অদ্ভুত প্রেম পর্ব-০২

0
2828

অদ্ভুত প্রেম❤️
Writer-Afnan Lara
[২]
বাসার সামনে এসে রিকশা থামলো।সেটা থেকে নেমে বাসায় ঢুকার সময় দেখলাম সব চাইতে বান্দর ছেলেটা এদিকে আসছে।

-‘তাহা!তাহা!’

-‘উফ!আমি আপনাকে বলছি না আমাকে ডিস্টার্ব করবেন নাহ!’

(শরীফ নামের এই ছেলেটা হলো একটা ছেঁচড়া ছেলে।১০০টা মেয়ের সাথে সে প্রেম করে।এখন আমার পিছে লাগছে।)

-‘বুঝো না কেন আমি তোমায় লাভ করি’

-‘আর একদিন আমাকে ডিস্টার্ব করলে তোর সব দাঁত ভেঙে দিবো।যা ভাগ এখান থেকে’
——
সন্ধ্যায়।
-‘হ্যালো?আঁখি বল। কেমন আছিস?’

-‘দোস্ত একটা খবর জানস?শরীফের নাকি অবস্থা ডাল ভাত’

-‘তাই নাকি?কি হয়েছে?’

-‘ওরে নাকি কে পিটাইয়া হসপিটালে ভর্তি করে দিছে
ওর সব দাঁত ভেঙে দিছে’

-‘এটা তো আমার করার ছিলো।যাই হোক যে করেছে একদম ঠিক করেছে।
আমার আবার রাত ১টা ছাড়া ঘুম আসে নাহ।
অনেক দিন হয়েছে গেমস খেলি নাহ।একটু লুডু খেলি।
১১:৪৫বাজে হঠাৎ ফোনে একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে মেসেজ আসলো।
“Ato rat porjonto jege thakio na.ghumiye poro. abar kal games khelio.Fan er Volume komao thanda lege jabe.
Good Night dear,I ❤️u soooooo much ”

-‘ও আল্লাহ আমি গেমস খেলতেছি জানলো কিভাবে?ফ্যানের কথাও জানলো কিভাবে?রহস্য উন্মোচন করতে ঐ নাম্বারে কল দিলাম ৫বার,।ধরলো নাহ।
হুহ!আমার কি?আমি গেমস খেলি।
১:৩০ এ ঘুমাই গেলাম।ঘুমের সঙ্গে আর পারলাম না।
—–
-‘পরেরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখলাম ৬টা বাজে সেসময়ে কিনা ফোন রিং হচ্ছে।
উফ এত সকালে আবার কে?হ্যালো!কে?’

-‘শুভ সকাল’

-‘তো কি করবো?মুড়ি খাও।ফোন অফ করে ঘুমাই গেলাম।কি বলছি নিজেও জানি না।

সকাল আটটায় বাসা থেকে বের হতে যেয়ে দরজা খুলে দেখি একটা ফুলের তোড়া।আর একটা লেটার।খুলে দেখি….চিঠিতে লেখা আছে-
-‘Dear,
ei fuler tora ta pura gondhoraj fuler.ja tmr bison prio akti ful.gondhorajer bagan theke ami nijer hate collect korsi ful gula.sob tmr’
r kal rate tmai games besi na khele ghumate bolsilam.suno nai.sokale phn disilam kete diso.nxt time amr obaddho hoba na.tmr e khoti’

-‘এটা পড়ে মাথা চড়ক গাছ করে পুরা বাসা তন্ন তন্ন করে খুঁজছি কোনো সিসি ক্যামেরা তো পেলাম না।তাইলে সব খবর রাখে কিভাবে?’
—-
কলেজে আসার পর আমি আর আঁখি ক্যামপাসে হাঁটতেছি এখন।সকালের বিষয়টা নিয়ে আলাপ করলাম কিছু।হঠাৎ!!
আমি পড়ে গেলাম মাটিতে।হাতে ব্যাথাও পাইছি।

প্রিয়া বললো,’তুই জানস না আমার সামনে কেউ হাঁটার সাহস রাখে না?তোর সাহস হয় কেমনে আমার সামনে দিয়া হাঁটোস?’

-‘তাই বলে তুই ওরে ধাক্কা দিবি?’

-‘আঁখি!চামচা গিরি করবি না।নইলে তোরেও ফালামু!”

-‘বাদ দে আঁখি।চল আমরা যাই’
—-
বাসায় আসলাম ছুটি হওয়ার পরে।এসে দেখলাম আম্মু কোমড়ে হাত দিয়ে আমাকে দেখে যাচ্ছে।
-‘কি হলো?’

-‘তোর জন্য একটা গিফট বক্স কে জানি পাঠাইছে।আমি চেষ্টা করতেছি খুলতে পারি নাই।’

-‘এটা কেচি দিয়ে খুলে।আচ্ছা আমি দেখি
খুললাম।ভিতরে একটা ফার্স্ট এইড বক্স।তাতে লিখা আছে তোমার খুব লেগেছে নাহ?সরি তোমাকে সেফে রাখতে পারিনি।আর এমন ভুল হবে না।হাতে মলম লাগিয়ে নিও’

-‘আজিব।কোনো সিক্রেট লাভার না তো?নাহ সেটাতো ফিল্মে হয়’!

রাত ১২:১০।সেই লেভেলের জ্বর আসছে আমার।
আম্মু তো পাগল হয়ে গেছে ভেজা তোয়ালে দিয়ে পোটি দিতে দিতে।
আমি খালি আবল তাবল বকতেছি। হুস ছিল না’
পরেরদিন সকালে আর কলেজে গেলাম না।জ্বর আগের মতনই আছে।
কে যেন আসছে বাসায়।আম্মু গিয়ে দরজা খুললো।একজন ডাক্তার।দেখে মনে হচ্ছে বড় ডাক্তার।আমার জ্বর পরীক্ষা করে চলে গেলেন।যাওয়ার সময় একটা প্রেসক্রিপশন দিয়ে গেলেন।আম্মু বললো,’ কি হলো?এত বড় ডাক্তার আমদের বাসায় আসলো তাও শুধু চেক আপের জন্য আবার চলেও গেলো।টাকা নিলো না।কিছুক্ষন পর সেই আবার আসলো।ঔষধ এক ব্যাগ আর কতগুলা ফ্রুটস দিয়ে আবার চলে গেলো।উনি পাগল নাকি আমরা পাগল হয়ে গেলাম?
আমি আর আম্মু তো অবাক হয়ে শুধু দেখছি।
পরেরদিন একটু সুস্থ হতেই কলেজ গেলাম।

-‘কিরে তুই কাল আসিস নাই! কলেজে তো প্রচুর ধামাকা হয়েছে’

-‘কি হয়ছে?’

-‘প্রিয়াকে কলেজ থেকে বের করে দিছে স্যার।তিন বছরের জন্য। ও কোনো কলেজে ভর্তি হতে পারবে না।সিল মেরে দিছে।ওর বাবার নাকি চাকরিটাও গেছে।’

-‘কি বললি এসব?’
আমি বুঝতেছি না।আমাকে যারা যারা কষ্ট দিতো তাদের সবার এমন ক্ষতি হচ্ছে কেন?
এসব ভাবনা মাথায় করে বাসায় আসলাম।জামা চেঞ্জ করতেছি হঠাৎ একটা মেসেজ আসলো।ডিয়ার পিংক জামাটা পরিও না।ব্ল্যাকটা পরো।জোস লাগবে’

মেসেজটা দেখে একটা লাফ দিয়ে ওয়াসরুমে চলে গেলাম।ভাবতেছি আমার রুমে কি কি ঘটে তা ঐ লোকটা জানে কেমনে।
বিকালে মন ভালো করতে আমি আঁখিদের বাসায় গিয়েছিলাম।দুজনেই দৌড়া দৌড়ি করতেছি।হঠাৎ আঁখি দুষ্টুমি করে আমার উড়না টান দিলো।আমি ওর থেকে টান দিয়ে উড়না নিয়ে নিলাম আবার।
৫টায় বাসায় চলে আসলাম আরও কিছুক্ষণ গল্প করে।আঁখির আম্মুর কল আসলো আমি বাসায় ঢোকার সাথে সাথে।
-‘হ্যালো আন্টি।কি হয়েছে?’

-‘তাহা।তুমি যাওয়ার পরেই আঁখি ছাদে গেছিলো ওখান থেকে নামার সময় ওর মনে হলো কেউ ওকে ধাক্কা দিছে।পড়ে গিয়ে হাত ভেঙে ফেলছে।আমরা এখন হসপিটালে’

আমি তো পুরাই অবাক।এসব কি করে হলো?
মাথায় হাত দিয়ে আমার রুমে আসলাম।বিছানায় একটা লেটার পড়ে আছে।
চিঠিতে লিখা আছে—
-‘Dear,
tmr urna dhorar odikar sudu amr. R keo ta korar sahos dekhale tar hat ami venge dibo. Tmr best frd tai just hat ta vangchi. Onno keo hole hat kete golai jhuliye ditam. ‘

-‘কি করবো কিছু বুঝতেছি না
কি হচ্ছে এসব আমার সাথে?কে লোকটা?’
——-
পরেরদিন সকালে।
-‘তাহা উঠ!দেখ ‘

-‘কি হয়ছে?’

মা আমাকে আসতে বলে চলে গেছেন।আমি তার পিছু পিছু সোফার রুমে গিয়ে দেখি পুরা রুম ভর্তি গিফট।
কালো পোশাক পরা কতগুলা লোক একের পর এক আরো আনতেছে।
হঠাৎ একটা কার আসলো।আমাদের বাসার গেটের সামনে দাঁড়ালো সেটা।সেখান থেকে সেদিনের সেই ছেলেটা নামলো।
ছেলেটা আসতেছে এদিকেই।আমাকে দেখে চোখ মারলো।একি সাথে দেখি আমার মামা ও আসছে।

-‘তাহা তুমি আরেক রুমে যাও’

-‘ঠিক আছে’

-‘ভাইয়া উনি কে?আর এতসব গিফট কেন আনছে?’

-‘ও হচ্ছে আমার ছোট বেলার ফ্রেন্ড সানভি চৌধুরীর একমাত্র ছেলে সৌরভ চৌধুরী।সানভি আমাকে ফোন করে বলেছে ও তোর মেয়েকে তাদের বাড়ির বউ করতে চায়’

-‘উনারা কই থাকে?’

-‘সৌরভের আম্মু আব্বু দুজনেই আমেরিকাতে থাকে।’

-‘তো আমার মেয়েকে দেখলো কিভাবে?’

-‘আন্টি!আমি এখানে আমার অফিসের কাজে বাংলাদেশের ক্লায়েন্টের সাথে ডিল করার জন্য আসছিলাম।সেই সূত্রে আমি তাহাকে দেখে পছন্দ করে ফেলি’

-‘আমি তাহার আব্বুর সাথে কথা বলে দেখবো।ওর নানুর ও মতামত দরকার’

-‘অবশ্যই’

-‘সব লুকিয়ে শুনছি।উনি এগুলা কি বলে?আমাকে তো শুধু দুইদিন দেখছে।এতেই পছন্দ করছে?’

আম্মু ভেতরের রুমে এসে আব্বুকে কল দিলো।সব বললো আব্বুকে।

-‘ভালই তো সম্বন্ধ আসছে।কিন্তু আমাদের মেয়ে এখনও ছোট।তুমি তোমার মায়ের সাথে কথা বলে দেখো’

ঠিক সেসময়ে নানু এসে হাজির।
সৌরভ উঠে গিয়ে নানুকে পা ধরে সালাম দিলো।নানু তো এত সুন্দর ছেলে দেখে হা হয়ে তাকিয়ে আছে।
সব শুনে নানুতো পারে না এখনই বিয়ে দেয় কারন নানুর ছোট থেকে ইচ্ছা আমাকে বিদেশি ছেলের সাথে বিয়ে দিবে যে আমাকে সেখানে নিয়ে যাবে সাথে করে।

-‘আমাদের মেয়ে এখন অনেক ছোট।১৭বছর হয়ছে সবে।আমরা মেয়ের ১৮হওয়া ছাড়া বিয়ে দিবো না’

-“আমারও একই ইচ্ছা।আম্মু আব্বু ও এটাই বলেছে।’

নানু উঠে গিয়ে আমার কাছে এসে মামি আর আম্মুরে ডাক দিলো।আমাকে শাড়ি পরিয়ে রেডি করতে বললো।আমি বিয়া করুম না কইতাছি!’

-‘চুপ!এমন ভালো পরিবারের ছেলে সহজে পাওয়া যায় না!

-‘ঐ পোলরে আমার কেমন জানি লাগে।আমার দিকে শয়তানের মতন তাকায় থাকে।
তাও জোরপূর্বক আমাকে যেতে হলো সোফার রুমে।উনাকে, মামাকে আর নানিকে নাস্তা দিলাম।হারামি আমার থেকে চোখ সরাইতেছে না।ইচ্ছা করে চা ঢেলে দিই’

-“আমি তাহার সাথে আলাদা একটু কথা বলতে চাই’

-‘(অসম্ভব।নানু রাজি হইও না’)

-‘কেন নয়।তাহা,যা ওরে নিয়ে তোর রুমে যা।’
.
বাধ্য মেয়ের মত রুমে আসলাম।শয়তান আমার পাশে বসলো।আমি উঠে গিয়ে টেবিলের উপরে বসলাম।
আমার ব্যবহারে উনি মুচকি হাসছেন।
চলবে””

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে