অতঃপর_তুমি পর্ব-৩২

0
5425

#অতঃপর_তুমি
#পর্ব-৩২
Writer: ইশরাত জাহান সুপ্তি

৩৬.
ইলিশ মাছের পেটের টুকরোটা খুন্তি দিয়ে কড়াইয়ের উপর উল্টে দিতেই আমার মন খারাপ হয়ে গেলো।আবারো বেশি ভাজা হয়ে গেছে।আরেকটু হলেই সাক্ষাৎ পুড়ে যাওয়ার খেতাবটা অর্জন করে ফেলতো।আজ আমি সর্ষে ইলিশ রান্না করতে এসেছি।একরকম শখ করেই রান্না যাকে বলে।সর্ষে ইলিশ রান্নায় মাছটাকে ভাজা হয় না।কিন্তু সমস্যাটা হলো বাবা কোনো মাছই না ভেজে রান্না করলে খেতে পারেন না।হালকা হলেও ভাঁজতেই হবে।তাই এ বাড়িতে ইলিশ মাছ হালকা ভেজেই রান্না করা হয়।কিন্তু আমি কয়েক টুকরো এমনভাবে ভেজে ফেলেছি যাকে হালকা ভাজা বললে পাপ হবে।ভাগ্যিস এখন মা পাশে নেই।নয়তো দেখলে কি বলতো!আজ দেখছি কোনো কিছুই ঠিক মতো হচ্ছে না।সর্ষে ইলিশ রান্না আজ মা আমাকে শিখাচ্ছেন।অভ্র’র মায়ের হাতের সর্ষে ইলিশ খুব মজার হয়।
মা যখন আবার রান্নাঘরে ফিরে এলেন তখনের পাল্লায় মাছ ভাজাটা ভালো হলো।একদম হালকা ভাজা।মাছ ভেজে নামিয়ে বাটা মশলা কষিয়ে রান্না চলতে লাগলো।মা একটু পর পর আমাকে এটা ওটা ইনস্ট্রাকশন দিতে লাগলেন।

‘বুঝলে অরু,সর্ষে ইলিশে কাঁচা মরিচের স্বাদটা কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ।তুমি অন্য মাছ রান্নায় কাঁচা মরিচ না দিলেও পারো।শুকনো মরিচের গুঁড়া দিলেই চলে।তবে সর্ষে ইলিশে চার পাঁচ টে কাঁচা মরিচ চিরে দিলে দেখবে স্বাদটাই দারুন আসবে।’

‘মা,কাঁচা মরিচ কি এখন দেবো?’

‘না এখন না।ঝোলে আরেকটু জ্বাল পড়ুক।তারপর মাছ দেওয়ার একটু আগে আগে দিবে।কাঁচা মরিচের ঘ্রাণটা ভালো পাওয়া যাবে।’

রান্না হয়ে গেছে।সবাই খাবার টেবিলেও বসে পড়েছে।অভ্র এলো সবার পরে।আজ শুক্রবার।তাই সবাই দুপুরের খাবারের সময় বাড়িতেই আছেন।আজকে সর্ষে ইলিশ রান্নার পেছনে আমার একটা সুক্ষ্ম কারণ আছে।অভ্র।উনার সর্ষে ইলিশ পছন্দ।এই সুবাদে যদি একটু খুশি হন।সেদিনের পর থেকে অভ্র আমার উপর একটু রেগে আছে।তিনি সেটা বাইরে প্রকাশ করেন নি।তবে আমি বুঝতে পারি।কথা বার্তা কম বলেন।অবশ্য সেটা সবার সাথেই।তবুও রাগটা যে আমার সাথেই আমি তা বুঝতে পেরেছি।আমরা সবাই একসাথেই খেতে বসলাম।অভ্র ইলিশ মাছের একটুকরো নিজের প্লেটে নিতেই মা বললেন,
‘আজকে মাছটা কিন্তু অরু রেঁধেছে।’

নাহিদ ভাই বলে উঠলেন,’তাই নাকি!বেশ ভালো হয়েছে অরু।’

আমি নাহিদ ভাইয়ার কথার প্রতিউত্তরে মৃদু হাসলাম।মা বললেন,
‘অভ্র,খেতে ভালো হয়েছে না?’

অভ্র প্লেটের দিকে মুখ রেখেই ছোট্ট করে বললো,
‘হুম।’
আমার মনটা ঈষৎ খারাপ হয়ে গেলো।দু দিন পরই আমরা বান্দরবান যাবো।এভাবে তার মুখ গোমড়া ভাব নিয়ে আমরা কি ঘুরবো!কোথায় ঘুরবো!এভাবে কি ভালো লাগে নাকি!
ভেবেছিলাম আজ হয়তো তিনি আর আমাকে প্রতিবারের মতো মাছের কাটা বেঁছে দিবেন না।তাই মাথা নিচু করে আমি শুধু ঝোল দিয়েই ভাত খাচ্ছিলাম।হঠাৎ আমার সাদা প্লেটে তার হাতের আঙুল আর তার ডগায় মুষ্টিমেয় বেঁছে রাখা মাছের ছোটো ছোটো স্তুপ দেখতে লাগলাম।তিনি বারবার তার প্লেট থেকে আমার প্লেটে দিয়ে যাচ্ছেন।আমি তার দিকে তাকালাম।ইশ!মুখটা এখনো কেমন গোমড়া বানিয়ে রেখেছেন।আমার দিকে না তাকিয়েই প্লেটে মাছ তুলে দিচ্ছেন।কথা বলা বন্ধ রাখবেন কিম্তু খেয়াল রাখা না।ইচ্ছে করছে তাকে একটু কাতুকুতু দেই।কাতুকুতু দিলেও কি হাসবেন না।নাকি তখনো মুখটা এমন গোমড়ামুখো বানিয়ে রাখবেন।আমি মনে মনে হেঁসে তার বেঁছে দেওয়া মাছ দিয়ে ভাত খেতে লাগলাম।খেতে খেতে হঠাৎ মনে হলো,আল্লাহ কোনো জিনিসই বিনা কারণে দেন না।সেটা যদি অক্ষমতা হয় তাও।এই যে যেমন আমি ইলিশ মাছের কাটা বাছতে পারবো না বলেই হয়তো আমাকে এমন যত্নশীল স্বামী দিয়েছেন।

৩৭.
মায়ের নাম্বারটা এখনও বন্ধ দেখে আমি একটু চিন্তিত বোধ করলাম।কাল সকাল থেকে বন্ধ পাচ্ছি।বাবারটাও একই অবস্থা।হঠাৎ দুজনেরই ফোন বন্ধ হয়ে গেলো কেনো।চিন্তা হচ্ছে খুব।ইরা আপুকে ফোন দিয়েও জেনে নেওয়া যায় কিন্তু সমস্যা হলো সেদিনের পর থেকে আমি আপুর সাথে আর কোনো ধরনের যোগাযোগ করি নি।আপু অসংখ্যবার ফোন দিয়ে গেছে আমি রিসিভ করিনি।এমনকি এ বাড়ির ল্যান্ড লাইনেও যখন ফোন করলো তখনও চম্পাকে দিয়ে মিথ্যে বলিয়েছি।কি করবো বুঝতে পারছি না।অভ্রকে কি বলবো?উনি দুপুরে খাবার পর ঘুমিয়েছেন।শুক্রবারই তো শুধু সময় পান একটু বিশ্রাম নেওয়ার।এখন ডিস্টার্ব করাটা কি ঠিক হবে!তাছড়াও অভ্র আমাকে ও বাড়ি একা একা যেতে মানা করেছেন।এখন আমি যেহেতু যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি তখন তিনি জানলে আবার যদি না করেন।হাতে একটি পার্স নিয়ে আমি একা একাই চলে এলাম।অভ্র যাতে না জানতে পারে তাই মফিজ ভাইকেও নিয়ে আসি নি।রিকশা করে এসে পড়েছি।বাড়িটা কেমন খালি খালি লাগলো।আমি দরজার কাছে আসতেই টুম্পাও দরজা খুলে বেড়িয়ে এলো।আমাকে দেখে হেঁসে বলল,

‘আফা আপনে!খালু,আর খালাম্মায় তো একটু আগেই চইল্লা গেলো?’
‘কোথায় গেছে?’
‘এই আপনেগো কোন আত্মীয়ের জানি বাচ্চা হইছে দেখতে গেছে।’
‘ও…বাসার সবার ফোন কালকে থেকে বন্ধ কাউকে ফোন দিয়ে পাই না।’
‘পাইবেন কেমনে?মহল্লায় কারেন্টের একটা খাম্বা পইড়া গেছে।এদিকের কারোর বাসায় কারেন্ট নাই কালকে থিকা।মনে হয় মোবাইলের চার্জ শেষ হইয়া গেছে।’
‘ও।তুই কি কোথাও বের হচ্ছিস।কাপড়ের থলি নিয়ে কোথায় যাস?’
‘আমগো গেরামের বাইত্তে।বহুত দিন ধইরা যাওন হয় না।এইবার যাইয়া কয়দিন থাইক্কা আহুম।হক্কাল বেলায় যাওনের কথা আছিলো।কিন্তু এই কাজ ঐ কাজ সারতে সারতে এতো বেলা হইয়া গেলো।আফা আপনে থাকেন আমি যাই।বড় আফায় ভিতরে আছে।যান।’

টুম্পা চলে যাওয়ার পর আমি একবার ঘরের ভেতরের দিকে তাকিয়ে চলে যাওয়ার জন্য পিছনে ঘুরে পা বাড়ালাম।তখনই আপু ভেতর থেকে ডেকে উঠলো,’অরু।’

আমি একবার থেমে তার দিকে তাকিয়ে শক্ত মুখে আবারো চলে যাওয়ার জন্য উদ্যত হলাম।কিন্তু আপু আমার সামনে এসে পথরোধ করে দাঁড়িয়ে বললো,
‘আমি ডাকছি যে কানে যায় না!’

আপুর কন্ঠে চাপা ক্ষোভ প্রকাশ পেলো।আমি কোনো ধরণের কথা না বাড়িয়ে বললাম,
‘আমাকে এখন ও বাড়ি যেতে হবে।যেতে দাও।’

‘বারবার ও বাড়ি ও বাড়ি করছিস কেনো?মনে হচ্ছে ওটা তোর নিজের বাড়ি।তোর আসল সংসার!তোকে আমি কি বলেছিলাম?ঐ বাড়ি থেকে চলে আসতে বলেছিলাম না?তা না করে আমাকে এভোয়েড করে হানিমুনে যেতে রেডি হয়েছিস।অভ্র’র জীবন থেকে সরে যেতে বলছি শুনছিস না কেনো?সবকিছু নষ্ট করতে উঠেপড়ে লেগেছিস!’

‘তুমি ঠিকই বলেছো আপু ওটা আমার নিজের বাড়ি।আমার শ্বশুরবাড়ি।যা হয়েছে তা আমার জন্য না তোমার জন্য হয়েছে।তোমার নিজের ভুলের জন্যই আজ তুমি অভ্রকে পাও নি।আমি সবসময়ই তোমার দোষটা ঢেঁকে এসেছি।কিন্তু এবার পারবো না।নিজের দোষটা স্বীকার করতে শেখো।আর আমি অভ্র’র জীবন থেকে সরে যাবো কেনো?অভ্র আমার স্বামী।আমি তাকে ভালোবাসি।তার জীবন থেকে আমাকে সরে যেতে বলার তোমার কোনো অধিকার নেই।’

এতটুকু বলতেই আপু ঠাস করে আমার গালে একটি চড় বসিয়ে দিলো।আমার চোখে পানি চলে এলো।আমি গালে হাত দিয়ে তার দিকে তাকাতেই
শক্ত হাতে আমার কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল,
‘খুব বেশি বেড়ে গেছিস না!খুব বেশি।’
আমি ভয় পেয়ে গেলাম।আপুকে দেখতে অন্যরকম লাগছে।আপু বলতে লাগলো,

‘লজ্জা করে না নিজের বড় বোনের বয়ফ্রেন্ডকে নিয়ে এসব বলতে।বাঁধেও না একটু!তার সাথে হানিমুন করতে যাচ্ছিস।বড় বোনের ভালোবাসার মানুষটিকে জোর করে স্বামী বানিয়ে রাখছিস।অভ্র তোকে ভালোবাসে?তোদের মধ্যে সব স্বাভাবিক আছে?ছোটো বোন হয়ে বড় বোনের ভালোবাসার শত্রু হয়ে বসে আছিস!এতো বেহায়া হলি কবে থেকে অরু,বড় বোনের ভালোবাসার দিকে নজর দিস।ছি!এতো ভালো জানতাম তোকে আর আমার সাথেই এমন করছিস।অনেক বেশি সাহস হয়ে গেছে তোর।আজকে তোর সাহস আমি বের করছি!’

আমি কাঁদতে লাগলাম।কথাগুলো বলে আপু আমাকে পুনরায় থাপ্পড় মারার জন্য হাত উঠাতেই পেছন থেকে একটা শক্ত হাত আমাকে টেনে নিজে আমার আর আপুর মাঝখানে চলে এলো।আর বলল,
‘দ্বিতীয় বার এ দুঃসাহস ভুলেও করো না ইরা।ফলাফল খুব খারাপ হবে।’

আমি প্রচন্ড চমকে উঠলাম অভ্রকে দেখে।ইরা আপু হকচকিয়ে গেলো।অভ্র বলল,
‘কি বলছিলে তুমি তোমার ভালোবাসার মানুষ!ভালোবেসে থাকলে বিয়ের দিন তাকে ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলে কেনো?ভালোবাসা শব্দটা তোমার মুখে মানায় না।এতো কিছু করে ফেলার পরও তোমার কোনো রিয়ালাইজেশনই নেই।এতোটা বেহায়া তুমি!মানুষ জীবনে ধাক্কা খেলে ঠিক হয়ে যায়।তুমি তো দেখছি আরো বিগড়ে গেছো।লজ্জা অরুর না,লজ্জা তোমার পাওয়া উচিত ছোটো বোনের স্বামীর দিকে নজর দেওয়ায়।আর বারবার সম্পর্ক স্বাভাবিক,স্বাভাবিক নিয়ে কি শুরু করেছো।ছোটো বোনকে এসব নিয়ে কথা বলতে তোমার বাঁধে না।তোমাকে দেখে তো মনে হচ্ছে পারলে ছোটো বোন আর তার হাজবেন্ড এর পারসোনাল বেডরুমেই ঢুকে যাবে।যখন তুমি পালিয়ে গিয়েছিলে তোমার প্রতি প্রচুর ক্ষোভ ছিলো ইরা।মনে হচ্ছিলো তোমাকে পেলে আমি খুনই করে ফেলবো।কিন্তু পরে আমি কিছু বললাম না কেনো জানো?কারণ আমার মনে হয়েছিলো তুমি পালিয়ে গিয়ে ভালোই করেছো নাহলে হয়তো আমি অরুর মতো এমন একটি মেয়েকে নিজের স্ত্রী হিসেবে পেতাম না।একটা ঠগ,জোচ্চর,লোভী মেয়ের সাথে আমাকে সারা জীবন কাটাতে হতো।তোমার পালিয়ে যাওয়াটা আমার কাছে এখন ব্লেসিং লাগে।আর এসব অরুর জন্য।নেক্সট টাইম অরুকে কিছু বলার আগে দশবার ভাববে কারণ এখন আর সে শুধু তোমার ছোটো বোন না,মি. অভ্র আহমেদের স্ত্রী।কিছু বললে বা করলে আমি তোমাকে ছেড়ে দেবো না।’

আপু ‘অভ্র’ বলে কিছু বলতে চাইলো কিন্তু পারলো না।অভ্র আপুকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই বলতে থাকলো,
‘আর কিছু বললাম না।আপনি আমার স্ত্রীর বড় বোন,সম্পর্কে আমার বড়।বড়দের তো উল্টো পাল্টা কিছু বলা যায় না।তাই না আপা?ভালো থাকবেন।আর আমাদের সুখী জীবনের দোয়া করবেন।আপা!

শেষে আপাটা অভ্র যেনো একটু টেনে ভেংগিয়ে বলল।ইরা আপুর চেহারা অপমানে লাল হয়ে আছে।দাঁতে দাঁত চেঁপে সে রাগে গিজগিজ করছে।অভ্র আমাকে হাত ধরে টেনে নিয়ে চলে এলো।
গাড়িতে আমি শুধু কাঁদতে লাগলাম।কান্না থামছেই না।যাকে বলে হেঁচকি তুলে কান্না।অভ্র’র মধ্যে খুব অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে।তিনি প্রচুর রেগেও আছেন।বারবার গাড়ির হর্ন বাজাচ্ছে।মাথা এদিক ওদিক দুলাচ্ছে।একসময় দাঁতে দাঁত চেঁপে বলল,
‘স্টপ ক্রাইয়িং অরু।প্লিজ স্টপ!আর যাই করো না কেনো এই চোখের পানি ফেলানোটা বন্ধ করো।আমার সহ্য হচ্ছে না।তোমাকে মানা করেছিলাম না ও বাড়ি একা একা যেতে।কেনো গিয়েছিলে?এক লাইন আগ বাড়িয়ে বেশি না বুঝলে হয় না,না?’

আমি কাঁদতে কাঁদতে বললাম,
‘আপু ঠিকই বলেছে।সত্যিই সব আমার দোষ।বেহায়ার মতো আপনার জীবনে পড়ে আছি।আমার দায়িত্ব আপনার ঘাড়ে তুলে দিয়েছি।সত্যিই তো আপনি কি আমাকে ভালোবাসেন?আপনার জন্য আমি তো শুধু দায়িত্বই।একটা দায়িত্ব ছাড়া তো ছাড়া আর কিছু না।কতদিন আর এভাবে থাকবেন।আপনারও তো জীবন আছে।আমাকে যেতে দিন দেখবেন সব ঠিক হয়ে যাবে।আপনাকে আর দায়িত্বে নিয়ে পরে থাকতে…..

আর বলতে পারলাম না।অভ্র হঠাৎ জোরে ব্রেক কষে গাড়ি থামিয়ে দিলো।আর আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই উনি নেমে আমার হাত ধরে গাড়ি থেকে নামিয়ে টেনে রাস্তার পাশের জঙ্গলের ধারে নিয়ে গেলেন।আমার কাঁধ শক্ত করে টেনে ধরে রাগে গজগজ করে বললেন,

‘দায়িত্ব ভালোবাসা!দায়িত্ব ভালোবাসা!
কি রাখা আছে এই ভালোবাসা শব্দে?হ্যাঁ!
দায়িত্ব দায়িত্ব করে মাথা ধরিয়ে দিয়েছে।কোথাও যেতে পারবে না তুমি,কোথথাও না!বুঝেছো?চাইলেও আর না চাইলেও।তোমাকে আমার কাছেই থাকতে হবে।আর এটা তোমার স্টুপিড দায়িত্বের জন্য বলছি না।আমার জন্য বলছি।শুধু আমার জন্য।আমাকে বাঁচতে হলে তোমাকে লাগবে,আমাকে হাসতে হলে তোমাকে লাগবে।আমার সবটুকুর জন্যই তোমাকে আমার লাগবে।তোমাকে লাগবেই।তোমাকে ছাড়া আমার চলবে না।আর অন্য বাকি সব আমার জীবনে থাকুক বা না থাকুক।স্বার্থপর শোনাচ্ছে না?হ্যাঁ আমি স্বার্থপর।জীবনে এই প্রথমবার শুধু তোমার জন্য আমি স্বার্থপর হয়ে গেছি।তুমি কোথাও যেতে পারবে না।আমি যেতে দিবো না।শুনেছো?আমি যেতে দিবো না।’

আমি থমকে রইলাম উনার কথায়।এই অভ্রকে আমি চিনি না।এই অভ্রকে আমি আগে কখনো দেখি নি।এ এক অন্য অভ্র।
উনি আমাকে ছেড়ে এক দু কদম পিছিয়ে গিয়ে পেছনে ঘুরে দু হাত দিয়ে শক্ত করে মাথা খামছে ধরে কিছুক্ষণ থমকে থেকে আবার আমার সামনে এসে দাঁড়ালেন।তার চোখে পানি এসে পড়েছে।আমার গালে আলতো করে দু হাত রেখে ভেজা গলায় বললেন,
‘তুমি বোঝো না কেনো অরু,তোমাকে ছাড়া এখন আমি আর থাকতে পারি না।একটু চোখের আড়াল হলেই কেমন অস্থির অস্থির লাগে।শ্বাসটা যেনো গলার কাছে এসে আটকে থাকে।আমার খুব কষ্ট হয়।আরো একবার ভালোবাসা হারানোর কষ্ট আমার মন পেতে চায় না।এই মনটা খুব কষ্ট পেয়েছিল অরু,খুব।অতঃপর তুমি এলে আমার জীবনে।তারপর সবকিছু একটা ম্যাজিকের মতো কেমন যেনো ঠিক হয়ে গেলো।আমার জীবন,আমার ধরণ,সবকিছু কেমন যেনো পুরো অন্যরকম হয়ে গেলো।ভালোবাসার সংজ্ঞা কি সে অভ্র আর জানতে চায় না।সে শুধু এতটুকু জানে তার তোমাকে চাই।শুধু তোমাকে।আমি জানি খুব স্বার্থপর লাগছে আমাকে।কিন্তু আমি কি করবো অরু?আমি এমনই হয়ে গেছি।পারবে না আমার সাথে বাকি জীবনটা একটু কষ্ট করে মানিয়ে নিতে।প্লিজ অরু,আমাকে ছেড়ে যেও না।অন্তত আমি যতদিন বেঁচে আছি ততদিন না।আমি মরে গেলে না হয় অন্য কোথাও চলে যেও।পারবে না অরু?

আমি শক্ত করে তাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলাম আর ভাঙা ভাঙা গলায় বললাম,
‘আর কক্ষনো এই মরে যাওয়া কথাটা বলবেন না।কক্ষনো…’আর বলতে পারলাম না।কান্নায় গলা আটকে এলো।অভ্রও আমাকে আঁকড়ে ধরে কাঁদতে লাগলেন।চোখের পানিতে লেপ্টে থাকা আমার সামনের চুলগুলো দু হাত দিয়ে সরিয়ে মাথা নাড়িয়ে কাঁদতে মানা করলেন।আঙ্গুলের ডগা দিয়ে আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে কপালে তার ঠোঁটের স্পর্শ দিয়ে একটি ভালোবাসার পরশ এঁকে দিলেন।তারপর আমার হাত শক্ত করে ধরে গাড়িতে বসিয়ে দিলেন।বাকি রাস্তা তিনি আর আমার হাত ছড়লেন না।এমনকি গাড়ির গ্রেয়ার চাপার সময়ও না।এক হাত দিয়ে ড্রাইভ করে গেলেন।তবুও ছাড়লেন না।অনেক প্রতিক্ষা,অনেক আবছায়ার পর এক হাত খুঁজে পেয়েছে আরেক হাতকে।এই হাত কি আর সহজে ছুটবে!

চলবে,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে