অতন্দ্রিলার রোদ
পর্ব : ১
লেখা : শঙ্খিনী
অতন্দ্রিলার মাথাটা ভ্নভ্ন করছে। তেইশ বছরের জীবনে এতটা বিভ্রান্ত এর আগে একবারই হয়েছিলো।
তখন তার বয়স মাত্র চার। এই বয়সে নানি-দাদি বা অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনেরা বাচ্চাদেরকে, “বাবা আর মায়ের মধ্যে কে বেশি আদর করে?” বা “বাবা আর মায়ের মধ্যে কাকে বেশি ভালোবাসো?” – এ ধরনের প্রশ্ন করে থাকেন।
কিন্তু অতন্দ্রিলার ক্ষেত্রে বিষয়টা ছিলো একটু ভিন্ন।
এক সন্ধ্যায় অতন্দ্রিলার দাদী তাকে
হতাশ গলায় বললেন, “অত, ঠিক করো কার সাথে থাকবে! মায়ের সাথে না বাবার সাথে?”
কথাগুলো অতন্দ্রিলার মাথার ওপর দিয়ে গেলো।
কিছুই বুঝতে না পেরে সে হতভম্ব গলায় বলল, “আমি তো দুজনের সাথেই থাকি!”
“সেটা তো এতদিন থাকতে। কিন্তু এখন তোমার বাবা-মা আলাদা হয়ে যাচ্ছে। তাই দুজনের মধ্যে থেকে যেকোনো একজনকে বেছে নিতে হবে তোমাকে।”
“আলদা হয়ে যাওয়া মানে কি?”
“ডিভোর্স! তোমার বাবা-মায়ের ডিভোর্স হয়ে যাচ্ছে।”
“ডিভোর্স মানে কি?”
“ডিভোর্স মানে তোমার বাবা-মা আর একসাথে থাকবে না।”
“একসাথে থাকবে না? কেন?”
“সেটা তোমার জানার বিষয় না! তুমি আগে বলো কার সাথে থাকবে?”
আলাদা হওয়া বা ডিভোর্স, এই ধরনের কঠিন কঠিন শব্দগুলোর অর্থ এখনো অতন্দ্রিলার সাথে পরিষ্কার না। তার ওপর আবার বাবা-মায়ের মধ্যে থেকে একজনকে বেছে নেওয়া, ভয়ংকর ব্যাপার!
এত বড় একটা সিদ্ধান্তের কথা বাচ্চাদেরকে সুন্দর করে বুঝিয়ে বলতে হয়। দুটো মানুষের মধ্যে মতের অমিল হলে যে, তারা আলাদা হয়ে যেতে পারে, এটা তাদের কল্পনারও বাইরে।
পরে অতন্দ্রিলার মা শায়লা বিষয়টা তাকে সুন্দর করে বুঝিয়ে বলেন।
“অত? আমাদের বাসায় বা তোমার ক্লাসে এমন কেউ কি আছে যাকে তুমি সহ্য করতে পারো না? যাকে দেখলেই তোমার রাগ হয়?”
“আছে, সন্ধ্যা আপা।”
“সন্ধ্যা যখন তোমার ঘরে ঢুকে অকারণে তোমাকে ফুটবল দিয়ে মারে তখন তুমি তাকে ঘর থেকে চলে যেতে বলো না?”
“হুঁ বলি তো!”
“তোমার বাবার আর আমার ঘটনাটাও কিছুটা এমন।”
“বাবা কি তোমাকে ফুটবল দিয়ে মারে?”
“না। সে মারে কথা দিয়ে। তুমি যেমন ফুটবলের আঘাত সহ্য করতে পারো না, আমিও তেমনি কথার আঘাত সহ্য করতে পারি না। তাই আমি তোমার বাবার বাসা থেকে চলে যাচ্ছি। তুমি চাইলে আমার সাথেও যেতে পারো আবার চাইলে তোমার বাবার সাথেও থাকতে পারো।”
অতন্দ্রিলা শুকনো গলায় বলল, “তুমি কোথায় যাবে?”
“তোমার নানাবাড়ীতে।”
“শহর তোমার সাথে যাবে?”
“শহর তো এখন অনেক ছোট, তাই আপাতত আমি ওকে নিয়ে যাচ্ছি। ও যখন তোমার মত একটু বড় হবে, তখন ওকেও জিজ্ঞেস করবো কার কাছে থাকবে।”
“আর আপা?”
“সন্ধ্যাও আমার সাথে যাবে। এখন তুমি বলো কি করতে চাও! যাবে আমার সাথে?”
“না। আমি এখানেই থাকবো।”
“তোমার কিন্তু অনেক সমস্যা হবে আমাকে ছাড়া। আমি চাই তুমি আমার সাথে চলো।”
“না। আমি তোমার সাথে যাবো না।”
“তুমি ঠিক তোমার বাবার জেদটা পেয়েছো।”
এরপর এক ঝড়-বৃষ্টির রাতে শায়লা ব্যাগ-পত্র গুছিয়ে তার দুই ছেলমেয়েকে নিয়ে চলে যায়।
সেদিন অতন্দ্রিলা বুঝতেই পারেনি তার মা ভাইবোনকে নিয়ে কেন চলে গেল। ভয়ঙ্কর বিভ্রান্তিতে পরেছিল সে।
তবে এবার তার বিভ্রান্তির কারনটা সম্পূর্ণই আলাদা।
সারাজীবন নাটক-সিনেমায় কিংবা গল্পে-উপন্যাসে ‘ভালোবাসা’ শব্দটা অহরহ শুনছে অতন্দ্রিলা। কিন্তু এই শব্দের অর্থটাই এখনো জানা হলো না। এই চার অক্ষরের শব্দটার অর্থ জানার জন্যই ইন্টারনেটে ছোটখাটো গবেষণা চালাচ্ছে। কিন্তু গবেষনা যতই এগুচ্ছে, অতন্দ্রিলার মাথা এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
দস্তয়েভস্কি বলেছেন, “কেউ ভালোবাসা পেলে এমন কি সুখ ছাড়াও সে বাঁচতে পারে।”
আবার ডেভিড রস বলেছেন, “ভালোবাসা এবং যত্ন দিয়ে মরুভূমিতেও ফুল ফোটানো যায়।”
এদিকে রবীন্দ্রনাথ তো অতন্দ্রিলার মতোই বিভ্রান্ত। তিনি নিজেই প্রশ্ন করেছেন, “সখী ভালোবাসা কারে কয়?”
আবার লা রচেফউকোল্ড বলেছেন, “সত্যিকারের ভালোবাসা হল অনেকটা প্রেতআত্মার মতো। এ নিয়ে সবাই কথা বলে,কিন্তু শুধুমাত্র কয়েকজনই এর দেখা পায়।”
হুমায়ূন আজাদ বলেছেন, “প্রেম হচ্ছে নিরন্তর অনিশ্চয়তা; বিয়ে ও সংসার হচ্ছে চূড়ান্ত নিশ্চিন্তির মধ্যে আহার, নিদ্রা, সঙ্গম, সন্তান, ও শয়তানি।”
সবশেষে অতন্দ্রিলার প্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদ বলেছেন, “পৃথিবীতে অনেক ধরনের অত্যাচার আছে। ভালবাসার অত্যাচার হচ্ছে সবচেয়ে ভয়ানক অত্যাচার। এ অত্যাচারের বিরুদ্ধে কখনো কিছু বলা যায় না, শুধু সহ্য করে নিতে হয়।”
বিখ্যাত ব্যাক্তিদের এসব বিখ্যাত উক্তি পড়ে অতন্দ্রিলা একটা কথাই বুঝতে পরলো যে, ভালোবাসা হলো একটি এবং জটিল এবং বিভ্রান্তিমূলক অনুভূতি।
সকালে ঘুম থেকে উঠেই সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি প্রাপ্ত অতন্দ্রিলা আশরাফ,
বসে পড়ে প্রতিবেদন লিখতে। এ বছরের শুরুর দিকে বাবা হামিদ সাহেবের সুপারিশে, একটা অনলাইন পত্রিকায় চাকরি পেয়েছে সে।
চাকরি পাওয়ার খবরটা পেয়েই সর্বপ্রথম শায়লাকে টেলিফোন করে জানায় অতন্দ্রিলা।
চাকরির কথা শুনতেই শায়লা হাই তুলতে তুলতে বলেন, “তোর এই চাকরিটা কি ধরনের?”
“খুবই বাজে ধরনের। পেটে ভাতে চাকরি বলতে পারো! এমন সব প্রতিবেদন লিখবো যা হয়তো ওয়েবসাইটের কোণায় পরে থাকবে, কেউ খুলে পড়বে পর্যন্ত না।”
“তাহলে এমন চাকরি তুই করবি কেন?”
“দুটো কারন আছে। প্রথমত, এখানে প্রতিবেদন লিখতে লিখতে আমার লেখার হাত পাকবে। নতুন অভিজ্ঞতা হবে। আর দ্বিতীয়ত, চাকরিটা করতে ঘর থেকে বের হতে হবে না। যেহেতু অনলাইন পত্রিকা, তাই ঘরে বসেই লিখতে পারবো।”
“কি কি বিষয়ে প্রতিবেদন লিখবি?”
“হাবিজাবি বিষয়ে। এই যেমন, ‘জেনে নিন অতিরিক্ত পরিশ্রম করার কুফল’ অথবা ‘জেনে নিন অতিরিক্ত বিশ্রামের কুফল’- এই টাইপের প্রতিবেদন।”
“এসব কুফল সম্পর্কে তুই কি জানিস? তুই কি ডাক্তার?”
“একজন সাংবাদিক যেমন ডাক্তারি বিষয় সম্পর্কে প্রতিবেদন লিখতে পারে, তেমনি মহাকাশ সম্পর্কেও প্রতিবেদন লিখতে পারে।
তোমাকে তো মাত্র একটা ধারনা দিলাম। চেষ্টা করবো সব বিষয়েই লিখতে।”
“তোর জ্ঞানের কথা শুনতে ভালো লাগছে না, রাখলাম।”
প্রথম দিকে অতন্দ্রিলার এই ঘরে বসে সাংবাদিকতাকে সবাই তুচ্ছতাচ্ছিল্য করলেও, পাঠকদের বেশ ভালোই সাড়া পেয়েছে সে। তাই হাবিজাবি ধরনের প্রতিবেদন লিখে যাচ্ছে ছয় মাস ধরে।
আজ সে বিষয়টা নিয়ে প্রতিবেদন লিখছে তার শিরোনাম, ‘ভালোবাসা কারে কয়?’
এই প্রতিবেদনটি সাজানো থাকবে বিখ্যাত ব্যাক্তিদের ভালোবাসা সংক্রান্ত উক্তি দিয়ে।
তবে অতন্দ্রিলা ভাবছে এবারের প্রতিবেদটা একটু ভিন্নরকম ভাবে সাজবে।
বিখ্যাত ব্যাক্তিদের পাশাপাশি এবারের প্রতিবেদনে থাকবে, ভালোবাসা নিয়ে তার আশেপাশের মানুষগুলোর মতামত। এই যেমন তার ৭৫ বছর বয়সী দাদি ভালোবাসা নিয়ে কি ভাবেন কিংবা উনিশ বছর আগে যার স্ত্রী ছেড়ে যাওয়ার পর আর দ্বিতীয় বিয়ে করেননি সেই বাবা ভালোবাসা নিয়ে কি ভাবেন অথবা স্বামীকে ছেড়ে যাওয়ার পর যে নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে ব্যাস্ত ছিলেন সেই মা ভালোবাসা নিয়ে কি ভাবেন। রোদ সাহেবের মতামতও নেওয়া যেতে পারে, তবে সেটা পরিস্থিতিতে সাপেক্ষে বিবেচ্য। সঙ্গে অতন্দ্রিলার নিজস্ব মতামতও যোগ করা যেতে পারে।
আর কার কার মতামত নেওয়া যায় তা ভাবতে ভাবতে দরজায় টোকা পরল।
“খোলা আছে!”
বেশ ব্যস্ত ভঙ্গিমায় ঘরে প্রবেশ করে অতন্দ্রিলাদের বাড়ির কাজের মেয়ে জরিনা।
“আফা নিচে আসেন, টেবিলে নাস্তা দিসি।
আইজ আপনের পছন্দের নাস্তা, পরটা দিয়া গরুর গোস্ত।”
“বাবা আর দাদি?”
“বইসা পরছে। আপনের জইন্যে দাঁড়াইবে নাকি? আপনে তো লিখতে লিখতেই দুপুর বাঁধায় ফেলবেন।”
“তুমি বেশি কথা বলো।”
“কি করবো আফা কন? আল্লাহর দুনিয়ার আসছি তো দুই দিনের জন্যে, কথা না কইলে কি করুম?”
“বেশি কথা না বলে আমার একটা প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে?”
“এইটা কোনো কথা বললেন আফা? আপনি একটা কথা জিগাইবেন আর আমি বোলুম না এইটা হয়?”
“বলতো ভালোবাসা কি?”
“আফা, আমি মূর্খ মানুষ। পড়াশুনা বেশি দূর করতে পারি নাই! আমি আবার কি বোলুম ?”
“এমন অনেক বিষয়ই আছে যা সম্পর্কে জানতে লেখাপড়া করতে হয় না, চারপাশের পরিবেশ থেকেই জানা যায়। ভালোবাসা মানে তো তুমি নিশ্চই জানো!”
জরিনা খানিকটা সংকোচ নিয়ে বলল, “জানি, তয় আপনার মত সুন্দর কইরা বলতে পারমু না।”
“আমি তো তোমাকে সুন্দর করে বলতে বলিনি। তুমি যা জানো, নিজের মতো করে বলো।”
“আফা এইসব বদ মাইয়া-পোলার করবার। যেগুলি এইসব ভালোবাসাবাসি করে, হেগুলি বদের বদ।”
অতন্দ্রিলা ছোট্ট দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “ঠিকাছে, তুমি নিচে যাও আমি আসছি।”
অতন্দ্রিলা নিচে এসে দেখে জরিনার কথা একেবারেই সত্য নয়। বাবা এবং দাদি তার জন্য নাস্তার টেবিলে অপেক্ষা করছেন। যদিও অপেক্ষা করছেন নিতান্ত অনিচ্ছায়।
অতন্দ্রিলাকে দেখে তার বাবা হারুন সাহেব শান্তির দীর্ঘঃশ্বাস ফেলে বললেন, “গুড মর্নিং রাজকুমারী।”
অতন্দ্রিলা তার পাশে বসতে বসতে বলল “গুড মর্নিং।”
“তা, কেমন দেখলি ছেলেটাকে?”
“কোন ছেলে?”
“ঢং করবি না। পৃথিবীতে আমি সবকিছু সহ্য করতে পারি কিন্তু ঢং সহ্য করতে পারি না।”
“ভুল। তুমি ক্ষুদা সহ্য করতে পারো না, তাই এখন নাস্তা করছো। আবার তুমি শীত সহ্য করতে পারো না, তাই শীতকালে সোয়েটার পরো।”
“তোর সঙ্গে কথা বলাটাই বিপদ। কোনো আলোচনাকে কি হালকা পর্যায়ে রাখতে পারিস না?”
অতন্দ্রিলা বলল, “স্যরি বাবা, ভুল করেছি। আমার জীবনে তো অনেক ছেলেকেই দেখেছি তাই সত্যিই বুঝতে পারছি না তুমি কোন ছেলের কথা বলছো।”
“কার কথা আবার? কালকে যে ছেলেটা তোকে দেখতে এলো, সেই ছেলেটা।”
“ও সে! হুঁ ভালোই তো দেখেছি।”
অতন্দ্রিলার দাদি রওশন আরা অস্পষ্ট গলায় বললেন, “ভালো হলেই ভালো।”
অতন্দ্রিলা বলল, “তবে তার যে এর আগেও একবার বিয়ে হয়েছিলো, এই বিষয়টা তোমরা আমার কাছ থেকে গোপন না করলেও পারতে।”
হামিদ সাহেব হতভম্ব হয়ে বললেন, “তুই জানলি কিভাবে?”
“বাবা লোকটা না আহাম্মক নন। তাই যখন তার সাথে আমাকে আলাদাভাবে কথা বলতে পাঠিয়ে দিলে, তখনি সে তার জীবনের এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা আমাকে জানায়।”
রওশন হতাশ গলায় বললেন, “দেখ মা, তুই তো সবই জানিস আর বুঝিস।”
“হুঁ বুঝি তো। আমি ব্রোকেন ফ্যামিলির মেয়ে, তাই এর থেকে বেশি আমি ডিজার্ভ করি না।”
“আহ্! এভাবে বলছিস কেন?”
“সত্যিই তো বলছি। তোমরা কি ভাবছো, ওনার যে আগে একটা বিয়ে হয়েছিল এই বিষয়টা ভেবে আমি রাগে দুঃখে মরে যাচ্ছি? না দাদি! আমি ব্যাপারটাকে অত্যন্ত স্বাভাবিক ভাবে নিয়েছি। আমার দোষ হলো আমি ব্রোকেন ফ্যামিলির মেয়ে। আর ওনার দোষ হলো উনি আগেও একবার বিয়ে করেছিলেন। দোষে দোষে কাটাকাটি! তাছাড়া লোকটাকে যে আমার পছন্দ হয়নি তাও না। পছন্দ হয়েছে। ওনার বুদ্ধি ভালো, সুন্দর করে কথা বলে আর দেখতে শুনতেও খারাপ না।”
হামিদ সাহেব কিছু বলতে যাবেন, তখনি জরিনা খাবার ঘরে প্রবেশ করে।
“আফা! ছোট ভাইজান ফোন দিসে।”
“শহরকে বলো, আমি নাস্তা করে কলব্যাক করছি।”
শহর, অতন্দ্রিলার আদরের ছোট ভাই। শহরের বয়স যখন ৬ মাস, তখন তার মা তাকে নিয়ে নানাবাড়ীতে চলে যায়। মা, বড় আপাসহ নানাবাড়ির সকলেই যে অত্যন্ত বিরক্তিকর মানুষ, এই ব্যাপারটা শহর একটু বড় হয়েই বুঝতে পারে। তাই তিন বছর বয়স থেকে বাবা, দাদি এবং ছোট আপার সাথে থাকতে শুরু করে সে।
বর্তমানে সে জগন্নাথ হলের আবাসিক ছাত্র।
হলে থাকাটা নিতান্তই তার শখের বসে নেওয়া সিদ্ধান্ত। এই সিদ্ধান্তটা যে কত বড় ভুল ছিল, তা শহর এখন টের পাচ্ছে।
অতন্দ্রিলা তাড়াহুড়ো নাস্তা শেষ করে, ঘরে গিয়ে শহরকে কলব্যাক করে।
“আপা, তোমাকে নাকি কাল পাত্র দেখতে এসেছিল?”
“হুঁ এসেছিলো তো।”
“এটা আমাকে কেউ আগে জানায়নি কেন?”
“দেখতে আসবে আমাকে, তুই জেনে কি করবি?”
“তোমাকে দেখতে আসবে আর আমি সেখানে উপস্থিত থাকবো না?”
“না থাকবি না। কারন দেখতে আসা মানেই বিয়ে হয়ে যাওয়া না। আর তারা শুধু আমাকে দেখে গেছেন, বিয়ে পর্যন্ত ঠিক হয়নি। বলেছেন জানাবে।”
শহর বলল,“মা জানে?”
“না।”
“তোমার সাথে যার বিয়ে কথা চলছে, তার সম্পর্কে কিছু বলো।”
“কিছুই বলতে পারবো না। আগে সবকিছু ঠিকঠাক হোক, সব জানতে পারবি।”
শহরকে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে অতন্দ্রিলা ফোনটা রেখে দিলো।
(চলবে)