অদ্ভুত প্রেম❤️
Writer-Afnan Lara
[৩]
হুট করে উনি উঠে দাঁড়িয়ে কিঞ্চিত হেসে আমার দিকে এগোচ্ছেন এখন।
-‘আআআপপপনিই আমার দিকে এভাবে তাকাচ্ছেন কেন?’
উনি চুপচাপ আমার কাছে এসে কানে ফিসফিস করে বললেন-‘তুমি কি ভাবছো ওয়াসরুমে সিসি ক্যামেরা নেই?’
-‘তার মানে আপনি সেই লোকটা?আপনি আঁখির হাত ভাঙছেন?’
-‘নাহ একটু ভুল আছে, আমি ভাঙি নাই।আমার লোক ভাঙছে’
-‘আপনি কতো খারাপ।আমি কখনও আপনাকে বিয়ে করবো না।আমি এখনই সবাইকে সত্যিটা বলে দিব।
-‘যাও বলো।যদি সেই সাহসটা দেখাও তোমার এবং তোমার পরিবারের কতটা ক্ষতি হবে তা তোমার কল্পনার বাহিরে।আর আমি কি কি করতে পারি তার কিছু রুপ তুমি তো দেখছই।তো যাও বলো সবাইকে।’
-‘ভয় পাই না আপনাকে’
এটা বলেই সোফার রুমে এসে যেই কথা বলা ধরছি বিকট আওয়াজে আমার মাথা হ্যাং হয়ে গেছে।
গুলিটা আর একটুর জন্য আম্মুর গায়ে লাগতো।
-‘সরি আন্টি।আসলে আমার অনেক শত্রু আছে।যারা আমাকে মেরে ফেলতে চায়।বাট ইউ ডোন্ট ওয়ারি!আমার বডি গার্ড আছে আমার সেফটির জন্য।তারা মনে করছে আপনাদের উঠানে কোনো একজন ফলো করছে আমাদের তাই শুট করলো।’
এই বলে লোকটা আমার দিকে তাকিয়ে চোখ মারলেন।
সঙ্গে সঙ্গে ফোনে মেসেজ আসলো-
-‘Dear,
akta drisso dekhailam tmk,.biyete raji hou nahole guli tmr mayer gaye lagbe.amr sudu tmk cai r kicu na.tmi amr thakle tmr priojon rao safe thakbe’
.
-‘কি করব বুঝছি না!”
-‘আন্টি আসি তাহলে’
-‘ওকে।আচ্ছা তুমি এখানে কই থাকো?’
.
-‘আমাদের নিজস্ব বাসা আছে।বিজয় নগরে।’
-‘কাছেই তো’
-‘শয়তান টা যাওয়ার পর আম্মু কে সব বলতে ইচ্ছা করছে কিন্তুু আমি পারবো না।’
পরেরদিন কলেজে ছুটির পর দাঁড়িয়ে ছিলাম রিকশার জন্য।সেই শয়তানটা এখানেও এসে হাজির কার নিয়ে
-‘উঠে পড়ো’
-‘না!আমি রিকশাতে চলে যাবো’
-‘লাস্ট বার বলছি উঠো’
-‘উঠলাম’
উনি আমাকে একটা প্যাকেট দিলেন।ভিতরে সব চকলেট।
-‘খাও,তোমার নিশ্চয় খিধা লাগছে।কাল সকালে রেডি হয়ে থাকবা আমরা ঘুরতে যাবো।’
-‘(হিহি তোর আমার সাথে ঘুরার সাধ মিটায় দিবো)’
বাসায় আসার পর ভাবলাম কিছু একটা করে কাল ঘুরতে যাওয়া বরবাদ করতে হবে।মনে হয় এই মোটা মাথায় একটা আইডিয়া এসেছে।
পরেরদিনটা এসেই গেলো জলদি জলদি।
-‘আম্মু গো পেটে ব্যাথ্যা করছে অনেক!”
উনি আসলো আর আমার ওভার এক্টিং স্টার্ট!!
-‘কি হয়ছে?’
-‘পেটে ব্যাথ্যা করে মনে হয় ঘুরতে যেতে পারবো না’
-‘ (তোমার চাইতে ১০০গুন চালাক আমি।আমাকে বোকা পাইছো?)আচ্ছা!চলো ডাক্তারের কাছে যাই।’
-‘না আমি এমনিতেই ভালো হয়ে যাবো’
-‘তা বললে তো হয় না,চলো’
এটা বলেই হাত ধরে টেনে নিয়ে গাড়িতে বসালো
-‘যাবো না তো’
হসপিটালে না গিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে আসলেন উনি।
-‘হসপিটাল কই?’
-‘শুনো আর একটু ড্রামা করলে হাল খারাপ করে দিবো!”
কফি খাওয়া শেষে এবার উনি আমাকে নিয়ে নদী দেখতে আসলেন।সারাদিন ধরে ঘুরছে চরকার মতন।অসয্য!
হঠাৎ কতগুলা ছেলে আমাদের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় আমাকে একটা বাজে কথা বললো।
আমি শুনে চুপই ছিলাম।উনি আমাকে বললেন গাড়িতে গিয়ে বসতে।
এর ১০মিনিট পর উনিও এসে গাড়িতে বসলেন।ঘামে উনার জামা ভিজে গেছে।শার্টের হাতা উঠানো।কি করেছে?মারামারি? ‘
-‘কিছু করি নাই জাস্ট ওদের একটু ধোলায় দিছি।
-‘আমার মনের কথা শুনলো কিভাবে?’
-‘মা বাবা পরের মাসে ১২তারিখে আসবে।আর ২০দিন আছে।আমার ছোট একটা বোন আছে।ক্লাস টু তে পড়ে।
বাই দ্যা ওয়ে! তুমিও তো কম ছোট নাহ।পিচ্চি একটা মেয়ে।তুমি জানো তুমি আমার থেকে ছয় বছরের ছোট?
-‘তো?’
.
আর কিছুই বললেন না।আমিও বললাম না।
সোজা বাসায় আসলাম।
পরেরদিন কলেজ যাওয়ার পর ফ্রেন্ডরা সবাই বললো রেস্টুরেন্টে যাবে খেতে।
-‘না আমি যাবো না’
-‘এমন করস কেন?চল না!”
রিয়ার অনুরোধে রাজি হলাম আমি।
রিয়ার বিএফ ও আসলো।ওর Bf শুধু আমার সাথে সেধে সেধে কথা বলছিলো।আমি শুধু উত্তরটা দিতাম।হঠাৎ দেখি সৌরভ আসলো।সবার মাঝ থেকে আমার হাত শক্ত করে ধরে আমাকে টেনে নিয়ে গাড়িতে বসালেন সোজা।উনার চোখ দুটো টুকটুকে লাল হয়ে আছে।আমার কেমন জানি ভয় লাগলো।
গাড়িতে উঠে হাই স্পীডে গাড়ি চালাচ্ছেন উনি এখন।
-‘এত জোরে গাড়ি চালাচ্ছেন কেন?’
-‘জাসু শাট আপ’
আমাকে আমাদের বাসায় নিয়ে আসলেন উনি।
আম্মু মনে হয় রান্না ঘরে ছিল।আমার রুমে নিয়ে এসে গালে একটা চড় মেরে দিলো।
ব্যাথা পেলাম না কিন্তু ভয় পেলাম।বোকার মতন আপাতত উনার মুখ দেখছি আমি’
-‘তোর সাহস হয় কিভাবে অন্য ছেলের সাথে কথা বলিস?’
রোবটের মতন হয়ে বসে রইলাম।আজ পর্যন্ত কেউ আমার গায়ে হাত তোলেনি।
দীর্ঘ ৫মিনিট পর,,,,,
উনি আস্তে করে আমার পাশে এসে বসলেন।পকেট থেকে টিসু বের করে আমার চোখ মুছে দিলেন।’
-‘সরি। তুমি অন্য কোনো ছেলের সাথে কথা বললে আমার তা সয্য হয় না।নেক্সট টাইম আর বলবা নাহ।রাগ উঠলে আমার মাথা ঠিক থাকে না।কাল সকালে রেডি হয়ে থাকবা। তোমাকে বিজয়নগর আমাদের বাসা দেখাতে নিবো।বাই’
-‘এটা বলে কপালে একটা চুমু দিয়ে চলে গেলেন।
পরের দিন ভোর হতেই আমি তৈরি হয়ে আম্মুকে বললাম আমি আমার একটা ফ্রেন্ডের বাসায় যাইতেছি।
-‘কোন ফ্রেন্ড?’
-‘ঐ তো নিহা’
এটা বলেই দৌড় দিলাম।
নিহাদের বাসায় না গিয়ে সোজা নানু বাসায় আসলাম।জীবনে কল্পনাও করতে পারবে না আমি যে এখানে আসছি।
-‘আরে সৌরভ!”
নানুর কথায় পিছনে তাকাতেই আমি টাস্কি খেয়েছি।
ও এখানে আসলো কিভাবে?জানলো কিভাবে যে আমি এখানে?’
নানু তাড়াহুড়ো করে উনার জন্য খাবার আনতে চলে গেছেন।
আমি ওখান থেকে পালানো ধরছিলাম।উনি আমার হাত ধরে ফেলছে ততক্ষণে।
-‘আজকে আমার বাসায় যাওয়ার প্ল্যান চপাট করার শাস্তি তুমি পাবা!”
.
দুপুরের খাওয়া শেষে আমাকে উনার কারে উঠতে হলো বাধ্য হয়েই।আজ কপালে শনির দশা আছে।
উনার সাথে বিজয়নগরে আসলাম উনাদের বাসায়।
এ যেন এক রাজপ্রাসাদ!
উনি আমার হাত ধরে সব কিছু দেখাচ্ছেন।
দেখলাম উনি ওয়েটারদের রুম থেকে চলে যেতে বললেন।
ভয় লাগছে হঠাৎ।এখান থেকে যে দৌড় দিমু তার ও উপায় নাই।শক্ত করে হাত ধরে রাখছে শয়তানটা।
হঠাৎ একটান দিয়ে আমকে দেয়ালের সাথে ঠেকিয়ে ধরলেন।
-‘হাত ছাড়ুন আমার।একদম আমাকে টাচ করার চেষ্টা করবেন না বলে দিলাম’
-‘হুমমমম।ভুল করার সময় মনে ছিলো না?’
-‘আর এমন হবে না।ছেড়ে দিন প্লিজ।
-‘ভুল তো হয়ে গেছে।শাস্তি তো পেতেই হবে!’
আমি জানি কি করবে তাই কিছু হওয়ার আগেই জোরে এক ধাক্কা দিলাম উনাকে।আপনার সাহস হয় কিভাবে আমাকে কিস করার চেষ্টা করার?’
-‘তুমি আমার হবু বউ। তোমাকে কিস করতে পারমিশন লাগবে নাকি?আর তোমার দোষেই আমি এই কাজ করতে যাচ্ছিলাম।
কোনোমতে প্রাণ বাঁচিয়ে এক দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে এসেছিলাম।এরপরে আর একটা কথাও বলি নাই উনার সাথে।
উনি ড্রাইভার পাঠিয়ে আমাকে বাসায় পৌঁছে দিতে বললেন।
বাসায় আসার পর দেখলাম মা খুশিতে এদিক ওদিক ঘুরছে শুধু।’
-‘তাহা রে গুড নিউজ আছে!”
-‘কি?’
-‘তোর আব্বু আসবে এই মাসের ২৬তারিখ ‘
.
আমি অনেক খুশি হলাম।
কলেজ যাবো না কাল।নইতো শয়তানটা আবার ধরে নিয়ে ঘুরতে যাবে।বাসূয় বসে বাবার আসার অপেক্ষা করার মজাই আলাদা।
পরেরদিন সকালে না উঠে বেঘোর ঘুমাচ্ছিলাম।সেসময়ে ফোনে কল আসছে।রিসিভ করলাম না দেখেই।
-‘জান আজকে কলেজ যাবা না?’
-‘একদম আমকে জান ডাকবেন না।উফ বলেই কেটে দিয়ে ফোন অফ করে দিলাম।’
ঘুমাচ্ছি শান্তিতে,।হঠাৎ খেয়াল করলাম খোঁচা খোঁচা কি যেন গালে লাগছে।
চোখ মেলে তাকাই দেখি কারোর বুকে আমার মাথা।গাল টা উনার গালের সাথে লেগেই খোঁচা লাগলো।
লাফ দিয়ে উঠে গেলাম চিৎকার করবো ঐ সময় উনি আমার মুখ চেপে ধরলেন।২মিনিট পর আলতো করে হাত সরালেন।
-‘আপনি এখানে এই অবস্থায় কেন?আপনার সাহস হয় কেমনে আমার বিছানায় শোয়ার?আম্মু কই?’
-‘শাশুড়ি মা তোমার শাশুড়ির সাথে কথা বলেছে ফোনে’
-‘যান বের হোন আমার রুম থেকে’
-‘আন্টিইইইইইই’
-‘কি হয়েছে?’
-‘দেখেন না আপনার মেয়ে আমাকে রুম থেকে বের হতে বলছে’
-‘তাহা,এটা কেমন বেয়াদবি? সুন্দর করে কথা বলতে পারস না,সরি বল”
-‘(তুমি তো জানো না ঐ লোকটাকে কেন বের হতে বললাম)সরি’
শান্তিতে নিজের রুমেও থাকতে পারবো না।
-‘আন্টি হাত দিন আপনার’
-‘কেন?’
-‘দিন’
আম্মু হাত বাালো।সৌরভ একটা ফোন গিফট করলো।
আম্মুতো বললো,’এত টাকা খরচ করার কোনো মানে আছে?’
-‘সমস্যা নাই।রেখে দিন’
-‘(ঘুষ খাওয়াইতেছে)আম্মু না গল্লেই হয়!’
-‘আজ এখানে দুপুরে খেয়ে যাবা’
-‘ইশ গলে গেলো রে!!”
চলবে”””