#অতঃপর_ভালোবাসি
Sumon Al-Farabi
১ম পর্ব + ২য় পর্ব
চারজন আছি, এক হাজার টাকা দিবো যাবি? বেশি দূরে না ঐ বাড়িটায়। – কথাটা টা শুনে আঁচল লোকটার দিকে তাকালো।
বিশাল বড় শরীরের অধিকারী। মনে হচ্ছে দানব সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
” কি হলো বল যাবি? আচ্ছা ঠিক আছে ১৫০০ এ দিবো।
” আমি ওসব করি না।
” তুই ভালো মেয়ে?
” হ্যাঁ।
” তাহলে এতো রাতে কি হাওয়া খেতে বের হইছিস?
আঁচল আর কিছু না বলে সামনের দিকে হাটতে লাগলো। লোকটা ইশারা করে তার সাথীদের ডেকে সবাই মিলে আঁচলের পিছনে আসতে লাগলো।
আঁচল জোরে হাটতে শুরু করলো। কিন্তু একটু পরেই জোরে বৃষ্টি নামতে শুরু করলো । বাসা এখনো অনেক দূর আর বৃষ্টিতে ভিজলে যদি অসুস্থ হয়ে যায় তবে আগামী যে কদিন সে অসুস্থ থাকবে তার বাসায় চুলা জ্বলবে না। আজ নিয়তিও তার সঙ্গ দিচ্ছে না। দিয়েছিলোই বা কবে?
একটা ছাউনির নিচে এসে দাঁড়ালো। লোকগুলোও পিছনে পিছনে আসলো। আঁচল হাল ছেড়েই দিছে। যদি একান্ত কিছু করার না থাকে তবে তাদের কাছে হাত জোর করে বলবে যাতে তাকে জানে না মারে।
ছাউনির মাঝে আগেই বসে ছিলো রাহী। হাতে সিগারেট নিয়ে নিজে পুরছে সাথে সিগারেট কেও পুড়চ্ছে ।
হঠাৎ খেয়াল করলো লোকগুলো মেয়েটাকে পুরো ঘিরে নিয়েছে । মেয়েটাকে স্পর্শ করছে। হঠাৎ করে একজন তো বলেই দিলো – এমন টগবগে মাইয়া হাতছাড়া করমু কি ভাবে তোরে?
রাহী পকেট থেকে মোবাইল টা বের করে কানে ধরে বললো- হ্যাঁ আমি একটা বাইরে আছি। বৃষ্টির কারণে আটকা পড়ে আছি। তুমি কেস ফাইলটা করে রাখো। আর যদি কিছু শিকার করতে না চায় তবে ফুটন্ত পানিতে বসিয়ে রাখো আমি আসছি।
কথাগুলো একটু জোরেই বললো। এরপর ওদের দিকে গিয়ে বললো – আপনারা কোথায় গেছলেন এতো রাতে? সাথে আবার একটা মেয়ে।
তাদের মাঝে থেকে একটা লোক বললো- রাস্তা একা ছিলো তাই আফাকে বাসায় এগিয়ে দিচ্ছি ।
” ওহহ চার জন মিলে?
” হ স্যার ।
” আপনি ওনাদের চিনেন? – আঁচল কে উদ্দেশ্য করে বললো।
আঁচল কথা না বলে ঘাড় নাড়িয়ে বললো না।
” আচ্ছা ঠিক আছে। আপনারা অনেক সমাজ সেবা করছেন আমি ওনাকে বাসায় পৌঁছে দিবো। আপনারা আসুন।
লোকগুলো একজন আরেক জনের দিকে তাকাতাকি করে চলে গেলো।।
একটু পরে বৃষ্টি থেমে গেলো। রাহীও ছাউনি থেকে বের হয়ে নিজের মতো হাঁটতে লাগলো। আঁচল পিছনে থেকে দৌড়ে এসে বললো- ধন্যবাদ স্যার ।
” কেন?
” আমাকে বাঁচানোর জন্য ।
” ওহহ আচ্ছা কিন্তু আপনি এতো রাতে বাইরে কেন?
আঁচল আর কিছু বললো না চুপচাপ হাঁটতে লাগলো। আঁচল কে চুপ করে থাকতে দেখে রাহীও চুপ হয়ে হাঁটতে লাগলো।
তিন রাস্তার মোড়ে এসে রাহী আঁচল কে জিজ্ঞেস করলো – আপনি কোন রাস্তায় যাবেন?
” আমি এই দিকে যাবো
” আচ্ছা।
” আপনার বাসা কতদূরে?
” এই তো ৩০ মিনিট লাগবে।
” আপনাকে খুবই ক্লান্ত দেখাচ্ছে।
” হুম । বন্ধুর বউকে রক্ত দিয়ে আসলাম তো।
” আকাশের অবস্থা ও ভালো না। তাতে আপনি আবার দুর্বল। সামনেই আমার বাসা চলুন একটু বিশ্রাম নিয়ে তারপর না হয় বাসায় যাবেন।
রাহী না বলবে কিন্তু আবার টিপটাপ বৃষ্টি নামতে শুরু করলো। তাই তার সাথে তার বাসায় যেতে চাইলো। এদিকে মাথাও ঘোরাচ্ছে।
একটু দূরে যেতেই রাস্তায় পড়ে থাকা কিছু একটার সাথে পা লেগে সামনে পড়ে গিয়ে রাহী অজ্ঞান হয়ে যায় ।
সেদিনের মতো রাহীর আর কিছু মনে নেই । পরের দিন যখন চোখ খুললো। চোখের সামনে একটা ছোট পরী তার দিকে তাকিয়ে আছে । রাহীকে চোখ খুলতে দেখে খিলখিল করে হাসতে শুরু করলো । জিজ্ঞেস করতে যাবে তার নাম। এর আগেই দৌড়ে চলে গেলো ।
মাথাটা ব্যাথায় টনটন করছে। হাত দিয়ে মাথাটা চেপে ধরে বসে থাকলো। হঠাৎই পাশে একটা মেয়েলী কন্ঠ – এখন কেমন লাগছে?
মাথা তুলে তাকায় রাহী। কেমন জানি চেনা চেনা লাগছে। কিন্তু কোথায়..
” আপনি?
” গতকাল রাতে আপনি আমায়..
” ওহহ আচ্ছা । ঐ পিচ্চি টা কে?
” ওটা আমার ছোট বোন।
” খুবই মিষ্টি । আপনার মতোই ।
” হুম । মাথার ব্যাথা কি কমছে?
” একটু আছে
” আপনি বিশ্রাম করুন আমি নাস্তা নিয়ে আসছি।
আঁচল চলে গেলো। পিচ্চি টা দরজার ওপাশে থেকে চুপিচুপি দেখছে । রাহীর সাথে চোখাচোখি হতেই আবার পালিয়ে গেলো।
#অতঃপর_ভালোবাসি
Sumon Al-Farabi
২য় পর্ব
চা হাতে একটা মেয়ে আসলো। একটু আগেই যে পিচ্চিটা দৌড়ে পালালো তার থেকে বছর তিনেক বড় হবে । কিন্তু মেয়েটা দেখতে খুবই মিষ্টি ।।
” ভাইয়া আপনার জন্য চা নিয়ে আসছি।
” আচ্ছা দাও।
চা দিয়েই চলে যেতে লাগলো।
” এই আপু
” কিছু বলবেন ভাইয়া?
” বসো এখানে গল্প করি।
মেয়েটা রাহীর থেকে কিছু টা দূরত্ব রেখে বসলো। রাহী চায়ে চুমুক দিতে দিতে প্রশ্ন করলো – তোমার নাম কি?
” অধরা।
” বাহ সুন্দর নাম তো। চা টা কে বানিয়েছে? তুমি?
” আপু বানিয়েছে। আপু খুব সুন্দর চা বানায়।
” হুম । তোমার আপুর নাম কি?
” আঁচল । আপনি চা খান। আমি গিয়ে আপুকে সাহায্য করি।
অধরা চলে গেলো। রাহীও উঠে চায়ে চুমুক দিতে দিতে জানালার ধারে এসে দাঁড়ালো ।
” পুরো বাসার মাঝে শুধু এই একটা জানালার সামনে কিছুটা ফাঁকা জায়গা ।
কেউ একজন কথাটা বললো। রাহী পিছনে তাকিয়ে দেখে আঁচল দাঁড়িয়ে আছে ।
” ওহহ আচ্ছা । কিন্তু পরিবেশ টা সুন্দর ।
” হুম । আপনার কাছে সুন্দর। কিন্তু আমাদের কাছে আতংক ।।
কথাটা রাহীর মাথার উপর দিয়ে গেলো। – আতংক মানে?
” ছাড়ুন ওসব । আপনি কি এখন পুরোপুরি সুস্থ?
” হ্যাঁ । আচ্ছা একটা প্রশ্ন করি?
” হ্যাঁ বলুন।
” আপনি অনেক ভালো স্টুডেন্ট তাই না?
” কেন?
” টেবিলের উপর আপনার কৃতিত্ব ঝকঝক করছে।।
” একসময় ছিলাম ।।
” একসময় ছিলেন মানে? এখন পড়ালেখা করেন না?
” না
” ওহহ আচ্ছা । তো কতদূর পড়েছেন?
” ইন্টার পরীক্ষা দিয়েছিলাম। এরপর আর বাবা মা মারা যায়। এরপর দুই বোন নিয়ে
” সরি। আচ্ছা কোনো চাকরি কি পেয়েছেন?
আঁচল একটু হেঁসে বললো- চাকরি?
” তাহলে আপনি কি করেন? সংসার কিভাবে চলে?
কিছুক্ষণ মাথা নিচু করে নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থাকলো আঁচল ।
” আপনি আমায় বলতে পারেন যদি আপনার কোনো উপকারে আসি তাহলে নিজের মনে প্রশান্তি পাবো।
আঁচলের চোখ টলমল করছে। এই বুঝি গাল গড়িয়ে দুফোঁটা হিরা ঝড়ে পড়লো।
হঠাৎ দরজার দিকে লক্ষ করলো আঁচল। অধরা দরজার চৌকাঠ ধরে দাড়িয়ে আছে ।
” তুমি এখানে কি করো? বড়দের কথা শুনতে হয় না জানো না? যাও রান্না ঘরে গিয়ে দেখো ওগুলো ঠিক আছে কি না।
আঁচলের রাগ দেখে অধরা ভয়ে তাড়াতাড়ি প্রস্থান করলো।
রাহী খেয়াল করলো আঁচলের কন্ঠ ভেজা। চোখেও পানি জমে আছে ।
” আপনার যদি সমস্যা থাকে তবে আমি জোর করবো না।
” আপনি কি জানতে চাইলেন? আমি কি করি? কি ভাবে আমাদের সংসার চলে?
” হুম কিন্তু আপনি যদি বলতে….
” আমার শরীর বিক্রি টাকা দিয়ে।
কথাটা হয়তো ছোট একটা বাক্য মাত্র । কিন্তু রাহীর চারপাশ স্থির করে দিয়েছে নিমিষেই ।
রাহী আর একবার আঁচলের পা থেকে নিয়ে মাথা পর্যন্ত নজর বুলিয়ে নিলো। কিছুতেই বিশ্বাস করতে পাচ্ছে না। তার নিজের কানকে আজ তার কাছে মিথ্যা মনে হচ্ছে ।
আঁচলের চোখের পানি গড়িয়ে পড়ছে। নিজেকে একজন দেহকর্মী হিসাবে পরিচয় দেওয়া যে কতটা কষ্ট তা শুধু সেই জানে যে দেয়।
রুহী বাকরুদ্ধ দাঁড়িয়ে আছে । আঁচলের দিকে তাকাচ্ছে আর দেওয়ালের ছবি গুলোর দিকে তাকাচ্ছে । ঐ মেয়েটা আর এই মেয়েটার মাঝে অনেক পার্থক্য।
আঁচল চোখ মুছে বললো- রান্না প্রায় শেষ । প্লিজ না খেয়ে যাবেন না।
আঁচল চোখ মুছতে মুছতে বের হয়ে গেলো। রাহীও ধম করে খাটে বসে ভাবতে লাগলো। সে যা শুনলো তা কি সত্যি? এখন তার মনে বিভিন্ন প্রশ্ন জাগতে শুরু করলো ।
আবারও অধরার আগমন – ভাইয়া।
রাহী মাথা নিচু করে ছিলো। ভাইয়া শব্দ কানে আসতেই চোখ তুলে তাকালো- ওহহ তুমি।
” হ্যাঁ ।
” কিছু বলবা?
” আপু কি চাকরি করে ভাইয়া? যে তাকে রোজ রাতে অফিস যেতে হয়?
” তুমি জেনে কি করবে?
” আপুর অফিসের স্যার খুব খারাপ । আপুকে খুব বকাবকি করে মনে হয়।
” কেন?
” আপু রোজ ঘরে ফিরে আব্বু আম্মুর রুমে গিয়ে কান্না করে । আমার খুব কষ্ট হয়। আমায় আপুর স্যারের কাছে নিয়ে যাবেন? আমি ওনাকে ইচ্ছে মতো বকে দিয়ে আসবো।
অধরার চোখে পানি টলমল করছে । – আমার আপু খুব ভালো জানেন। ও কাউকে বকা দেয় না। ওনার কি ওকে দেখে মায়া হয় না? আপু কারো বকা সহ্য করতে পারে না। আপনি ওনাকে একটু বলবেন যাতে আমার আপুকে আর না বকে। আমার খুব কষ্ট হয় আপুকে কান্না করতে দেখলে। ঐ দিন আপুকে থাপ্পড় দিয়েছিলো। আপুর গাল লাল হয়ে ছিলো। আপুকে আমি বলেছিলাম যে ঐ স্যারের চাকরি ছেড়ে দিতে । কিন্তু আপু বলে আর কেউ নাকি চাকরি দেয় না।
রাহী কি বলবে কিছুই ভেবে পায় না। শুধু হাত দিয়ে অধরার চোখের পানি মুছে দিলো। – আচ্ছা আপু তোমার আপুর স্যারকে আমি বলে দিবো যাতে সে আর তোমার আপু কে না বকে। তোমার আপুকে গিয়ে বলো ভাইয়া ডাকছে।
অধরা আঁচল কে ডাকতে গেলো। রাহী আবারও মাথা নিচু করে বসে থাকলো।
” আমায় ডাকছেন?
” হুম । আমি চলে যাচ্ছি।
” খাওয়া করে যান।
পকেট থেকে ওয়ালেট টা বের করতে করতে বললো- ইচ্ছে করছে না।
ওয়ালেট থেকে ৫০০ টাকা বের করে একটা ঠিকানা হাতে দিয়ে বললো – আজ রাতে অন্য কোথাও যাওয়ার দরকার নেই । এটা আমার বাসার ঠিকানা। তিন জনেই চলে আসবেন।
আঁচল রাহীর দিকে তাকিয়ে আছে । রাহীকে সে অন্য সবার থেকে আলাদা ভাবতো কিন্তু সেও?
” দেখুন স্যার । ওরা এখনো ছোট আর আমি চাই না ওরা কখনো আমার মতো হোক।
” আপনাকে ঢ়েটা বলছি সেটা করবেন। বেশি কথা বলে আমার ব্যবহার খারাপ করতে বাধ্য করবেন না। সন্ধ্যায় যেন তিন জন কেই বাসায় পাই। নয়তো আপনাদের সবার খবর খারাপ আছে । আর বাকী টাকাটা বাসায় দিয়ে দিবো।
আঁচলের হাতে টাকাটা ধরিয়ে দিয়ে রাহী চলে গেলো।
To be continue……