত্রী দীপার সাথে ছিলো। ইনারা ধনী পরিবারের মেয়ে হলেও এটা তারা তো জানে না। এছাড়া সেলিব্রিটি মানুষরা আমাদের সাধারণ মানুষগুলোকে ভক্ত হিসেবেই দেখে। ভালোও বাসে তবে ভক্ত হিসেবে। আর ইনু তো মেয়েদের মতোও চলাফেরা করে না। দেখিস না আমি সবজায়গায় ওকে নিজের ভাই হিসেবে পরিচয় করাই? হি হি।”
তাকে ধমক দেয় সুরভি, “প্রিয়’র বাচ্চা তোকে কাছে পেলে মেরে তক্তা বানিয়ে দিব আমি।”

কথাগুলো শুনে মন খারাপ হয়ে যায় ইনারার। কথাগুলো সত্য, কঠিন। হয়তো এ কারণেই। সে উদাসীন গলায় বলে, “প্রিয় ভুল কিছু তো বলে নি। আমার মতো মেয়েকে ও কেন পছন্দ করবে?”
“তুই আসলে ওকে পছন্দ করিস?” প্রিয় গলার স্বর বিস্মিত। সুরভি লাফিয়ে উঠে, “আই নিউ ইট। আমি জানতাম। ইয়েস…ইয়েস…ইয়েস! যা জানেমান তোর জন্য আমি নিজের ক্রাশকে ত্যাগ করলাম। তাকে আমার দুলাভাই হিসেবে কবুল করলাম।”
দীর্ঘশ্বাস ফেলে ইনারা। হতাশ সুরে বলে, “লাভ কী? সে সম্ভবত ঐশিকে পছন্দ করে। আর ঐশি তাকে।”
প্রিয় জিজ্ঞেস করে, “সত্যি করে বলতো তুই কী জোহানের মতোই ওকে পছন্দ করিস। না-কি আসলে বিশেষ অনুভূতি আছে তার জন্য।”
“জানি না। বুঝি না। এমন অনুভূতি আগে অনুভব হয় নি। কেমন অদ্ভুত অনুভূতি।”
“মনে হয় তাকে ছাড়া বাঁচবি না এমন অনুভূতি?”
“উঁহু, এটা বললে তো মিথ্যা হবে। একজনের জীবন অন্য কারো জন্য থেমে থাকে না। অন্যকারও জন্য নিজেকে মেরে ফেলাটাও তো অন্যায়। কিন্তু সব শূন্য লাগে। কেন যেন!”
প্রিয় হাসে, “তুই আসলে প্রেমে পড়ে গেলি? শুন কিশোরী বয়সের আবেগ যতটা কষ্ট দেয় তার থেকে হাজারোগুণ বেশি ভালোবাসা কষ্ট দেয়। কিন্তু সাবধান করার আগেই তো বিপদে পড়ে গেলি তুই।”
“এখন?”
“এখন আর কী? কিনারা না পাওয়া পর্যন্ত প্রেমে ভাসতে থাক। সে হাজার হোক দ্যা গ্রেট সভ্য। তোর জন্য প্রয়োজনে তাকে ধরে বেঁধে তোর সামনে নিয়ে আসব। তারপরও তুই এসব নিয়ে চিন্তা করিস না।”
এবার খিলখিলিয়ে হেসে উঠে ইনারা, “ওর বডিগার্ডরা তোর আলুরভর্তা করে দিবে।”
“দেখ প্রীতি যেমন আমার বোন। ওর সুখের জন্য আমি সব করতে পারি। তেমনিই তুই আর সুরভিও আমার জন্য, তোদের কোনো কষ্ট আমি হতেই দিব না। এখন তো কেবল সামান্য চাকরি করি বলে, একদিন যখন সফল ব্যক্তি হতো। তোদের আর মা’য়ের কোলে সারা পৃথিবীর খুশি নিয়ে আসব।”
সুরভিও বলে, “তোর মতো ভীতুর ডিম আর কিপ্টার দ্বারা এসব সম্ভব না।”
“সুরভীর বাচ্চা চ্যালেঞ্জ করবি না।”
“হাজারবার করুম। কি করবি?”
“আচ্ছা বলতো তুই কীভাবে জানিস সভ্য ইনারার সাথে?”
“আমি..আমি কি বলছিস এসব?”
ইনারাও এখন কথাটা ধরতে পারে, “আসলেই তো সুরভী তুই কীভাবে জানলি?”
ইনারা দেখে সভ্য আসছে। তাই সে ফোনে বলল, “আচ্ছা সভ্য আসছে রাখি তোকে পরে দেখে নিব।।”
সুরভি মশকরা করে বল, “হ্যাঁ হ্যাঁ এখন তাকে পেয়ে আমাদের মনে রাখবা কেন? আমরা কে?”
“তুই চাস তোকে এখন আমি জিজ্ঞাসাবাদ করি?”
“ওকে বাই জান।”
সাথে সাথে কল কেটে দেয় সুরভি। প্রিয়ও।
ইনারা বুঝতে পারে এখন থেকে সুরভি তাকে খোঁচা মারা ছাড়বে না। একবার যেহেতু তাকে ধরতে পেরেছে তখন কিছুতেই ছাড়বে না। জোহানের সময় সে এসব করতে পারে নি। সে সুযোগই দেয় নি। নিজেই সারাক্ষণ জোহানের গুণগান করতো। অথচ এখন সভ্যকে নিয়ে তার অনুভূতিটা কারও কাছে বলে নি। কারও সাথে শেয়ার করে নি। এই অনুভূতিগুলো সে কেবল নিজের কাছে রাখতে চায়। নিজের মাঝে বন্দী রাখতে চায়। অবশ্য বলতে কেমন লজ্জাও লাগে তার। যা আর কখনো কারও জন্য লাগে নি।

সে দেখলো সভ্য আসছে। তার কাঁধে একটি গিটার। এই গিটারটি সে কনসার্টে নিয়ে গিয়েছিলো। বিশেষ সকল অনুষ্ঠানে সে এই গিটার নিয়ে যায়। সে একগাল হাসি নিয়ে একপ্রকার ছুঁটে আসছিলো তার দিকে। হঠাৎ সে দাঁড়িয়ে যায়। ফোন বের করে কানে নেয়। এক মিনিটও কথা বলে না। অথচ তার ঠোঁটের হাসি উড়ে যায়।

সভ্য ছুটে আসছিল ওই ইনারার কাছে। মাঝ পথেই তার ফোন বেজে উঠলো। সেও থেমে ফোনটা বের করে। ঐশির ফোন। একবার কল কাটতেই সাথে সাথে আবারও ফোন বেজে উঠে। নিশ্চয়ই গুরুত্বপূর্ণ কিছু হবে। ঐশি কখনোই একবারের বেশি দুইবার কল দেয় না। সে কল ধরে, “হ্যাঁ ঐশি বল।”
“কোথায় তুই।”
“একটু কাজ ছিলো তাই চলে এসেছি। সময় ছিল না তাই বলতে ভুলে গিয়েছিলাম।”
“ব্যাপার না। তুই আমার একটা কাজ করবি। আগে প্রমিজ কর, করবিই।”
“আগে বলে তো দেখ।”
“আমি কিছু জানি না তোর করতেই হবে। তুই ইনারাকে চাকরি থেকে বের করে দিবি।”
সাথে সাথে সভ্যের হাসি মুখটা মলিন হয়ে গেল। কপালে এঁকে উঠল চিন্তার ধারা। ঐশী কখনো এমন আজেবাজে আবদার করে না। তাহলে এবার কী হলো? এর থেকে বড় ব্যাপার হলো ইনারাকে না দেখে সে দিন কাটাবে কীভাবে? ভাবতেই তার বুক কেঁপে উঠে। তাকে এক মুহূর্তও না দেখলে যে ভালো লাগে না তার।
“কারণ কী?” প্রশ্ন করে সভ্য।
“ঢাকা এসে জানাচ্ছি। তুই তোর কাজ কর।”
এতোটুকু বলেই কল কেটে দিলো ঐশী। অথচ সভ্যের মাথায় হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল। চিন্তার রেখা তার কপাল থেকে সরছিলোই না। এমন সময় তার চোখ পরে ইনারার দিকে। না, ইনারাকে তার চিন্তা বুঝতে দেওয়া যাবে না। সে ঠোঁটে জোরপূর্বক হাসে এঁকে এগিয়ে যায়। বসে ইনারার পাশে।

ইনারা জিজ্ঞেস করে, “কোথায় গিয়েছিলেন?”
“গিটার আনতে। গান শুনবে?”
ইনারার হৃদয়ে যেন খুশির জোয়ার বয়ে আসে। সভ্য তার জন্য গান গাইবে? বিশ্বাসই হচ্ছে না তার। এমন এক কল্পনাও সে করেছিলো ক’দিন আগে। তার কল্পনা সত্যি হতে যাচ্ছে? বিশ্বাস হচ্ছে না তার। এত সুখ সহ্য করার মতো ক্ষমতা তো নেই তার। সে একগাল হেসে উঠে। খুশিতে গলা দিয়ে শব্দ বের হচ্ছে না। তাই দ্রুত মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দেয় সে।

প্রেমের উষ্ণ হাওয়ায় মাতাল তুমি আর আমি
তোমার আঁখি নীল সমুদ্র তোমাতেই আমি;
আমি ডুবে যাব ডুবে যাব তোমার মাঝে, ও প্রণয়ী
আমি ডুবে যাব ডুবে যাব তোমার মাঝে, ও প্রণয়ী।

তুমিতে তুমিতে হারাই বারে বারে আমি;
তোমারেই ভালোবাসি কীভাবে বলি আমি?
বুঝ না একটু মনের কথা
মেঘ যে ডাকে এই অবেলা
মেঘেঢাকা দিনে তোমাকে চায় এই মন
তুমি কী করে দিবে বারণ?

তোমার আমার হবে আবারও দেখা
আমি হবো মেঘ আর তুমি হবে বৃষ্টিধারা
আমি ডুবে যাব তোমারই মাঝেতে
হারাব আবার তোমার উষ্ণ প্রেমের প্রেমাহাওয়ায়,
ডুবে যাব, ডুবে যাবে, ডুবে যাব আমি
তোমারই মাঝে….
আমি ডুবে যাব ডুবে যাব তোমার মাঝে, ও প্রণয়ী
ও প্রণয়ী…..
ও আমার প্রিয় প্রণয়ী….

শুভ্র মেঘ কৃষ্ণ রঙে রঙিন হলো। আকাশে ঘিরে বসলো কালো ছায়া। না বলা ঝুম বৃষ্টি নামে। চারপাশে তীব্র হাওয়ার ছড়াছড়ি হয়। সভ্য তাকিয়ে রয় ইনারার দিকে। অর্ধেক লেখা গানটা আপনা-আপনি সম্পূর্ণ হয়ে যায়। এতদিন যে গান হাজারো চেয়েও সে সম্পূর্ণ করতে পারল না আজ তা জাদুর মতো শব্দ হয়ে ছড়িয়ে গেল বাতাসে। এটা এই মাতাল মুহূর্তের জাদু না ইনারার সমুদ্রের মতো গভীর দৃষ্টির। ঠিক ধরতে পারে না সভ্য। সে দীর্ঘশ্বাস ফেলে আকাশের দিকে তাকায়। হঠাৎ কেমন ভয় লাগছে তার। ভয়ের কারণটা ইনারা এবং তার সাথে কাটানো এত সুন্দর মুহূর্ত। এই মুহূর্তগুলো ফুরিয়ে যাবে না তো? ভাবতে ভাবতেই আকাশের মতো কালো মেঘ ছড়িয়ে যায় সভ্যের বুকের মাঝে।

ইনারা উঠে দাঁড়িয়ে পক্ষীর মতো দুইহাত ছড়িয়ে মুখ তুলে তাকায় আকাশের দিকে। উপভোগ করে বৃষ্টির প্রতিটি জলের বিন্দু। সভ্য তাকায় তার দিকে মুগ্ধ নয়নে। কিছু মুহূর্ত তাকিয়ে থাকে। হঠাৎ খেয়াল করে ইনারার শাড়িটা লেপ্টে গেছে তার দেহের সাথে। সাথে সাথে চোখ সরিয়ে নেয় সে। আর তাকায় না। উঠে দাঁড়ায়। বলে, “জ্বর আসবে তোমার। রিসোর্টে চলো।”
ইনারা কারও কথা এতটা সহজে মানবে? অসম্ভব। সে উল্টো বলে, “পাগল আপনি। এমন মনোহর অনুভূতি ছেড়ে কেউ যায়? আসুন, আপনিও আমার সাথে ভিজুন।”

ইনারা যেন হারিয়ে যায় বৃষ্টির ছোঁয়ায়। লাফাতে শুরু করে সভ্যের হাত ধরে। হঠাৎ পা পিছলে যায় তার। পরে যায় সভ্যের বুকের মাঝে। সে যখন বুকের থেকে মাথা তুলে সভ্যের দিকে তাকায় তখনই হঠাৎ চঞ্চল ইনারাটা লজ্জায় ডুবে যায়। নম্র হয়ে যায়। সভ্যের এই দৃষ্টি যে তার দুর্বলতা। সে লজ্জায় চোখ নামিয়ে পিছাতে নিলেই সভ্য তার কোমর ধরে এক টানে নিজের কাছে টেনে নেয়। চমকে উঠে ইনারা। তাকায় সভ্যের দিকে। তার দৃষ্টি আজ অন্যরকম। কেমন মাতাল।

চারপাশে নীরবতার মাঝে কেবল বৃষ্টির শব্দ। খোলা আকাশের নিচে মাতাল হাওয়ার স্পর্শ দুইজনকে মাতোয়ারা করে তুলল। ইনারার নীল সমুদ্রের মতো দৃষ্টিতে ডুবে যেয়ে মাতোয়ারা হয় সভ্য। তার গাল ছুঁয়ে মুখের সামনে আসা চুলগুলো কানের পিছনে গুঁজে দেয়। মুখটা কানের কাছে এনে বলে, “আজ এই মাতোয়ারা বৃষ্টিকে সাক্ষী রেখে স্বীকার করছি ভালোবাসি তোমায় প্রণয়ী…..”
বলেই গালে চুমু খায় সে। ভিজে থাকা গালে সভ্যের ঠোঁটের স্পর্শ পেতেই কেঁপে উঠে ইনারা।

সভ্য মুখ তুলে তাকায় ইনারার দিকে। ইনারার চোখ নামায়। লজ্জামাখা তার গাল। উওর কি তাহলে হ্যাঁ ধরে নিবে সে? তার কাঁধে ভিজে থাকা কেশ নিয়ে খেলা করতে শুরু করে সভ্য। ইনারা এখনো চুপ। মুখ নিচু করে দাঁড়ানো। কিছুসময় পর যখন সে চোখ তুলে কোনো উওর দিতে নেয় এর পূর্বেই সভ্য তার ঠোঁটজোড়া নিজের দখলে নিয়ে নেয়। আরও কাছে টেনে নেয় তাকে।

চলবে…..

অনুভবে
পর্ব-৩৯
নিলুফার ইয়াসমিন ঊষা

“আজ এই মাতোয়ারা বৃষ্টিকে সাক্ষী রেখে স্বীকার করছি ভালোবাসি তোমায় প্রণয়ী…..”
বলেই গালে চুমু খায় সে। ভিজে থাকা গালে সভ্যের ঠোঁটের স্পর্শ পেতেই কেঁপে উঠে ইনারা।

সভ্য মুখ তুলে তাকায় ইনারার দিকে। ইনারার চোখ নেয়। লজ্জামাখা তার গাল। উওর কি তাহলে হ্যাঁ ধরে নিবে সে? তার কাঁধে ভিজে থাকা কেশ নিয়ে খেলা করতে শুরু করে সভ্য। ইনারা এখনো চুপ। মুখ নিচু করে দাঁড়ানো। কিছুসময় পর যখন সে চোখ তুলে কোনো উওর দিতে নেয় এর পূর্বেই সভ্য তার ঠোঁটজোড়া নিজের দখলে নিয়ে নেয়। আরও কাছে টেনে নেয় তাকে।

“কোথায় হারিয়ে গেলেন? আসুন না, আমার সাথে ভিজুন একটু। ভালো লাগবে।” ইনারার কথায় ঘোর ভাঙে সভ্যের। সে অস্থির হয়ে আশেপাশে তাকাতে শুরু করে। ইনারা তার কাছে নেয়। বরং দুই হাত দূরে দাঁড়ানো। সে এখনো খিলখিল করে হেসে দুইহাত পেখমের মতো মেলে তাকিয়ে আছে। তাহলে এতক্ষণের ব্যাপারটা সম্পূর্ণ কল্পনা? ইনারাকে কাছে টেনে নেওয়া, তার ভালোবাসার স্বীকারোক্তি করা, চুমু দেওয়াটা, সবই কি কেবল কল্পনামাত্র! এটা সত্যি হলে ইনারা এভাবে খিলখিল করে হাসতো না। হয়তো সে লজ্জায় ডুবে থাকতো, নাহয় তার গালে জোরে এক চড় বসিয়ে দৌড়ে যেত রিসোর্টের দিকে।

দুই নং ঘটনাটা হবার সম্ভাবনা বেশি। ইনারা কিশোরী মাত্র। তাই তার আবেগ বেশি। এই আবেগী দিনে লজ্জা পাওয়াটা তো স্বাভাবিক। কিন্তু কোনো পুরুষ তার অনুমতিবিহীন এমন কান্ড করলে নিশ্চিত সে এতটা সহজে ব্যাপারটা নিবে না। এমনকি তার মুখও হয়তো কখনো দেখতে চাইতো না।

দীর্ঘশ্বাস ফেলে সভ্য। ব্যাপারটা কল্পনা হবার কারণেই বেঁচে গেল, নাহলে এই মাতোয়ারা পরিবেশ তো তাকেই আবেগে ভাসিয়ে নিয়ে যেত। তবে এ মুহূর্তে সত্যিই তার ইনারার কাছে নিজের ভালোবাসাটা স্বীকার করতে মন চাইছে। কিন্তু যদি ইনারা তাকে প্রত্যাখ্যান করে দেয়? তাদের দেখা হয়েছে সবে সাড়ে তিনমাস। একে অপরকে বুঝার জন্য আরও সময় প্রয়োজন। তার এই স্বীকারোক্তিটা নাহয় আরও কিছু সময় পর হোক। আর এই কল্পনাটা সে একদিন সত্যি করবেই। আজ না হোক, হয়তো তাদের বিয়ের পর।

সভ্য আবারও নিচে বসে পরে। বৃষ্টির বেগ এখনো তীব্র। ইনারার দিকেই দৃষ্টি রেখে হাতে গিটার নিয়ে বাজাতে শুরু করে। সে তাকিয়ে রয় ইনারার দিকে। গিটারের সুরে ইনারা তাকায় সভ্যের দিকে। ঝুম বৃষ্টিতে তাকে আবছা দেখাচ্ছে। তবুও তার ঝলক ইনারার গালের হাসিটা গাঢ় করল। মানুষটা তার দিকেই তাকানো। সভ্যের গিটারের সুরের সাথে তার এই ঝুম বৃষ্টিটা স্বপ্নের মতো লাগছে। তার ইচ্ছা করছে এই মুহূর্তটা এখানেই থেমে যাক।

কিন্তু মুহূর্তটা থেমে যায় না। বৃষ্টি ঝরা বন্ধ হয়। আজ তাদের রিসোর্ট থেকে বের হবার কথা ছিলো না। কিন্তু হতে হলো। সভ্যের কোম্পানি থেকে কল এসেছে। আগামীকাল তাদের মিটিং। তার সেখানে থাকাটা জরুরী। তার দল হয়ে তাকেই সব কথা বলতে হয়। তাকে এক প্রকার নিজের দলের জন্য যেতে বাধ্য হতে হয়। কিন্তু হঠাৎ করে এই মিটিং কিসের তা বলা হলো না। তার এখনই রওনা দেওয়া উচিত ছিলো। কিন্তু সে রওনা দেয় না। রাতে দিবে। ইনারার সাথে প্রতিটি মুহূর্ত তার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

রিসোর্টটা দেখতে সুন্দর। তাই সেখানেই দুপুর পর্যন্ত ঘুরেফিরে খাবার খেয়ে বের হয় দুইজন শ্রী মঙ্গলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে। গাড়িতে করে রওনা দিতে চাইলো সভ্য। কিন্তু ইনারা কিছুতেই গাড়িতে যাবে না। সে রিসোর্টের মালিককে দিয়ে একটি অটো আনাল। তার ভাষ্যমতে অটোতে খোলামেলা জায়গা দিয়ে শ্রীমঙ্গলের সৌন্দর্য বেশি দেখা যায়। তার জেদের সাথে পারা যায়? ইনারা আজ পরেছে একটি গোলাপি রঙের কামিজ সভ্য খানিকটা অবাক। তাকে এই প্রথম সে সেলোয়ার-কামিজ দেখছে। আর গোলাপি রঙেও। ইনারার মধ্যে মেয়ে সুলভ ভাবটা একটু কম। আর তার পোশাকে মেয়েলী ভাব দেখাই যায় না। কিন্তু ইদানিং সে পরিবর্তন হচ্ছে। এর পরিবর্তন হওয়ার কারণটা সে ধরতে পারছে না। রাস্তায় যাবার সময়ে চা বাগানে একটু ঘুরেঘারে কয়েকটা ছবি তুলে নিলো ইনারা। এমনকি সভ্যকে ধরে নিয়ে তার সাথেও তুলল। যদিও সভ্যের মুখ দেখা যাচ্ছে না। সে মাস্ক এবং ক্যাপ পরা। সেখান থেকে তারা রওনা দিচ্ছিল বাইক্কা বিলের দিকে। মাঝপথে একটি কাশবাগান দেখে ইনারা অটো থামায়। কাশবাগানে যাবার জন্য এক পাহাড়ি ঝর্ণার এক ঝিরিপথ পার করতে হবে। ইনারা খুবই উৎসাহ নিয়ে জুতো খুলেই নেমে পরলো। কিন্তু সভ্য সেখানেই দাঁড়িয়ে রয়। সে এসব বুঝে না। কখনো এমন কিছু অভিজ্ঞতা তার হয়নি। কিন্তু ইনারা তো তাকে একা ছেড়ে যাবে না। তাই ধরে বেঁধে নিয়ে গেল তাকে। তারও সে শীতল জলে পা রাখতে হলো। কিন্তু পাড় হবার পূর্বে ই ইনারার মাথায় দুষ্টুমি চড়ে। সে পানি হাতে নিয়ে সভ্যের মুখে মারতে থাকে। আর প্রতিবার এই দুষ্টুমি করবার পর খিলখিল করে হেসে উঠে। সভ্য একবার বকা দিতে চায়। কিন্তু এমন হৃদয় কাঁপানো হাসি দেখে কিছু বলার সাহস কোথা থেকে পায় সে?

এত কষ্ট কেবল কিছু কাশফুল ছোঁয়ার জন্য। কিছু কাশফুল হাতে পেয়েই দৌড়ে চলে আসে সে। তারপর তারা যায় মনিপুরী পল্লীতে। সেখান থেকে সতেরোটা শাড়ি কিনে সভ্য। আর ইনারা দুইটা। তাও আইজা আপি আর সুরভীর জন্য।

ইনারা অটোতে বসেছিলো। একটা আট রঙের চা অর্ডার দেওয়া হয়েছে। একটা কারণ সভ্য পাবলিক প্লেসে মুখ খুলে চা খেতে পারবে না। ইনারা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো শাড়িগুলোর দিকে। তার এমন মুখ দেখে সভ্য জিজ্ঞেস করে, “কেমন প্যাঁচার মত মুখ করে রেখেছো কেন?”
“তো আর কি করবো? আমার ঘুলি উড়ায় দিলেন আপনি। আপনি তো পুরো ঢাকা শহরের জন্য শাড়ি কিনে আনলেন। অটোতে আমার জায়গায় শাড়ি ভর্তি।”
“এত কোথায়? আমি তো আরো বেশি নিতে চেয়েছিলাম। তুমিই তো বকা দিয়ে মানা করলে।”
“ইসব আসছে এমন মুখ করে আছে যেন ভাঁজা মাছ উলটে খেতে পারে না। বলুনতো এত শাড়ি আপনি কার জন্য নিয়েছেন?”
“তোমার তো দেখছি জানার খুব আগ্রহ।”
“থাক বলতে হবেনা।”
চা এসে পড়েছে। একটি ছোট ছেলে ইনারার হাতে চায়ের কাপটা দিয়ে গেল। সেই চায়ের কাপে চুমুক দেওয়ার পূর্বে বিড়বিড় করে বলল, “আমায় বলবে কেন? নিশ্চিত ঐশির জন্য নিয়েছে। তাকে ছাড়া আর কার জন্য নিবে?”
তার চোখেমুখে বিরক্তি দেখা গেল। চা’য়ের কাপে চুমুক দিয়ে সে বলল, “অসাধারণ চা। কিন্তু আফসোস আপনি খেতে পারবেন না।”
খানিকটা আর ঢঙ করেই বললো সে। সভ্য হাসে, “আচ্ছা চা অসাধারণ বুঝলাম। তাহলে তোমার মুখ এমন পেঁচার মতো করে রেখেছো কোন দুঃখে? আচ্ছা বলছি, এখানে পনেরো রঙ্গের শাড়ি আছে। এর মধ্যে তিনটা নীল পাড় ওয়ালা গোলাপি জমিনের শাড়ি। সে তিনটার মধ্যে একটা ঐশির, আরেকটা সুরভির।”
থতমত খেয়ে যায় ইনারা, “সুরভির জন্য কেন?”
সভ্য হেসে ইনারার হাত থেকে চায়ের কাপ নিয়ে খুবই দ্রুত চা’য়ের কাপে চুমুক দিলো। যেন কেউ না দেখে তারপর বলল, “আহ চা আসলেই অসাধারণ। তুমি তো আমাকে চায়ের নেশাও করে দিচ্ছ। আমার ডায়েটের বারোটা বেজে যাচ্ছে তোমার জন্য।”
“কথা একদম ঘুরাবেন না। সুরভিকে কেন দিচ্ছেন?”
সভ্য মনে বলে, “নিজের শালী সাহেবাকে ঘুষ দিয়ে রাখতে হবে না? ভবিষ্যতে কাজে লাগবে।” কিন্তু মুখে বলল, “সেদিন বললে ও আমাকে খুব পছন্দ করে তাই ভাবলাম খুশি হবে।”
ইনারা সম্ভবত সন্তুষ্ট হয় উওরে। এর থেকে বেশি খুশি হয়। সভ্য ভাবে এই সে জিজ্ঞেস করবে তার শাড়িটা কোথায়? অথবা মন খারাপ করবে নিজের জন্য। কিন্তু এমন হলো না। ইনারা সুরভির কথা শুনেই খুশিতে আত্নহারা। এর উপর সে নিজের জন্য কিছুই কিনে না। কিন্তু সুরভি এবং আইজার জন্য ঠিকই শাড়ি নিয়ে নিয়েছে।
ইনারা প্রশ্ন করেন তারপরেও সভ্য বলে, “জানো পনেরোটা শাড়ি কার জন্য?”
“কার জন্য?”
“আমার বউয়ের জন্য। সে শাড়ি পরলে মনে হয় পৃথিবীর সকল মায়া তাকে ঘিরে রেখেছে। বিয়ের পর তাকে বলব প্রতিদিন যেন কিছু মুহূর্তের জন্য হলেও আমার সামনে শাড়ি পরে এসে বসতে।”
ইনারা মুখ ফিরিয়ে নেয়। তার হাসিমাখা মুখ মুহূর্তেই কাঁদো কাঁদো হয়ে গেল। অর্থাৎ সত্যিই সভ্যের জীবনে কেউ আছে? যাকে বউ বলে সম্বোধন করতেও দ্বিধাবোধ করছে না সে। ইনারার প্রচুর জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে হলো তার নাম কিন্তু এর সাহস হলো না। সম্ভবত সে বিষয়টা সইতে পারবে না।

সেখান থেকে রওনা দেওয়ার পর খুবই চুপচাপ রইল ইনারা। আজ সারাক্ষণ তার বকবক শেষ হচ্ছিল না। আর হঠাৎ করেই সে এমন চুপচাপ হয়ে গেল।

দুইজনে বাইক্কা বিলে যেয়ে পৌঁছাল খুবই সুন্দর সময়ে। সূর্যোস্ত হবে। নৌকায় বসে তারা যখন বিলের মাঝখানে পৌঁছায় তখন আকাশে লালিমা ছড়িয়ে যায়। জলে ছায়া পড়ে রঙিন আকাশের। সেখানে সারি সারি গোলাপি রঙের পদ্মা ভেসে আছে। সূর্যের রক্তিম লালিমায় দৃশ্যটা স্নিগ্ধ দেখাচ্ছে। স্নিগ্ধ দেখাচ্ছে তার সামনে বসা কন্যাটাকেও। তার মুখের উপর সূর্যের লালিমা পরছে। চোখের নিচে লেপ্টে থাকা সকালের কাজল, কপালে এখনো লাগানো নীল টিপ। অতি সাধারণ দেখাচ্ছে তাকে। তবুও তার সামনে অন্যকিছু দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে না ইনারার। সে মুগ্ধ নয়নে ইনারাকে দেখছে, এবং ইনারা মুগ্ধ দৃষ্টিতে এই সম্ভব সুন্দর দৃশ্য। সভ্য হাতের কাছে একটা পদ্মা পেয়ে তুলে নিলো। তা এগিয়ে দিলো তার প্রণয়ীর দিকে। ইনারা কিছুটা আশ্চর্যান্বিত দৃষ্টিতে তাকায় সভ্যের দিকে। তার উদাসীন ঠোঁটে এঁকে উঠে সূর্যের লালিমার মতো উষ্ণীষ হাসি। তা তার হৃদয়েও উষ্ণতা ছড়িয়ে দেয়। সে হাত বাড়িয়ে পদ্মাটা নেয়। আঙুলে আঙুল ছোঁয়। কেঁপে উঠে সভ্যের বুকের ভেতর। আচ্ছা প্রেমিকরা তো তার প্রেমিকাকে প্রথম ফুল গোলাপ দেয়। সে দিলো পদ্মা। এটা কী মানানসই? প্রেম সম্পর্কে তার ধারণা বিন্দুমাত্র। আচ্ছা সে কী প্রেমিক হিসেবে উত্তীর্ণ হতে পারবে তো?

অবশেষে রাতে রওনা দেয় সভ্য। ইনারা যাবে আরও একদিন পর। তাকে ছেড়ে যাওয়াটা খুবই কষ্টকর হলেও তার যেতে হয়। তার ইচ্ছা ছিল একেবারে ইনারার সাথেই যাবে। এমন সুযোগ পাবে কোথায়? তবে সে গেলেও সারারাস্তা ইনারার সাথে ফোনে কথোপকথন হলো তার। কেউ ঘুমালো না। কেউ ফোন রাখার কথা বলল না। এপাশ থেকে সভ্য ইনারার ছবি দেখে কথা বলছিলো। তো ওপাশে ইনারা শুয়ে শুয়ে সভ্যের অর্ধেক লেখা গানটি বারবার মনে মনে পড়ছিলো,

“প্রেমের উষ্ণ হাওয়ায় মাতাল তুমি আর আমি
তোমার আঁখি নীল সমুদ্র তোমাতেই আমি;
আমি ডুবে যাব ডুবে যাব তোমার মাঝে, প্রণয়ী
আমি ডুবে যাব ডুবে যাব তোমার মাঝে, প্রণয়ী।

তুমিতে তুমিতে হারাই বারে বারে আমি;
তোমারেই ভালোবাসি কীভাবে বলি আমি?”
.
.
ভোর ভোর সভ্য ঢাকায় পৌঁছালো। কিন্তু ঘুমানোর সময় পেল না। সেখানে জরুরী কিছু কাজ সেরেই মিটিং এ গেল। এত জরুরি মিটিং ছিলো জোহানের এক্টিং কারিয়ারের জন্য। একদিন আগে একাউন্স করা হয়েছিলো তার নতুন অভিনেতার যাত্রার। অথচ আগামী দুইদিনেই তার প্রথম ফিল্মের শুটিং শুরু। এটা তো সম্ভব নয়। দুই দিনে কিছুই হয় না। নিশ্চয়ই এ প্রজেক্টর কথা মাসখানিকের বেশি সময় নিয়ে চলছে। যা কাউকে জানানো হয়নি। অথচ এটা বড় একটা ইফেক্ট পরতে পারে তাদের দলীয় কার্যক্রমে। সভ্য যখন প্রশ্নটি তুলে তখন মিঃ হক তার পূর্ব হতে ভেবে রাখা উত্তরটি দেয়, “আমি কেবল জোহানের কথা ভাবছি না। তোমাদের সবারই এখন আলাদা প্রজেক্টে কাজ করা শুরু করা উচিত। দলীয় কার্যক্রম চলবে। বছরে ধরো একটা অ্যালবাম বের হলো। আর সাথে তোমাদের একত্র কাজ চলবে।”

উওরটাতে সবাই সন্তুষ্ট। সভ্য ছাড়া। সে জানে মিঃ হক কেবল জোহানের দিকটাই ফোকাস করতে চান। তিনি দলটাকে ভাঙার পূর্বে জোহানের ফ্যান ফলোয়ার বাড়াতে চান। এতে তার সমস্যা না হলেও, তার চিন্তা দলের বাকি সদস্যদের নিয়ে। বিশেষ করে ঐশী এবং ইরফান। ঐশি খুবই লড়াই করে এই পর্যায়ে এসেছে। তার বাবা মেয়েদের ক্যারিয়ার গড়ার ব্যাপারটা সহ্য করতে পারে না। আর গান তার স্বপ্ন। সে এই স্বপ্ন সারাজীবন বাঁচতে চায়। তাইতো সে কেবল বাহ্যিক জগতের ঘৃণার সাথেই না, নিজের বাবার সাথে লড়াই করেও এই ফিল্ডে টিকে আছে। অন্যদিকে ইরফান মধ্যবিত্ত ফ্যামিলির ছেলে। তার জন্য এসব অর্জন করা সবচেয়ে বেশি কঠিন হয়েছিলো। তাই এই দুইজনের জন্য সবচেয়ে বেশি দুশ্চিন্তা সভ্যের।
.
.
একদিন পর ঢাকায় এসে পৌঁছায় ইনারা। রাতের সময়। সে বাসায় এসে দেখে ঘরে মুশতাক সাহেব আছেন। তার সাথে বসে আছে সাইদ, জোহান এবং আইজা আপু। সে তাদের না দেখার ভান করে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে থাকে তখনই আইজা ডাক দেয়, “ইনু তুই বাসায় এসে পড়েছিস? দেখ আজ দাওয়াতে কে এসেছে?”
ইনারার থামতে হলো। তার রুমে যেয়ে সভ্যকে আসার খবর দেবার কথা। তাই সে দ্রুত রুমে যেতে চেয়েছিল কিন্তু এখন তো তার আর যাওয়া সম্ভব নয়। ইনারা জোরপূর্বক ফিরে এসে দাঁড়ায় টেবিলের সামনে। মুশতাক সাহেব কঠিন গলায় বলে, “কত বেয়াদব হয়েছ! মেহমান ঘরে এসেছে দেখেও থেমে কথা বলার প্রয়োজনবোধ করলে না?”
প্রতিবারের মতো এবারও আইজা বাঁচায় তাকে, “আরে মামা ছাড়েন না। ইনু হয়তো দেখিনি। কত ক্লান্ত দেখুন, মুখটা কেমন শুকিয়ে গেছে।”
মুশতাক সাহেব জোহানের জন্য কথা বাড়ালেন না। নয়তো কিছু নিশ্চয়ই বলতেন।

আইজা বলে, “জানিস কয়দিনেই জোহানের সাথে আমার প্রথম ফিল্মের শুটিং শুরু হবে। আমার প্রথম ফিল্ম জোহানের সাথে আমি কত ভাগ্যবান দেখেছেন। এর উপর ফিল্ম মামা ডিরেক্ট করছে।”
ইনারা খুশিতে জড়িয়ে ধরে আইজাকে। তার গালে গাল ঘেঁষে টেনে বলে, “কনগ্রেটস আপি।”
“আমাকে অভিনন্দন জানাবে না?” জোহান জিজ্ঞেস করে। সে তার দিকেই তাকিয়ে ছিলো। তার দৃষ্টি দেখি কেমন অস্বস্তি লাগে ইনারার। তবুও সে জোরপূর্বক হেসে বলে, “কনগ্রেটস।”

আইজা তাকে নিজের পাশেই বসায়। সকলে ফিল্মটা নিয়ে গল্প করছে। সকলেই বেশ উৎসুক। অথচ সবচেয়ে বেশি উৎসুক দেখাচ্ছে সাইদ ভাইয়াকে। সে আইজা আপুর সাফল্যতার কথা ভেবেই উৎসব পালন করছে। ইনারা ভাবতে বাধ্য হয়, সকল প্রেমিক মানুষ কি তার প্রেমিকার সাফল্যতা দেখে তার থেকেও বেশি খুশি হয়?

তবে সে খেয়াল করে ফুপু জোহানের যতটা খাতির করছে তার চেয়ে বেশি অবহেলা করছে সাইদকে। কথায় আছে না, টাকায় কথা বলে। এখানেই ব্যাপারটা তাই। কিন্তু ইনারার ব্যাপারটা অকপটে লাগে। সে নিজেই উঠে সাইদকে খাবার পরিবেশন করতে শুরু করে।

খাবার শেষে সবার আগে উঠে মুশতাক সাহেব। আইজা এবং সাইদও উঠে যায় কিছু কাজের জন্য। ইনারা খাবার খাচ্ছিলো। সে ভাবে যেহেতু বসেই থাকতে হবে সেহেতু খেয়েই নেক। তার সবচেয়ে বেশি দেরি হলো। কিন্তু সে যতক্ষণ না পর্যন্ত খাবারের টেবিল থেকে উঠে ততক্ষণ পর্যন্ত জোহানও বসে থাকে। টেবিল থেকে উঠে যেতে নিলেই জোহানও উঠে তার হাত ধরে নেয়, “তুমি কি আমাকে ইগনোর করছো?”
প্রশ্ন করে জোহান।
“আমি আপনাকে ইগনোর করতে যাব কেন?”
“মনে হচ্ছে। তুমি আগের মতো আমার সাথে কথা বলো না।”
“আমি আপনার সাথে সাধারণ ভাবেই কথা বলছি। আগে পাগলামো করে আপনার আগেপিছে ঘুরে বেড়াতাম।” মজার সুরেই কথাটা বলে ইনারা।
“তাহলে আবারও সে পাগলামোটা করো না প্লিজ। তোমার এমন ব্যবহার আমার সহ্য হচ্ছে না।”
এবার আসলেই ব্যাপারটা গম্ভীরভাবে নেয় ইনারা, “আজব তো আপনিই তো একদিন বলেছিলেন আপনার আমার সাথে কথা বলার কোনো ইচ্ছা নেই। তাহলে গত একমাসে আপনার কী হলো?”

ইনারার ফোন বেজে উঠে। টেবিলে ফোন রাখা। ক্রিনে সভ্যের নাম ভেসে আছে। তার নাম দেখতেই জোহান আরেকটু শক্ত করে ধরে নেয় ইনারার হাত। দাঁতে দাঁত চেপে জিজ্ঞেস করে, “তাহলে তোমার এ ব্যবহার এর কারণ কী সভ্য? ওর সাথে কি চলছে তোমার?”
ব্যাথা পায় ইনারা। সে কপাল কুঁচকে তাকায় জোহানের দিকে, “সমস্যা কী আপনার? আমার ব্যক্তিগত ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করার আপনি কে? আপনি জানতে চান আমি আপনার সাথে এমন ব্যবহার কেন করছি? কারণ আগে আমি আপনার সম্মান করতাম। আপনার কিছু ব্যবহারের কারণে সে সম্মানটা আর করি না। যার জন্য আমার হৃদয়ে সম্মান নেই, তার জন্য কোনো অনুভূতিও নেই।”
“তাহলে তোমার মনে এখন কার জন্য সম্মান আছে? সভ্যের জন্য।”
“আপনাকে এ প্রশ্নের উওর দেওয়ার প্রয়োজনবোধ আমি করছি না। সভ্যকে ভুলেও এর মাঝে আনবেন না।”
ইনারা এক ঝটকায় জোহানের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে তার ফোনটা হাতে নিলো। যাবার পূর্বে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাল জোহানের দিকে, “আর খবরদার আমার অনুমতি ছাড়া আমার হাত ধরার সাহস করবেন না। আপনাকে আমি এই অধিকার দেই নি। তাই এর পরিণাম ভালো হবে না।”
ইনারা চলে গেল।

জোহান স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো সেখানেই। আজ পর্যন্ত কোনো মেয়ে তার সাথে এভাবে কথা বলে নি। এর উপর মেয়েটা ইনারা হওয়ায় তার রাগ চরম সীমানায় চলে গেল। মাথায় রক্ত চড়ে বসেছে তার। সে হাত মুঠোবন্দী করে রাগান্বিত সুরে বলল, “তোমাকে তো আমার হতেই হবে ইনারা। তা আমার প্রেমে পড়ে হোক কিংবা নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে হোক। অধিকার না পেলে কীভাবে ছিনিয়ে নিতে হয় তা আমি ভালো করেই জানি। ”

চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে