অতঃপর_তুমি পর্ব-০৬

0
5101

#অতঃপর_তুমি
#পর্ব-৬
Writer: ইশরাত জাহান সুপ্তি

অভ্র রিকশাওয়ালাকে তাদের বাড়ির ঠিকানা বলে দিলেও আমি সরাসরি বাড়ি গেলাম না।রিকশা নিয়ে কিছুক্ষণ নিউমার্কেটের অলি গলিতে ঘুড়ে বেড়াতে লাগলাম আর ঢাকার মানুষদের বিচিত্র জীবনধারা অবজার্ভ করতে লাগলাম।রাস্তার পাশে একজন খোঁড়া লোক পা টেনেটুনে ভিক্ষা করছে।একটি কোর্ট প্যান্ট পড়া ভদ্রলোকের পিছন পিছন ভিক্ষা চাইতে চাইতে তিনি রাস্তার খানিকটা মাঝখানে চলে এলেন।ঢাকার ব্যস্ত রাস্তার এপাশ ওপাশ থেকে ননস্টপ গাড়ি আসছে যাচ্ছে।হঠাৎ একটি বড় মালবাহী ট্রাক খোঁড়া ভিক্ষুকটির দিকে তেড়ে আসতে লাগলো।আমার গলা শুকিয়ে এলো,মনে হচ্ছে এক্ষুণি বড়সর কোনো অ্যাক্সিডেন্ট হতে যাচ্ছে।কিন্তু আমাকে চরম চমকে দিয়ে খোঁড়া লোকটির ঢিলা প্যান্টের ভেতর থেকে একটি পা বেড়িয়ে এসে ছুটে রাস্তার ফুটপাতের উপর উঠে গেলো।
খোঁড়া লোকটি এখন কোমড়ে হাত দিয়ে সোজা টানটান হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।সেই কোর্ট প্যান্ট পড়া ভদ্রলোকটির যাওয়ার পথের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে কি যেনো বলে পায়ের কাছে একদলা থুতু ফেলল।সম্ভবত সে সেই কোর্ট প্যান্ট পড়া ভদ্রলোকটিকে গালি দিচ্ছে।ঢাকার রাস্তায় এমন বিচিত্র ঘটনা অহরহ দেখতে পাওয়া যায়।

আমার মনটা আজ উদাস হয়ে আছে।মনটাকে অতি দ্রুত ঠিক করা প্রয়োজন।মন ঠিক করার অনেক ট্রিক আমি জানি।তার মধ্যে অন্যতম হলো কোনো মজার জিনিস ভাবা।যেটা ভাবতেই অজান্তে মুখ চেপে হাসি বের হবে।রোদের তীব্রতা আজ প্রখর।এর আরেক নাম ছাতি ফাটা রোদ।একে ছাতি ফাটা রোদ কেন বলে কে জানে।আমার এক ছোটো মামা আছে তিনি একবার ঠিক করলেন তিনি হিমু হবেন।হিমু হওয়ার প্রথম পদক্ষেপ হিসিবে তিনি অর্ডার দিয়ে একটা পকেট বিহীন হলুদ পান্জাবী বানিয়ে আনলেন এরপর পাদুকা জোড়া ত্যাগ করে ঢাকাশহরের রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে লাগলেন।প্রথম দিন ঘুরে এসেই ঘরে ফিরে ঠান্ডা পানিতে পা ডুবিয়ে বললেন,
‘উফ!এভাবে কি ঘোরাঘুরি করা যায়।বাইরে ছাতি ফাটা রোদ।পায়ে ফোসকা পড়ে যায় এমন অবস্থা।বুঝলি অরু,অনেক বড় ভুল হয়ে গেছে।হুমায়ুন আহমেদ বেঁচে থাকতে থাকতে তাকে রিকুয়েস্ট করা উচিত ছিলো হিমুর পায়ে একজোড়া জুতা দেওয়ার জন্য।শুধু মাত্র এক জোড়া জুতার জন্য আমি হিমু হতে পারলাম না।মানা যায় বল!এটা কি মানা যায়!’

মামা এর আগে আরও অনেক উপন্যাসের চরিত্র ধারণ করার চেষ্টা করেছেন।কোনোটাতেই তেমন সফল হতে পারেননি।একবার বিদেশ থেকে ফিরে এলেন শার্লক হোমসের বেশে।মাথায় বড় ক্যাপ,লং কোর্ট,মুখে গাম্ভীর্য্যতা।যেকোনো জিনিসেই রহস্যের গন্ধ খুঁজে পান।
মার একবার একটি তামার ছোট্ট গ্লাস হারিয়ে গেলো।মামা তাতে গম্ভীর হয়ে বলল,
‘গ্লাসটা তো হুট করে উধাও হতে পারে না।নিশ্চয়ই এর পেছনে কোনো রহস্য আছে।’
মা বলল,’বাদ দে তো।এখন সামান্য একটা গ্লাসের জন্য কি পুলিশের কাছে যাবো নাকি।’
মামা চোখ বিস্মিত করে বলল,
‘আপা,তুমি এটাকে সামান্য বলছো!এমনও তো হতে পারে গ্লাসটাকে কেউ চুরি করেছে অথবা তোমাদের ভয় দেখিয়ে থ্রেট দেওয়ার চেষ্টা করছে।এটাই শুরু এরপর দেখবে আরো বড় বড় জিনিস হারাবে।আমি থাকতে তা কখনোই হতে দেবো না।আমি এখনই বের করছি গ্লাসটা হারিয়ে যাওয়ার রহস্য।এর পেছনে কার হাত আছে।’

গ্লাস হারিয়ে যাওয়া রহস্যের পেছনে হাত ছিলো একটি বেড়ালের।মামা যদি রান্নাঘরে ফ্রিজের পেছনের চিপায় একটু উঁকি দিতো তবেই পেয়ে যেতো।কিন্তু মামা সহজ রাস্তায় না গিয়ে একটি ম্যাগনিফাই গ্লাস চোখের সামনে ধরে তদন্ত শুরু করে দিলো বাড়ির পেছনের জঙ্গলেট ঝাড় ঝোপে,পাইপের চিপা চাপায়।আর ফল স্বরূপ বাড়ির পেছনে পড়ে থাকা ভাঙা কাঁচে পা কেটে নিয়ে এলো।পা কেটে যাওয়ায় মামা বাচ্চাদের মতো কাঁদতে লাগলো।বাবাকে বলল,
‘দুলাভাই,আপনিই বলেন বাড়ির পেছনে কাঁচ ভাঙা আসলো কিভাবে।আমার মনে হয় কেউ ষড়যন্ত্র করেছে,ঘোর ষড়যন্ত্র।’
বাবা বিরক্তমুখে বললেন,
‘হ্যাঁ!বাড়ির পেছনে কাঁচ ভাঙা থাকবে কেনো,কাঁচ ভাঙা তো থাকবে ঘরের মধ্যে ডাইনিং টেবিলর উপর।তাই না!গর্দভ।’

রিকশা ছেড়ে আমি রাস্তায় নেমে পড়লাম।একটি মার্কেটের মধ্যে ঢুকে পড়ে দোকানগুলোতে ঘুরে বেড়াতে লাগলাম।কিছুই কিনলাম না।তারপর ফুটপাতের একটি দোকান থেকে কোনো কারণ ছাড়াই আশি টাকা দিয়ে এক জোড়া বেগুনি রঙের স্যান্ডেল কিনে ফেললাম।পায়ের চামড়া জুতাটা সেখানে ফেলে এসে স্যান্ডেল পড়ে হাঁটতে লাগলাম।
দুপুর সাড়ে বারোটায় বাড়িতে পৌঁছালাম।অভ্রদের বাড়ি না,আমাদের বাড়ি।কাজের মেয়ে টুম্পা দরজা খুলেই একগাল হেঁসে বলল,
‘আফা,আপনে?’
‘কেমন আছিস টুম্পা?’
‘মুই ভালা।আপনে কেমন আছেন?এমন শুকায় গেছেন ক্যাঁ?’
‘আমি ভালোই আছি।শোন,আমি গিয়ে এখন ঘুমাবো।বিকেলের আগে যেন আমাকে না ডাকা হয়।’

বিছানায় ক্লান্ত শরীরটা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললাম।তারপর যখন চোখ খুললো তখন দেখলাম আমার পাশে মা বসে উদ্বিগ্ন মুখে তাকিয়ে আছে।আমি মিষ্টি হেঁসে বললাম,
‘কেমন আছো মা?’
মা ভীত স্বরে বলল,
‘তোর কি হয়েছে?এমন হুট করে কিছু না জানিয়ে চলে এলি তারউপর আবার বলে দিয়েছিস তোকে যেনো না ডাকা হয়।দুপুরের খাবাটাও তো খেলি না!’
‘কেনো মা,এখন কি আমি নিজের বাড়িতে না জানিয়ে আসতেও পারবো না?’
‘আমি কি সেটা বলেছি নাকি!তুই আসবি না তো কে আসবে!চল উঠ কিছু খেয়ে নিবি।’
‘এখন ইচ্ছে করছে না।পরে খেয়ে নেবো।
‘অরু,কিছু কি হয়েছে?’
‘কি আবার হবে মা?তুমি না বেশি টেনশন করো।’
‘তুই আবার উঠে কোথায় যাওয়ার জন্য ঠিক হচ্ছিস?’
‘বিকেল হয়ে গেলো,ঐ বাড়িতে যেতে হবে না।’
‘এখনই চলে যাবি।কিছু খেয়ে যা,আমি তোর বাবাকে গাড়ি ঠিক করতে বলে দিবো।’
‘না থাক আমি যেতে পারবো।আচ্ছা মা ইরা আপু তোমাদের ফোন করেছিলো?’
‘ঐ মেয়ের কথা মুখে আনবি না।কোন পাপের শাস্তির জন্য যে এমন মেয়ের মা হলাম।ও’র জন্যই তো সব হলো।তোকে এভাবে বিয়ে দিতে হলো।পুরো সংসারটাকেই শেষ করে দিলো।’
মা আঁচলে চোখের পানি মুছলেন।আমি আর কিছু বললাম না।মা আমার কাঁধে হাত রেখে বলল,
‘তুই সত্যিই ঠিক আছিস তো অরু?কোনো অসুবিধা হলে আমায় বল,আমি তোর বাবার সাথে কথা বলবো।তোকে আর ঐ বাড়িতে যেতে হবে না।’
আমি মায়ের হাত মুঠোয় নিয়ে বললাম,
‘মা,আমার কিচ্ছু হয়নি।তোমাকে এসব কিছুই করতে হবে না।’
মা হঠাৎ গম্ভীর হয়ে বলল,
‘তুই কি অভ্রকে ভালোবেসে ফেলেছিস?’
আমি বললাম,
‘প্রশ্নটা এখানে ভালোবাসার জন্য নয় মা।আমি জানি না আমি তাকে ভালোবাসি কিনা।শুধু এতটুকু জানি যেই ক্ষত আমার বোন তার মধ্যে সৃষ্টি করে গেছে সেই ক্ষত আমি ভরবো।’

অভ্রদের বাড়ি পৌঁছাতে প্রায় বিকেল শেষ হয়ে এলো।রুমে প্রবেশ করে দেখলাম অভ্র মাথায় হাত দিয়ে বিছানায় শুয়ে আছে।আমার উপস্থিতি টের পেয়েও কিছু বললো না।একটা মানুষের দুপুরে পৌছানার কথা ছিলো কিন্তু সে এসেছে বিকেলে তবুও অভ্র’র এই নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই।আমাকে কোনো প্রশ্ন পর্যন্ত করলো না।আমি যদি আজ আর নাই ফিরতাম তবুও হয়তো এবাড়ির কারো কোনো চিন্তা হতো না।
একটুপর অভ্র উঠে দাঁড়ালো।তার চোখগুলো লাল হয়ে আছে।আমাকে পাশ কাটিয়ে উনি বাইরে চলে গেলেন।আমি সোফায় বসে পড়লাম।যতটুকু মন খারাপ ছিলো এখন যেনো তা আরো দ্বিগুণ হয়ে গেলো।ব্যাগ খুলে একটি ছবির ফ্রেম বের করে তাকিয়ে রইলাম।ছবিটা ঐবাড়ি থেকে নিয়ে এসেছি।আমার,বাবা,মা আর দাদীর একটি ছবি।দাদীর শেষ ছবি ছিলো এটা।এর কিছুদিন পরই দাদী মারা যায়।ছবিটি দেখলে মনেই হয় না দাদী আর আমাদের মধ্যে নেই।আমার খুব প্রিয় একটি ছবি।ছবিটা তুলে দিয়েছিলো ইরা আপু।

ছবির ফ্রেমটা সোফার উপর রেখে আমি নিচে গেলাম।চম্পা আমায় দেখে হন্তদন্ত হয়ে এসে বললো,
‘আফামনি,আপনে আজ হক্কাল তোন কই ছিলেন?জানেন আইজ্জও কি হইছে?’
‘কি?’
‘আপনে আহনের একটু আগে অভরো ভাইজানের কিছু বন্ধু আইছিলো বিদেশ তোন।তারা তো জানেই না ভাইজানের আপনোর লাগে বিয়া হইছে।তারা আইয়াই ভাইজানরে আপনের বোনরে লইয়া দুষ্টামি করতে লাগলো।ইরা ভাবী,ইরা ভাবী কইয়া ডাক পারতাছিলো।আরো কতো হেগো কলেজের পুরান দিনের কথা উডায়তাছিলো।হেরপর হেরা যহন সব জানতে পারে হেয়ার পর সবাই অভরো ভাইজানরে স্বান্তনা মান্তনা দিয়া চইলা গেছে।ভাইজানে মেলা কষ্ট পাইছে।’

চম্পার কথায় বুঝতে পারলাম তার চোখ কেনো লাল হয়ে ছিলো।নিশ্চয়ই ইরা আপুর কথা মনে করে কাঁদছিলো।ভাবতে ভাবতেই বেখেয়ালী হয়ে রুমে প্রবেশ করলাম।কিন্তু রুমে প্রবেশ করতেই যা দেখলাম তাতে আমি পুরো স্তব্ধ হয়ে গেলাম।অভ্র আমার সেই ছবিটা ফ্রেম থেকে বের করে ছিঁড়ে কুটি কুটি করে ফেলছে।দাদীর শেষ স্মৃতি ছিলো এটা সেটাও সে এভাবে নষ্ট করে ফেললো!প্রচন্ড রাগ উঠলো আমার।
রাগে,কষ্টে চোখ থেকে পানি বের হতে লাগলো।দাঁতে দাঁত চেপে তাকে হাত দিয়ে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বললাম,
‘আমার ছবি কেনো ছিঁড়েছেন?’
উনি আমার হাত একটা ঝারি দিয়ে সরিয়ে বললো,
‘ইরার কোনো জিনিস আমি আমার আশেপাশে থাকতে দিবো না।’

ঐ ছবিটা তোলা অত্যাধিক সুন্দর হওয়ায় আপু ছবির নিচে টাইপো করে লিখে দিয়েছিলো ‘ফটো ক্রেডিট বাই ইরা।’আর এতটুকুই এই ছবির জন্য কাল হলো।

‘ইরার কোনো জিনিস আপনি আপনার আশেপাশে রাখতে চান না অথচ তার বোনটাকে কেনো নিজের সাথে বেঁধে রেখেছেন,নিজের বাড়িতে নিয়ে এসেছেন?বলুন।এটা কিভাবে সহ্য হচ্ছে?’

তিনি জবাব না দিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিলেন।আমি তার সামনে গিয়ে আবার বললাম,
‘কি হলো বলুন।কথা বলছেন না কেনো?’

অভ্র রাগে কটমট করে তাকিয়ে বলল,
‘শাস্তি দিতে,শাস্তি।আমি একা কেনো কষ্ট পাবো,ওঁকেও পেতে হবে।’

‘পাচ্ছে সে কষ্ট?সে অস্ট্রেলিয়া থেকে জানে এখানে কি হচ্ছে?আপনার তাকে কষ্ট দেওয়ার তাহলে সেখানে আমাকে কষ্ট দিচ্ছেন কেনো!আমার জীবন কেনো নষ্ট করলেন?’

‘কারণ তুমি ইরার বোন।ও’র দোষের প্রভাব তোমাকে তো ভুগতেই হবে।’

‘কেনো আমি কেনো ভুগবো?আমি আপনাদের সম্পর্কে কি কখনো ছিলাম।নাকি আপনাদের কমিটমেন্টের আমিও একটা অংশ।আমি বলেছিলাম আপনাকে আপুর সাথে প্রেম করতে?
আপনাদের সম্পর্কের শুরুতে না শেষে কোনো কিছুর মধ্যেই আমি কখনো ছিলাম না।তাহলে এখন কেনো একজনের অন্যায়ে আপনি আমাকে এর মধ্যে টেনে আনলেন।যা হয়েছে তাতে আমার কি দোষ?’

বলতে বলতে আমি কেঁদে ফেললাম।

‘আমাকে এসব ইমোশনাল কথা বুঝিয়ে লাভ নেই।এক বোনের ট্রাপে পড়েছি বলে ভেবো না আরেক বোনের ট্রাপেও পড়বো।’

আমি শক্ত হয়ে হাঁত দিয়ে চোখের পানি মুছে বললাম,
‘আমাকেই এতো কষ্ট দিয়ে আবার আমাকেই বলছেন আমি আপনাকে ট্রাপে ফেলার চেষ্টা করছি।ইরা আপু আপনার সাথে অন্যায় করেছে কিন্তু আপনি এখন আমার সাথে যা করছেন তাকি ঠিক?আপনি অন্যায় করছেন না?চারবছরে নিজে কেনো বুঝতে পারলেন না আপনি যেই মানুষটির সাথে সম্পর্কে আছেন সেই মানুষটি কেমন,আপনাকে সে সত্যি ভালোবাসে কি না!
এখন আমায় দোষ দিচ্ছেন।কি ভালোবেসেছেন যে মানুষটাকেই বুঝতে পারলেন না!’

অামার কথায় অভ্র প্রচন্ড রাগে একটি হুংকার দিয়ে টি টেবিলে রাখা পানি ভর্তি জগটা ফ্লোরে ছুঁড়ে ভেঙে ফেললেন।আমাকে শক্ত করে ধরে চেঁচিয়ে বললেন,’চুপ!একদম চুপ।আমার ভালোবাসা নিয়ে যদি আর একটা কথা বলেছো
তাহলে তোমার জীবন আমি আরো নরক বানিয়ে দিবো।আমার যন্ত্রণায় তোমাকে পুড়াবো।’

আমি অশ্রু ছেঁড়ে দিয়ে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললাম,
‘আপনি একটা নিষ্ঠুর।ইরা আপুর আপনাকে এভাবে ধোঁকা দেওয়ায় আপনার জন্য আমার খুব কষ্ট লেগেছিল।ভেবেছিলাম একটা ভালো মানুষের সাথে খুব খারাপ একটা অন্যায় হয়েছে কিন্তু এখন আর সেই কষ্টটা লাগছে না।’

প্রতিউত্তরে উনি কিছু বললেন না।আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফ্লোরে ফেলে দিয়ে গটগট করে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলেন।তার ধাক্কায় মেঝেতে পড়ে থাকা ভাঙা কাঁচের টুকরোর উপর পড়ে গেলাম।পায়ে আর হাতে কাঁচের টুকরো গেঁথে গেলো।আমি নির্বিকার ভঙ্গিতে হাত থেকে কাঁচের টুকরোটা বের করলাম।একটু উহ! অব্দিও করলাম না।নিজের প্রতি নিজেই প্রচন্ড অবাক হয়ে গেলাম।ছোটো বেলায় একটু ব্যাথা লাগলে পুরো বাড়ি মাথায় তুলে ফেলতাম আর এখন….।
আমি এতটা স্ট্রং!’

পায়ের আঘাত ঠিক না করেই আমি সোফায় শুয়ে কখন যেনো ঘুমিয়ে পড়লাম।ঘুম ভাঙলো অনেক রাতে পায়ে একটু তীক্ষ্ণ ব্যাথা অনুভব হওয়ায়।আমি চোখ খুলে উঠে বসে দেখলাম অভ্র আমার পা ধরে কাঁচের টুকরোটি বের করে ফেলেছে আর এখন ড্রেসিং করার চেষ্টা করছে।আমি প্রচন্ড অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে রইলাম।আর উনি মাথা নিচু করে উনার কাজ করে যেতে লাগলেন।মাথা নিচু করায় তার মুখের ভাবভঙ্গি ঠিক বুঝতে পারছি না।উনি আমার পা ধরায় আমার একটু অস্বস্তি লাগতে লাগলো।আমি পা সরিয়ে নিতে চাইলাম কিন্তু তিনি দিলেন না।আমি অস্ফুট স্বরে কিছু বলে উঠার আগেই উনি হঠাৎ আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলেন।আমি হতভম্ব হয়ে রইলাম।

চলবে,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে