অধিকার পর্ব-০১

0
8833

#অধিকার #প্রথম_প্রহর
#Yasira_Abisha (#Fatha)

আমার স্ত্রী আমার সাথে থাকলে কখনো মাতৃত্বের সুখ পাবেনা। তাই রিপোর্ট পাওয়ার ঠিক দুই ঘণ্টার ব্যবধানে সে আমাকে রেখে চলে যায়।
সত্যি বলতে এতে আমার বিন্দুমাত্র কষ্ট নেই কারণ একজন অক্ষম পুরুষ কে তার স্ত্রী ফেলে যেতে পারে। আর কেউ যদি সত্যিকার অর্থেই তার সঙ্গীর সুখ চাই সে পুরুষ এটা মেনে নিবে।
.
যখন ডাক্তার এই রিপোর্ট দিয়েছেন,, তারপর থেকে কেউ কারো সাথে কোনো কথা বলছিলাম না, হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরা পর্যন্ত পুরো পথটায়।

ঘন্টা খানিক হবে, মাহিরা বেডরুমে দরজা লক করে রেখেছিলো, আমি সোফায় বসে ভাবছিলাম কি করে মাহিরা কে বলবো আমাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা, আমি নিজেই মাহিরা কে বলতে চাচ্ছিলাম “তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যাও”
আমার মনে হচ্ছিলো সে নিজে এরকম কিছু করবেই না তাই আমাকেই তাকে মানাতে হবে। আমার মাহিরা তো পুরো একটা বাচ্চাদের মত, অল্পতেই কষ্ট পেয়ে বসে, এই জিনিসটা কিভাবে সে নিবে।
কিন্তু কিছুক্ষন পরে দেখি সে বাইরে বেড়িয়ে এসেছে সাথে তার লাগেজ প্যাক করে ফেলেছে এবং আমাকে এসে মাহিরা নিজে বলল
“তোমার সঙ্গে থাকা আমার আর সম্ভব নয়, আমি চলে যাচ্ছি, ইরাদ শুনো শারীরিক সম্পর্ক করে সুখ দিতে পারলে আর গিফট দিয়ে মন ভুলিয়ে রাখতে পারলেই হয়না বাচ্চা দিতেও পারা লাগে। কিছু থেকে কিছুনা তুমি আমাকে আহ্লাদ দেখাও এসবে কিছু হয়না ইরাদ”

কলিজার ভিতর পুরে যাচ্ছিল। তার মুখে এরকম কথা শুনে। কিন্তু এটাই তো সত্যি আমি তো এটাই বলতে চাচ্ছি লাম ওকে “যে চলে যাও সুখী হও ”
তবুও কেন এত মন জ্বলে যাচ্ছিলো?
এখন যে আমার শক্ত হতে হবে । এতে সে থেমে ছিলো না,, আরো নানান কথা আর অভিযোগ তুলে ধরছিলো সে,,
আমি সব চুপচাপ শুনছিলাম মাথা নিচু করে,,

বরাবরই মাহিরা অভিযোগ করলে আমি মাথা নিচু করে শুনে যেতাম,, ওকে যে অনেক ভালোবাসি কখনো কষ্ট দিয়ে কথা বলতেই পারিনি,, আজ ও তাই করছিলাম কিন্তু কষ্টটা তখনই লেগেছিলো, যখন তার মুখেই জানতে পারলাম, সে আমার সাথে থাকা অবস্থায় পরকীয়ায় লিপ্ত হয়েছিল।

-আমি তামিমকে ভালোবাসি এখন তোমার প্রতি আমার আর কোনো রকম ইন্টারেস্ট কাজ করেনা ইরাদ।
-মাহিরা, তুমি একজন বিবাহিত নারী, কি বলছো এসব?
-এখন কিসের বিবাহ আর কিসের কি? একটা সংসার বেধে রাখতে হলেও বাচ্চা লাগে। আমাদের কোনো বাচ্চা নেই আর না আমার আছে কোনো পিছুটান। তোমার মত একটা পুরুষের সাথে আমার আর থাকার কোনো ইচ্ছে নেই। সারাদিন যখন কাজে ব্যাস্ত থাকতে,, আমাকে সময় দিতে পারতে না তখন তামিমই ছিলো আমার জন্য। ওর সাথেই আমি সময় কাটাতাম, আমাকে সে ভালোবাসা দিয়েছে, তাই আমি আজকে শুকরিয়া করি আল্লাহার কাছে সে আমাকে সত্যিটা বলার সাহস আর সুযোগ দিয়েছেন তিনি।

এগুলো বলে সে চলে গেলো একটা বার ও পেছনে ফিরে তাকায়নি। আমি মাটিতে বসে পরেছিলাম
মাহিরার কথায় আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম,,

সেই মুহূর্তের কষ্টটা কাউকে বলে বোঝানোর মত নয়,কারণ একদিন দুইদিন তো নয় , আমরা তো দু’বছর প্রেম করে বিয়ে করেছিলাম। আড়াই বছর আমাদের বৈবাহিক সম্পর্ক ছিল , ভালবাসতে তাকে আমি কখনো কার্পন্য করিনি। তার বলা প্রত্যেকটা কথা আমি শুনেছি। তাকে খুশি রাখার চেষ্টা করেছি সর্বদা। তারপরেও কেন? সে এভাবে আমাকে ধোকা দিল। আমার ভালোবাসায় কি কোনো কমতি ছিল?
এসব ভাবতে ভাবতে ইচ্ছে করছিলো নিজের এই জীবনটা শেষ করে দেই কিন্তু তখনই আযানের ধ্বনি আমার কানে আসে, হঠাৎ মনে হলো না আত্নহত্যা মহা পাপ তাহলে তো দুনিয়া আখিরাত কিচ্ছু পাবো না আমি,, নিজের জন্য না হলেও তো আল্লাহার ধর্ম কর্ম করার জন্য আমার বেচে থাকতে হবে। নাহলে যে আমার মৃত মা বাবার আত্না কষ্ট পাবেন।

পুরোপুরি তিনমাসের প্রসেস আজকে শেষ হলো। আমার স্ত্রী এখন আর আমার নেই। সে আমার প্রাক্তন স্ত্রী হয়ে গিয়েছে। কোর্ট থেকে সারাদিন পড়ে বাড়ি ফিরলাম। শেষ বারের মত মাহিরার চেহারাটা দূর থেকে দেখেছিলাম। তাকে তামিম ছেলেটা পাশে খুব হাসিখুশি দেখাচ্ছিলো,,
কেন যেন বাড়ি ফেরার পর থেকেই হাত-পা নিস্তেজ হয়ে আসছে। আবহাওয়াটা আজকে বেশ গরম ছিলো, আষাঢ় মাস কেউ বলবে না, কোনো রকমে গোসল টা সেড়ে আসলাম, মাগরিবের আযানের মধুর ধ্বনি চারিদিকে ছড়িয়ে পরছিলো,, আযান শেষে নামাজ পড়ে কোনো মতে এসে বিছানায় গাঁ এলিয়ে দিলাম, মনের ভিতরটা হাহাকার করছে, সব কিছু আসহ্য লাগছে। বাসায় আমি একা থাকি,, মা বাবা যাওয়ার পরে আর কেউ নেই আমার এখন কোনো কাজের লোকও তেমন রাখিনা,, মাহিরা যাওয়ার পরে ড্রাইভার, কুক ২জনই বাদ দিয়ে দিয়েছি, শুধু আছে একজন ছুটা বুয়া যে সব কিছু দিনে এসে করে চলে যায়, আমি সারাদিন অফিসেই পরে থাকি রাতে এসে বাসায় ঘুমাই শুধু,, এখানে যে প্রতিটি কোণায় কোণায় মাহিরার স্পর্শ, আমি এসব ভুলে কি করেই বা থাকবো,, আল্লাহকে প্রতি মুহুর্তে বলি আমাকে তুমি শান্তি দাও এই কষ্ট আর যে নিতে পারিনা।

কিছুক্ষন পরে মোবাইলটা বেজে উঠলো, সেটা ড্রেসিংটেবিল এর সামনে ছিলো আমি উঠে যেতে যেতে কলটা কেটে গেলো। কলটা ব্যাক করবো তখন দেখি ফোনের চার্জ শেষ, চার্জে দিয়ে ফোন আমি জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখলাম মুশোল ধারে বৃষ্টি হচ্ছে। বাইরে ঠিক ভাবে কিছু দেখাও যাচ্ছেনা।
এই গরম, এই ঝড়, আল্লাহ পাক মহান কখন কি হয় কেউ তা বলে বুঝাতে পারেনা আসলে। এসবই ভাবছিলাম হঠাৎ কলিং বেলের আওয়াজ পেলাম, ডুপ্লেক্স বাড়ি হবার কারণে আমার বেশ খানিকটা সময় লেগে গেলো ওপর থেকে নিচে নেমে দরজা খুলতে।
দরজাটা খুলার সাথে সাথেই একটা মেয়ে কান্না করতে করতে আমার বুকে ঝাপটে পড়লো,, সে আমাকে এমন ভাবে জড়িয়ে ধরে রেখেছে যেন তার অনেক দিনের হারানো কিছু সে ফিরে পেয়েছে।
কয়েক সেকেন্ডের ভিতরে এমন কিছি ঘটে যাওয়াতে আমি সম্পুর্ণ স্তব্ধ হয়ে যাই।

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে