অতন্দ্রিলার রোদ
পর্ব – ১৩ ও ১৪
পর্ব : ১৩ – (গোপন সত্য)
চোখের পলকেই কেটে গেল দেড়টা বছর। দেড় বছর, সময়টা খুব অল্প না। আবার খুব যে দীর্ঘ তাও না।
এই দেড় বছরে রোদদের বাড়ির তেমন একটা পরিবর্তন হয়নি। ফিরোজার বৃক্ষপ্রেমের পরিবর্তন হয়নি, অতন্দ্রিলার ঠোঁটকাটা স্বভাবেরও পরিবর্তন হয়নি।
তবে একেবারেই যে পরিবর্তন হয়নি তা নয়।
তাদের জীবনে একটা বিষয়ে পরিবর্তন এসেছে, অনেক বড় পরিবর্তন।
রোদের জীবনেও এসেছে পরিবর্তন। ম্যাথমেটিক্সের টপলজি ব্রাঞ্চে লেকচারার হিসেবে সুখ্যাতি অর্জন করেছে সে। তার এই সুখ্যাতি নিয়ে বাংলাদেশের পত্র-পত্রিকায় বেশ লেখালেখিও হয়েছে।
অতন্দ্রিলাও, ‘বাংলাদেশকে গর্বিত করা ১০ প্রবাসী’ শিরোনামের এক প্রতিবেদনে রোদের কথা উল্লেখ করেছে।
রোদকে নিয়ে তার গর্বের সীমা নেই।
রোদের সঙ্গে অতন্দ্রিলার সুনিবিড় যোগাযোগ।
তবুও একটা ব্যাপারে যেন সূক্ষ্ম এক দূরত্ব।
ইরাবতীর ইশকুলের বিল্ডিং তোলার কাজ শুরু হয়েছে কয়েক মাস হলো। বিল্ডিং তোলার কাজ দেখার কিছু নেই। তবুও অতন্দ্রিলা সময়-সুযোগ পেলেই চলে যায় কাজটা নিজ চোখে দেখতে।
আজও এসেছে।
অতন্দ্রিলার টেলিফোন বেজে উঠল। হ্যান্ডব্যাগ থেকে টেলিফোন বের করে দেখে, রোদের টেলিফোন।
অতন্দ্রিলা টেলিফোন তুলে বলল, “হুঁ, বলো।”
রোদ উৎসাহিত গলায় বলল, “একটা খারাপ খবর আছে এবং একটা ভালো খবর আছে। কোনটা আগে শুনবে?”
“আগে খারাপটা বলে দাও।”
“তোমার বাবা এবং দুলাভাই এই সপ্তাহে তৃতীয়বারের মতো গান রেকর্ড করে পাঠিয়েছেন।”
“সে কি! এবার কোন গান?”
“আমরা করবো জয়।”
“উনাদের গানগুলো শুনতে যথেষ্ট কুৎসিত হলেও তুমি অনেক প্রশংসা করো। তাই না?”
“বুঝলে কিভাবে?”
“তুমি যদি প্রশংসা না করতে, তাহলে তারা এত আগ্রহ এবং উৎসাহ নিয়ে গান গাইতেন না।”
“তন্দ্রি, তোমার না আসলেই অনেক বুদ্ধি।”
“জানি। এখন তোমার ভালো খবরটা বলো।”
“অবশেষে ১৫-২০ দিনের জন্য ছুটি পেলাম, দেশে আসছি।”
অতন্দ্রিলা উৎফুল্ল কণ্ঠে বলল, “সত্যি? কবে?”
“এ মাসে, আঠারো তারিখে।”
“তোমার মাকে বলেছো?”
“এখনো বলিনি।”
“প্লিজ বোলো না, আমি বলবো। উনাকে চমকে দিবো। উনাকে চমকে দেওয়া আমার অসম্ভব পছন্দের।
মানুষটা এত দিন পর দেশে আসবে, বাড়ির ভাত খাবে। অতন্দ্রিলার ইচ্ছা ছিল সাদামাটা আয়োজন করার।
বাড়িটা মোমবাতি দিয়ে সুন্দর করে সাজানো হবে। হালকা ধরনের রবীন্দ্রসঙ্গীত বাজতে পারে। সঙ্গে থাকবে রোদের পছন্দের সব খাবার।
কিন্তু অতন্দ্রিলার সেই ইচ্ছায় রীতিমতো পানি ঢেলে দেওয়া হলো।
রোদ আসবে জানতে পেরেই হামিদ সাহেব সপরিবারে চলে আসেন তাদের বাড়িতে। রোদ আসা পর্যন্ত এখানেই থাকবেন।
থাকবেন ভালো কথা, থাকতেই পারেন। কিন্তু রোদের আগমন উপলক্ষে উদ্ভট সব আয়োজনের পরিকল্পনা করছেন তিনি। ফিরোজাও তাতে সায় দিয়ে যাচ্ছেন।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
আজ দুপুরে হামিদ সাহেব হাসি মুখে ফিরোজকে বললেন, “আপা লিস্ট তো করেই ফেললাম! সব মিলিয়ে ৩৮ জন আসবে।”
ফিরোজা কিছু বলতে যাবে তার আগেই অতন্দ্রিলা থমথমে গলায় বলল, “৩৮ জন? বাবা এটা কি বিয়ে বাড়ি নাকি জন্মদিনের উৎসব যে এত গুলো মানুষকে বলতে হবে?”
“যেটা বুঝিস না, সেটা নিয়ে কথা বলবি না। সব বিষয়ে তোর জ্ঞান দেওয়াটা না, আমার অসহ্য লাগে। এই ৩৮ জন হলো রোদের সবথেকে কাছের আত্মীয়। এত গুলো দিন তারা ছেলেটাকে দেখেনি!”
“বাবা আমার কথাটা কিন্তু একটু মাথায় রেখো প্লিজ! তুমি বুঝতে পারছো তো, আমাকে কি কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হবে।”
“তুই কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাবি নিজের দোষে। তুই সব বিষয়ে বেশি বুঝিস, এটাই তোর দোষ।”
ফিরোজা শান্ত গলায় বললেন, “আহ্ থাক না ভাই। আর মা অত, তোমার বাবা যা করতে চাইছে করতে দাও। রোদ তো উনারও ছেলে। ভাই আপনি বলুন তো আর কী কী করতে চান!”
হামিদ সাহেব আনন্দিত গলায় বললেন, “আপা গরু জবাই দিতে হবে ২ টা আর ছাগল ৪ টা। এগুলো রান্না হবে বাড়িতে! বাইরে থেকে আসবে বিরিয়ানি এবং রোস্ট। বাড়ির সদর দরজার সামনে রঙিন কাপড় দিয়ে গেট করা হবে। গেটের ওপরে বড় বড় করে লেখা থাকবে ওয়েলকাম হোম।”
অতন্দ্রিলা বিরক্ত গলায় বলল, “গেট করা হবে মানে কি বাবা? সে কী মন্ত্রী না মিনিস্টার?”
“তুই আবার কথা বলছিস?”
“ঠিকাছে, আমি কিছু বলবো না। তুমি বলে যাও।”
“ব্যান্ডপার্টি ডাকা হবে। তাদের কাজ হবে বাদ্যবাজনা বাজানো।”
অতন্দ্রিলা দাঁতে দাঁত চেপে বলল, “বাবা এক কাজ করো, ঘোড়ার ব্যাবস্থা করো।
এয়ারপোর্ট থেকে তাকে আনা হবে ঘোড়ার পিঠে চড়িয়ে।”
পরের দিন সকালে অতন্দ্রিলা ঘুম থেকে উঠে দেখে, হামিদ সাহেব সত্যি সত্যিই ঘোড়া নিয়ে হাজির। দুটো বিশাল সাইজের ঘোড়া দাড়িয়ে আছে বাগানে। তাদের সামনে দাড়িয়ে হামিদ সাহেব এবং জাভেদ।
অতন্দ্রিলা হকচকিয়ে গিয়ে বলল, “এসব কি বাবা?”
“দেখ তো কোন ঘোড়াটা পছন্দ হয়। কাল তোর আইডিয়াটা আমার দারুন পছন্দ হয়েছে।”
“বাবা তোমরা কি পাগল হয়ে গেছো?”
“পাগল হতে যাবো কেন? এই দুটোর মধ্যে যেকোনো একটাকে সুন্দর করে সাজিয়ে এয়ারপোর্টে নিয়ে যাবো।”
“তুমি এটা করবে না।”
“অবশ্যই করবো।”
“বাবা এই পর্যন্ত আমার কোনো কথাই তো শুনলে না। অন্তত এই কথাটা শুনো। তুমি এই কান্ড করলে আমার মান সম্মানের কি হবে?”
জাভেদ ব্যস্ত ভঙ্গিমায় বলল, “ঘোড়ার পিঠে চড়িয়ে আনলে কি তোমার মানহানি হবে? মানহানি হবে তোমার?”
“আপনি দয়া করে চুপ করুন তো!”
অবশেষে অনেক জোরাজুরির পর হামিদ সাহেব ঘোড়ার পিঠে চড়িয়ে বরণ করার পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করলেন।
পুরো বাড়িটাকে মরিচ বাতি দিয়ে সাজানো হচ্ছে। অসাবধানতার কারনে এক এক করে সবাই মরিচ বাতি থেকে, ছোটখাটো ইলেকট্রিক শক খাচ্ছে।
মেহমানরা যাতে একসঙ্গে বসে খেতে পারে, সে জন্যে বড়সড় এক টেবিল অনানো হয়েছে। বর্তমানে সেই টেবিলে ভেলভেটের কাপড় লাগানো হচ্ছে।
মিথ্যা বলার জন্যে আগে থেকে কথা গুছিয়ে রাখতে হয়। কিন্তু সত্য বলতে কোনো পূর্বপরিকল্পনার প্রয়োজন হয় না।
অতন্দ্রিলা রোদকে একটা সত্য কথাই বলবে, তবুও সে নিজের অজান্তে কথা গোছাচ্ছে।
অতন্দ্রিলা হাঁটতে হাঁটতে চলে এলো ইরার ছবির সামনে।
বিনয়ী গলায় বলল, “বুবু! কাল তো সে আসছে। আমাকে একটু দোয়া করো হ্যাঁ?।
আর, কোন শাড়িটা পরা যায় বলোতো? তোমার একটা শাড়ি পরলে কেমন হয়?”
অতন্দ্রিলার ঘরে এক আলমারিতে ইরার শাড়ি এবং অন্যান্য ব্যাবহৃত বস্তু যত্ন করে তুলে রাখা। আলমারিটা সবসময় খোলাই থাকে।
অতন্দ্রিলা প্রায়ই আলমারি খুলে ইরার শাড়িগুলো দেখে। এগুলোর মধ্যেই যেন খুঁজে পায় তার বুবুকে।
অনেক ঘাটাঘাটির পর একটা নীল রঙের শাড়ি পাওয়া গেল। অতন্দ্রিলা কাল এ শাড়ীটাই পরবে।
রোদ বাংলাদেশে ল্যান্ড করবে সকাল দশটায়। ইমিগ্রেশন শেষ হতে হতে বারোটা বেজেই যাবে, বাড়িতে পৌঁছাতে পৌঁছাতে একটা। ঢাকার যানজটের যে অবস্থা, দুটো-তিনটাও বাজতে পারে।
এর মধ্যে ঘটল এক মজার ঘটনা। বাড়ির ইলেক্ট্রিসিটি চলে গেছে, মেইন সুইচ নষ্ট। সন্ধ্যার আগে ঠিক হবে না। অতন্দ্রিলা পুরনো স্মৃতি মনে করে খিলখিল করে হেসে উঠলো। প্রকৃতি ঘটনার পুনরাবৃত্তি করতে পছন্দ করে। তাই হয়তো বিয়ের দিনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি করে, আবার মনে করিয়ে দিল তাকে।
এবার অবশ্য তেমন একটা অসুবিধা হয়নি। দিনের বেলা, সূর্যের আলোয় ঘর আলোকিত।
হামিদ সাহেব, জাভেদ এবং আরও কিছু মামা চাচা টাইপের লোকজন ফুল দিয়ে সাজানো মাইক্রোবাস নিয়ে গেছেন রোদকে আনতে।
বাড়িতে রান্নাবান্না হচ্ছে, হাসিঠাট্টা হচ্ছে, গানবাজনা হচ্ছে।
ছোট ছোট বাচ্চারা হইচই করছে অতন্দ্রিলার ঘরে। অতন্দ্রিলা বড়দের সামনে যতটা কঠিন, ছোটদের সামনে ততটাই কোমল। একদল বাচ্চাকাচ্চা মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে, আরেক দল বাচ্চাকাচ্চা অতন্দ্রিলার গাল ধরে টানাটানি করে। নয়-দশ মাস বয়সী একটা বাচ্চা অতন্দ্রিলার বিছানাতেই ঘুমিয়ে পরেছিল।
বাচ্চাটা ঘুম থেকে উঠেই শুধু বলছে, “ভাভা, ভাভা!” বাচ্চাটাকে তার বাবার কাছে রেখে আসা দরকার। কিন্তু ‘ভাভা’ বলতে সে বাবা বুঝিয়েছে নাকি অন্য কিছু তাও জানতে হবে।
নিচ থেকে অনেক কোলাহলের শব্দ আসছে। রোদ হয়তো এসে গেছে। অতন্দ্রিলা ঘর থেকে বের হলো। দোতলা থেকে দেখল, আসলেই রোদ এসে গেছে। কিন্তু তাকে দেখতে পাচ্ছে না অতন্দ্রিলা। বেচারাকে চারদিক থেকে ঘিরে রেখেছে সকলে।
এখন নিচে গেলে কোনো লাভ হবে না। তাই অতন্দ্রিলা বাচ্চাগুলোকে নিয়ে ছাদে চলে গেল। রোদ অতন্দ্রিলার খোঁজ করতে করতে নিশ্চয়ই ছাদে যাবে।
অতন্দ্রিলার ধারনা ছিল, ছাদে কেউ নেই। বাচ্চারা নির্দ্বিধায় ছোটাছুটি করতে পারবে। কিন্তু সে ধারনা সঠিক হলো না। ছাদে গিয়ে সবগুলো বাচ্চা অতন্দ্রিলাকে ঘেঁষে দাঁড়িয়ে রইল। ‘ভাভা’ করা বাচ্চাটা তো কেঁদেই উঠলো।
কিছুক্ষণ পর ছাদে দেখা মিলল রোদের। অতন্দ্রিলা প্রয়োজন ছাড়া তেমন একটা হাসতে পছন্দ করে না। কিন্তু রোদকে দেখে নিজের অজান্তেই তার ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠলো।
রোদ একটুও বদলায়নি। আগের মতোই চুলের কাট, আগের মতোই দাঁড়ির ধরন, আগের মতোই হাসি।
রোদ অতন্দ্রিলার কাছে এসে দাঁড়ালো।
অতন্দ্রিলা আনন্দিত গলায় বলল, “আসলেন তাহলে!”
রোদ বিস্মিত গলায় বলল, “আপনি ডাকো নাকি আমাকে?”
“ওহ্ স্যরি! কেমন আছো?”
“দেখে কি মনে হচ্ছে?”
“মনে হচ্ছে ভালোই।”
“তাহলে ভালোই আছি।”
অতন্দ্রিলা বলল, “তোমাকে দেখতে কিন্তু অনেক ভালো লাগছে।”
“তোমাকেও অন্যরকম ভালো লাগছে। ”
“আমার বন্ধুগুলো কত বড় হয়ে গেছে দেখো।”
“কোথায় বড় হয়েছে? আগের মতোই তো আছে। তুমিও কিন্তু বদলাওনি।”
“বদলেছি, কিছু দিন যাক বুঝতে পারবে। এখনো এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন? আমার সঙ্গে কথা বলার অনেক সময় পাবে। এখন নিচে চলো, তোমার প্রিয়জনেরা অপেক্ষা করছে।”
দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়েছে। মেহমানরা এক এক করে বিদায় নিচ্ছেন আর অতন্দ্রিলার হৃদস্পন্দন একটু একটু করে বাড়ছে।
সবাই চলে গেলে ফিরোজা ছেলেকে ডেকে নিজের ঘরে নিয়ে যান।
ফিরোজা কাঁপা গলায় বললেন, “বাবা রোদ, তোর সঙ্গে কিছু কথা আছে।”
“হুঁ, মা বলো!”
“আগে তুই বোস।”
রোদ ফিরোজার পাশে বসল।
“বসলাম। এখন বলো কি বলবে।”
“দেখ বাবা, তুই একটু মাথা ঠান্ডা করে আমার কথাগুলো শোন।”
“বললে তো শুনবো মা।”
“বলছি। বাবা তুই যখন অতকে রেখে চলে গেলি, তখন শুধু ওকে রেখে যাসনি।”
ফিরোজা এই দেড় বছরে ঘটে যাওয়া সেই বিরাট পরিবর্তনের বর্ণনা দিলেন।
অতন্দ্রিলার গুছিয়ে রাখা কথাগুলো বারবার এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। ঠিক এই মুহূর্তে কথাগুলোর এলোমেলো হওয়ার কোনো অর্থ হয় না।
অতন্দ্রিলা বাগানের দোলনায় এসে বসল। কেন জানি খুব অস্থির লাগছে তার। ভুলে জর্দা দিয়ে পান খেলে যেমন লাগে তেমন লাগছে। অনেক বড় একটা ভুল হয়ে গেছে। এই ভুল শোধরানোর আর উপায় নেই।
অতন্দ্রিলার কোলে ‘ভাভা’ করতে থাকা সেই বাচ্চাটি হা করে ঘুমাচ্ছে। তার নাম রাত্রি, দেখতে অবিকল অতন্দ্রিলার মতো। অতন্দ্রিলার ধারনা রাত্রি তার ঠোঁটকাটা স্বভাবটি পাবে, অবশ্যই পাবে।
কিছুক্ষণ পর রোদ এসে দোলনায়, অতন্দ্রিলার পাশে বসল।
বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে আহত গলায় বলল, “আমার মেয়ের কথা আমাকে না জানানোর কারন কি?”
অতন্দ্রিলা অস্পষ্ট গলায় বলল, “আছে, অনেক কারন আছে।”
“কি সেই কারণ? আমাকে কি তুমি কখনো আপন বলে মনে করোনি নাকি আমার মেয়ের ওপর কোনো অধিকার আমার নেই?”
“কি বলছো এসব? তোমার অধিকার আছে, সবথেকে বেশি আছে।”
“তাহলে এতদিন ওকে আমার কাছ থেকে গোপন করলে কেন?”
“আমি যেদিন জানতে পারলাম আমি কনসিভ করেছি, সেদিনই তোমাকে বলতে যাচ্ছিলাম। কিন্তু সেদিন তুমি আমাকে বললে যে তুমি লন্ডনে চলে যাচ্ছ। তাই তোমাকে বলতে পারিনি।”
“আমার লন্ডনে যাওয়ার সাথে তোমার বলতে না পারার সম্পর্ক কী?”
“বাচ্চার টোপ দেখিয়ে তোমাকে আটকে রাখতে চাইনি। সবসময় তোমাকে সফল হতে দেখতে চেয়েছি, তোমার স্বপ্নগুলো পূরণ হতে দেখতে চেয়েছি। আমি বা আমরা, কেউই তোমার পিছুটান হতে চাইনি।”
“এই চিনেছিলে তুমি আমাকে? একবারের জন্যেও কি তোমার মনে হয়নি যে একদিন না একদিন সত্যিটা আমি জানতেই পারবো? ”
অতন্দ্রিলা বলল, “বিশ্বাস করো, আজকে রাতে আমি শান্তিতে ঘুমাতে পারবো। অপরাধবোধের বোঝা আমার মাথার ওপর থেকে নেমে গেল। আমি জানি আমি ভুল করেছি, অনেক বড় ভুল। কিন্তু যা করেছি শুধুমাত্র তোমার জন্যে করেছি।”
রোদ ছোট্ট দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “কেন?”
অতন্দ্রিলা কিছু একটা বলতে গিয়েও বলল না।
বেশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, “নাও তো এবার তোমার মেয়েকে। এতদিন আমাকে অনেক জ্বালিয়েছে। এখন তুমি জ্বলো!”
অতন্দ্রিলা রাত্রিকে রোদের কোলে তুলে দিল।
রোদ উজ্জ্বল চোখে তাকিয়ে আছে রাত্রির দিকে। রোদ বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ করল, তার চোখ দিয়ে পানি পরছে। আহারে! এত সুন্দর একটা মেয়ে আছে তার, কেউ তাকে আগে জানালো না কেন? জানালে স্বর্গসম সুখ ত্যাগ করে চলে আসতে দ্বিধা বোধ করতো না রোদ।
পর্ব : ১৪ – (রাত্রির জন্ম)
শারীরিক অবস্থার অবনতির থেকে মানসিক অবস্থা অবনতির ভয়াবহতা বেশি। আর এই দুই অবস্থার অবনতি যদি একসঙ্গে ঘটে তাহলে একটা মানুষ যে কতটা বিপর্যস্ত হয়ে যায়, তা অতন্দ্রিলা জানে।
রোদ যেদিন উৎফুল্ল গলায় তাকে বলল, “আমি লন্ডনের এক ইউনিভার্সিটিতে লেকচারার হিসেবে জয়েন করছি” – সেদিন সকালেই অতন্দ্রিলা জানতে পারে সে কনসিভ করেছে।
ব্যাপারটা আনন্দের, যথেষ্ট আনন্দের। কিন্তু রোদের ওই কথা শোনার পর আনন্দটা তার সঙ্গে ভাগাভাগির করার ইচ্ছে হয়নি।
গণিত বরাবরই রোদের অতি আগ্রহের বিষয়। কিন্তু মায়ের কথা রাখতে অনেকগুলো বছর সে গণিতকে ঘিরে নিজের ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ পায়নি, এবার পেয়েছে।
এত বড় সুযোগ রোদের হাতছাড়া হয়ে যাক, এমনটা কখনোই চায়নি অতন্দ্রিলা।
তাই নিজের প্রেগন্যান্সির খবরটা গোপন রাখে সে।
রোদ যেদিন চলে যাচ্ছিল, সেদিন অতন্দ্রিলার খুব ইচ্ছে করছিল তাকে ডেকে কথাটা বলতে। কিন্তু বলতে পারেনি।
রোদ চলে যাওয়ার পরও টেলিফোনে অনেকবার কথাটা বলার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু সাহস করে ওঠেনি।
অতন্দ্রিলা তার প্রেগন্যান্সির কথা সর্বপ্রথম জানায় শায়লাকে।
শায়লা শুনে হতভম্ব গলায় বলেন, “এই তুই কি পাগল? এত খুশির একটা খবর তুই রোদকে জানলি না?”
অতন্দ্রিলা অসহায় গলায় বলে, “মা তুমি তো বুঝতেই পারছো কেন বলিনি। ওনাকে কোনোভাবে আটকে রাখতে চাইনি।”
“বলা মানেই কি আটকে রাখা? তুই আজই ওকে ফোন করে বলবি! এক্ষনি বলবি!”
“আমি পারবো না মা।”
“ঠিক আছে, তুই না জানালে আমরা জানাবো।”
“মা প্লিজ। তোমরা তাকে কিচ্ছু বলবে না। তার স্বপ্ন তাকে পূরণ করতে দাও।”
“আর তোর স্বপ্ন? তোর স্বপ্নের কী হবে?”
“উনার স্বপ্নগুলোর মধ্যেই আমার স্বপ্ন লুকিয়ে আছে মা।”
“তোর যা ইচ্ছা, তাই কর!”
রোদকে প্রেগন্যান্সির খবরটা জানানোর জন্যে অতন্দ্রিলাকে বহুভাবে জোরাজুরি করা হয়। কিন্তু সে কিছুতেই জানাবে না।
ফিরোজা বেশ কয়েকবার গোপনে রোদকে টেলিফোন করে বিষয়টা জানাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু প্রত্যেকবারই অতন্দ্রিলার কাছে ধরা পরেন।
একদিন সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর থেকেই এক ধরনের অস্বস্তি হতে লাগল অতন্দ্রিলার।
সমস্ত শরীরে ঝিম ধরে আছে, চোখ কটকট করছে।
অতন্দ্রিলা ঘুম থেকে উঠে বিছানাতেই শুয়ে আছে।
ফিরোজা তার ঘরে এসে ব্যস্ত ভঙ্গিমায় বলেন, “নাস্তা করতে আসলে না মা?”
অতন্দ্রিলা ক্লান্ত গলায় বলে, “আমি উঠেতে পারবো না। আপনি আমাকে খাইয়ে দিন।”
ফিরোজা অতন্দ্রিলার কপালে হাত রেখে বলেন, “কেন মা? শরীর খারাপ লাগছে নাকি?”
“বুঝতে পারছি না।”
ফিরোজা লক্ষ করলেন অতন্দ্রিলা ঘামছে।
তিনি ভয়ে ভয়ে বলেন, “অত?”
“হুঁ?”
“রোদকে একটা ফোন দেই?”
“না।”
“ঠিকাছে। তুমি শুয়ে থাকো আমি নাস্তা আনছি।”
নাস্তা করার পর কিছুটা ভালো লাগে অতন্দ্রিলার।
বিকেলের দিকে ফিরোজা যান তার ভাইয়ের বাড়িতে। বাড়িতে আছে রোবটের সমতুল্য বেশ কয়েকজন কাজের লোক। কিন্তু তাদের দিয়ে কোনো কাজ হবে না। অতন্দ্রিলার এখন দরকার মানসিক সান্ত্বনা।
অস্থিরতা ক্রমেই বাড়তে শুরু করলো। অতন্দ্রিলা চুপ করে শুয়ে আছে।
তখনি জরিনা ব্যস্ত ভঙ্গিমায় তার ঘরে ঢুকে বলে, “আফা! ঝড় আসতেছে তো। বৃষ্টি দেখবেন না?”
“না জরিনা, আমার কেমন জানি খারাপ লাগছে। একটু আমার কাছে এসে বসো তো।”
জরিনা অতন্দ্রিলার পাশে বসতে বসতে বলে, “আফা, আফনের চুল টাইনা দেই?”
“দাও।”
বাইরে তুমুল ঝড় হচ্ছে। জানলার কাঁচ ভেঙে পরছে।
জরিনা আতঙ্কিত গলায় বলে, “আফা, জানলার কাঁচ ভাঙতেছে মনে হয়!”
অতন্দ্রিলা উঠে বসল। তলপেটে একটা তীব্র এবং তীক্ষ্ম যন্ত্রণা অনুভব করল। এই যন্ত্রণা তো আগে কোনদিনও অনুভূত হয়নি!
ব্যাথার ধাক্কা সামলাতে বিছানা আকরে ধরে বসল সে।
জরিনা বলে, “কি হইছে আফা?”
“মরে যাচ্ছি জরিনা!”
জরিনা কি করবে ভেবে পাচ্ছে না, তার সমস্ত শরীর কাঁপছে। দ্রুত গিয়ে টেলিফোন করলো ফিরোজকে।
অতন্দ্রিলা জ্ঞান হারাচ্ছে। তবু চিন্তা করছে এই মুহূর্তে কি করা যায়। রোদকে টেলিফোন করতে খুব ইচ্ছে করছে। কিন্তু রোদকে টেলিফোন করে কি হবে? রোদ তো আর আসতে পারবে না! কিংবা হয়তো চলেও আসবে।
অতন্দ্রিলাকে হাসপাতালে নেওয়া হলো রাত নয়টায়। অপারেশন থিয়েটারের বাইরে থরথর করে কাঁপছেন ফিরোজা। এই অনুভূতিটা তার খুবই চেনা। জীবনে আরও একবার অপারেশন থিয়েটারের সামনে দাড়িয়ে এভাবে কেপেছিলেন তিনি, ইরার অপারেশনের সময়ে। ফিরোজা বিড়বিড় করে দোয়া ইউনুস পড়লেন।
নয়টা একত্রিশ মিনিটে একজন ডক্টর বাইরে এসে বললেন, “কংগ্রাচুলেশনস! আপনার নাতনি হয়েছে।”
ফিরোজা চোখভর্তি জল নিয়ে বললেন, “আলহামদুলিল্লাহ! বৌমা? বৌমা কেমন আছে?”
“মা-মেয়ে দুজনেরই সুস্থ আছে।”
পরেরদিন সকালে অতন্দ্রিলার ঘুম ভাঙলো। তার কোলে ফুটফুটে একটা বাচ্চা। বাচ্চাটা নাকি তার! অতন্দ্রিলা উজ্জ্বল চোখে তাকিয়ে আছে তার দিকে।
অতন্দ্রিলার সামনে বসা তার পরিবারের লোকজন। তারা কি কি যেন বলাবলি করছে। সেসব কিছুই অতন্দ্রিলার কানে আসছে না।
অতন্দ্রিলার ভাবতেই অবাক লাগছে, সে নাকি এখন একজন মা!
ইশ! রোদকে যদি তার মেয়েটার কথা বলতে পারতো! রোদ নিঃসন্দেহে বোকাদের মতো কেঁদে ফেলতো।
ফুটফুটে বাচ্চাটা তার মুঠোয় অতন্দ্রিলার হাতের একটা আঙ্গুল চেপে রেখেছে।
শায়লা আনন্দিত গলায় বলেন, “কী নাম রাখবি, কিছু ঠিক করেছিস?”
অতন্দ্রিলা পরিষ্কার গলায় বলে, “রাত্রি।”
“বাহ্! চমৎকার! আগে থেকে ঠিক করে রেখেছিলি দেখছি।”
“আমি ঠিক করিনি মা। একজন ওর নাম রেখেছে।”
“কে সে?”
“আমার অনেক কাছের এক বন্ধু, তুমি তাকে চিনবে না। মা একটা কথা বলি?”
“বল!”
“থ্যাংক ইউ।”
“থ্যাংক ইউ কেন?”
“তুমি যে আমাকে পৃথিবীতে আনার জন্যে কতটা কষ্ট করেছ, সেটা আজ বুঝলাম।”
“মাকে থ্যাংক ইউ বললে যে তার কতটা রাগ হয় এটাও তুই একদিন বুঝবি!”
অতন্দ্রিলা ফিক করে হেসে দিল।
বাড়িতে ফিরেই রাত্রিকে নিয়ে ইরার ছবির সামনে দাঁড়িয়ে
অতন্দ্রিলা বলে, “বুবু দেখো! তোমার রাত্রি। বিশ্বাস হয়? আমার তো হচ্ছে না।
মনে হচ্ছে স্বপ্ন দেখছি। জানো, আমি না মাঝে মাঝে তোমাকে স্বপ্নে দেখি। দেখি তুমি হাসছো, আমার সঙ্গে গল্প করছো, আমার চুলে বেণী করে দিচ্ছ। এটাও কি স্বপ্ন বুবু? আমার না খুব আনন্দ হচ্ছে। এত আনন্দ, এত সুখ আমি সহ্য করতে পারছি না।”
রাত্রির জন্মের পর শুরু হলো নতুন সমস্যা। ফিরোজা সকাল-সন্ধ্যা নিয়ম করে বিনয়ী গলায় শুধু একটাই কথা বলে অতন্দ্রিলাকে। সেটা হলো, “মা এবার রোদকে দিদিভাইয়ের কথাটা বলো।”
প্রতিবারই অতন্দ্রিলা ক্ষীণ গলায় জবাব দিয়ে বলে, “না।”
রাত্রির জন্মের পর রোদ অতন্দ্রিলাকে টেলিফোন করেছে ততবারই তার গলা ফাটিয়ে বলতে ইচ্ছা করেছে, “তোমার জন্যে এক টুকরো ভালোবাসা যত্ন করে রেখেছি। প্লিজ এসে গ্রহন করো!”
কিন্তু বলতে পারেনি।
অতন্দ্রিলা তার মেয়েকে যতই দেখে ততই মায়ার জালে আটকা পরে যায়। এই জাল থেকে কোনো দিনও বের পারবে না সে, অবশ্য অতন্দ্রিলা বের হতেও চায় না।
গরম পানির সঙ্গে ঠান্ডা পানি মেশানো যে পৃথিবীর জটিলতম কাজগুলোর মধ্যে একটা, এটা অতন্দ্রিলার আগে জানা ছিল না। রাত্রিকে গোসল করানো হয় ঠিক বেলা দশটায়। গোসলের পরপরই ফিরোজা নাতনি কোলে নিয়ে বাগানে বসে থাকেন। দৃশ্যটা দেখার মতো। ইশ! রোদ যদি দৃশ্যটা দেখতে পেতো, তাহলে নিশ্চয়ই ছবি এঁকে রাখতো।
টুকটুক করে বড় হচ্ছে রাত্রি। ফিরোজা অনেক কষ্ট বসতে শিখেছেন তাকে। অতন্দ্রিলা ঘোষনা দিয়েছে, “রাত্রিকে হাঁটতে শেখাবো আমি!”
প্রতিদিন সকালে রাত্রির দু হাত ধরে বাগানে হাঁটতে নিয়ে যায় অতন্দ্রিলা। রাত্রি মায়ের হাত ধরে ছোট ছোট পা ফেলে হাঁটে। কিন্তু অতন্দ্রিলা হাত ছেড়ে দিলেই সে পরে যায়।
অতন্দ্রিলা চিন্তা করে, জীবনে অন্যান্য ক্ষেত্রেও কি সে হাত ছেড়ে দিলে রাত্রি পরে যাবে? তাহলে তো কখনো মেয়ের হাত ছাড়া যাবে না।
রাত্রির বয়স এখন সাত মাস। এই বয়সে বাচ্চারা মা, বাবা, দাদা ইত্যাদি টুকটাক কথা বলতে পারে।
কিন্তু রাত্রি শুধু বলতে পারে একটি শব্দ – ভাভা। যাই দেখে উচ্ছসিত হয়ে হাত নেড়ে নেড়ে বলে ভাভা।
অতন্দ্রিলা রাত্রিকে নিয়ে সোফায় বসল।
পরিষ্কার গলায় বলল, “মা বলতো, বা-বা।”
রাত্রি তার দুটি দাঁত বের করে ফিক করে হেসে বলল, “ভাভা।”
“উহুঁ, হলো না মা। বল বা-বা।”
“ভাভা!”
“আচ্ছা, এখন বলতো মা! মা”
“ভাভা!”
“এই ভাভা আবার কি?
রাত্রি আবার হেসে দিলো।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
যেদিন রাত্রি অতন্দ্রিলাকে ‘মা’ বলে ডাকবে, সেদিন নিঃসন্ধেহে তার আনন্দের সীমা থাকবে না। মা শব্দটা এত অদ্ভুত কেন?
একদিন সকালে অনেক সাহস করে অতন্দ্রিলা ঠিক করল, এবার রোদকে তার মেয়ের কথা তাকে জানাতে হবে।
অতন্দ্রিলা রোদকে টেলিফোন করতে যাবে, তখনি রোদ অতন্দ্রিলাকে টেলিফোন করে।
উৎফুল্ল কণ্ঠে বলে, “তন্দ্রি! আমি ইউনিভার্সিটির লেকচারার অফ দ্য ইয়ারের অ্যাওয়ার্ড পেয়েছি।”
মানুষটা এতটাই খুশি ছিলো, যে এবারো অতন্দ্রিলা তাকে রাত্রির কথা বলতে পারলো না। রোদ এতদিন যেটার স্বপ্ন দেখেছিল, এখনো সেটা তার হাতের মুঠোয়।
এমন সময় তাকে বাচ্চার কথা বলে ফিরিয়ে আনার কোনো অর্থ নেই।
মেয়েকে বাবার কাছ থেকে লুকিয়ে রাখা এবং বাবাকে মেয়ের কাছ থেকে লুকিয়ে রাখা যে গুরুতর অপরাধ, সেটা অতন্দ্রিলা বুঝতে পারছে। সে অনুতপ্ত।
(চলবে)