#অনুভবে_তুমি
#পর্বঃ৯
#ফারজানা_আক্তার
উনি আমায় এক ধাক্কায় বিছানায় ফেলে দিলেন, আমি উঠতে চাইলে উনি আবার আমায় ধাক্কা দেন, এবার কিন্তু বেশ ব্যাথা পেয়েছি কোমরে। উনাকে বললাম “পাগল হয়েছেন নাকি? কি করতেছেন এগুলো? যেতে দিন আমায়” এক প্রকার চিল্লিয়ে বলি কথাগুলো আমি। দেখি উনার পুরো মুখ কান লাল হয়ে গেছে রাগে, ভয়ে আমার নিশ্বাস বন্ধ হতে লাগলো।
~তুমি এখনো চোখ রাঙিয়ে কথা বলছো আমার সাথে??
কথাটি বলেই উনি ঝাঁপিয়ে পড়লেন আমার উপর, বিয়ের পর আজ প্রথম উনার সাথে একই বিছানায় অথচ উনি ভালোবাসছেননা, আদর করছেননা, উনি আমায় ধর্ষণ করছেন, হ্যাঁ উনি একজন স্বামী নামের ধর্ষক যে কিনা শুধু নিজের চাহিদাটাই মেটাচ্ছেন, খুব বুঝতে পারছি উনি রাগ করে এমনটা করছেন কিন্তু উনি দেখতে পাচ্ছেননা যে আমি কিভাবে ব্যাথায় চটপট করছি, কান্না করছি। আমার চোখের জলগুলি কি উনার হৃদয়টাকে একটুও ভেজাতে পারছেনা। সারা রাত উনি আমার উপড় ভালোবাসার নামে অত্যাচার করেছেন আর এখন খুব নিষ্পাপ চাহনি নিয়ে ঘুমাচ্ছেন।ছি পুরুষ মানুষ এত জগন্য হয়।
সকালের আজানের পর কোনোমতে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালাম, হাঁটতে পারছিনা কিছুতেই। কুঁড়িয়ে কুঁড়িয়ে ধীরে ধীরে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ালাম, গোসল সেরে রুমে আসতেই চোখ গেলো বিছানার দিকে, পুরো বিছানায় ছোপ ছোপ রক্তের দাগ। কান্না পাচ্ছে খুব, কিন্তু শব্দ করে কাঁদলে তো উনি জেগে যাবেন তাই চুপচাপ গিয়ে আয়নার সামনে বসে চুল শুকাতে লাগলাম। হঠাৎ চোখ গেলো আয়নার দিকে, আমার ঠোঁট টা খুব বাজে ভাবে ফুলে আছে, পুরা গলা জুড়ে দাগ, যা স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে। আমি ভাবতে পারছিনা এগুলো ভালোবাসার দাগ নাকি অত্যাচারের। ফুফিয়ে কেঁদে উঠি এসব ভেবে। আজ সবার সামনে কিভাবে যাবো, কি ভাববে সবাই? এসব ভাবতে ভাবতে বেলকনির দিকে পা বাড়ালাম, আজকে ইচ্ছে করেই আর ওড়না টা নিলাম নাহ। উনার উপর যে খুব ক্ষোভ।
‘
‘
‘
আদিবা,, আদিবা
রাহিল খুব জোরে জোরে ডাকতে লাগে আদিবাকে, আদিবা দৌড়তে পারছেনা, ধীরে ধীরে কুঁড়িয়ে কুঁড়িয়ে রুমে আসে, আদিবাকে ওড়নাবিহীন দেখেই মেজাজ উল্টে যায় রাহিলের।কিন্তু কিছু বলেনা আজকে আর।করণ রাহিল খেয়াল করে আদিবার কুঁড়িয়ে হাঁটা টা।
~বিছানা টা পরিষ্কার করো।
এটা বলেই গোসল করতে চলে যায় রাহিল।
আমি আস্তে আস্তে বিছানার চাদরটা তুলে অন্য একটা চাদর বিছিয়ে গুছাতে লাগলাম, হঠাৎ উনি ওয়াশরুম থেকে এসে পেঁছন থেকে জড়িয়ে ধরে, তবে আজকে আর চমকালাম নাহ, উনার ছোঁয়া উনার ঘ্রাণ খুব ভালো করেই চেনা হয়ে গেছে এতোদিনে।।
~সরি কাল রাতের জন্য,, আসলে আমার কি হয়েছিলো বুঝতে পারিনি,, কিন্তু তোমার হাতের রান্না টা খাওয়ার পর রাগ হয়েছিলো খুব তোমার উপড়, হ্যাঁ এটা সত্যি যে আমার অনুভবে শুধুই রেশমা,, কিন্তু আমি তোমাকেও আমার হৃদয়ের কোনো এককোণে অনুভব করি নিজের অজান্তেই।।
কথাগুলো বলেই উনি আমার ঘাড়ে নাক ঘসেন, কেঁপে উঠি আমি, গোসল করার কারণে বেশ ঠান্ডা ছিলো উনার শরীর। তবে কি রাতে উনি আমায় পূর্ণতা দিয়েছেন? হয়তো দিয়েছেন নয়তো রাতের ঘটনার জন্যই সব মেনে নিচ্ছেন।।।
~আপনার শরীর ভেজা,, আপনি তৈরি হয়ে নিচে আসুন,, আমি রান্নাঘরে যাচ্ছি।
~এভাবে রান্না ঘরে যাবে?
উনার কথায় অবাক হয়ে তাকালাম উনার দিকে। উনি মুচকি হেসে বললেন “মানে তোমার শরীরে আমার দেওয়া দাগগুলো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে,, ওড়নাটাকে হিজাবের মতো পড়ে যাও,, আর এই লিপস্টিক টা দাও।।
উনি কাবাডের ড্রয়ার খুলে একটা লিপস্টিক বের করে দিলেন আমায়,, রেশমা আপুর লিপস্টিক,, মনে মনে নিজেকে প্রশ্ন করলাম কেনো সবসময় অন্যের ব্যবহৃত সবকিছু আমার পোড়া কপালে জোটে? ছোট থেকে অন্যের ছেঁড়া জামা, অন্যের ব্যবহৃত বই, অন্যের ফেলে দেয়া জুতা ব্যাবহার করেই বড় হয়েছি,, শেষ পর্যন্ত স্বামী টাও,,, এসব ভেবেই একটা দীর্ঘশ্বাস নিলাম।। আর দেরি না করে ওড়নাটাকে হিজাবের মতো করে পড়ে নিলাম তারপর উনার দেওয়া লিপস্টিক টা গাঢ় করে ঠোঁটে লাগিয়ে নিলাম।
‘
‘
‘
আদিবা চলে যাওয়ার পর রাহিল কাবাড থেকে একটা ছবি বের করে, হ্যাঁ এটা আর কারো নয় এটা রেশমার ছবি। ছবিটা বুকে নিয়ে ভাবতে থাকে রেশমার বলা আরো কিছু কথা “আমি জানি এই অপারেশনের পর আমি আর তোমার বুকে মাথা রেখে তোমার উষ্ণতা অনুভব করতে পারবোনা,, আমার যে সময় শেষ তুলির আব্বু,, প্লীজ কেঁদোনা তাহলে যে আমি মরেও শান্তি পাবোনা,, তুমি কি জানোনাহ? ছেলেদের কাঁদতে নেই।।
~প্লীজ রেশমা চুপ করো,আর পারছি না আমি,, তোমার কিছু হবেনা,, তুমি আবারো আগের মতো সুস্থ হয়ে ভালোবাসার জ্বালাতন করবে আমায়।।
~আবেগি কথা এই মুহুর্তে নয় তুলির আব্বু,, তুমি আরেকটা বিয়ে করলে তাকেও তার পূর্ণ অধিকার দিবে, শুধু তুলির মা বানিয়ে রাখবেনা,, এটা আমার শেষ চাওয়া,, তুমি নিজের আর তুলির যত্নে কোনো অবহেলা করবেনা বলো,,,,
~আচ্ছা,,
কান্নার জন্য আর কিছু বলতে পারলো না রাহিল,, বড্ড যে ভালোবাসে রেশমাকে।।।
আদিবার আগমনে অতীত থেকে বেরিয়ে এলো রাহিল,, আদিবা দেখার আগেই চোখের পানিগুলো মুছে নেই রাহিল।।।
~কি হলো আপনি এখনো তৈরি হলেন না যে?
কিছু কি লাগবে আপনার?
উনার পেঁছনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলাম,,
কিন্তু উনি কিছু না বলে কাবাড থেকে জামাকাপড় বের করা শুরু করলেন,, সবাই উনার জন্য অপেক্ষা করছেন তাই উনাকে দ্রুত নিচে আসতে বলে চলে এলাম নিচে,,
আমি নাস্তার টেবিল সাজাচ্ছিলাম এমন সময় তুলি এসে বলে ও আমার কোলে উঠতে চায়,, ব্যাথা লাগতেছে কিন্তু এটা তো আর কাউকে বলতে পারবোনা তাই ওকে না চাইতেও কোলে নিলাম, দাঁড়াতে পারলাম নাহ আর, বসে গেলাম চেয়ার একটা টেনে।।
নিহান আব্বু আম্মু আগে থেকেই বসা ছিলো ডাইনিংয়ে, শোভা আর শিরু এসে বসলো, দুজনের মুখে বেশ চমক, দেখেই বুঝা যাচ্ছে একে অপরকে পেয়ে তারা বেশ আনন্দে আছে।।।
শিরু হঠাৎ আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে “আপু তুই কি কোথাও বেড়াতে যাবি?
~নাহ তো,, কেনো?
~নাহ তুই সাজুগুজু করছোস তাই জিজ্ঞেস করলাম।
আমি আর কিছু বললাম নাহ,কারণ আব্বু আম্মুও উপস্থিত আছেন। উনি এসে কিছু না বলে চুপচাপ উনার চেয়ারে বসে গেলেন, আমি দ্রুত উনাকে নাস্তা দিলাম।
শোভা মুখে রুটি দিতে দিতে বলল “ভাবি তুমি সত্যি করে বলো তো কোথায় যাবে তুমি? তুমি আজ হিজাব ওড়না করছো আবার লিপস্টিকও দিয়েছো,, মামলা কি হ্যাঁ?? কথা টি বলেই শোভা আমায় চোখ টিপ মারে। উনি শুকনো কাশি দেয়,, আমি লজ্জা পেয়ে গেলাম তাই ওখান থেকে চলে আসি রান্না ঘরে। তুলি আম্মুর কোল থেকে নেমে আমার পিঁছু পিঁছু চলে আসে। ওর একটাই কথা ও শুধু আমার হাতেই খাবে আর কারো হাতে খাবেনা। তাই ওকে কোলে নিয়ে একটা চেয়ারে বসে ওকে খাওয়াতে লাগলাম। উনি এসে বলে আমি অফিসে যাচ্ছি নিজেদের খেয়াল রেখো, এটা বলে উনি তুলিকে কোলে নিয়ে কপালে একটা চুমু দিলেন। তুলি ফট করে বলে ” আম্মুকে দিবেনাহ”?
আমরা দু’জনই অবাক হলাম এবং একে অপরের দিকে তাকালাম।। উনি তুলিকে কোলে রেখেই আমার কপালে আলতো করে চুমু দিলেন, আমি চোখ বড় বড় করে তাকালাম উনার দিকে,, তুলি কুটকুট করে হেঁসে হেঁসে হাত তালি দিতে লাগলো।
উনি চলে যাচ্ছিলেন তুলিকে আমার কোলে দিয়ে, আবার কি মনে করে জানি পেঁছনে ফিরে তাকালেন,আমি ভ্রু কুঁচকে উনার দিকে তাকাতেই উনি বলেন “টেবিলের উপর ঔষুধ রেখেছি,খেয়ে নিও, ব্যাথা কমে যাবে।”
তুলিকে খাইয়ে আমিও খেয়ে নিলাম।তারপর রুমে গিয়ে ঔষুধও খেয়ে নিলাম।
‘
‘
‘
শিরুফা আর শোভা ছাঁদে বসে জলপাই খাচ্ছিলো, লবন মরিচ শেষ হয়ে যাওয়াতে শোভা শিরুফাকে রেখে লবন মরিচ আনতে নিচে যায়। এমন সময় নিহান শিরুফার পাশে এসে বসে বলে “কি গো আমায় রেখে একা একা দেখি বেশ মজা করেই জলপাই খাচ্ছো?
~এমা নাহ, নিন ভাইয়া আপনিও খান, খুব মজা।
মুচকি হেসে বলে শিরুফা। মুহুর্তেই নিহানের মুখটা ফেঁকাসে হয়ে যায়।
~এই পেত্নি কে তোমার ভাই?
~কেনো আপনি
~এখন যদি আমি তোমায় কিস করি তবে তুমি হবে আমার প্রেমিকা,, সো নো ভাই ডাকাডাকি।।
এটা বলেই বিরক্তিকর চাহনি করে নিহান চলে যায়, শিরুফা এখনো হা হয়ে আছে, এগুলো কি বলে গেলেন উনি, কিছু তো ঢুকলোনা মাথায়।। তবে কি উনি আমার প্রেমে পড়েছেন?
কে কার প্রেমে পড়েছে শুনি??
হঠাৎ কারো এমন কথার শব্দে ভরকে যায় শিরুফা, পেঁছনে ফিরে দেখে____
#চলবে_ইনশাআল্লাহ