#অতঃপর_প্রেম🍃
#পর্ব_০১
#লেখনীতে_আয়ানা_আরা (ছদ্মনাম)
শপিং মলে এসে যে নিজের বিয়ে হয়ে যাবে জানলে কোনোদিনও আসতাম না। ধরে বেঁধে এক অচেনা লোকের সাথে বিয়ে দিয়েছে। এইসব ভাবতেই আমার গা টা শিউরে উঠছে।
ফ্ল্যাশব্যাক_
আমি আর আমার ফ্রেন্ড মোমো শপিং এর জন্য আসি। মোমো অন্য দোকানে চলে যায়। আর আমি দাঁড়িয়ে ওর জন্য অপেক্ষা করছিলাম হঠাৎই একটা বখাটে ছেলে এসে আমার সামনে দাঁড়ায়। আমি তাকে দেখেও না দেখার ভান করে চলে আসতে নিলেই ছেলেটা খপ করে আমার হাত ধরে তার ৩২ হলদেটে দাঁত বের করে বলে,’কি মামুনি কোথায় যাও?’
আমি এক ঝটকায় হাত ছাড়িয়ে ছেলেটাকে কষিয়ে থাপ্পড় দিয়ে বলি,’আমি না তোর মামুনি লাগি?মামুনির হাত কেউ ধরে?এই শিখিয়ে বড় করেছি আমি?’
ছেলেটা গালে হাত দিয়ে বোকার মতো তাকিয়ে রইলো আমার দিকে। হয়তো আমার কথার কিছুই বুঝেনি। আমি আবারও বললাম,’এই থাপ্পড়টা মনে থাকলে কখনো কোনো মেয়েকে জ্বালাবি না।’
‘কি হচ্ছে এইখানে?’
পুরুষালি কন্ঠ শুনে আমি পিছনে তাকিয়ে দেখি একটা ব্ল্যাক শার্ট পরা ছেলে দাঁড়ানো। আমি তাকে দেখে ভ্রুকুচকে বলি,’কোন নবাবাজাদা আপনি যে আপনাকে আমার জবাবদিহি দিতে হবে?’
ছেলেটা ভ্রুকুচকে বলে,’ওয়াট?’
আমি কিছু না বলে সেই বখাটে ছেলেটাকে খুজতে লাগলাম। দেখি সে উধাও। আশ্চর্য তো এতো তাড়াতাড়ি কেমনে চলে গেলো। হঠাৎই একটা লোক কিছু মানুষজন নিয়ে এসে ছেলেটাকে ইশারা করে বলে,’এইযে এই ছেলেটাই জ্বালাচ্ছিলো মেয়েটাকে।’
ছেলেটা বলে,’আজব তো আমি জ্বালাবো কেনো?’
ওই লোকগুলোর মধ্যে একটা লোক বলে,’এই পোলা এই মেয়েটাকে তোর বিয়ে করতে হবে।’
ছেলেটা কিছু বলতে যাবে তার আগেই আমি চিল্লিয়ে বলি,’কিহহ। অসম্ভব।’
‘এহ যখন নিব্বা নিব্বি করতে আসো তখন এইগুলা মনে থাকে না??’
লোকটার কথা শুনে আমার মেজাজ চোটে যায়। আমি দাঁতে দাঁত চেপে বলি,’একটু বেশিই বলছেন না আপনারা?’
ওই লোকগুলোর মধ্যে একটা লোক বলে,’এই মাইয়া বেশি তর্ক করবা না কইলুম কিন্তু এখন চুপচাপ আমাদের সাথে আসো।’
সেই ছেলেটা বলে,’এইযে দেখুন আপনাদের কোথাও একটা ভুল হচ্ছে আমরা এইখানে নিব্বা….
‘এই মিয়া এতো কথা কউ কেনো?যেটা কইসি ওইটা করো।’
এইখান থেকে কিছুটা দূরে কাজী অফিস ছিলো তাই তারা আমাদের দুইজনকে জোর করে নিয়ে যায় কাজী অফিসে। বাকিটা আপনারা জানেনই।
_______
আমি এখন মলের বাহিরে দাঁড়িয়ে আছি। আজকের এই কুফা দিনে না বের হওয়াই ভালো ছিলো। কেনো যে আম্মুর কথা শুনলাম না,ধ্যাত।কোথাথেকে দৌড়ে দৌড়ে মোমো আমার কাছে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে বলল,’এই মেহেক কোথায় ছিলি তুই?তোকে খুজতে খুজতে আমি বেহুশ।’
আমি মোমোকে বলি,’শান্ত হ তুই। বলছি আমি। এতো হাইপার হোস না।’
মোমো বলে,’হাইপার হোস না? হাইপার হওয়ার মতোই কাজ করেছিস তোর কিছু হলে আন্টি আমাকে কতো বকা দিতো জানিস? কোথায় ছিলি তুই?’
‘আরে আমি তো এইখানেই ছিলাম। তুই শপিং করছিলি তাই ভাবলাম আমি নিচে এসে ভেলপুরি খেয়ে নেই।’
আমি আর মোমোকে বিয়ের ব্যপারে কিছু বলিনি। শুধু শুধু মেয়েটা চিন্তা করবে আর এই বিয়েটাও আমি মানি না।আমি মোমোকে বিদায় দিয়ে চলে আসলাম বাসায়। বাসায় এসে আমি নিজের রুমে চলে যাই। বাসার থেকে বের হওয়ার সময় ছিলাম অবিবাহিতা আর বাসায় এসে হয়ে গেলাম বিবাহিতা বিষয়টা খুব অদ্ভুত। আমি ফ্রেশ হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম। ফোন নিয়ে এফবিতে লগইন করলাম। এফবি ঘাটতে ঘাটতে হঠাৎই একটা নামে আমার চোখ আটকিয়ে যায় ‘সাদ আনান রোদ।’এই নামটা আর কারো না আমার কয়েক ঘন্টা আগে বিয়ে করা বরের নাম। কৌতুহল নিয়ে তার আইডিতে ঢুকলাম। কিছু ছবি দেখলাম আবার কিছু ছবি সেভও করে নিলাম। তারপর এফবি থেকে লগআউট হয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। সন্ধ্যায় আম্মুর ডাকে ঘুম ভাঙে আমার।
‘এই মেয়ে উঠবি না সেই বিকালে এসে কিছু না খেয়েই ঘুমিয়ে গিয়েছিলি এখন সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছি উঠ।’
আমি ঘুমু ঘুমু চোখে আম্মুকে বলি,’আম্মু আরেকটু ঘুমাই না!অনেক হয়রান আমি।’
‘না আর একটা মিনিটও না। জলদি উঠ আমি চা বানিয়েছি খেয়ে নে।’
আম্মুর জোরাজুরিতে ঘুম থেকে উঠে কোনো মতে ফ্রেশ হয়ে নিচে গেলাম। আমাকে দেখে মেহেদী ভাই বললেন, ‘কিরে মেহু বিকাল থেকে দেখলাম না যে তোকে।’
আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই আম্মু বলল,’আর বলিস না মেয়েটা শপিং মল থেকে এসে রুমে যে গিয়েছে আর বেরই হলো না।’
আম্মুর কথা শুনে মেহেদী ভাইয়া ভ্রুকুচকে আমার উদ্দেশ্যে বলেন,’কি হয়েছে তোর?’
আমি নড়েচড়ে বলি,’কিছু না। আসলে যে অনেক কিছুই হয়েছে কিভাবে বলবো তোমাদের’
শেষের কথাটা বিরবিরিয়ে বলি যাতে কেউ না শুনতে পায়।
রাতে খাবার টেবিলে,
‘মেহেক মা তোমার কি কোনো সপ্ন নেই?’
খাবার খেতে খেতে আব্বু কথাটি বললেন। তার কথা শুনে আমি ভ্রুকুচকে তার দিকে তাকিয়ে বলি,’থাকবে না কেনো?’
‘কি করতে চাও তুমি ফিউচারে?’
আমি বেশ গর্ব নিয়ে বলি,’ডক্টর।’
মেহেদী ভাই উস্কানি দিয়ে বলেন,’হেহ সাবধান পরে দেখা যাবে রোগীর জরায়ু বের করতে বলেছে আর তুই বের করবি কিডনি।’
আমি মেহেদী ভাইয়ের কথা শুনে মুখ ফুলিয়ে বলি,’মেহেদী ভাই!!’
আব্বু মেহেদী ভাইয়ের দিকে গরম চোখ করে তাকায়। মেহেদী ভাই তাও মুখ চেপে হাসছে। এইবার আমার মাথায় শয়তানি বুদ্ধি চাপে। আমি আস্তে করে মেহেদী ভাইকে চিমটি দিয়ে খেতে থাকি। মেহেদী ভাই ব্যথায় ‘আহ’ করে উঠে। আমি খাচ্ছি আর মজা নিচ্ছি। মেহেদী ভাই আমার কান মোড়ে দিয়ে বলে,’এই তুই চিমটি মারলি কেনো রে?’
আমি হেসে বলি,’তুই আমার মজা নিয়েছিস কেনো?’
‘আমি তোর বড় তাই আমার অধিকার আছে তোর উপর মজা নেওয়ার।’
আমি ভেংচি কেটে বলি,’তাহলে আমি ছোট আমারও অধিকার আছে তোর সাথে মজার নেওয়ার।’
‘এইই আমি না তোর বড় তাই আমাকে সম্মান দিয়ে কথা বলবি নো তুই তোকারি।’
আমি ভেংচি কেটে বলি,’এই জন্মে তুই আমার থেকে সম্মান পাবি না আর পাইলেও সপ্নে পাবি। হাহাহাহা’
আম্মু এসে আমাদের দুইজনকে ধমক দেয়। আব্বু আমাকে বলে,’তোমার এইচএসসি তো শেষ তাহলে মেডিক্যালে এডমিশন দেওয়া শুরু করো।’
‘হুম আব্বু।’
‘কোন মেডিক্যালে পড়তে চাও?’
আমি বেশ কিছুক্ষন ভেবে বলি,’ঢাকা মেডিক্যাল।’
‘গুড।’
খাওয়া শেষে আমরা যে যার রুমে চলে যাই। আমি নিজের রুমে যেয়ে ফুল স্পিডে গান ছেড়ে ধুরা নাঁচতে থাকি। এটা আমার নিত্যদিনের কাজ। আরো কয়েকটা গানে নেঁচে বিছানায় ঠাস করে পরে ঘুমিয়ে যাই।
……..
#চলবে